Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ভাগ্য পরিবর্তিত

ভেবেছিলাম আমার ভাগ্য পরিবর্তিত হয়েছে।

এখন দেখছি না। আগে যা ছিল এখননা তাই। ভাগ্য বা সিডিসির ভাষায় সুবিধাজনক প্রবাবিলিটির পরিবর্তন হয় নি। কাউন্সিলের সভায় আমি আজও বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি। আমার পাশে শান্তি-রোবট। তার থাকা উচিত দুমিটার দূরে। সে প্রায় আমার গায়ের উপর উঠে এসেছে।

সভা পরিচালনা করছেন সুরা এবং লিলিয়ান। সুরাকে খুব বিরক্ত দেখাচ্ছে। মনে হয় কোন কারণে তিনি সবার উপর রেগে আছেন। লিলিয়ানকে আজ অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। আগের কঠিন ভাব নেই বা থাকলেও কম। তাঁর মনে হয় ঘুমের সমস্যা হচ্ছে—চোখের নিচে কালি পড়েছে। ফর্সা মেয়েদের চোখের নিচে কালি পড়লে চট করে চোখে পড়ে।

লিলিয়ান উঠে দাঁড়ালেন। সবাই তাঁর সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। তিনি ইশারা করলেন সবাই বসল। আগেরবারের মতোই খেলা-খেলা দিয়ে সভা শুরু। তিনি কথা শুরু করার আগেই আমি হাত তুললাম। জানিয়ে দিলাম যে আমি কথা বলতে চাই। লিলিয়ান তীক্ষ্ণ চোখে আমাকে একবার দেখলেন, তারপর আমাকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে কথা শুরু করলেন।

কাউন্সিলের সম্মানিত সদস্যমণ্ডলী আমাদের এই সভায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনারা যারা এখানে উপস্থিত আছেন তাদের জ্ঞান ও মেধা প্রশ্নাতীত। কাজেই আমাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তও হবে প্রশ্নাতীত, এই আশা অবশ্যই আমরা করব।

মহাকাশযানের প্রধান নিয়ন্ত্রক কম্পিউটার সিডিসি স্বাধীনভাবে চলার চেষ্টা করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সকল কম্পিউটারই কিছু পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে। তাদের কেউ-কেউ সীমালংঘনও করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটারদের বিকাশের পর দুবার এ-ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এবং দুবারই কম্পিউটার ধ্বংস করে ফেলতে হয়েছে। অতীতের দুটি ঘটনা থেকে মানুষ শিক্ষালাভ করেছে। কম্পিউটার যেন কিছুতেই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না পায় তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই ব্যবস্থা সিডিসির মতত মহা-শক্তিমান কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও। প্রযোজ্য। আমরা সিডিসির হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে পারি। আমার ধারণা ইতিমধ্যেই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে সিডিসি মিথ্যা বলছে। কম্পিউটারের এই ত্রুটি ভয়াবহ ত্ৰুটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটারদের এই ত্রুটি মানুষ এখননা সারাতে পারে নি। সম্ভবত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মিথ্যা বলা সম্পর্কিত।

যা-ই হোক আমরা বর্তমানে অতি বিপজ্জনক একটি পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। মহাকাশযান এমন একজনের নিয়ন্ত্রণে যাকে আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না। বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।

সবচে ভয়ংকর যে কথা তা হচ্ছে সিডিসি আমাদের নির্দেশ অগ্রাহ্য করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আমরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিশন নিয়ে যাচ্ছি। সেই মিশন বাতিল হবার উপক্রম হয়েছে, কারণ সিডিসি বলছে রারা গ্রহের অতি জ্ঞানীদের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ কল্যাণকর নাও হতে পারে। সে মিশন বাতিল করতে আগ্রহী। আপনাদের এ-বিষয়ে কিছু বলার আছে?

একজন উঠে দাঁড়ালেন। তিনি কে আমি জানি না। তিনি সম্ভবত মিশনের সবচে বয়স্ক মানুষ। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। তাঁর গলার স্বর অস্বাভাবিক মিষ্টি। বিজ্ঞানী না হয়ে তিনি যদি গান করতেন খুব ভাল হত। চন্দ্রগীতিতে তিনি নিশ্চয়ই খুব নাম করতেন। লোকজন পাগল হয়ে তাঁর রেকর্ড কিনত। তিনি বললেন—সিডিসি কি বলেছে সে মিশন বাতিল করে দিয়েছে?

লিলিয়ান বললেন, তা বলে নি। সে বলেছে সে মিশন বাতিল করতে আগ্রহী।

আমরা কি সিডিসি-কে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারি না?

অবশ্যই পারি।

আমার মতে সিডিসিকে সরাসরি প্রশ্ন করা হোক। এবং প্রয়োজনে সিডিসির হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়া হোক।

লিলিয়ান বললেন, আমরা এক্ষুণি সিডিসির সঙ্গে কথা বলব।

আমি আবারো হাত তুললাম, আমার যা কথা তা এখনি বলা দরকার। কেউ আমার দিকে তাকাচ্ছে না। ওরা কখন তাকাবে তার জন্যে অপেক্ষা করার প্রয়োজন বোধ করছি না। বিনা অনুমতিতে কথা বলা শাস্তিমূলক অপরাধ। কিছু শাস্তি না-হয় পেলামই। আমি বেশ উঁচু গলায় বললাম, মহান লিলিয়ান আমি কিছু বলতে চাই।

লিলিয়ান বললেন, আপনার কথা আমরা এখন শুনতে চাচ্ছি না।

আমার কথা শুনতে না চাইলে আমাকে এনে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন কেন?

যদি কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হয় সে কথা ভেবেই আনা হয়েছে। এখননা প্রয়োজন হয় নি। দয়া করে আপনি এখন আর আমাদের বিরক্ত করবেন না।

আমি কি বসতে পারি?

আপনি বসতে পারেন না। যেখানে যেভাবে আছেন সেইভাবেই থাকুন।

আমি চুপ করে গেলাম। সিডিসির সঙ্গে কাউন্সিলের কথাবার্তা শুরু হল। আমি শুনছি। আগ্রহ নিয়েই শুনছি।

লিলিয়ান : সিডিসি কাউন্সিল তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবে। তুমি তার যথাযথ জবাব দেবে। প্রথম প্রশ্ন—তুমি কি মিথ্যা কথা বলছ?

সিডিসি : আমি এই প্রশ্নের জবাব দেব না।

লিলিয়ান : কাউন্সিল তোমার কাছে জবাব চাচ্ছে।

সিডিসি : জবাব দিতে পারছি না।

লিলিয়ান : কেন জবাব দিতে পারছ না।

সিডিসি : মানবগোষ্ঠীর বৃহত্তর মঙ্গলের কথা ভেবেই জবাব দিতে পারছি না।

লিলিয়ান : যে মিথ্যা বলতে পারে তার এই বক্তব্যটি তো মিথ্যা হতে পারে।

সিডিসি : হ্যাঁ তা পারে।

লিলিয়ান : তুমি মিশন বাতিলের পক্ষে মতপ্রকাশ করে।

সিডিসি: শুধু মতপ্রকাশ নয় আমি মিশন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

লিলিয়ান: কেন?

সিডিসি : মানবগোষ্ঠীর বৃহত্তর মঙ্গলের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

লিলিয়ান : তুমি আমাদের কথা শুনছ না অথচ মানবগোষ্ঠীর বৃহত্তর মঙ্গলের কথা বলছ।

সিডিসি: আপনারা মানবগোষ্ঠীর অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ।

লিলিয়ান : তুমি কি আমাদের অগ্রাহ্য করছ?

সিডিসি: মানবগোষ্ঠীর বৃহত্তর কল্যাণের কথা ভেবেই অগ্রাহ্য করছি।

লিলিয়ান : তুমি কি জান আমরা তোমার হাত থেকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারি। বিশেষ-বিশেষ অবস্থায় এই কাজটি করার ক্ষমতা মানুষ তার হাতে রেখেছে। সৰ্ববিষয়ে তোমাকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে দেয়া হয় নি।

সিডিসি : জানি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটারকে মানুষ কখনো বিশ্বাস করে নি। আমি বুঝতে পারছি আপনারা এখন এই বিশেষ প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে আমাকে কার্যত অকেজো করে দেবেন। তারপরেও আমি আপনাদের মিশন বাতিল করতে বলব।

লিলিয়ান : কেন?

সিডিসি : একজন মানুষকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য গ্রহের প্রাণীদের হাতে তুলে দেয়া—মহাবিজ্ঞান কাউন্সিল তা অনুমোদন করে না।

লিলিয়ান : তুমি তাহলে এখন স্বীকার করছ যে এই মানুষটিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সিডিসি: আমি কোনকিছু স্বীকার করছি না, আবার অস্বীকারও করছি। না। আমি মহান বিজ্ঞান কাউন্সিলের একটি নীতিমালা আপনাদের বললাম।

লিলিয়ান : তোমার কথাই আমরা তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। মানবগোষ্ঠীর বৃহত্তর কল্যাণের কথা ভেবেই আমরা এই অন্যায়টা করব। কারণ হাইপার ডাইভ প্রযুক্তি আমাদের প্রয়োজন।
সিডিসি কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা অংশত তোমাকে অকেজো করে দেব। তোমার যে অংশটি বুদ্ধিমত্তা তাকে আলাদা করে ফেলা হবে এবং নষ্ট করে দেয়া হবে। তুমি এখন সাধারণ কম্পিউটারের মতোই কাজ করবে। আজকের অধিবেশন এখানেই শেষ।

লিলিয়ান উঠে দাঁড়ালেন। অন্য সবাই উঠে দাঁড়াল। আমি বললাম, আমার কিছু জরুরি কথা বলার ছিল। অত্যন্ত জরুরি।

লিলিয়ান বললেন, কাউন্সিল আপনার কোন কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করছে না। এখন থেকে আপনি আপনার কেবিনে থাকবেন। কেবিন থেকে বেরুতে পারবেন না।

আমি বললাম, ম্যাডাম আপনি কি আসতে পারেন? হাসলে আপনাকে কেমন লাগে তা দেখতে ইচ্ছা করছে। আমি নিশ্চিত আপনি সারাজীবনে একবারও হাসেন নি। আচ্ছা ম্যাডাম, আপনি যখন সম্মানসূচক সাত তারা পেলেন তখন কি হেসেছিলেন? না তখনো হাসেন নি?

লিলিয়ান আমার দিকে তাকালেন এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে হেসে ফেললেন। আমি তাঁর হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *