Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রামায়ণ : আরণ্যকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা » Page 4

রামায়ণ : আরণ্যকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা

সম্ভাষিতে রামেরে আইল বনবাসী।
কেহ কেহ ফল খায়, কেহ উপবাসী।।
অনাহারী কেহ বা বরিষা চারি মাস।
কেহ কেহ সর্ব্বকাল করে উপবাস।।
গাছের বাকল পরে, শিরে জটা ধরে।
মৃগচর্ম্ম পরে কেহ, কমণ্ডলু করে।।
মুনিগণে দেখিয়া উঠিয়া রঘুনাথ।
করেন প্রণতি স্তুতি হয়ে যোড়হাত।।
মুনিরা করেন স্তুতি রামের গোচর।
শ্রীরাম বলেন, প্রভু না করিহ ডর।।
তপোবনে না রাখিব রাক্ষস সঞ্চার।
অবিলম্বে হইবেক রাক্ষস সংহার।।
মুনিগণ সঙ্গে সঙ্গে শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
তপোবন দরশনে করেন গমন।।
ধনুকে টঙ্কার দিল রাম রঘুবীর।
দেখিয়া সীতার মন হইল অস্থির।।
বনে প্রবেশেন রাম হাতে ধনুর্ব্বাণ।
নিষেধ করেন সীতা রাম বিদ্যমান।।
রাক্ষসের সনে কেন করহ বিবাদ।
অকারণ প্রাণীবধে ঘটিবে প্রমাদ।।
পূর্ব্বের বৃত্তান্ত এক কহি তব স্থান।
দূর্ব্বাদলশ্যাম রাম কর অবধান।।
শিশুকালে যখন ছিলাম পিতৃঘরে।
কহিলেন পিতা পূর্ব্বে আখ্যান আমারে।।
দক্ষ নামে এক মুনি ছিল তপোবনে।
তাঁর স্থানে স্থাপ্য খড়্গ রাখে একজনে।।
পাপ হয় হরিলে পরের স্থাপ্য ধন।
তেঁই যত্নে খড়্গখানি রাখেন ব্রাহ্মণ।।
এক বৃদ্ধ পাখী সেই তপোবনে বৈসে।
নড়িতে চড়িতে নারে প্রাচীন বয়সে।।
মুনিরে কুবুদ্ধি পায়, দৈবের লিখন।
সে খড়্গের চোটে বধে পাখীর জীবন।।
হাতে অস্ত্র করিলে লোকের জ্ঞান নাশে।
হইল মুনির পাপ সে অস্ত্রের দোষে।।
সত্য পালি দেশে চল এই মাত্র পণ।
রাক্ষস মারিয়া তব কোন্ প্রয়োজন।।
সরলা জনকবালা কহিলে এমতি।
বুঝান প্রবোধ বাক্যে তাঁরে সীতাপতি।।
কনক কমল-মুখী জনক-কুমারী।
আমার নাহিক ভয়, কি ভয় তোমারি।।
মহাতেজা মুনিগণ যাহার সহিতে।
তাহার কিসের ভয়, বল দেখি সীতে।।
যাইতে দেখেন তাঁরা দিব্য সরোবর।
শুনেন অপূর্ব্ব গীত তাহার ভিতর।।
বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসেন রঘুমণি।
জলের ভিতর গীত শুনি কেন মুনি।।
মুনি বলিলেন, এথা ছিল এক মুনি।
করিত কঠোর তপ দিবস রজনী।।
তপোভঙ্গ করিতে তাঁহার পুরন্দর।
পাঠায় অপ্সরাগণে যথা মুনিবর।।
আইল অপ্সরাগণ মুনির নিকটে।
দেখিয়া পড়িল মুনি মদন-সঙ্কটে।।
সে স্থানের খ্যাতি পঞ্চ অপ্সরা বলিয়া।
অদ্যাপি আইসে তারা তথা লুকাইয়া।।
নৃত্য গীত করে তারা নাহি যায় দেখা।
এমন অপূর্ব্ব কথা পুরাণেতে লেখা।।
শুনিয়া মুনির কথা কৌতুকী শ্রীরাম।
তপোবন দেখিয়া গেলেন মুনি-ধাম।।
আতিথ্য করেন মুনি সমাদর করি।
তিন জন বঞ্চিলেন সুখে বিভাবরী।।
কোথা পাঁচ সাত মাস, কোথা দশমাস।
কোথাও বৎসর রাম করেন প্রবাস।।
এইরূপে বনে বনে করেন ভ্রমণ।
অতীত হইল দশ বৎসর তখন।।
একদিন সীতা সহ শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
করপুটে বন্দিলেন মুনির চরণ।।
সুতীক্ষ্ণ মুনিরে রাম কহেন সুভাষ।
অগস্ত্যেরে প্রণাম করিতে করি আশ।।
মুনি বলে, যাহ রাম অগস্ত্যের ধাম।
তথা গিয়া তাঁহার পূরাও মনস্কাম।।
তাঁহার কনিষ্ঠ আছে পিপ্পলীর বনে।
অদ্য গিয়া বাস কর তাঁর তপোবনে।।
কল্য গিয়া পাইবে অগস্ত্য-তপোবন।
তাহাতে আছেন মুনি দ্বিতীয় তপন।।
বিদায় হইয়া রাম চলেন দক্ষিণে।
উপনীত হইলেন পিপ্পলীর বনে।।
রামেরে পাইয়া মুনি পাইলেন প্রীতি।
তথা সেই রাত্রি রাম করিলেন স্থিতি।।
প্রভাতে উঠিয়া রাম করেন গমন।
লক্ষ্মণে দেখান রাম অগস্থ্যের বন।।
এই বনে ছিল এক রাক্ষস দুর্জ্জয়।
তারে বধি মুনি করিলেন এ আলয়।।
শুনিয়া লাগিল লক্ষ্মণের চমৎকার।
মুনি হয়ে রাক্ষস মারেন কি প্রকার।।
শ্রীরাম বলেন, ভাই শুন তদন্তর।
ইল্বল বাতাপি ছিল দুই সহোদর।।
মায়াবী রাক্ষস তারা নানা মায়া ধরে।
বাতাপি হইয়া মেষ, ব্রহ্মবধ করে।।
তার ভাই ইল্বল, সে জানিত সঙ্গীত।
লোক-মধ্যে ভ্রমে যেন অদ্ভুত পণ্ডিত।।
আদর করিয়া দ্বিজে করে নিমন্ত্রণ।
সেই মেষ-মাংস দিয়া করায় ভোজন।।
ব্রাহ্মণের উদরে মেষের মাংস থাকে।
বাতাপি বাহির হয়, ইল্বল যবে ডাকে।।
পেট চিরি বাহির হয়, বিপ্রগণ মরে।
এইরূপ করি ভ্রমে দুই সহোদরে।।
ব্রহ্মবধ শুনিয়া অগস্ত্য মহামুনি।
ইল্বলের ঠাঁই দান মাগিল আপনি।।
দূর হৈতে আইলাম পথিক ব্রাহ্মণ।
মেষমাংস মোরে আজি করাহ ভোজন।।
মুনির বচন শুনি ইল্বল উল্লাস।
কহিল, কতেক মুনি খাবে মেষ-মাস।।
মুনি বলেন বহুদিন আছি উপবাস।
ভোজন করিব আমি গাড়লের মাস।।
বাতাপি গাড়ল হয় মায়ার প্রবন্ধে।
গাড়ল কাটিয়া মাংস রান্ধিল আনন্দে।।
বড় আশা করি মুনি ভোজনেতে বৈসে।
হাতে থালা করিয়া ইল্বল তা পরশে।।
গঙ্গাদেবী বলি মুনি মনে মনে ডাকে।
অলক্ষিতে গঙ্গাদেবী কমণ্ডলু ঢোকে।।
গঙ্গাজল পান করি ব্রহ্মমন্ত্র জপে।
মুষ্টি মুষ্টি মাংস মুনি ভোজন করে কোপে।।
মুনির উদরে মাংস প্রায় হয় পাক।
বাহিরে ইল্বল ডাকে ঘন ঘন ডাক।।
ইল্বল বলিল, এসো বাতাপি বাহিরে।
মুনি বলে তুমি কোথা দেখ বাতাপিরে।।
যেমন গর্জ্জিয়া সিংহ ধরে, ভক্ষ্য হাতী।
ইল্বলে মারিতে যুক্তি করে মহামতি।।
পণ্ডিত হইয়া তোর বুদ্ধি নাহি ঘটে।
তোমার বাতাপি এই আছে মম পেটে।।
সে কথায় পাসরিল রাক্ষস আপনা।
মুনি অভিশাপ করে যেমন ঝঞ্ঝনা।।
সে অগ্নিতে ইল্বল পুড়িয়া তবে মরে।
এই মতে মুনি দুই রাক্ষসেরে মারে।।
এইরূপে মারিয়া সে রাক্ষস দুর্জ্জয়।
তপোবন রক্ষা করিলেন মহাশয়।।
আইলাম সেই অগস্ত্যের তপোবনে।
সর্ব্ব কার্য্য সিদ্ধ হয় যাঁর দরশনে।।
যাইতেছিলেন রাম অগস্ত্যের দ্বারে।
হেনকালে শিষ্য এক আইল বাহিরে।।
তাঁহারে দেখিয়া বলিলেন শ্রীলক্ষ্মণ।
আইলেন রাম অদ্য সম্ভাষ কারণ।।
এতেক বচনে শিষ্য গেল অভ্যন্তরে।
কহিল রামের কথা মুনির গোচরে।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ সীতা দ্বারে তিন জন।
আজ্ঞা বিনা কেমনে করেন আগমন।।
রামের সম্বাদে মুনি হয়ে আনন্দিত।
আজ্ঞা করিলেন শিষ্যে, আনহ ত্বরিত।।
সবাকার পূজ্য রাম আইলেন দ্বারে।
যোগিগণ অনুক্ষণ ধ্যান করে যাঁরে।।
সবারে লইয়া গেল মুনির আজ্ঞায়।
দেখিয়া মুনির মনোভ্রমদূরে যায়।।
অগস্ত্য বলেন, কি অপূর্ব্ব দরশন।
অগস্ত্যের চরণ বন্দেন তিন জন।।
গোলোক ছাড়িয়া কে করিলে বনবাস।
না জানি তোমার আর কিসে অভিলাষ।।
লক্ষ্মণের চরিত্রে আমার চমৎকার।
দুঃখে দুঃখী সুখে সুখী লক্ষ্মণ তোমার।।
পথশ্রান্ত আছে রাম, করাহ ভোজন।
আজ্ঞামতে শিষ্যেরা করিল আয়োজন।।
মুনির আদরে রাম করেন ভোজন।
তিন নিশি তথায় বঞ্চেন তিন জন।।
করিয়া প্রভাতকৃত্য শ্রীরঘুনন্দন।
অগস্ত্যের সহিত করেন আলাপন।।
পিতৃসত্য পালিবারে আসিয়াছি বনে।
আজ্ঞা কর অগস্ত্য, থাকিব কোন্ স্থানে।।
অগস্ত্য বলেন শুনি রামের বচন।
যেখানে থাকিবে, সেই মহেন্দ্র-ভবন।।
গোদাবরী-তীরে রাম দিব্য আয়তন।
পঞ্চবটী গিয়া তথা থাক তিন জন।।
দিব্য ধনুর্ব্বাণ বিশ্বকর্ম্মার নির্ম্মাণ।
রামেরে অগস্ত্যমুনি করিলেন দান।।
নানা আভরণ আর সোণার টোপর।
বহু রত্ন দিয়া মুনি করেন আদর।।
অগস্ত্যের স্থানে রাম হইয়া বিদায়।
চলেন দক্ষিণে সীতা লক্ষ্মণ সহায়।।
জটায়ু নামেতে পক্ষী, সে দেশে বসতি।
পাইয়া রামের বার্ত্তা আসে শীঘ্রগতি।।
শ্রীরামের সম্মুখে হইয়া উপস্থিত।
আপনার পরিচয় দেয় যথোচিত।।
জটায়ু আমার নাম গরুড়-নন্দন।
তোমার বাপের মিত্র আমি পুরাতন।।
পক্ষীরাজ সম্পাতি আমার ছোট ভাই।
আরো পরিচয় রাম তোমারে জানাই।।
পূর্ব্বে দশরথের করেছি উপকার।
তেঁই সে তাঁহার সঙ্গে মিত্রতা আমার।।
আইস আইস রাম সীতা মোর ঘরে।
ইহা কহি বাসা দিল অতি সমাদরে।।
তিন জন অনুব্রজি লৈয়া গেল পাখী।
পঞ্চবটী দেখিয়া শ্রীরাম বড় সুখী।।
লক্ষ্মণে বলেন রাম, বাঁধ বাসাঘর।
গোদাবরী জলে স্নান করি নিরন্তর।।
লক্ষ্মণ বলেন, রাম আপনি প্রধান।
কোন্ স্থানে বাঁধি ঘর, কর সদ্বিধান।।
দেখেন শ্রীরাম স্থান গোদাবরী-তীরে।
সুশোভিত শ্বেত পীত লোহিত প্রস্তরে।।
নিকটে প্রসর ঘাট, তাতে নানা ফুল।
মধুপানে মাতিয়া গুঞ্জরে অলিকুল।।
শ্রীরাম বলেন, হেথা বান্ধ বাসাঘর।
জানকীর মনোমত করহ সুন্দর।।
শ্রীরামের আজ্ঞাতে বান্ধেন দিব্য ঘর।
একিদিনে, লক্ষ্মণ সে অতি মনোহর।।
পূর্ণকুম্ভ দ্বারেতে কুসুম রাশি রাশি।
অগ্নিপূজা করি হইলেন গৃহবাসী।।
পাতা লতা নির্ম্মিত সে কুটীর পাইয়া।
অযোধ্যার অট্টালিকা গেলেন ভুলিয়া।।
জটায়ু বলেন, রাম আসি হে এখন।
যখন করিবে আজ্ঞা, আসিব তখন।।
এত বলি পক্ষিরাজ উড়িল আকাশে।
দুই পাখা সারি গেল আপনার বাসে।।
রজনী বঞ্চিয়া রাম উঠি প্রাতঃকালে।
স্নান করিবারে যান গোদাবীর-জলে।।
সুগন্ধ সুদৃশ্য নানা কুসুম তুলিয়া।
নিত্য নিত্য করেন শ্রীরাম নিত্য-ক্রিয়া।।
ফল-মূল আহরণ করেন লক্ষ্মণ।
অযত্ন সুলভ গোদাবরীর জীবন।।
ঋষিগণ সহিত সর্ব্বদা সহবাস।
করেন কুরঙ্গ গণ সহ পরিহাস।।
সীতার কখন যদি দুঃখ হয় মনে।
পাসরেন তখনি শ্রীরাম-দরশনে।।
রামের যেমন দেশ, তেমন বিদেশ।
আত্মারাম শ্রীরাম, নাহিক কোন ক্লেশ।।
লক্ষ্মণের চরিত্র বিচিত্র মনে বাসি।
শ্রীরামের বনবাসে ‍যিনি বনবাসী।।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21
Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress