Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

দুদিন পর মশায় বসে ছিলেন আরোগ্য-নিকেতনের দাওয়ায়। সামনে পড়ে রয়েছে একখানা পত্র। সাদা কাগজের চারিধারে কালো বর্ডার দেওয়া ছাপা নিমন্ত্রণপত্র। বিপিনের শ্রাদ্ধের নিমন্ত্ৰণলিপি। মশায় বাড়ির ভিতর থেকে আসবার আগেই রতনবাবুর লোক এসে দিয়ে গিয়েছে। কৃতী প্রতিষ্ঠাবান বিপিনের শ্রাদ্ধ যোগ্য মর্যাদার সঙ্গেই করতে হবে বৈকি। রনবাবু তা করবেন। মশায় শুনেছেন, রনবাবু বলেছেন—তা না করলে চলবে কেন?

পরানের বিবির দেহটা পোস্টমর্টেমের জন্য চালান গেছে। হতভাগিনীর সকারও হল না?

গতকাল সন্ধ্যায় নবগ্রামে একটি শোকসভাও হয়ে গিয়েছে। মশায় যান নি। এসব সভায় সমিতিতে কেমন অস্বস্তি বোধ করেন তিনি। কিশোর এ সভার উদ্যোক্তা। সভায় গ্রামগ্রামান্তরের লোক এসেছিল। ডাক্তারেরা সকলেই ছিলেন। বিপিন এখানকার হাসপাতালে পাঁচ। হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছে। রক্ত ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের সঙ্গে ক্লিনিক হবে ওই। টাকায়। বিপিনের যোগ্য কাজই বিপিন করে গিয়েছে। রোগার্তের বন্ধুর কাজ করেছে। অকালমৃত্যুর গতি রুদ্ধ হোক। বাপকে যেন সন্তানের শ্রাদ্ধ করতে না হয়।

নবগ্রামের তরুণ ছেলে একটি নতুন উকিল হয়েছে, সে বক্তৃতাপ্রসঙ্গে বলেছে—আমাদের এখানে ডাক্তার এসেছে, হাসপাতাল হয়েছে—নতুনকালের ওষুধপত্রও এসেছে, তবুও হাতুড়ের যুগের অন্ধকার সম্পূর্ণরূপে আমাদের যায় নি। বিপিনবাবুর দানে সেই অন্ধকার দূর হল।

কথাটা মিথ্যা নয়। অধিকাংশ ডাক্তারেরাই হাত দেখতে জানেন না, যা জানেন তাকে ঠিক নাড়িজ্ঞান বলা চলে না। কিন্তু তবু যেন কথাটা তাকে একটু লেগেছে।

নারায়ণ! নারায়ণ! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। মনটা খচখচ করছে। এই তরুণ ছেলেটির সঙ্গে প্রদ্যোত ডাক্তারের বন্ধুত্বটা একটু গাঢ়।

আট-দশ জন রোগী এসেছে। রোগী আবার দু-এক জন করে বাড়ছে। যেদিন থেকে তিনি বিনয়ের দোকানে বসেছেন সেই দিন থেকেই এর সূত্রপাত হয়েছে।

বিনয় মধ্যে মধ্যে হেসে বলে—দেখুন। দেশে ম্যালেরিয়া কমে গিয়েছে। ডি-ডি-টি ছড়িয়ে মশার বংশ নির্বংশ হয়ে গেল, থাকবে কোথা থেকে! টাইফয়েড এখানে কম। ওদিকে হাসপাতাল হয়েছে। রোগীরা ওসব রোগে হাসপাতাল যাচ্ছে। চারুবাবু হরেন বসে আছে। আপনার রোগী বাড়ছে।

তা বাড়ছে। কতকগুলি পুরনো রোগে রোগীরা তার কাছে আসে। তিনি সারাতে পারেন। বিশেষ করে পুরনো রোগে ডাক্তারেরা যখন রোগ নির্ণয় করতে না পেরে রক্ত পরীক্ষা এক্স-রে ইত্যাদির কথা বলেন তখন তারা তার কাছে আসে। আর আছে এ দেশের বিচিত্র কতকগুলি ব্যাধি। যেসব রোগের নাম পর্যন্ত দেশজ; যার সঠিক পরিচয় এখনও নূতন মতে সংগ্রহও হয় নি।

রোগীগুলিকে বিদায় করছিলেন মশায়, ভিক্ষের ঝুলি কাঁধে লাঠি হাতে এসে দাঁড়াল মরি বমী।

–জয় গোবিন্দ! মশায় বাবা গো, পেনাম।

ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলে মরি। মাথার চুলগুলি ছোট করে ছাঁটা, কপালে তিলক, পঞ্চান্নষাট বছরের প্রৌঢ়া মরি বন্ধুমী দীর্ঘদিন পর এল। একসময় নিত্য আসত। ওর ছেলে এবং মেয়ে দুজনেরই হয়েছিল যক্ষ্মা। তাদের জন্য ওষুধ নিতে আসত। সে অনেক দিনের কথা। মরির বোষ্টমও মরেছিল যক্ষ্মায়। কিন্তু মরির কিছু হয় নি। এতকাল পর মরিকে সেই কালে ধরল নাকি? এতকাল পর?

মরি এখানকার নিয়মকানুন জানে। মশায়ও জানেন মরির ধরনধারণ। এখন কী হয়েছে প্রশ্ন করলে মরি বলবে—সকল জনাকে বিয়ে করুন বাবা, তারপর বলছি!

সকলের হয়ে গেলে তার দুটি পায়ে হাত রেখে বলবে-বাবা ধন্বন্তরি, আপনার অমৃতের ভাণ্ডার, আমি অভাগিনী আমি পাপী-আমার ভাগ্যে বিষ, বিষের জ্বালায় ছুটে এসেছি। দয়া করুন।

দয়াতে অবশ্য মরির জ্বালা জুড়ায় নি। যক্ষ্মাতেই স্বামী-পুত্র-কন্যা গিয়েছে।

মরি ছেলেমেয়ের মৃত্যু বসে বসে দেখেছে। কাদে নি। বলেছে—যার ধন সে-ই নিলে আমি কেঁদে কী করব? আমি কাঁদব না। শুধু ঠাকুর, তোমার চরণে এইটুকুন নিবেদন, আমাকে নাও। আশ্রয় দাও। বড় তাপ! প্রভু, চরণছায়ায় আমাকেও জায়গা দাও, একপাশে এককোণে।

শেষ রোগীটিকে বিদায় করে মশায় বললেন–কী হল মরি, ডাক এল নাকি তোর? হঠাৎ তুই?

মরি এগিয়ে এসে ঠিক আগের মতন পা দুটি ধরে বললে–না বাবা, মরির সে ভাগ্যি হয় নাই। ছেলেবেলায় বার মাস রোগে ভুগতাম; দু-তিন বার মর-মর হয়েছিলাম, তাই বাবামায়ে নাম রেখেছিল মরি। তাই সেই ছেলেকালেই সকল ভোগ শেষ হয়েছে, এখন মরি পাকা তালগাছের মত শক্ত। আমি এসেছি বাবা আপনার কাছে, এসেছি কালীর দেবাংশী ওঝা মশায়ের কন্যে অভয়ার জন্যে। আপনকার বন্ধু মিশ্ৰ মশায়ের বেটার বউ–

–শশাঙ্কের বউ?

চঞ্চল অধীর হয়ে উঠলেন মশায়। শশাঙ্কের স্ত্রী! সমস্ত শরীরে একটা যেন কম্পন বয়ে গেল।

–হ্যাঁ বাবা। সে-ই পাঠালে। বললে—তুমি একবার মশায় জেঠার কাছে যাও মরি। আমার স্বামীর দুদিনের জ্বরে হাত দেখে–

–হ্যাঁ–হ্যাঁ। কিন্তু কিসের জন্যে–কী হয়েছে?

–বড় অসুখ বাবা। বললে—আমাকে একবার দেখে যেতে বলবি—আমাকে বলে যান। আর কতদিন আমার বাকি।

–গোবিন্দ! গোবিন্দ! নারায়ণ নারায়ণ! কিন্তু হয়েছে কী?

–রোগ নানানখানা। ভুগছে আজ ছ মাস। গুসগুসে জ্বর, খুসখুসে কাশি; সবই সেই কালরোগের মত।

–যক্ষ্মা?

ডাক্তারেরা তাই বলেছে। হরেন ডাক্তার দেখেছে, চারুবাবুও দেখেছেন; সেদিন হাসপাতালের প্রদ্যোতও দেখে এসেছে। ইনজেকশন অনেক হয়েছে। পেনিসিলিন অনেক কয় লক্ষ। কিন্তু কোনো ফল হয় নি। কাশি সমান রয়েছে। জ্বর ছাড়ে নি। কোনো জটিলতার একটি পাকও এতটুকু শিথিল হয় নি।

মরি বললে-বাবা আপনি তো জানেন, এখানে স্বামী গেল হতভাগী মেয়ের, বাপ এখানকার সম্পত্তি বেচে এক তোড়া নোট নিয়ে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে গেল। বাপের বাড়িতে সর্বময় কর্তা হয়ে ছিল। ভাইয়ের ছেলে নিয়ে আর মা-কালীর সেবা নিয়ে সংসারে সে কি অ্যাঁটাট। বাপ গেল, মা গেল, ভাইরা ভিন্ন হল, অভয়া যে ভাইপোকে মানুষ করেছিল—তার বিয়ে দিয়ে তাকে নিয়ে ভিন্ন হয়েছিল। এখন ভাইপোর হাতে সব, অভয়ার হাত শূন্য, এখন এই রোগ শুনে। ভাইপো তাকে ভিন্ন করে দিয়েছে। বাবা, গোয়ালবাড়িতে একখানা ঘর নিকিয়ে চুকিয়ে পরিষ্কার। করে সেইখানে নির্বাসন দিয়েছে। কেউ আসে না, উঁকি মারে না, নিশ্বাসে রোগ ধরে যাবে।

মরি হাসলে এইখানে। হেসে বললে–আমি শুনলাম। শুনে বলি—আমার স্বামী পুত্র কন্যে। তিন গিয়েছে এই রোগে, আমি বিছানার পাশে বসে থেকেছি। আমার তো কিছু হয় নাই। তা। আমি যাই, ব্ৰাহ্মণকন্যে অনাথা-তার শয্যের পাশে শেষ কালটা থাকি। কাল আমাকে হঠাৎ বললে—মরি, তুমি একবার মশায়ের কাছে যাও। আমি তো হেঁটে যেতে পারব না, ক্ষমতা নাই। গরুর গাড়িও ভাইপোরা দেবে না। তকেই বোলো আমাকে একবার দেখে যেতে। অন্য কিছু নয়, কতদিন আর বাকি সেইটা জানব।


বৈশাখের শস্যক্ষেত্রের মত ধূলিধূসর শুষ্ক রুক্ষ; মুখে-চোখে কোথাও একবিন্দু সরসতার চিহ্ন নাই। সমস্ত অঙ্গে যেন একটা আবরণ পড়েছে। শীৰ্ণ দেহ ভেঙে পড়েছে। জীর্ণ মলিন শয্যার উপর শুয়ে আছে। ঘরখানার চারিদিকে অন্ধকার জমে আছে। শশাঙ্কের স্ত্রী হেসেই বললে—দেখুন তো, মুক্তি আমার কতদূরে? কতদিনে খালাস পাব? আপনি ছাড়া আর তো কেউ বলে দিতে পারবে না।

কথাগুলি স্পষ্টভাবে বোঝা গেল না। কাশিতে স্বরভঙ্গ হয়েছে। কণ্ঠনালি যেন রুদ্ধ হয়ে রয়েছে। ধরা ভাঙা গলায় স্বর-বিকৃতির মধ্যে কথা চাপা পড়ে যাচ্ছে। মধ্যে মধ্যে ফুটো হাপর-থেকে-বের-হওয়া ফসফস আওয়াজের মত কণ্ঠস্বরে কথা হারিয়ে যাচ্ছে। হাতখানি সে তুলে ধরলে মশায়ের সামনে।

–দেখছি না। একটু পরে।

তিনি তাকিয়ে রইলেন তার দিকে। মরি দাঁড়িয়ে ছিল; তাকে বললেন– দরজাটা ভাল করে খুলে দে তো মরি।

মুক্ত দ্বারপথে আলো এসে পড়ল অভয়ার মুখের উপর। আলোকিত ললাটের উপর হাতখানি রাখলেন মশায়। অভয়া তাকিয়ে রইল হেমন্তের আকাশের দিকে। ক্লান্তি আছে, কষ্টভোগের চিহ্ন আছে, কিন্তু ক্ষোভ নাই, ভয় নাই, প্রসন্ন তার দৃষ্টি।

অনেকক্ষণ একদৃষ্টে দেখে হাতখানি তুলে নিলেন। এ হাত নামিয়ে রেখে ও হাত।

–কতদিনে যাব? হাতখানা নামিয়ে রাখতেই অভয়া প্রশ্ন করলে।

–দেখি মা!

প্রশ্নোত্তরের মধ্যে বিবরণ জেনে ভাল করে পরীক্ষা করে মশায় একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন––সংসার কি তেতো হয়ে গেছে মা? সইতে পারছ না?

একটু হাসলে অভয়া। বিচিত্ৰ হাসি। এ হাসি অভয়ারাই হাসতে পারে। সকল মেয়ে পারে না। অভয়া বললে—তেতো খেয়েই তো জন্ম কাটল বাবা। সইছে না তো বলি নি।

—জানি না। সে হলে শশাঙ্ক যেদিন গিয়েছিল সেই দিনই তুমি কিছু করে বসতে। পুকুরে জলের অভাব হয় নি, বাড়িতে দড়ির অভাব হয় নি, সংসারে বিষের অভাব নেই। সে জানি। তাই তো বলছি মা। আরও সইতে হবে। এ তোমার জটিল রোগ-পাচটি রোগে জট পাকিয়ে জটিল করেছে। মৃত্যুবরাগ নয়। যক্ষ্মা তোমার নয়।

–নয়? উঠে বসল অভয়া।

–না।

—ডাক্তারেরা যে সকলে একবাক্যে বলে গেল।

–তারা তো এক্স-রে করতে বলেছেন?

–হ্যাঁ।

–এক্স-রে করবার দরকার নাই মা। এঁরা বুঝতে পারেন নি। ভুল চিকিৎসা হয়েছে। তুমি এক মাস দেড় মাসের মধ্যেই সেরে উঠবে মা। সংসারে তোমাকে আরও কিছুদিন থাকতে হবে।

স্তব্ধ হয়ে বসে রইল অভয়া।

–আমি ওষুধ পাঠিয়ে দেব। নিয়মের কথা তোমাকে বলতে হবে না। তুমি শুদ্ধাচারিণী নির্লোভ—আমি তো জানি।

অকস্মাৎ দুটি জলের ধারা নেমে এল মেয়েটির দুই চোখের দুটি কোণ থেকে। চোখ ফেটে যেন জল বের হল। কিন্তু নিৰ্নিমেষ দৃষ্টিতে যেমন সে বাইরের শূন্যলোকের দিকে চেয়ে ছিল তেমনিই চেয়ে রইল।

–মা!

—আপনি আমাকে সেদিন বাপের মত স্নেহ করে নেমন্তন্ন করেছিলেন—আমি–

–ওসব কথা থাক মা। অল্পদিনেই তুমি সেরে উঠবে, আমি বলে যাচ্ছি। আমি একদিন অন্তর এসে দেখে যাব তোমাকে।

অভয়া আবার বললে–বনবিহারী ঠাকুরপোর অসুখের সময় আমি মা-কালীর কাছে মানত করেছিলাম, পুজো দিয়েছিলাম। ইচ্ছে হয়েছিল পুষ্প নিয়ে মাথায় ঠেকিয়ে দিয়ে আসি। কিন্তু পারি নি। তিনি মারা গেলে মনে হয়েছিল জিভটা কেটে ফেলি।

মশায় হেসে বললেন–ও নিয়ে তুমি ভেবো না মা। মানুষের শাপে মানুষ মরে না। মানুষ মরে মৃত্যু ধ্রুব বলে। তবে অকালমৃত্যু আছে। বনবিহারী মরেছে নিজের কর্মফলে।

বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল অভয়ার ভাইপো। অভয়া যাকে সন্তানস্নেহে মানুষ করেছে; যে তার যথাসর্বস্ব নিয়ে যক্ষ্মার ভয়ে এই ঘরে নির্বাসন দিয়েছে। তাকে দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন মশায়। পরক্ষণেই নিজেকে শান্ত করলেন। বেচারির চোখে-মুখে কী উদ্বেগ-কী ভয়!

–দেখলেন মশায়?

–-হ্যাঁ, কোনো ভয় নাই। এক মাস দেড় মাসের মধ্যেই বউমা ভাল হয়ে উঠবেন।

–ডাক্তারেরা যে বলে গেছেন

–যক্ষ্মা? না, যক্ষ্মা নয়। পার তো এক্স-রে করে দেখতে পার। না পার, এক মাস অপেক্ষা। কর। পনের দিন। পনের দিনেই ফল বুঝতে পারবে। বলতে বলতে মশায় নিজেই একটু সংকোচ অনুভব করলেন। কণ্ঠস্বর একটু বেশি উঁচু হয়ে উঠেছে, কথাগুলি যেন বেশি শক্ত হয়ে গেল।

নারায়ণ নারায়ণ! মনে মনে নারায়ণ স্মরণ করলেন তিনি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *