জাগলো বীরেরা! হয়ে ছিলো যারা প্রতারিত পর্যুদস্ত পরাজিত
ক্রীতদাস, সেই স্বতোজ্জ্বল শক্তিমান রূপোচ্ছল বস্তুপুঞ্জ
সরালো আঙুলে কালো পর্দা চোখ থেকে, ছিঁড়ে বাহু-জংঘা-গ্রীবা
ও কোমর থেকে ঝকঝকে সোনালি শেকল জাগলো সূর্যাস্তের চেয়ে
সুন্দর, সূর্যোদয়ের চেয়ে ভয়াবহ বলিষ্ঠ বীরেরা! দেখলো,
বাঁ-পাশে চাবুক হাতে সারিসারি অসুস্থ মানুষ, ডানপাশে নষ্ট রুগ্ন
মুমূর্ষ প্রকৃতি। সপ্রতিভ স্বাস্থ্যবান স্বপ্নভারাতুর অমর মেধাবী
বস্তুপুঞ্জ–মানুষ ও নিসর্গের মিলিত চক্রান্তে পরাভূত,
নিন্দিত শোষিত–উঠলো স্বপ্নে-মাংসে বাস্তব-অবাস্তব ক্ষুধাসহ,
দেখলো চারপাশে প্রফুল্ল মাংস শজি রক্তিম দ্রাক্ষা ও অঢেল পানীয়।
মাইক্রোফোন সমবেত শ্রোতার সামনে সুখে সবুজ শব্জির মতো
মুখে পুড়লো সুস্বাদু বক্তাকে; ক্যামেরা জিহ্বায় নিলো তাজা পনিরের
মতো মডেলের নির্বস্ত্র শরীর; জাজিম হা-খুলে লাল-ভেজা মুখে,
দগ্ধ কাবাবের মতো, রাখলো সঙ্গমসংযুক্ত দম্পতিকে;
টেলিভিশন গোগ্রাসে গিলে ফেললো পুলকিত দর্শকমণ্ডলি;
চেয়ার চুয়িংগামের মতো খসখসে জিভে চুষতে লাগলো শিক্ষক ও
রূপসী ছাত্রীকে। শহর পল্লী ও অরণ্যের সব ফ্ল্যাট গৃহ ও কুটির
স্বপ্নখোর পেটের ভেতরে নিঃশব্দে জীর্ণ করতে লাগলো
অধিবাসীদের; উড়ে চলে গেলো প্লেন শাড়ি-স্যুট-ওষ্ঠ-ত্বক
গাউন-শোভিত যাত্রীদের উল্লাসে হজম করে গাঢ় নীলিমার
মাংস খেতে-খেতে এক হাজার মাইল বেগে স্বপ্নের উদ্দেশে।
টাওয়ার লাল ওষ্ঠ মেলে সূক্ষ্ণ সৌন্দর্য ছড়িয়ে বস্তুতে-বাতাসে
খেতে লাগলো পৌরসভার সবুজশোভিত পার্ক, পুস্তক হীরের
দাঁতে আস্তে কাটতে লাগলো তার প্রেমতপ্ত লাল পাঠিকাকে;
একটি মহান উজ্জ্বল ট্রাক সুন্দরবনের বর্ণাঢ্য বাঘের মতো
গোধূলিকে সৌন্দর্যে সাজিয়ে লাফিয়ে পড়লো হরিণের মতো
ভীরু বাঙলাদেশের সবচে সুন্দর কৃষ্ণচূড়া গাছের ওপর।
ফাল্গুনের কুয়াশা-নেশা-লাল রঙ-তীব্র তরুণীর স্পর্শে জ্বলে
ধ্যানী শহিদ মিনার পান করলো রঙিন পুষ্পস্তবক,
ভোরভারাতুর পুষ্পদাতাদের,–শহরের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে
দ্বীপপুঞ্জে ব’সে স্বপ্নিল পেশল ট্রাম ভীষণ উল্লাসে ছিঁড়েফেড়ে
খেতে লাগলো নির্জন নিসর্গদাস কবির সবুজ মাংস,
হলুদ মস্তিষ্ক, ধূসর হৃদয়। অভিসারে যাবে বলে নগরীর
সর্বোচ্চ টাওয়ার বুকে গাঁথলো মতিঝিলের প্রখ্যাত শাপলা,
এবং প্রবেশ করলো তার ইস্কুলগামিনী পঞ্চদশী প্রেমিকার
দিগ্বলয়ের মতো জিন ঠেলে স্বপ্নের সুড়ঙ্গ-পথে; অ্যাভেনিউ
হীরণ অঙ্গের মতো স্ফীত প্রসারিত দীর্ঘ হতে হ’তে দুই হাতে
সরিয়ে সোনালি পাড় অন্তর্বাস প্রবেশ করলো তার চন্দ্রাস্তের মতো
লাস্যময়ী, চৌরাস্তায় অপেক্ষমান, ষোড়শী প্রেমিকার উষ্ণ তীব্র
ত্রিকোণ মন্দিরে। স্বপ্ন-পরা বাতিস্তম্ভ দূরে দোলায়িত চাঁদটিকে
তার উদ্ভিন্নযৌবনা বাল্যপ্রেমিকার ব্লাউজ-উপচে-পড়া স্তন ভেবে
বাড়ালো দক্ষিণ হাত দিগ্বলয়ে, বাঁ-হাত বাড়িয়ে দিলো পুব দিকে
দ্বিতীয় স্তনের আশায়। মোহন প্রেমিক ট্রাক প্রেমিকার দেহ ভেবে ব্রিজ
থেকে মৃত্যু-ভয়-ব্যথা অবহেলা করে ঝাঁপিয়ে পড়লো পদ্মায়;
নৈশ রেলগাড়ি স্টেশনে অপেক্ষমান তরুণীর উজ্জ্বল উরুকে তার
স্বপ্নে-হারিয়ে-যাওয়া রেল ভেবে ঝেঁকেঝেঁকে কেঁপেকেঁপে নীলে মেঘে
বাঁশি বাজাতে বাজাতে ছুটে গেলো পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য
প্রান্তের উদ্দেশে। পাথর-টুকরো হীরকের গালে ঠোঁট রেখে
ঘুমিয়ে পড়লো। তখন বাঁ-দিকে কাঁপে সারিসারি অসুস্থ মানুষ,
ডানে কাঁপে, মৃত্যুর ভীতিতে নীল, রুগ্ন নষ্ট মুমূর্ষ প্রকৃতি।