Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » একাকিত্বের আঁধারে শক্তির খোঁজ || Pallav Sanyal

একাকিত্বের আঁধারে শক্তির খোঁজ || Pallav Sanyal

বিকাশ প্রতিদিনের মতো সেই সকালেও অফিস যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। সূর্যের আলো যেমন প্রতিদিন নতুন দিনের বার্তা নিয়ে আসে, তেমনি বিকাশের জীবনেও প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জের উদয় ঘটে। সংসার, অফিস, বন্ধুত্ব—সব দিক সামলানোর দায়িত্ব তার কাঁধে। কিন্তু এই সব দায়িত্বের ভিড়ে তার নিজের অনুভূতিগুলো যেন কোথাও হারিয়ে গিয়েছিল।

বিকাশের পরিবার বড়। স্ত্রী, দুই সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মা—সবাই তার উপর নির্ভরশীল। পরিবারের প্রত্যেক সদস্য তাকে ভালোবাসে, কিন্তু তারা কেউই বুঝতে পারে না যে বিকাশের মনের ভেতর প্রতিদিন কতটা ঝড় বয়ে যায়। সকালের নাস্তার সময় সবাই হাসি-মজায় মেতে থাকে, কিন্তু বিকাশের ভেতরের ক্লান্তি তার চোখের কোণে স্পষ্ট। তার স্ত্রী মাধুরী, যে সংসারের সমস্ত কাজ সামলে নেয়, সে-ও ভাবে বিকাশ সবকিছু সহজেই সামলে নিচ্ছে। কিন্তু বিকাশ জানে, তার ভেতরের চাপের কথা বলতে গেলে মাধুরী হয়তো বুঝবেই না।

অফিসে যাওয়া মানেই আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্র। বসের চাপ, সহকর্মীদের অসহযোগিতা, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার তাগিদ—সব কিছু মিলিয়ে বিকাশের জীবন যেন একটি অসীম দৌড়। অফিসের কেউ তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের কাছে সে কেবল একজন কর্মী, যার কাজ সময়মতো শেষ হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। সহকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও তারা কেউই তার কষ্টগুলো বুঝতে পারে না। তাদের কাছে বিকাশের কঠোর পরিশ্রম কেবল তার দায়িত্ব পালন বলে মনে হয়।

বিকাশের বন্ধুরাও ঠিক এই একইভাবে তাকে দেখে। তারা মনে করে বিকাশ তাদের জন্য সবসময়ই নির্ভরযোগ্য। তারা যখন কোনো সমস্যায় পড়ে, বিকাশই তাদের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু কেউই তার গভীর একাকীত্ব বুঝতে পারে না। বিকাশের চিন্তা-ভাবনার গভীরে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

মাধুরীর সঙ্গে তার সম্পর্কও যেন দিনে দিনে মেকি হয়ে যাচ্ছে। মাধুরী তাকে ভালোবাসে, কিন্তু সে চায় বিকাশ সব সময়ই শক্তিশালী হয়ে থাকুক। বিকাশের মনের দুর্বলতা বা ক্লান্তি বোঝার ক্ষমতা হয়তো তার নেই। অনেক সময় বিকাশ চেষ্টা করে তার মনের কথা বলার, কিন্তু মাধুরী তার কাজের দায়িত্ব বা বাচ্চাদের পড়াশোনার চিন্তায় এতটাই ব্যস্ত থাকে যে বিকাশের মনের গভীর দুঃখগুলো আর আলোতে আসে না।

এই সবকিছুতে বিকাশের জীবন এক ধরণের একাকীত্বে বন্দি। রাতে যখন সে ঘরে ফিরে আসে, ক্লান্ত শরীরে শুয়ে থাকে, তখন তার মনের ভেতর একটাই প্রশ্ন জাগে—“আমার নিজের জন্য কি কিছু আছে?” পরিবার, বন্ধু, অফিস—সব জায়গাতেই সে সবার দায়িত্ব পালন করছে, কিন্তু নিজের মনের চাহিদা কোথাও পূরণ হচ্ছে না।

একদিন বিকাশ একটি বই পড়ছিল—এক ধরণের আত্মোন্নয়নমূলক বই। সেখানে লেখা ছিল, “জীবনের সংগ্রাম আমাদের শক্তিশালী করে তোলে, যদি আমরা সেই সংগ্রাম থেকে কিছু শিখতে পারি।” এই লাইনটি বিকাশকে গভীরভাবে নাড়া দিল। সে বুঝতে পারল, তার জীবন হয়তো কঠিন, কিন্তু এই সংগ্রামই তাকে আরও দৃঢ় করে তুলছে।

এরপর থেকে বিকাশ তার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করল। সে বুঝল, দায়িত্বের বোঝা ভাগ করে নেওয়ার জন্য তাকে প্রথমে নিজেকে প্রকাশ করতে হবে। মাধুরীর সঙ্গে সে খোলামেলা কথা বলল। প্রথমে মাধুরী হয়তো বুঝতে পারেনি, কিন্তু ধীরে ধীরে সে বিকাশের দুঃখগুলো উপলব্ধি করতে শিখল।

অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গেও বিকাশ তার কাজের চাপ ভাগ করে নিতে শিখল। সে জানল, প্রত্যেকেই নিজের জীবনে কোনো না কোনোভাবে সংগ্রাম করছে। বন্ধুরা যখন তার কাছে আসে, তখন সে কেবল তাদের সমস্যা শোনার বদলে নিজের কথাও শেয়ার করতে শুরু করল।

বিকাশ বুঝতে পারল, একাকীত্ব আমাদের দুর্বল করে দেয় না, বরং আমাদের জীবনের নতুন পথ খুঁজতে শেখায়। আমাদের সংগ্রামের মাঝেই লুকিয়ে থাকে শক্তি খুঁজে পাওয়ার আসল উপায়। এখন বিকাশের জীবনে দায়িত্বের বোঝা কমেনি, কিন্তু তার মনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। সে জানে, জীবন কঠিন, কিন্তু সেই কঠিন জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত আমাদের আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ এনে দেয়।

বিকাশ প্রতিদিন সকালে উঠে নতুন দিনের প্রস্তুতি নেয়। স্ত্রী মাধুরী সকালে নাস্তা বানায়, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়, আর বৃদ্ধ বাবা-মা নিজেদের মতো করে সময় কাটায়। বাইরে থেকে বিকাশের জীবন শান্তিপূর্ণ মনে হলেও তার মনের ভেতর গভীর অশান্তি। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে গিয়ে বিকাশ নিজের অস্তিত্বই যেন ভুলে গেছে।

অফিসে ঢুকলেই আরেক দুনিয়া। বসের খিটখিটে মেজাজ, ডেডলাইনের চাপ, আর সহকর্মীদের তুচ্ছ প্রতিযোগিতা—সব মিলে বিকাশ যেন এক অনন্ত লড়াইয়ের যোদ্ধা। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করে না, “তোমার কেমন লাগছে?” সহকর্মীদের চোখে সে নিখুঁত কর্মী; পরিবারের কাছে সে অবিচল ভরসা। কিন্তু কেউ তার ভেতরের ক্লান্তি বা একাকীত্বের গল্প শোনে না।

একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে বিকাশের মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকে। বাসের জানালার বাইরে তাকিয়ে সে ভাবে, “আমি কি এই জন্য বাঁচছি? প্রতিদিন এক দম বন্ধ করা চক্রের মধ্যে পড়ে আছি। পরিবার, কাজ, বন্ধুত্ব—সবকিছু সামলাতে গিয়ে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলছি।”

রাতে বাড়ি ফিরে মাধুরীর সঙ্গে সে কথা বলতে চায়। কিন্তু মাধুরী তখন বাচ্চাদের পড়ানোর মধ্যে ব্যস্ত। বিকাশ চেষ্টা করলেও তার কথাগুলো যেন কোথাও হারিয়ে যায়। একাকী বেডরুমে শুয়ে সে চিন্তা করে, “কেউ কি আমার মনের কথা বুঝবে? কেউ কি আমার লড়াইয়ের গভীরতায় পৌঁছাতে পারবে?”

বিকাশের বন্ধুদের সঙ্গেও সম্পর্ক এক ধরণের ভ্রান্ত নিরাপত্তায় ভরা। তারা মনে করে বিকাশ সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে। কিন্তু তার নিজের সমস্যাগুলো শোনার মতো সময় তাদের নেই। বিকাশের জীবনের সংগ্রাম যেন কারও কাছেই দৃশ্যমান নয়।

কয়েকদিন পর অফিস থেকে ফেরার সময় বিকাশ একটি বইয়ের দোকানে ঢুকে। একটি বইয়ের শিরোনাম তার চোখে পড়ে—“নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্প”। বইটি হাতে তুলে সে পড়তে শুরু করে। বইয়ের একটি লাইন তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে—“সংগ্রাম মানেই একাকীত্ব নয়, বরং নিজের ভেতরের শক্তিকে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ।”

সেই রাতেই বিকাশ সিদ্ধান্ত নেয়, তাকে তার একাকীত্ব দূর করতে হবে। পরদিন সকালে সে মাধুরীর সঙ্গে বসে খোলাখুলি কথা বলে। প্রথমে মাধুরী অবাক হলেও ধীরে ধীরে সে বিকাশের কথা বোঝে। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, একে অপরের প্রতি মনোযোগ বাড়াবে এবং নিজেদের চিন্তা-ভাবনা শেয়ার করবে।

অফিসে গিয়েও বিকাশ তার সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। সে তাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলে এবং বোঝে, তারা প্রত্যেকেই নিজের জীবনে সংগ্রাম করছে।

ধীরে ধীরে বিকাশ উপলব্ধি করে, জীবনের সংগ্রাম একাকীত্বের কারণ নয়। এটি এমন একটি পথ যা নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার সুযোগ দেয়। তার দায়িত্ব কমেনি, তবে তার মনের ভার অনেকটা হালকা হয়েছে। এখন সে জানে, জীবনের প্রতিটি লড়াই তার শক্তিকে আরও গভীর করে তোলে।

বিকাশের জীবন সহজ নয়, কিন্তু এখন সে নিজেকে হারায় না। বরং প্রতিদিন সে নতুন চ্যালেঞ্জকে আলিঙ্গন করে, কারণ সে জানে, সংগ্রামের মাঝেই লুকিয়ে আছে তার আসল শক্তি।

বিকাশ প্রতিদিন সকালে উঠে নতুন দিনের প্রস্তুতি নেয়। স্ত্রী মাধুরী সকালের নাস্তা বানায়, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়, আর বৃদ্ধ বাবা-মা নিজেদের মতো করে সময় কাটান। বাইরে থেকে বিকাশের জীবন শান্তিপূর্ণ মনে হলেও তার ভেতরে একটি অদৃশ্য চাপ বিরাজ করে। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে গিয়ে বিকাশ নিজের অস্তিত্ব ভুলে গেছে।

অফিসে ঢুকলেই আরেক রকম চাপ। বসের খিটখিটে মেজাজ, ডেডলাইনের চাপ আর সহকর্মীদের প্রতিযোগিতা—সব মিলে বিকাশ যেন এক অবিরত লড়াইয়ের অংশ। সহকর্মীরা মনে করে বিকাশ দক্ষ কর্মী, পরিবার ভাবে সে দৃঢ় ভরসা। কিন্তু কেউ বোঝে না যে তার ভেতর কীভাবে একাকীত্ব আর ক্লান্তি বাসা বেঁধেছে।

একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে বিকাশের মনে এক নতুন ভাবনা আসে। “আমার কি নিজের জন্য কিছুই নেই? প্রতিদিন শুধু অন্যদের খুশি করার চেষ্টা করছি। এই চক্র কি কোনোদিন থামবে?” তার মনে হয়, নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে না পারার জন্যই সে এই একাকীত্বে বন্দি।

রাতে বাড়ি ফিরে বিকাশ মাধুরীর সঙ্গে কথা বলতে চায়। মাধুরী তখন বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। বিকাশ তার কথাগুলো শুরু করলেও মাধুরী পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারে না। হতাশ হয়ে বিকাশ মনে করে, “কেউই বুঝবে না। আমাকেই এই বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে।”

পরের দিন অফিস থেকে ফেরার পথে সে একটি বইয়ের দোকানে ঢোকে। একটি বইয়ের শিরোনাম তাকে থামিয়ে দেয়—”নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্প”। বইয়ের একটি লাইন তার মনে দাগ কাটে—”সংগ্রাম মানেই একাকীত্ব নয়, এটি শক্তি খুঁজে পাওয়ার সুযোগ।”

এই লাইনটি পড়ে বিকাশের ভেতরে কিছু বদলাতে শুরু করে। সে সিদ্ধান্ত নেয় যে তার অনুভূতিগুলো তাকে চেপে রাখতে হবে না। পরদিন সকালে সে মাধুরীর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলে। প্রথমে মাধুরী অবাক হয়, কিন্তু পরে সে বোঝে, বিকাশ কতটা চাপের মধ্যে আছে। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, একে অপরের জন্য আরও বেশি সময় দেবে এবং নিজেদের অনুভূতি শেয়ার করবে।

অফিসেও বিকাশ তার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। সে বুঝতে পারে, তারাও নিজের মতো করে সংগ্রাম করছে। বন্ধুত্ব এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে বিকাশ ধীরে ধীরে নিজের চাপ ভাগ করে নেওয়ার উপায় খুঁজে পায়।

বিকাশ উপলব্ধি করে যে জীবনের সংগ্রাম একা টানার প্রয়োজন নেই। পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের সঙ্গে অনুভূতি ভাগ করে নিলে একাকীত্ব কমে যায়। সে বোঝে, সংগ্রাম তাকে ভেঙে ফেলার জন্য নয়, বরং শক্তিশালী করে তোলার জন্য।

এখনও তার দায়িত্ব কমেনি, তবে সে নিজের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলেছে। একাকীত্বের আঁধার থেকে মুক্ত হয়ে বিকাশ জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে শিখেছে। কারণ সে জানে, প্রতিটি সংগ্রামের মাঝেই লুকিয়ে আছে নতুন শক্তির উৎস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *