ধূসর আবছা আলো
পিঠে নিয়ে ভূতুমের দল,
গাছের কোটোর থেকে ভাঙা পাঁচিলের ফাঁক গলে
উড়ে যায় অন্তহীন আঁধারের পথে।
কালো ছায়া নেমে রাতের কালো আলো বিষন্নতায় ডুবে নেমে আসে সরোবরের বুকে।
ছায়া দোল খায় মায়ের মুখে,
মায়ের বয়স হয়েছে এখন ।
বহুদূরে সিগন্যাল না পেয়ে
ফাঁকা মাঠে থেমে থেমে গোঙাতে থাকে মালগাড়ি এক।
অনেক রাত মালগাড়ি ঝিমোয়
আমার মায়ের মত এতো পথ হেঁটে।
মায়ের আঁচলে এখনো লেগে আছে গ্রীষ্মের দুপুর
ঈশ্বর পাঠশালা যেতে গিয়ে
এই আঁচলই খুলে যেত মাথার উপর….
ছাতার মতন।
সন্ধ্যায় আচের আগুনে মায়ের তপ্ত মুখে আমাদের আহারের খোঁজ।
বর্ষায় প্রকৃতির যৌবনে
নাচন গাছের ডালে
ব্যাঙের গলায়
মায়ের আঁচলে তখন বৃষ্টির ছাপ।
সকালে খিচুড়ি হলে
বিকেলে দুধ সাদা ভাত
ফুটে থাকে কাশফুল হয়ে।
শরৎ এলে আকাশী রঙের পোশাকে আমাকে সাজিয়ে
ভাসিয়ে দিত সাদা কাগজের নৌকায়,
টগর আর শিউলির বনে।
সন্ধ্যা হলে হাত ধরে নিয়ে যেত ঠাকুরের প্রাঙ্গণে প্রাঙ্গণে।
চুপচুপি হেমন্ত এলে
শেষ ডাকে বাবাকে চিঠিতে জানাত তার জীবনের কথা,
অবশ্যই ভুল বানানে।
শীতের পোশাক তখন বড়ই মলিন ছিল,
কাথাতে আড়াল হত শীতের কামড়।
বসন্তের ফুল হাসলে
হাসত মা ও,
বাবার আসা আসন্ন বলে।
কোকিলার খোঁজে কোকিল গাছে গাছে ডেকে ডেকে ফেরে।
মায়ের বয়স হয়েছে,
কতদিন হলো ব্রিজটা সারাই হয়নি।
পলেস্তরা খসে খসে পড়ে বাড়ীর দেওয়ালে।
সব গেছে তবু বেঁচে আছে মায়ের কপাল জুড়ে লাল গোল টিপ।
হাসলে মায়ের তোবড়ানো গালে
এখনো টোল পড়ে।
মা কাঁদে নীরবে সকলের অলক্ষ্যে,
ফ্যালফ্যালে চোখে দেখে
নমামী গঙ্গায় মৃতের লাশ ভেসে যায় ।
মাঝরাতে হুঙ্কার শোনে
ভাইয়ের পেটে ভাই ছুরি ঢোকাচ্ছে,
চারিদিকে হরিনাম এর বদলে
রিরংসা উন্মত্ততা আর মিথ্যের জয়গান বাজে।
মা কাঁদে,
শনশনে চুল হাওয়ায় ওড়ে।
প্রতিদিন মা তোমার কপালে সাটানো লাল টিপ জ্বলজ্বল করে জ্বলে।
আমি দেখি মায়ের কপাল থেকে প্রতিদিনের নতুন সূর্য ওঠে।
এখনো সময় আছে মা,
তোমার কপালে সাটানো
এক একটা লাল অর্ক
তোমার ছেলেদের ভাগ করে দাও_
তোমার প্রতিটি ছেলে জ্বলন্ত অর্ক হয়ে উঠুক ।