Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » একেনবাবু ও বর্মণ বাড়ি রহস্য || Sujan Dasgupta » Page 9

একেনবাবু ও বর্মণ বাড়ি রহস্য || Sujan Dasgupta

দুপুরে রিনিতা নিজের কাজ নিয়ে বসল। ঝড় আসার আগেই যতটা শেষ করা সম্ভব। এরপর নেট-এর টিকির দেখা পাওয়া যাবে না। কদ্দিন বাদে মিলবে, তাও জানা নেই। পুরো দিনটা কাজেই কাটল। লাঞ্চ খেল না, সেটা বড়ো ব্যাপার নয়, অনেকদিনই ও লাঞ্চ খায় না। কাজের ফাঁকেই দেখল বারান্দায় কানুদার সঙ্গে শিখা কথা বলছে। ঋদ্ধিও কিছুক্ষণের জন্য এসে বসল। সাতটা নাগাদ দরজা-জানলা কাঁপিয়ে ঝড় বেশ ভালোমতোই এসে গেল, সেইসঙ্গে বিদায় জানাল নেট। কিছুক্ষণের জন্য আলো চলে গিয়েছিল, জেনারেটরের দৌলতে ফিরে এসেছে। ঝড়ের শব্দের সঙ্গে জেনারেটরের ঘড়ঘড় আওয়াজ যোগ হয়েছে। ল্যাপটপ বন্ধ করে, ঘর থেকে বেরিয়ে এসে রিনিতা দেখে বারান্দায় জল ছপছপ করছে। বারান্দা উলটো দিকে ঢালু বলে রক্ষে, ঘরে জল ঢোকেনি।

কল্পনা তাড়াতাড়ি রাতের খাবার বানিয়েছে। ডিনারের ফিক্সড রুটিন আজ মানা যাবে না। কানুদাকে ডেকে নিয়ে খাবার ঘরে একবার ঢুঁ মারতেই কল্পনা বলল, “আবনারা বইসে পড়েন।”

“অন্যরা কেউ আসছেন না?”

গজগজ করল কল্পনা, “না, আমার কাজ বাড়ায়ে সব নিজের ঘরে খাইবেন!”

নিরামিষ আহার। একটা তরকারি, ডাল আর রুটি। বাতাসের গতি যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে কাল বাজারের অস্তিত্ব থাকবে কিনা কে জানে! সারাদিন ঘরে বন্দি থেকে কাজ করার ক্লান্তিতে রিনিতার ঘুম পেল। কোনোমতে খেয়ে, “কানুদা আমি ঘুমোতে যাচ্ছি,” বলে শুতে চলে গেল। শুল, কিন্তু ঘুম এল না অনেকক্ষণ। ঝড়ের সোঁ-সোঁ, ঝমঝম বৃষ্টি, আর বজ্র-বিদ্যুতের আওয়াজের মধ্যেও টের পেল কানুদা ফোনে কথা বলছে। ঘুম ঘুম চোখে ভাবল, তার মানে টাওয়ার এখনও দাঁড়িয়ে। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল জানে না।

ঘুম ভাঙল ভোর ছ’টা নাগাদ, তুঙ্গনাথবাবুর আর্তনাদে। তখনও কল্পনা বেড-টি দিতে আসেনি। কোনোমতে সালোয়ার-কামিজ গলিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে কানুদার দরজায় ধাক্কা দিল। ভেতর থেকে ‘আসছি’ শুনে বুঝল কানুদা তৈরি হচ্ছে। দ্রুত পায়ে ভেজা বারান্দা দিয়ে এগোতেই দেখে তুঙ্গনাথবাবু উদ্ভ্রান্তের মতো দুম দুম করে নিজের ঘরের দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন! গোলমাল শুনে ঋদ্ধি ছুটে আসছে, শিখা ঘর থেকে বেরোচ্ছে।

তুঙ্গনাথবাবু ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দরজা খুলতে পারছেন না, ভেতর থেকে বন্ধ। ঋদ্ধি বাবার সঙ্গে হাত মেলাল। বাবা-ছেলে দু-জনে মিলে ধাক্কা দিচ্ছে, কিন্তু দরজা খুলল না।

ঋদ্ধি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “দরজা লক হল কী করে? তালা দিয়েছিলে?”

প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তুঙ্গনাথ বললেন, “তোর চাবিটা নিয়ে আয়।”

ঋদ্ধি দৌড়ে চাবি নিয়ে এল। তুঙ্গনাথবাবু দরজায় চাবি লাগিয়ে ঘোরালেন।

দরজা খুলতেই রিনিতা উঁকি মেরে দেখতে পেল এক ভয়ংকর দৃশ্য! জানলার কাছে দেয়ালে হেলান দিয়ে সত্য ঝুলে আছে। একটা বেল্টের বকলসের প্রাস্ত গলায় আটকানো, অন্য প্রান্ত জানলার শিকে বাঁধা। সত্যর চোখ কোটর ঠেলে বেরিয়ে এসেছে। মৃত্যু ঘটেছে, সন্দেহ নেই! কিছু ভাবার আগে রিনিতার মনে প্রশ্ন জাগল, ‘সত্য এ ঘরে কেন? ওই কী দরজায় তালা দিয়েছিল?”

একেনবাবু দৌড়ে এসে নিমেষে ব্যাপারটা মেপে নিলেন। তারপর ঘরে ঢুকে সত্যর গলায় হাত দিয়ে পাল্স দেখার চেষ্টা করলেন।

“নাঃ, এক্সপায়ার্ড।”

বলেই জানলার শিকগুলো নেড়ে নেড়ে কী যেন দেখতে লাগলেন।

ঋদ্ধি চাপা গলায় বলল, “সুইসাইড? কিন্তু বাবার ঘরে সত্য এল কী করে!”

রিনিতার মনেও সেই একই প্রশ্ন।

তুঙ্গনাথবাবু নিজের মার্ডার অ্যাটেম্পট পাত্তা দেননি, কিন্তু সত্যর মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেন! কান্না চাপতে চাপতে রুদ্ধস্বরে আত্মগতভাবেই বললেন, “কী করে এটা হল? এটা কেন করতে গেল সত্য!”

রিনিতা চাপা স্বরে একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করল, “কী বুঝছ, কানুদা?”

উত্তর না দিয়ে একেনবাবু সবার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, “দরজা কি ভেতর থেকে বন্ধ ছিল?”

সকলেই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে, শেষে রিনিতাই বলল, “হ্যাঁ।”

ঋদ্ধি বলল, “বাবা, খোলার চেষ্টা করে খুলতে পারছিলেন না। আমরা দু-জনে ধাক্কা মেরে খুলতে পারিনি, চাবি দিয়ে খুলতে হয়েছে। কিন্তু বুঝতে পারছি না, ঘরে সত্য কেন!”

ফিসফিসে গলায় শিখা আবার জিজ্ঞেস করল, “সুইসাইড করেছে?”

একেনবাবু বললেন, “সম্ভবত। ইনভেস্টিগেট করতে হবে। পুলিশকে এক্ষুনি খবর দিন। আর এখানে কেউ কিছু ছোঁবেন না। আপনারা সবাই বাইরে যান।”

ওঁর গলা ভীষণ অফিশিয়াল শোনাল।

“খবর দিচ্ছি,” ঋদ্ধি কড়া চোখে একেনবাবুর দিকে তাকাল। “কিন্তু আপনি বলার কে?”

ইতিমধ্যে অরুন্ধতী দেবী চলে এসেছেন।

রিনিতা বুঝল এখন আর কানুদার পরিচয় গোপন রাখার অর্থ হয় না। একটু গর্বভরেই বলল, “কানুদার নাম একেন্দ্র সেন, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্টে ছিল, এখন নিউ ইয়র্ক পুলিশের ডিটেকটিভ কনসাল্টেন্ট।”

যাঁরা আগে একেনবাবুর কাহিনি পড়েছেন, তাঁরা জানেন একেনবাবুর চেহারা সাদামাটা— একেবারে আন-ইম্প্রেসিভ! পরিচয় শুনে সবারই মুখ ‘হাঁ” হয়ে গেল!

ঋদ্ধিকে একটু আড়ালে ডেকে একেনবাবু বললেন, “আপনি স্যার পুলিশে ফোন করার সময় আমাকেও ডাকবেন। পুলিশের ব্যাপার তো, হ্যারাসমেন্ট কম হতে পারে।”

“নিশ্চয়, নিশ্চয়, আমাকে আবার ‘স্যার’ বলছেন কেন!”

এই পরিস্থিতির মধ্যেও ঋদ্ধির এই সুর বদলে রিনিতা মজা পেল। শিখাও কেমন জানি ভক্তিভরে একেনবাবুর দিকে তাকাচ্ছে।

পুলিশকে ফোনে ধরতে সময় লাগল না। তবে তারা জানিয়ে দিল ঝড় না কমলে আসতে পারবে না। তারপর শুরু হল একতরফা প্ৰশ্ন।

ঋদ্ধি তাড়াতাড়ি বলল, “আমাদের বাড়িতে এক জন গেস্ট আছেন, গোয়েন্দা একেন্দ্র সেন। উনি এখানেই দাঁড়িয়ে।”

ব্যস, আর কিছু বলতে হল না। একটু শুনে ঋদ্ধি বলল, একেনবাবুর দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিল।

“নিশ্চয়,” তারপর একেনবাবু ‘হ্যালো’ বলার পর কিছুক্ষণ চুপ। মানে অন্য পক্ষ থেকে অনেক কথা আসছে। ওদিকের কথা রিনিতার কানে এল না, শুধু কানুদার দিকটাই শুনতে পেল।

“…ও বুঝেছি, আপনি আমার ট্রেনিং-এ ছিলেন… আচ্ছা, আচ্ছা, ‘তুমি’। …হ্যাঁ হ্যাঁ রমেন, নামটা ভালো মনে আছে। …না, না, আমি আছি, তুমি না আসা পর্যন্ত থাকব। …এরকম করে বলছ কেন, সাহায্যের যা দরকার নিশ্চয় করব- আমার বোনের বন্ধুর ফ্যামিলি বলে কথা। …ঠিক আছে, আমি ওদের বলে দিচ্ছি।”

ঋদ্ধিকে ফোন ফেরত দিয়ে একেনবাবু তাকালেন তুঙ্গনাথের দিকে।

“ভাববেন না। পুলিশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসবে। কিন্তু এই ঝড়ে দুপুরের আগে হবে না। ওদের নির্দেশ— ঘরে কেউ ঢুকবেন না। …আর স্যার, আপনাদের ওপর একটু ইম্পোজ করব। পুলিশকে কথা দিয়েছি ওদের সাহায্য করব। সেই জন্য সবাইকেই কিছু প্রশ্ন আমায় করতেই হবে। তাতে আপনাদের সমস্যা থাকলে পুলিশ এসে করবে, আমি এতটুকু মাইন্ড করব না। অবশ্যই রিফিউজ করতে পারেন।”

“কী আশ্চর্য! সমস্যা হবে কেন?” তুঙ্গনাথবাবু বলে উঠলেন। “এদিকে, আমি তো আপনাকে মেয়ের বন্ধুর দাদা বলে ‘তুমি, তুমি’ করছি।”

“সে কী স্যার, রিনিতা তো এখনও আমার বোন। আপনি প্লিজ ‘তুমি’ করেই বলবেন। এখন চলুন স্যার, সবাই ঘরের বাইরে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিই।”

তারপর শিখার দিকে তাকিয়ে অনুরোধ করলেন, “বাড়ির কাজের লোকদের একটু বলে দিও, যাতে কেউ এ ঘরে না ঢোকে।”

“বলছি। আর গোপালকে দিয়ে দুটো চেয়ার আনিয়ে দরজার সামনে রাখতে বলছি যাতে ভুল করে কেউ ঢুকে না পড়ে।”

রিনিতা বলল, “প্রত্যেক ঘরেই তো দুটো করে চেয়ার আছে। গোপালের কী দরকার, আমরাই চেয়ারগুলো এনে রেখে দিই।”

“না, না, এই ঘরের চেয়ার নয়। এই ঘরের কিছু ছোঁয়া চলবে না।” একেনবাবু সতর্ক করলেন।

ঘর খালি হয়ে গেলে চারিদিকে চট করে তাকিয়ে পকেটের রুমাল বের করে একেনবাবু স্টিলের দেরাজটা টেনে খোলার চেষ্টা করলেন। খুলল না, চাবি দিয়ে আটকানো। ব্যস, বেরিয়ে এসে দরজা বন্ধ করলেন।

পাশের ঘরের দরজা খোলা, সত্যর ঘর। সেখান থেকে চেয়ার আনতে ঋদ্ধি আর একেনবাবু ঢুকলেন। চেয়ার তুলতে গিয়ে একেনবাবুর চোখে পড়ল ঘরের এককোণে কাগজের কিছু পোড়া টুকরো। কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটল। একটু পরে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করলেন। দুটো চেয়ার তুঙ্গনাথবাবুর ঘরের সামনে পাঁচিল হিসেবে রাখা হল।

“আপনি স্যার, তাহলে কাল রাতে সত্যবাবুর ঘরে শুয়েছিলেন?”

প্রশ্ন শুনে তুঙ্গনাথ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন, উত্তর দিলেন না।

একটা জিনিস রিনিতার চোখে লাগছিল। বাড়িতে একজন মারা গেছে, অস্বাভাবিক মৃত্যু। সবাই তাতে বিচলিত ঠিকই, কিন্তু বিমর্ষ নয়। হয়তো সত্যের মৃত্যুর সঙ্গে একটা সমবেত দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটেছে। একমাত্র ব্যতিক্রম তুঙ্গনাথবাবু। তাঁকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। শিখা মাকে নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু ঋদ্ধি এত ভয় পেয়েছে কেন? ওর কী ধারণা বাঘের মতো, পুলিশ ছুঁলেই আঠেরো ঘা!

এতক্ষণ কী চলছে কল্পনা দূর থেকে দেখছিল। সত্য সম্পর্কে তার মনোভাব বৈরী। এই মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছে বলে মনে হল না। সবাইকে বারান্দায় আসতে দেখে বিড়বিড় করে জিজ্ঞেস করতে লাগল কাকে কোথায় ‘বেট্টি’ দেবে। তুঙ্গনাথবাবু, “আমি এখন কিছু খাব না,” বলে নিজের ঘর, মানে সত্যের ঘরের দিকে চলে গেলেন।

রিনিতার দিকে তাকিয়ে একেনবাবু বললেন, “আমরা বারান্দায় বসি চল। ওখানেই চা দিক না।”

ঋদ্ধি আর শিখাও ওদের সঙ্গে এসে বসল। অরুন্ধতী দেবী নিজের ঘরে চলে গেলেন।

সবাই এসে বসতে একেনবাবু বললেন, “ব্রেকফাস্টের পর সবার সঙ্গে আলাদা আলাদা কথা বলতে চাই। তার আগে দুয়েকটা সাধারণ প্রশ্ন করি। এ বাড়ির দরজাগুলো কি ভেতর থেকে লক করা যায়?”

ঋদ্ধিই উত্তর দিল, “হ্যাঁ, ভেতর-বাইরে দু-দিক থেকেই করা যায়। সব গেস্ট রুমের চাবি এক। আবার আমাদের চারটে রুমেরও এক চাবি, যাতে কেউ ভেতর থেকে লক করে বেরিয়ে এলে বাইরে আটকা না পড়ে। গেস্ট রুমের চাবিও আমাদের কাছে থাকে।”

“বুঝেছি স্যার, ডবল সিলিন্ডার লক। ভেরি নাইস, ভেরি নাইস। এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন। সত্যবাবু কাল রাতে তুঙ্গনাথবাবুর সঙ্গে ঘর পালটাপালটি করেছিলেন। কেন? কাউকে উনি জানিয়েছিলেন?”

সবাই মাথা ঝাঁকাল, “না।”

ঋদ্ধি উলটে প্রশ্ন করল, “আপনি তো আমাকে বলেছিলেন বাবার সঙ্গে ঘর এক্সচেঞ্জ করে শুতে! সত্যকেও কি তাই বলেছিলেন?”

“না স্যার, বলিনি। আপনাকে বলেছিলাম, কারণ আপনার চিন্তা ছিল আপনার বাবাকে কেউ যদি আবার খুন করার চেষ্টা করে। খুনি অবভিয়াসলি জানে তুঙ্গনাথবাবু কোন ঘরে ঘুমোন। তাই না?”

প্রশ্নটা শুনে ঋদ্ধি একটু নার্ভাস হয়ে গেল।

“আপনি কি মনে করেন এটা মার্ডার?” শিখা প্রশ্ন করল।

“জানি না, সুইসাইডও হতে পারে!”

“বেল্টে গলা জড়িয়ে?”

“সবই সম্ভব। আপাতত এখানেই থাক। কারোরই তো সকাল থেকে হাত-মুখ ধোওয়ার সময় হয়নি। সকালে খাওয়া-দাওয়ার পর সবার সঙ্গে আলাদা করে বসব। আমার রুমেই বসা যেতে পারে। তাহলে অন্য কাউকে ডিস্টার্ব করতে হবে না।”

একেনবাবু আরম্ভ করলেন রিনিতাকে দিয়ে। অন্যদের জবানবন্দির সত্যতা চেক করার জন্যে একটা বেস-লাইন খাড়া করা দরকার। সব কথোপকথন রেকর্ড করলেন নিজের মোবাইল ফোনে।

“আমার দু-মিনিট আগে তুই অকুস্থলে পৌঁছেছিলি। পৌঁছে কী দেখলি আর তারপর যা যা ঘটেছে, সব কিছু খুঁটিয়ে বল।”

“ছ’টা নাগাদ তুঙ্গনাথবাবু চিৎকার করে সত্যকে ডাকছিলেন। সেই শব্দ আর দরজায় ধাক্কার আওয়াজ শুনে আমি ঘর থেকে বেরোই। তোমাকে ডেকেছিলাম, মনে আছে? তুমি তখন তৈরি হচ্ছিলে। তুঙ্গনাথবাবুর কাছে গিয়ে দেখি উনি দরজা খোলার চেষ্টা করছেন। আমি আর ঋদ্ধি প্রায় একই সময়ে ওখানে পৌঁছোই, ঋদ্ধি সামান্য একটু পরে। তার একটু পরে শিখা, তারপর তুমি। তারও বেশ কিছুক্ষণ পরে মাসিমা। ঋদ্ধি চাবি নিয়ে এসে দরজা খুলল, আমরা সবাই ঘরে ঢুকলাম। ঘরে ঢোকার পরে মাসিমা এলেন। তুমি ছুটে গিয়ে যখন পাল্স দেখছিলে আমি দেখছিলাম ঘরে সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। অস্বাভাবিক কিছু নজরে পড়েনি।”

“বিছানার পাশে জলের গ্লাস ছিল কিনা খেয়াল করেছিলি?”

রিনিতা একটু চিন্তা করে বলল, “মনে তো হয় ছিল।”

“ভরতি ছিল, না খালি?”

“অত খেয়াল করিনি।”

“বুঝেছি।”

“কী বুঝলে?”

“তোর কাছে নির্ভরযোগ্য কি পাব না।”

“তার মানে?”

“মানে গ্লাস ছিল, কিন্তু তাতে জল ছিল না।”

“আশ্চর্য! জানলে আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?

“ঠিক উত্তর পেলে আরও অনেক প্রশ্ন করতাম। এখন চল, সাড়ে আটটা প্রায় বাজতে চলল। ঝড়-বৃষ্টি আরও কিছুক্ষণ চলবে। ব্রেকফাস্ট খেয়ে কাজ এগোই।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *