Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » এই সব দিনরাত্রি || Jibanananda Das

এই সব দিনরাত্রি || Jibanananda Das

মনে হয় এর চেয়ে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া ভালো ।
এইখানে
পৃথিবীর এই ক্লান্ত এ অশান্ত কিনারার-দেশে
এখানে আশ্চর্য সব মানুষ রয়েছে
তাদের সম্রাট নেই,সেনাপতি নেই; –
তাদের হৃদয়ে কোনো সভাপতি নেই;
শরীর বিবশ হ’লে অবশেষে ট্রেড-ইউনিয়নের
কংগ্রেসের মতো কোনো আশা হতাশার
কোলাহল নেই ।

অনেক শ্রমিক আছে এইখানে ।
আরো ঢের লোক আছে
সঠিক শ্রমিক নয় তারা : –
স্বাভাবিক মধ্যশ্রেণী নিম্নশ্রেণী মধ্যবিত্ত শ্রেণী পরিধি থেকে ঝ’রে
এরা তবু মৃত নয়; অন্তবিহীন কাল মৃতবৎ ঘোরো।
নামগুলো কুশ্রী নয়,পৃথিবীর চেনা-জানা নাম এই সব ।
আমরা অনেক দিন এ-সব নামের সাথে পরিচিত; তবু,
গৃহ নীড় নির্দেশ সকলি হারায়ে ফেলে ওরা
জানে না কোথায় গেলে মানুষের সমাজের পারিশ্রমিকের
মতন নিদিষ্ট কোনো শ্রমের বিধান পাওয়া যাবে;
জানে না কোথায় গেলে জল তেল খাদ্য পাওয়া যাবে;
অথবা কোথায় মুক্ত পরিচ্ছন্ন বাতাসের সিন্ধুতীর আছো ।

মেডিকেল ক্যাম্বেলের বেলগাছিয়ার
যাদবপুরের বেড কাঁচড়া পাড়ার বেড সব মিলে কতগুলো সব?
ওরা নয়-সহসা ওদের হ’য়ে আমি
কাউকে শুধায়ে কোনো ঠিক মতো জবাব পাইনি ।

বেড আছে, বেশি নেই-সকলের প্রয়োজনে নেই।
যাদের আস্তানা ঘর তল্পিতল্পা নেই
হাসপাতালের বেড হয়তো তাদের তরে নয় ।
বটতলা মুচিপাড়া তালতলা জোড়াসাঁকো- আরো ঢের-ব্যর্থ-অন্ধকারে
যারা ফুটপাত ধ’রে অথবা ট্রামের লাইন মাড়িয়ে চলছে
তাদের আকাশ কোন দিকে?
জানু ভেঙে প’ড়ে গেলে হাত কিছুক্ষণ আশাশীল
হ’য়ে কিছু চায়- কিছু খোঁজে;
এ ছাড়া আকাশ আর নেই ।

তাদের আকাশ
সর্বদাই ফুটপাতে;
মাঝে-মাঝে এম্বুলেনস্‌ গাড়ির ভিতরে
রণক্লান্ত নাবিকেরা ঘরে
ফিরে আসে
যেন এক অসীম আকাশে।

এ-রকম ভাবে চ’লে দিন যদি রাত হয়, রাত যদি হ’য়ে যায় দিন, –
পদাচিহ্নময় পথ হয় যদি দিকচিহ্নহীন,
কেবলই পাথুরেঘাটা নিমতলা চিৎপুর-
খালের এপার- ওপার রাজাবাজারের অস্পষ্ট নির্দেশে
হাঘরে হাভাতেদের তরে
অনেক বেডের প্রয়োজন;
বিশ্রামের প্রয়োজন আছে;
বিচিত্র মৃত্যুর আগে শান্তির কিছুটা প্রয়োজন।
হাসপাতালের জন্যে যাহাদের অমূল্য দাদন,
কিংবা যারা মরনের আগে মৃতদের
জাতিধর্ম নির্বিচারে সকলকে-সব তুচ্ছতম আতর্কেও
শরীরের সান্ত্বনা এনে দিতে চায়,
কিংবা যারা এই সব মৃত্যু রোধ ক’রে এক সাহসী পৃথিরী
সুবাতাস সমুজ্জ্বল সমাজ চেয়েছে-
তাদের ও তাদের প্রতিভা প্রেম সংকল্পকে ধন্যবাদ দিয়ে
মানুষকে ধন্যবাদ দিয়ে যেতে হয় ।
মানুষের অনিঃশেষ কাজ চিন্তা কথা
রক্তের নদীর মতো ভেসে গেলে,তারপর,তবু, এক অমূল্য মুগ্ধতা
অধিকার ক’রে নিয়ে ক্রমেই নির্মল হ’তে পারে।
ইতিহাস অর্ধসত্যে কামাচ্ছন্ন এখনো কালের কিনারায়;

তবুও মানুষ এই জীবনকে ভালোবাসে; মানুষের মন
জানে জীবনের মানে : সকলের ভালো করে জীবনযাপন।
কিন্তু সেই শুভ রাষ্ট্র ঢের দূরে আজ।
চারিদিকে বিকলাঙ্গ অন্ধ ভিড়- অলীক প্রয়াণ।
মন্বন্তর শেষ হ’লে পুনরায় নব মন্বন্তর;
যুদ্ধ শেয হয়ে গেলে নতুন যুদ্ধের নান্দীরোল;
মানুযের লালসার শেষ নেই;
উত্তেজনা ছাড়া কোনো দিন ঋতু ক্ষণ
অবৈধ সংগম ছাড়া সুখ
অপরের মুখ ম্লান ক’রে দেওয়া ছাড়া প্রিয় সাধ
নেই।
কেবলি আসন থেকে বড়ো, নবতর
সিংহাসনে যাওয়া ছাড়া গতি নেই কোনো।
মানুষের দুঃখ কষ্ট মিথ্যা নিষ্ফলতা বেড়ে যায়।

মনে পড়ে কবে এক রাত্রির স্বপ্নের ভিতরে
শুনেছি একটি কুষ্ঠকলঙ্কিত নারী
কেমন আশ্চর্য গান গায়;
বোবা কালা পাগল মিনসে এক অপরূপ বেহালা বাজায়;
গানের ঝংকারে যেন সে এক একান্ত শ্যাম দেবদারু গাছে
রাত্রির বর্ণের মতো কালো-কালো শিকারী বেড়াল
প্রেম নিবেদন করে আলোর রঙের মতো অগণন পাখিদের কাছে,
ঝর্‌ ঝর্‌ ঝর্‌
সারারাত শ্রাবণের নির্গলিত ক্লেদরক্ত বৃষ্টির ভিতর
এ-পৃথিবী ঘুম স্বপ্ন রুদ্ধশ্বাস
শঠতা রিরংসা মৃত্যু নিয়ে
কেমন প্রমত্ত কালো গণিকার উল্লোল সংগীতে
মুখের ব্যাদান সাধ দুর্দান্ত গণিকালয়- নরক, শ্মশান হ’লো সব।
জেগে উঠে আমাদের আজকের পৃথিবীকে, এ-রকম ভাবে অনুভব
আমিও করেছি রোজ সকালের আলোর ভিতরে
বিকেলে- রাত্রির পথে হেঁটে;
দেখেছি রজনীগন্ধা নারীর শরীর অন্ন মুখে দিতে গিয়ে
আমরা অঙ্গার রক্ত : শতাব্দীর অন্তহীন আগুনের ভিতরে দাঁড়িয়ে।
এ-আগুন এত রক্ত মধ্যযুগ দেখেছে কখনো?
তবুও সকল কাল শতাব্দীকে হিসেব নিকেশ ক’রে আজ
শুভ কাজ সূচনার আগে এই পৃথিবীর মানবহৃদয়
স্নিগ্ধ হয়- বীতশোক হয়?
মানুষের সব গুণ শান্ত নীলিমার মতো ভালো?
দীনতা : অন্তিম গুণ, অন্তহীন নক্ষত্রের আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *