Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » একেনবাবু ও বর্মণ বাড়ি রহস্য || Sujan Dasgupta » Page 7

একেনবাবু ও বর্মণ বাড়ি রহস্য || Sujan Dasgupta

সাড়ে সাতটার একটু আগেই সবাই ডিনার টেবিলে এসে বসল- তুঙ্গনাথবাবু তখনও আসেননি। ঋদ্ধি মুখ-চোখ লাল করে মাকে রুদ্ধস্বরে বলল, “বাবা, রাজি তো হলই না। উলটে ঘর থেকে কাগজপত্র চুরি করার মতলব করছি বলে যাচ্ছেতাই করল!”

“কী বলতে গিয়েছিলি?” শিখা জিজ্ঞেস করল।

“বলেছিলাম বাবার সঙ্গে ঘর পালটে রাতে শোব, যাতে কেউ ঘরে ঢুকলে বাবাকে না পায়। আমার গলায় দড়ি দেওয়া অত সহজ হবে না, আমি রেডি হয়েই থাকব।”

“তুই বাবাকে চিনিস না? এতে বাবা কখনো রাজি হবে?”

ঋদ্ধি একেনবাবুর দিকে তাকাল। একেনবাবু একটু লজ্জা-লজ্জা মুখ করে বসে রইলেন— সাজেশনটা উনিই দিয়েছিলেন।

সত্য বোধহয় ঋদ্ধিকে দুর্ভাবনা মুক্ত করার জন্য বললেন, “দুশ্চিন্তা করছেন কেন? আমরা এতগুলো লোক বাড়িতে রয়েছি, সবাই খেয়াল রাখব ওঁর ঘরের দিকে।”

আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ল। ঋদ্ধি চিড়বিড়িয়ে উঠল, “চিন্তা তো আপনাকে নিয়ে আপনি কে কারোর জানা নেই, হঠাৎ এসে বাবার সঙ্গে এত আত্মীয়তা করছেন কেন? মতলবটা কী? কেন এসেছেন এখানে?”

হঠাৎ এই আক্রমণে সত্য হতবাক হয়ে গেলেন!

“কী বলছেন আপনি!”

“ঠিকই বলছি, আপনার ধান্ধা আমি ভালোমতোই বুঝেছি। বাবার সামনে একটা বিশ্রী সিন হবার আগে এখান থেকে মানে মানে কেটে পড়ুন তো… পারলে এখনি!”

কথাটা ঋদ্ধি এত বিশ্রীভাবে চেঁচিয়ে বলল যে শিখা পর্যন্ত প্রতিবাদ না করে পারল না।

“দাদা, কী যা-তা বলছিস!”

ঋদ্ধির কথায় সত্যর মুখ কালো হয়ে গেল। রিনিতা ভাবছিল হে ধরণী দ্বিধা হও— এই বিষাক্ত পরিবেশ থেকে কখন পালানো যায়! আর একমুহূর্ত এ বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করছিল না ওর! কানুদার দিকে তাকাল। একেনবাবু চুপ করে বসে যেন নাটক দেখছেন। তুঙ্গনাথবাবু তখনই খাবার ঘরে ঢুকলেন। ঋদ্ধির শেষ কথাগুলো নিশ্চয় শুনতে পেয়েছেন। গম্ভীর মুখে সত্যকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী ব্যাপার?”

সত্য উঠে দাঁড়ালেন। শান্তভাবে তুঙ্গনাথবাবুকে বললেন, “আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন, আমার এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত।”

ওঁকে থামিয়ে দিয়ে তুঙ্গনাথ বললেন, “না, তুমি যাবে না! কারোর যেতে হলে ঋদ্ধি যাবে।” তারপর সবার উদ্দেশে ঘোষণা করলেন, “তোমরা সবাই শুনে নাও। সত্য আমারই ছেলে… হ্যাঁ, ওর মাকে আমি বিয়ে করিনি, কিন্তু ওর পিতৃত্ব অস্বীকার করি না।”

ঘরে যেন বাজ পড়ল! ঘোষণাটা এত ড্রামাটিক, সবাই নির্বাক! অরুন্ধতী রাগে-অপমানে কাঁপতে কাঁপতে চেয়ার ছেড়ে উঠে টলতে টলতে নিজের ঘরের দিকে এগোলেন। শিখা দৌড়ে উঠে মাকে ধরে ফেলল, তারপর ওঁর কাঁধ জড়িয়ে, ধরে ধরে নিয়ে গেল। কল্পনা ডেকচি থেকে হাতা দিয়ে থালায় খিচুড়ি পরিবেশন করছিল। সশব্দে হাতা ফেলে ঘর থেকে অদৃশ্য হল। ঋদ্ধি কিছুক্ষণ হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে মাথা নীচু করে বেরিয়ে বোধহয় মায়ের কাছে গেল।

ঠিক কী করণীয় রিনিতা বুঝতে পারল না। এরকম অস্বভাবিক জঘন্য একটা পারিবারিক অশান্তিতে ওর কী কর্তব্য? সত্য মুখ-চোখ লাল করে করে বসে আছেন। ঘরের মধ্যে মৃদু হাসিমাখা মুখে একেনবাবু নির্বিকার।

.

তুঙ্গনাথবাবু হাঁক দিয়ে কল্পনাকে ডেকে আনলেন।

“এঁদের খাবার দাও। অন্যদের জিজ্ঞেস করো তারা কোথায় খাবে। আমার আর সত্যর খাবার আমার ঘরে দিয়ে যাও।” বলে এতটুকু দেরি না করে সত্যকে নিয়ে ঘরে চলে গেলেন।

কল্পনা কোনো কথা না বলে খিচুড়ি আর ভাজাভুজি রিনিতা আর একেনবাবুর প্লেটে দিল। “এ ছাড়া আর কিছু নেই।” জানিয়েই বোধহয় ছুটল গৃহকর্ত্রীর কাছে।

একেনবাবু গভীরভাবে কিছু চিন্তা করছেন।

রিনিতা ফিসফিস করে বলল, “কী ভাবছ, কানুদা?”

“খুব কনফিউজিং। খাওয়া-দাওয়া করে তোর ঘরে চল।”

রিনিতার কিছুই খেতে ইচ্ছে করছিল না। নিতান্ত প্লেটের খাবার একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না, নামমাত্র খুঁটল। দেখল একেনবাবু দিব্যি পরিপাটি করে খেলেন।

“বুঝলি রিনিতা, ভুনি খিচুড়ির টেস্টই আলাদা, একেবারে পারফেক্ট রান্না— ভাজামুগের খাসা গন্ধ নাকে এল!”

“কানুদা! বাইরে ঝড়ের তাণ্ডব, ভেতরে এইসব চলছে… এর মধ্যেও তোমার ভাজা মুগডালের গন্ধ নাকে গেল!”

“শোন, ঝড় বন্ধ করতে পারব না, আর এই পারিবারিক ব্যাপারেও কিছু করতে পারব না… তাই না? কিন্তু এমন খিচুড়ি ভালো না বললে রাঁধুনিকে অপমান করা হবে।”

সত্যি, কানুদা মাঝে মাঝে বড্ড ইরিটেট করে! বাপিদা ওঁর গল্পে ঠিকই লেখেন!

রিনিতা আর কোনো কথা বলল না। একবার ভাবছিল শিখার কাছে যাবে, কিন্তু কী বলবে ওকে!

খাওয়া হয়ে গেলে রিনিতার ঘরে এসে বসলেন একেনবাবু। রিনিতা গোঁজ হয়ে রইল।

“তুমি কিছু জানতে চাও?”

“হ্যাঁ, সত্যবাবুর সম্পর্কে কী জানিস তুই?”

“প্রায় কিছুই না। গল্প করেছি কিছুক্ষণ, তবে নিজের সম্বন্ধে কিছুই বলেননি। না, ভুল বললাম… কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন অল্প কিছুদিন আগে ওঁর মা মারা গেছেন। আর জানি বাড়ি রামপুরহাটে।”

“তার মানে তো বীরভূমে—সিউড়ির কাছে।”

“তাই হবে। যখন শুনলেন তুমি কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে আমাকে নিতে আসছ, বললেন যা ঝড়-বৃষ্টি আসছে… পারলে উনিও একটা রাইড নিতেন, কিন্তু যাবেন উলটো দিকে।”

“পুরো নামটা জানিস?”

“না, সত্যকাম বোধহয়, পদবি বলেননি। কেন বলো তো?”

“যাক গে, জেনেই-বা কী লাভ!”

“আচ্ছা কানুদা, তুঙ্গনাথবাবু যদি সত্যিই সত্যর বাবা হন, তাহলে তো সত্য

. অবৈধ সন্তান, তাই না?”

“তাই তো হবে, বিয়ে যখন করেননি।”

“সত্যকে দেখে তো আমাদের থেকে একটু ছোটোই মনে হয়…

“তাহলে পরকীয়া! …ভেরি ইন্টারেস্টিং।”

রিনিতা গজগজিয়ে উঠল, “এর মধ্যে বড়োলোকদের কেচ্ছাকাহিনি ছাড়া কী ইন্টারেস্টিং পেলে তুমি?”

একেনবাবুর ঠোঁটে সামান্য হাসি, “তুই শুয়ে পড় এবার। রাত্রে ভয় করলে আমার দরজায় ধাক্কা দিস। যা ঝড়ঝঞ্ঝা চলছে! চাস তো আমি এই ঘরেই মেঝেতে শুতে পারি।”

“না না, তার কোনো দরকার নেই। শুধু একটাই চিন্তা, তুঙ্গনাথবাবুকে যে মার্ডার করার চেষ্টা করেছিল, সে আবার আজ রাতে না হানা দেয়!”

“ওটা নিয়ে একেবারেই ভাবিস না। কি হবে না।” বোনকে আশ্বাস দিয়ে একেনবাবু নিজের ঘরে চলে গেলেন।

রিনিতা ভাবল এত নিশ্চিন্তে কানুদা কথাটা বলল কী করে!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *