Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রামায়ণ : আরণ্যকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা » Page 14

রামায়ণ : আরণ্যকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা

বনমধ্যে লুকাইয়া রহিল রাবণ।
আলো করি মায়ামৃগ করিল গমন।।
দেখিয়া আপন মূর্ত্তি আপনি উলটে।
চলিতে চলিতে গেল রামের নিকটে।।
রাম সীতা বসিয়া আছেন দুই জন।
সেইখানে মৃগ গিয়া দিল দরশন।।
রাক্ষস-বংশের ধ্বংস করিবার তরে।
ডুবাইতে জানকীরে বিপদ-সাগরে।।
দেবগণে বিপদে করিতে পরিত্রাণে।
বিধাতা করিল হেন মৃগের নির্ম্মাণ।।
রামেরে বলেন সীতা মধুর বচন।
অনুমতি যদি হয়, করি নিবেদন।।
এই মৃগচর্ম্ম যদি দাও ভালবাসি।
কুটীরে কৌতুকে নাথ বিছাইয়া বসি।।
আদরে শুনিয়া রাম সীতার বচন।
ডাক দিয়া লক্ষ্মণেরে বলেন তখন।।
অদ্ভুত হরিণ ভাই দেখ বিদ্যমান।
অপূর্ব্ব সুন্দর রূপ কাহার নির্ম্মাণ।।
দুই পাশে শোভা করে চন্দ্রের মণ্ডলী।
ধবল কিরণ যেন গায়ে লোমাবলী।।
রাঙ্গা জিহ্বা মেলে যেন অগ্নি হেন দেখি।
আকাশের তারা যেন শোভে দুই আঁখি।।
দুই শৃঙ্গ অল্প দেখি প্রবালের বর্ণ।
রূপে আলো করিতেছে রম্য দুই কর্ণ।।
জানকী চাহেন এই হরিণের চর্ম্ম।
বুঝ দেখি লক্ষ্মণ ইহার কিবা মর্ম্ম।।
লক্ষ্মণ মৃগের রূপ করি নিরীক্ষণ।
রামেরে বলেন কিছু প্রবোধ বচন।।
মায়াবী রাক্ষস শুনিয়াছি মুনি-মুখে।
পাতিয়া মায়ার ফাঁদ আপনার সুখে।।
রূপে ভুলাইয়া আগে মন সবাকার।
বনে গিয়া রক্ত-মাংস করিবে আহার।।
নানা মায়া ধরে দুষ্ট মায়ার পুত্তলি।
আমা সবা ভাণ্ডিবারে পাতে মায়াজালি।।
অবশ্য রাক্ষস আছে সহিত ইহার।
নতুবা না দেখি হেন মৃগের সঞ্চার।।
ভালমতে ইহা আগে করিব নির্ণয়।
রাক্ষসের মায়া কি স্বরূপ মৃগ হয়।।
লক্ষ্মণ সুবুদ্ধি অতি, বুদ্ধি নাহি টুটে।
যত যুক্তি বলিলেন সকলি সে ঘটে।।
লক্ষ্মণের বচনে কহেন রঘুবীর।
মারীচ আইল কি সে, কর ভাই স্থির।।
যদ্যপি মারীচ হয় ব্রহ্মবধী পাপী।
মারিব তাহারে যেন অগস্ত-বাতাপি।।
সে না হয়ে যদ্যপি রাক্ষস অন্য জন।
মারিয়া করিব নিষ্কণ্টক তপোবন।।
রাক্ষস না হয় যদি হয় মৃগজাতি।
রত্ন মৃগ ধরিলে পাইব মনে প্রীতি।।
ধরিতে না পারি যদি মারিব পরাণে।
মৃগচর্ম্ম লইয়া আসিব এইখানে।।
যাবৎ মারিয়া মৃগ নাহি আসি ঘরে।
তাবৎ করহ রক্ষা লক্ষ্মণ সীতারে।।
আমার বচন কভু না করিহ আন।
প্রমাদ না পড়ে যেন হয়ো সাবধান।।
বৃক্ষ-আড়ে থাকিয়া রাবণ সব শুনে।
মনে ভাবে জানকীরে হরিব এক্ষণে।।
যখন যা হবে, তাহা বিধির লিখন।
সীতা হেন সতী দুঃখ পান সে কারণ।।
শ্রীরাম করেন সজ্জা হাতে ধনুঃশর।
যান মৃগ মারিতে লক্ষ্মণে রাখি ঘর।।
শ্রীরামেরে দেখিয়া মারীচ ভাবে মনে।
পলাইয়া গেলে মোরে মারিবে রাবণে।।
আমারে মারিবে রাম নতুবা রাবণ।
আমার কপালে আজি অবশ্য মরণ।।
বরঞ্চ রামের হাতে মরণ মঙ্গল।
রাবণের হাতে মৃত্যু নরক কেবল।।
মারীচ সশঙ্ক হয়ে যায় ধীরে ধীরে।
আগে ধায়, পিছে ধায়, চায় ফিরে ফিরে।।
ক্ষণে যায়, ক্ষণে চায়, ক্ষণে হয় দূর।
নানা রঙ্গে চলে মৃগ মায়ার প্রচুর।।
ক্ষণেক নিকটে যায়, ক্ষণেক অন্তরে।
শ্রীরাম নিকটে গেলে সে পলায় দূরে।।
প্রাণে মরিবেক মৃগ, না মারেন বাণ।
নিকটে পাইলে মৃগ ধরি দুই কাণ।।
এমন চিন্তিয়া রাম বুঝেন কারণ।
স্বরূপতঃ মৃগ নহে হবে দুষ্ট জন।।
ক্ষণে অদর্শন হয়, ক্ষণে মৃগ দেখি।
মায়ারূপ ধরিয়াছে মারীচ পাতকি।।
ঐষিক বিশিখ রাম পূরেন সন্ধান।
মারীচের বুকে বাজে বজ্রের সমান।।
বেদনায় মারীচ সে পড়িল অন্তরে।
রাক্ষসের মূর্ত্তি ধরি হাহাকার করে।।
তখন মারীচ করে রাবণের হিত।
রামের ডাকের তুল্য ডাকে আচম্বিত।।
আইস লক্ষ্মণ ঝাট কর পরিত্রাণ।
রাক্ষস মিলিয়া ভাই লয় মোর প্রাণ।।
মারীচ ভাবিল মনে ডাকিলে এমনি।
রামের বচন মানি আসিবে এখনি।।
লক্ষ্মণ লক্ষ্মণ বলি ডাকে উচ্চৈঃস্বরে।
শুনিয়া রামের হয় কম্প কলেবরে।।
মারীচেরে সংহারিয়া বাণ লয়ে হাতে।
সীতার নিকটে রাম চলেন ত্বরিতে।।
মারীচের বুকে বাণ খসে টান দিতে।
কৃত্তিবাস মারীচ বধ গায় অরণ্যেতে।।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21
Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress