উত্তোরণ
সুব্রত বাবু, মানে, মিস্টার সুব্রত বসু একজন উচ্চ পদস্থ ব্যাংক অফিসার। তিনি তার কর্ম জীবনে অত্যন্ত সচ্চরিত্র, দায়িত্বশীল, জাঁদরেল অফিসার বলেই পরিচিত ছিলেন। তাঁর কোনো শত্রু ও তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারবে না। তাঁর স্ত্রী সরলা দেবী খুবই সরল সাদাসিধা একজন মানুষ।স্বামীকে খুবই শ্রদ্ধা করেন, ততোধিক ভয় ও পান। এ হেনো সুব্রত বাবু যে দিন চাকরি থেকে অবসর নিলেন তাঁর মনে হতে লাগলো তাঁকে কেউ মূল্য দিচ্ছেনা। সবাই তাঁকে এখন বাড়ির বাড়তি মানুষের মধ্যে ফেলে দিয়েছে! এমন কি তাঁর অমন সরল সাদাসিধা স্ত্রী তিনিও যেন তাঁকে সেরকম পাত্তা দিচ্ছেন না। এখন তাকে রোজ বাজারে যেতে হয়। বাজার যাবার সময় সবাই তাদের পছন্দের জিনিস আনতে অর্ডার করে।তাঁর স্ত্রী ও তাঁকে অর্ডার করে জামা কাপড় ছাদে মেলে দিয়ে আসার জন্য।শুধু কি তাই! জামাকাপড় ছাদ থেকে তুলে আনতেও হয়। রাতে মশারি খাটানো, সকালে বিছানা তোলা এসব এখন তাঁর ডিউটির মধ্যেই চলে এসেছে। অথচ এই সব কাজ এতদিন তাঁকে করতে হয় নি। রিটায়ার করার পর কেউ তাকে পাত্তা দিচ্ছেনা! সুব্রতবাবু তো কিছুতেই এসব মেনে নিতে পারছেন না। কারণে অকারণে বাড়িতে ছেলে, বৌমা, স্ত্রীর সাথে ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। একমাত্র সুব্রত বাবুকে সব ব্যাপারে সায় দেয় তাঁর একমাত্র নাতনি পরী। পরী দাদুকে বলে দাদু তুমি এখন বিশ্রাম নেবে। এতো বছর তুমি কাজ করেছ এখন আর কোনো কাজ করবে না, এখন তুমি আর আমি শুধু অর্ডার করবো আর সবাই আমাদের অর্ডার সাপ্লাই দেবে। দেখি তোমাকে কে পাত্তা না দেয়! সুব্রত বাবুর নাতনির কথাটা খুব মনঃপুত হয়েছে। তিনি ঠিক করলেন আর কোনো কাজ টাজ নয় এখন শুধু অর্ডার করবো। বেশ হবে; ওরা আমাকে পাত্তা দেবে না!।দেখি এখন কি করে আমাকে নস্যাৎ করে! যেমন ভাবা তেমন কাজ।পরদিন সকালে তার স্ত্রী তাকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে ডাকাডাকি করতে লাগলেন,তিনি কোনো কর্ণপাত করলেন না। উপরন্তু বৌমা কে ডেকে বললেন আজ বাড়িতে আমার পছন্দের রান্না হবে।খোকা কে বাজারের ব্যাগটা দিয়ে বাজার করে আনতে বলো। বৌমা শশুরের এমন গম্ভীর কন্ঠ অনেকদিন শোনেনি। গুটি গুটি পায়ে ঘরে গিয়ে দেখে বাবার খোকাও বাজার যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। সেদিন সবাই চুপ করেই থাকলো, কেউ সুব্রত বাবুকে বেশি ঘাঁটাতে সাহস করলো না। এ যেনো ব্যাংকের জাঁদরেল অফিসার সুব্রত বাবুকে দেখছে সবাই। সারাদিন ওঁর খুব ভালোই কাটলো। কেউ আজ আর ওঁকে কোনো কাজের হুকুম করেনি। রাত্রে খাওয়া দাওয়া হলে সুব্রত বাবু নাতনির ঘরে এলেন। দুজনে হাত মিলিয়ে খুব হাসলেন। তার পর নাতনির গলা জড়িয়ে বললেন বুঝলে ছোট গিন্নি তোমার জন্যই আজ আমার আর একবার উত্তোরণ ঘটল।