Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » একালের ওথেলো || Dona Samaddar

একালের ওথেলো || Dona Samaddar

একালের ওথেলো

ডিপিএস থেকে হায়ার সেকেন্ডারি কমপ্লিট করে সাউথ সিটিতে ভর্তি হয়েছে রিমলি। পোশাক-আশাকে বেশ আধুনিকা। খোলামেলা পোশাকে কোন জড়তা নেই। লেখাপড়া ও ভীষণ ভালো। সুন্দর গান গায়। ছিপছিপে রোগা। মাথাভর্তি চুল একদম কোমর পর্যন্ত। ছোট পোশাক কিন্তু বড়োচুলে অনন্যা রিমলি। মুখে অনর্গল ইংরেজি। ছেলেরা এক নজরেই ওর প্রেমে পড়ে যায়।
কলেজের প্রথম দিন । সবকিছুই অচেনা তার। সহপাঠী ছেলেরা আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে চাইলো ওকে। ও জানতো না ইংরেজি অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের রুম কোনটা। অবশ‍্য বেশিক্ষণ লাগলো না জেনে নিতে। হলের মাঝে একটি বেঞ্চে বসলো। কলেজ জয়েন করতে ওর বেশ কয়েক সপ্তাহ দেরি হয়ে গেল।
প্রথম দিন পাশ পেপারের মধ্যে অনার্সের একটা ক্লাস আছে। প্রফেসর বাগচীর ক্লাস। ছাত্র-ছাত্রীরা বেশ সমীহ করে চলেন ওনাকে। বেশ গম্ভীর, কড়া মেজাজের। সাউথ কলকাতাতেই থাকেন। প্রতিদিন একটা পেল্লাই গাড়ি নিয়ে আসেন কলেজে। কলেজের সামনে একটি চায়ের দোকানে দিনে একবারই আসেন। থার্ড ক্লাস। অনেকে ক্লাস বাঙ্ক করল। কলেজের প্রথম দিন। পুরো ক্লাস করেই তার ফেরার ইচ্ছা। সেভাবেই বাড়ির ড্রাইভারকে বলা আছে। গটগট করে ক্লাসে ঢুকলেন বাগচী। শুরুতেই বললেন,’হ‍্যাভ এ গুড ডে স্টুডেন্টস’। আজ উনি পড়াতে চান ট্রাজেডি অফ শেক্সপিয়ারের ওথেলো ড্রামাটি। প্রফেসরের বয়স পঞ্চাশোর্ধ। বেশ গুরু গম্ভীর গলায় শুরু করলেন ওথেলো। দৃপ্ত ভাষায় ওথেলো ক্যারেক্টারগুলো বর্ণনা করছিলেন। রিমলি মুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগলো। বেশি ইন্টারেস্ট লাগছিল ক্যারেক্টারগুলো। হঠাৎ বেল জানিয়ে দিল আজকের মতন ক্লাস এটুকুই।
সন্ধ্যেবেলায় হালকা টিফিন করে চ্যাপ্টারটা নিয়ে বসল রিমলি। ভাবছিল যদি আগে থেকে একটু জেনে রাখা যায়। বিরাট বড় চ্যাপ্টার। মাঝে মাঝে কিছু শব্দের অর্থ তার জানা নেই। বিরাট আশা নিয়ে বসে হতোদ্যম হয়ে বসলো। কলেজ রুটিনটা দেখলো। আগামীকাল বাগচীর কোন ক্লাস নেই। পরের ক্লাস আগামী পরশু। অধীর আগ্রহে রিমলি বাগচীর পরের ক্লাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
সাউথ সিটি কলেজ। বাগচীর ক্লাস। বিষয় ওথেলো। রিমলি ডুবে গেল বাগচীর পড়ানোতে। হাজার অসুবিধা থাকলেও রিমলি বাগচীর ক্লাস মিস করত না। ওর চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল সে কথা। ধীরে ধীরে রিমলি যেন প্রফেসর প্রেমে পড়ে গেল। সারা কলেজ যার জন্য পাগল সে বাগচীর প্রেমে। তবে ওই বিষয়টি কারও সঙ্গে শেয়ার করেনি।
রিমলির কোচিং এর দরকার। বিশেষত ইংরেজির জন্য। বাগচীর কাছে গেলেন রিমলির বাবা। অধ্যাপক যে ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি তা নয়। উনি বুঝেও না বোঝার ভান করেই থাকতেন। তার ভরা সংসার। স্ত্রী আছেন। ছেলে মেলবোর্নে ডাক্তারি পড়তে গেছে। ওনার মেয়ের বয়সী একটি মেয়ে ওনার প্রেমে হাবুডুবু- ব্যাপারটা কেমন যেন বেমানান। উনি চাইতেন রিমলিকে বোঝাতে। কিন্তু সময় বা সুযোগ কোনোটাই হচ্ছিল না। তাই রিমলিকে প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগটা তিনি লুফে নিলেন।
প্রথমদিন প্রফেসর এলেন রিমলিকে পড়াতে।ওর বাবা প্রফেসরের সমবয়সী হবে। উনিও বেশ প্রাণখোলা। খোশমেজাজের মানুষ। বেশ খানিকক্ষণ কথাবার্তা হল। এরপর তিনি ধীরে ধীরে রিমলির ঘরের দিকে এগোলেন পড়ানোর জন্য। বেশ গোছানো ঘরটা। প্রচুর টেডি বিয়ার ছড়ানো আছে ঘরে। টেডি বিয়ারের পাশাপাশি ঘরে অনেক বুকসেলফ ও আছে। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন লেখকের এর সব দামি দামি বই। রিমলি পড়াশোনা করতে ভালোবাসে। বাইরে প্রাণখোলা মেয়েটির ঘরের ভিতরে একদম শান্ত। পড়ানো শুরু করলেন ওথেলো। প্রফেসর মেয়েটির চোখের দিকে তাকাতে সাহস পেতেন না, যদি ডুবে যান। ছাত্রী মন্ত্রমুগ্ধের মতন শুনতেন প্রফেসরের স্পিচ।
কয়েক মাস পর প্রস্তাবটা আসে রিমলির কাছ থেকে।এ কয়েক মাসে প্রফেসর ও ছাত্রীর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। ওনার বাঁধা ছিল ওনার বয়স, সংসার ও সমাজ। তবু ছাত্রীর বাঁধনছাড়া উচ্ছ্বাসে উনিও ভেসে গেলেন।
ধীরে ধীরে দুজন অসমবয়সী প্রেমী কাছাকাছি আসতে শুরু করে। বাইরে খুব কমই দেখা করতেন ওনারা। সপ্তাহে তিন দিন আসতেন রিমলিদের বাড়ি। এছাড়াও ছুটিছাটা পেলেও চলে আসতেন তিনি।
ওথেলো পড়াতে পড়াতে দুজনেই হারিয়ে যেতেন। ওখানেও ওথেলো ডেসডিমোনার অনেক প্রতিকূলতা ছিল এক হতে। ডেসিমোনার থেকে ওথেলো বহু বড় ছিলেন। রূপেও বিপরীতধর্মী ছিলেন ওনারা। ডেসডিমোনা যেমন সুন্দরী ছিলেন অথেলো ছিলেন তেমন কুৎসিত। তবু ভালোবাসা এক করেছিল ওনাদের। সেই ভালোবাসা তো ওনাদের মধ্যেও আছে। তবে এক হতে আপত্তি কোথায়? এমনই এক সন্ধ্যায় রিমলির দাবিকে সম্মান জানিয়ে বাগচী ডুবে গেলেন রিমলির প্রেমে। স্বর্ণালী সন্ধ্যাকে সাক্ষী রেখে দুটো শরীর আজ এক হয়ে গেল। দুজনেই পেল মিলনের চরম তৃপ্তি।
ক্রমশ দুজন দুজনের কাছে আরো বেশি মূল্যবান হয়ে উঠলো। এখন আর ওনারা কোন সমস্যাকে ভয় পেতেন না। প্রফেসর স্বীকৃতি দিতে চাইলেন ওনার ভালোবাসাকে। রিমলি একটু সময় চেয়ে নিল। অন্তত ব্যাচেলার ডিগ্রী কমপ্লিট করতে চাইছিল।
হঠাৎ কয়েক মাস পর রিমলি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে পরে। ভীষণ অসুস্থ। কিছু খেতে পারছিলো না। ডাক্তার দেখানো হলো। রিমলির বাবা মার মাথায় বজ্রাঘাত। মারণ রোগ ধরেছে রিমলিকে। প্যানক্রিয়াস, কিডনি,লিভার সব আক্রান্ত। ঝুঁকি নেননি রিমলিরর বাবা। একেবারে বিদেশ নিয়ে চলে গেলেন একটু বেটার ট্রিটমেন্টের আশায়। কিন্তু রিমলি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে পড়ছিল। চিকিৎসায় তেমন কোনো সাড়া দিচ্ছিলো না।
এদিকে অধ্যাপক উন্মাদপ্রায়। প্রতিনিয়তঃ যোগাযোগ রেখে চলেছেন রিমলিরর বাবা মার সাথে। একসময় ডাক্তারও আশা ছেড়ে দিলেন। কয়েক সপ্তাহ সময় দিলেন। ফিরে এলো রিমলির পরিবার। ছুটে এলেন অধ্যাপক। কোন সাড়া নেই রিমলিরর। ভিতরে ভিতরে ভীষণ ভেঙে পড়লেন তিনি। প্রতিদিন তিনি একবার ফোন করতেন ও একবার বাড়িতে এসে রিমলিকে দেখে যেতেন।
এমনই এক সকালে প্রফেসর ফোন করলেন রিমলির বাবাকে। জানতে পারলেন রিমলি আর নেই। দুচোখ ভরে এল জলে। ভীষণ অসহায় লাগছিল ওনার। সারাদিন নিজের ঘরের থেকে বেরোলেন না উনি।
পরের দিন বাগচীকে অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। মিসেস বাগচী অন্যান্যদের সাহায্যে দরজা ভেঙে দেখলেন খাটের উপর বাগচীর নিথর দেহ পড়ে আছে। বুকের ওপর রয়েছে “ওথেলো” বইটা। ডাক্তার জানালেন ঘুমের ঘোরেই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে স্যারের।
সেকালের অথেলো ডেসডিমোনার মধ্যে ভালোবাসা থাকলেও ওনাদের জীবন বিয়োগান্ত ছিল। একালের বাগচী ও রিমলির মধ্যে অফুরন্ত ভালোবাসা থাকলেও পরিণতি বিয়োগান্তই থাকলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress