Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আবদুল হক চৌধুরী || Sankar Brahma

আবদুল হক চৌধুরী || Sankar Brahma

আবদুল হক চৌধুরী (বাংলাদেশের লেখক)

আবদুল হক চৌধুরী ১৯২২ সালের ২৪শে আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার নোয়াজিষপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাউজান হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। পরবর্তীতে তাঁর পিতার মৃত্যুর পর বিষয় সম্পত্তির ঝামেলায় জড়িয়ে পরায় লেখাপড়ার ইতি ঘটে তার। ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি নোয়াজিষপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। প্রথিতযশা এই গবেষক “চন্দ্রাবতী” কাব্যের রচয়িতা কবি কোরেশী মাগণ-এর সপ্তম অধস্তন পুরুষ। তার পিতা আলহাজ্জ্ব সরফুদ্দিন ইঞ্জিনিয়ার রেঙ্গুন পোর্ট কমিশন-এ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তাঁর দাম্পত্য সঙ্গী ছিলেন – জুবাইদা বানু চৌধুরী।
তাদের ৭ ছেলে, ২ মেয়ে।

( মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান )

১৯৭১ সালে মহান জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রদান, খাদ্য ও অর্থ সহায়তা প্রদান ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার দায়ে এই মহান মানুষটি ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের ১১ তারিখ পাক বাহিনীর হাতে তার তৃতীয় পুত্রসহ গ্রেফতার এবং নির্মমভাবে নির্যাতিত হন। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তিলাভ করেন।
তিনি চট্টলবিদ নামে পরিচিত ইতিহাসবিদ। তিনি আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদের অনুসারি ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম, সিলেট এবং আরাকানের ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেন। ইতিহাসবিদ হিসেবে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। আবদুল হক চৌধুরীর স্মৃতি রক্ষার্থে গনপ্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্র্ণালয় কর্তৃক নোয়াজিষপুরে স্মৃতিকেন্দ্র ও সংগ্রহশালা নির্মানাধীণ।
তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইতিহাস চর্চায় অভূতপুর্ব অবদান রাখেন। আমৃত্যু তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্য ছিলেন।
সদস্য: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর ট্রাস্ট ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ১৯৯০ সাল থেকে আমৃত্যু।
সদস্য: একুইযিশন সাব কমিটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর চট্টগ্রাম
সদস্য: পরিচালনা পর্ষদ কুণ্ডেশ্বরী কলেজ, রাউজান, চট্টগ্রাম (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মনোনীত প্রতিনিধি)।
প্রাক্তন সদস্য: পরিচালনা পরিষদ- গহিরা, এ. জে .ওয়াই. এম ইনি ইনস্টিটিউশন, রাউজান, চট্টগ্রাম।
প্রতিষ্ঠাতা/সভাপতি, পরিচালনা পর্ষদ, নোয়াজিশপুর প্রাইমারি স্কুল, রাউজান, চট্টগ্রাম।
উপদেষ্টা: “গণমুখী” সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ,নোয়াজিশপুর, রাউজান, চট্টগ্রাম।
উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য: চট্টগ্রাম সংস্কৃতি পরিষদ, চট্টগ্রাম।
উপদেষ্টা: রাউজান ক্লাব।
সভাপতি: আবুল ফজল নাগরিক শোক সভা কমিটি, চট্টগ্রাম। ১৯৮৬ সাল।
কার্যকরী সংসদ সদস্য: বাংলাদেশ ফোকলোর সোসাইটি ।
বিশেষজ্ঞ বক্তা রেডিও বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম।
সম্মানিত আজীবন সদস্য: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটি।
সম্পাদনা পরিষদ সদস্য: যোগেশ চন্দ্র সিংহ স্মারক গ্রন্থ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘আবদুল হক চৌধুরী আমাদের পথিকৃৎ, তার রচনাবলি সমাজ ও সংস্কৃৃতির ইতিহাসচর্চায় নতুন পথচলার উপকরণ। আবদুল হক চৌধুরী চট্টগ্রামের ইতিহাসের দর্শন নির্মাণ করেছেন, তিনি একজন মৌলিক ইতিহাসবিদ।’
গবেষণায় মরণোত্তর একুশে পদকপ্রাপ্ত চট্টলতত্ত্ববিদ আবদুল হক চৌধুরীর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ইফতেখার এসব কথা বলেন। আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে ২৬ অক্টোবর বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন কবি ও সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ওবায়দুল করিম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন। আলোচক ছিলেন প্রাক্তন যুগ্ম সচিব ড. জয়নাব বেগম, সরকারি সিটি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. হরিশংকর জলদাস।
আবদুল হক চৌধুরীর জীবনবৃত্তান্ত উপস্থাপন করেন মরহুমের নাতনি ফাহমি নাহিদা নাজনীন, মূল প্রবন্ধকার ড. নুরুল আমিনের জীবনবৃত্তান্ত উপস্থাপন করেন আনজুমান বানু লিমা। এতে পরিবারের পক্ষে কৃৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ড. মনজুর উল আমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জোবায়দুর রশীদ।
ড. নুরুল আমিন বলেন, ‘আবদুল হক চৌধুরী একক প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামবাসীকে যা দিয়ে গেছেন, তা কেবল আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের সঙ্গে তুলনীয়। চট্টগ্রামকে জানতে হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আবদুল হক চৌধুরীকে জানতে হবে।’

( প্রাতিষ্ঠানিক সনদপত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রি অথবা উচ্চতর গবেষণার প্রশিক্ষণ ছাড়া কেবল মাত্র অধ্যবসায়, নিষ্ঠা, অনুসন্ধিৎসু মন ও অন্তরচক্ষুর মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তিই একজন খ্যাতিমান গবেষক হতে পারে- আবদুল হক চৌধুরী হলেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র হলো স্থানীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ইতোমধ্যে তিনি চট্টগ্রাম ও সিলেটের স্থানীয় ইতিহাসের ওপর বহু গ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রণয়ন করেছেন যা সুধী সমাজের দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। গবেষণার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণবিহীন, অদক্ষ, অসাধারণ এ ব্যক্তিটির রয়েছে নিজস্ব গবেষণা পদ্ধতি । ইতিহাস গবেষণায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতি রয়েছে যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্যে উপনীত হওয়া অথবা সত্যের কাছাকাছি পৌঁছা। মৌলিক গবেষণার মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আবদুল হক চৌধুরী প্রকল্প গ্রহণ করে আপন গবেষণা পদ্ধতির মাধ্যমে সত্যে উপনীত হবার অক্লান্ত প্রচেষ্টা করেছেন ।
ইতিহাসবিদ আবদুল করিম যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সম্ভবতঃ তখনই আবদুল হক চৌধুরীর চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। আবদুল হক চৌধুরীর এক ছেলে তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার মাধ্যমে আবদুল হক চৌধুরীর সাথে ড. আবদুল করিমের যোগাযোগ এবং পরিচয় হয়। সে পরিচয় আমরণ অটুট ছিল। আবদুল হক চৌধুরীর সাথে আমারও ঘনিষ্ঠতা ছিল। আমি তাঁকে চাচা বলে ডাকতাম এবং চট্টগ্রামের রেওয়াজ মতে তিনি আমাকে বাবা (বাজী) ডাকতেন । তাঁর প্রণীত সকল বই নিজ হাতে নাম লিখে আমাকে দিয়েছেন। সিলেটের ইতিহাস প্রসঙ্গ বইটি ড. মুজিরউদ্দিন মিয়ার মাধ্যমে আমার জন্য পাঠিয়েছিলেন । যতবার আমি তাঁর বাড়ী গিয়েছি ততবার আমাকে ভাত খেয়ে আসতে হয়েছে। আবদুল হক চৌধুরী বড় লোকের সন্তান, চাকুরী করতেন না; ব্যবসাও করতেন বলে মনে হয় না, আমার জানা মতে পৈতিৃক সম্পদের উপর ভিত্তি করে তিনি সচ্ছল ভাবে চলতেন এবং চট্টগ্রাম শহরে দেওয়ান বাজার এলাকার পূর্বদিকে একটি বহুতল বাড়ী করেছেন। সে বাড়ীতে আমি বহুবার গিয়েছি।
একবার সকাল ১০টায় তার বাড়ীতে গেলাম, অনেক নাস্তা খাওয়ালেন । আমি চলে আসতে চাইলে আসতে দিলেন না, মুরুব্বী মানুষ বলে কথা অমান্য করে আসতে পারলাম না। দুপুরে খাওয়ার জন্য চাচীও বললেন। তাই থেকে গেলাম। দুপুরে খাওয়ার সময় ইলিশ মাছের ভাজা ও রকমারী রান্না। তিনি উঠায়ে দিচ্ছেন আর আমি খাচ্ছি। অনেক খেলাম কিন্তু তাঁর তৃপ্তি হচ্ছে না। তারপর রাজশাহী চলে এসে ড. মুজিরউদ্দিন মিয়াকে (প্রফেসর, বাংলা বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্তমানে মরহুম) এ গল্প করলাম । তিনিও চৌধুরীর এরকম বহু আতিথিয়তা গ্রহণ করেছেন। তাঁর ১৫/২০ দিন পর ড. মুজিরউদ্দিন মিয়া আমাকে রাত ১১ টার দিকে ফোন করে জানালেন চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য গবেষক আবদুল হক চৌধুরী আর দুনিয়াতে নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ) ।
পরিচয় হওয়ার পর থেকে আবদুল হক চৌধুরীর সাথে ড. আবদুল করিমের যোগাযোগ নিয়মিত ছিল। ইতিহাসের যে কোন সমস্যা নিয়ে চৌধুরী ড. করিমের সাথে অকপটে আলোচনা করতেন এবং এটা ছিল একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । চট্টগ্রামের সমাজ, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহে আবদুল হক চৌধুরীর জুড়ি নেই । নিবেদিত প্রাণ এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে গবেষণা কাজ করতেন বলে আমার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রফেসর তাঁকে খুবই শ্রদ্ধা করতো। ড. আবদুল করিমও তাঁর কাজে মুগ্ধ ছিলেন । একদিন ১০/১১ টার দিকে আবদুল হক চৌধুরী ড. আবদুল করিমের বাসায় আসেন। তথ্য সংগ্রহ, সংগৃহীত তথ্যের সত্যতা, উপস্থাপন, বিশ্লেষণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সকাল ১০টা থেকে বিকাল প্রায় ৩ টা পর্যন্ত আলোচনা চলে। যাওয়ার সময় আবদুল হক চৌধুরী ড. আবদুল করিমের কাছে একটি আবেদন করলেন- “যদি আমি আগে মারা যাই তবে আপনি আমার উপর একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করবেন; আর যদি আপনি আগে মারা যান তবে আমি আপনার উপর একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করবো।” এ কথা গুলো ড. করিম আমাকে বহুবার বলেছেন। উল্লেখিত কথা শেষে চৌধুরী সাহেব ড. করিম থেকে বিদায় নিয়ে যান। চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে যত সিরিয়াস ছিলেন; ড. করিম তাঁর প্রতিশ্রুতিতে তখন তত সিরিয়াস ছিলেন না। কিন্তু সে দিন রাত ১০ টার দিকে আবদুল হক চৌধুরীর বড় ছেলে এডভোকেট মোহাম্মদ আমীন চৌধুরী, ড. আবদুল করিমকে ফোন করে বললো-“চাচাজান, বাবা আর দুনিয়াতে নাই ।” ড. আবদুল করিম অত্যন্ত মর্মাহত হলেন । সারা দুপুর যে লোকটি তাঁর বাসায় ছিলেন এবং তাঁকে একটি চুক্তির মধ্যে আবদ্ধ করে বিকাল ৩ টার দিকে বাসায় গেলেন সেই লোকটি রাত ১০ টায় দুনিয়াতে নেই । জীবন এবং মৃত্যুর মালিক স্রষ্টা স্বয়ং । এটাই শিক্ষা যা বেশীর ভাগ মানুষ গ্রহণ করেন না । ড. করিম আমাকে বললেন “এ রকম একটি অতি মর্মান্তিক ঘটনার পর প্রায় ১০/১২ দিন আমি কলম ধরিনি। শুধু ভাবতাম আবদুল হক চৌধুরী কিভাবে মৃত্যু সম্পর্কে আঁচ করতে পারলেন এবং আমাকে এমন একটি প্রতিশ্রতিবদ্ধ অবস্থায় রেখে গেলেন।” আবদুল হক চৌধুরীর প্রায় লেখা, প্রকাশিত গ্রন্থ অথবা প্রবন্ধ ড. আবদুল করিমের সংগ্রহশালায় ছিল। তাই তাঁর সম্পর্কে গ্রন্থ প্রণয়ন করতে খুব বেশী অসুবিধা হলো না। ইতোমধ্যে আবদুল হক চৌধুরীর উপর ২/৩ টা স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ড. মুজিরউদ্দিন মিয়া সম্পাদিত বাংলা একাডেমী হতে প্রকাশিত আবদুল হক চৌধুরী স্মারকগ্রন্থটি যথেষ্ট মান সম্পন্ন বলে আমি মনে করি। তাছাড়া আমি এও মনে করি যে উক্ত স্মারক গ্রন্থে আমার প্রণীত “স্থানীয় ইতিহাস চর্চায় আবদুল হক চৌধুরীর গবেষণা পদ্ধতি” প্রবন্ধটি চৌধুরী সম্পর্কে এ পর্যন্ত প্রণীত প্রবন্ধের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ এ অভিমত আমার নয়; ইতিহাসবিদদের। অতঃপর ড. আবদুল করিম তাঁর পূর্ব প্রতিশ্রুতি মোতাবেক “আবদুল হক চৌধুরী ও তাঁর গবেষণা কর্ম” শীর্ষক গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। ১৯৯৭ সনে ঢাকাস্থ বাংলা একাডেমী হতে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। যার ফলে বন্ধুত্ব ও প্রতিশ্রুতি উভয়ই উদ্ভাসিত হয়েছে। বাংলার স্থানীয় ইতিহাস গবেষণাকারীরা গভীরভাবে উপকৃত ও উৎসাহিত হয়েছে। মৃত্যুর মাধ্যমে আবদুল হক চৌধুরী মুক্তি পেয়ে গেছেন। পক্ষান্তরে কর্মী আবদুল করিম নতুন কর্ম সৃষ্টি করে গেছেন। এটাই মহান স্রষ্টার বিধান। লঙ্ঘনের ক্ষমতা কারো নেই।
লেখক : প্রফেসর, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।)

( আবদুল হক চৌধুরী। চট্টলতত্ত্ববিদ, গবেষক ও আঞ্চলিক ইতিহাস লেখক। তিনি চট্টগ্রাম, সিলেট এবং আরাকানের ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেন। ইতিহাসবিদ হিসেবে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। আবদুল হক চৌধুরী ১৯২২ সালের ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার নওয়াজিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শরফুদ্দীন চৌধুরী ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। রাউজান হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করে আবদুল হক পিতার প্রতিষ্ঠিত নওয়াজিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন (১৯৪২-৪৩)। পরে চাকরি ছেড়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেন এবং একইসঙ্গে বিদ্যাচর্চাও চালিয়ে যান।
প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা না থাকলেও আবদুল হক চৌধুরী বাংলাদেশের আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চায় যে অবদান রাখেন তা রীতিমতো বিস্ময়কর। রাউজান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীশচন্দ্র চৌধুরীর প্রেরণায় তিনি প্রথম আঞ্চলিক ইতিহাস সম্পর্কে উৎসাহিত হন। এ বিষয়ে তিনি চট্টগ্রামের অপর কৃতী সন্তান আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের নিকট থেকেও অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তারপর স্বীয় অঞ্চলের নশরত শাহের কোতোয়ালির ধ্বংসাবশেষ, ঈসা খাঁর দিঘি, আরাকানি দুর্গকোট এবং প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বিভিন্ন পুরাকীর্তি তাঁকে এ সম্পর্কে আরও কৌতূহলী করে তোলে। তিনি একসময় চট্টগ্রাম, সিলেট, আরাকান ও ত্রিপুরার সামাজিক ও নৃতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন এবং তার ভিত্তিতে উক্ত অঞ্চলের ইতিহাস রচনায় ব্রতী হন।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে আবদুল হক চৌধুরী রচিত মোট এগারোটি গ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গ’, ‘চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতির রূপরেখা’, ‘চট্টগ্রাম-আরাকান’, ‘প্রাচীন আরাকান রোহাইঙ্গা, হিন্দু ও বড়ুয়া বৌদ্ধ অধিবাসী’ প্রভৃতি। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আবদুল হক রাউজান অঞ্চলে সাংগঠনিক ভূমিকা পালন করেন। চট্টগ্রামের ইতিহাস গবেষণার জন্য তাঁকে ‘চট্টলতত্ত্‌ববিদ’ উপাধি দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালের ২৬শে অক্টোবর চট্টগ্রামে আবদুল হক চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।)

[ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলী ]

১). চট্টগ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গ – ১ম সংস্করণ (১ম ও ২য় খণ্ড একত্রে) ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬ সাল।
২). চট্টগ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গ – ২য় সংস্করণ ১৯৮০ সাল।
৩). চট্টগ্রামের চরিতাভিধান- ডিসেম্বর ১৯৭৯ সাল।
৪). চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি – ডিসেম্বর ১৯৮০ সাল।
৫). সিলেটের ইতিহাস প্রসঙ্গ – ১ম সংস্করণ ১৯৮১ সাল, ২য় সংস্করণ ১৯৯০ সাল।
৬). শহর চট্টগ্রামের ইতিকথা – এপ্রিল ১৯৮৫ সাল।
৭). চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতির রূপরেখা- বাংলা একাডেমী , মে ১৯৮৮ সাল।
৮). চট্টগ্রাম আরাকান – জুন ১৯৮৯ সাল।
৯). চট্টগ্রামের ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধ – নভেম্বর ১৯৯২ সাল।
১৯). প্রাচীন আরাকান, রোহিঙ্গা , হিন্দু ও বড়ুয়া, বৌদ্ধ অধিবাসী – বাংলা একাডেমী , জানুয়ারী ১৯৯৪
১১). বন্দর শহর চট্টগ্রাম – বাংলা একাডেমী, ঢাকা, বাংলাদেশ, মে ১৯৯৪ সাল।
১২). প্রবন্ধ বিচিত্রাঃইতিহাস ও সাহিত্য- বাংলা একাডেমী, জুন ১৯৯৫ সাল।
১৩). আবদুল হক চৌধুরী রচিত “ চট্টগ্রামের ইতিহাস” প্রসঙ্গ (১ম ও ২য় খণ্ড) এবং চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি” গ্রন্থ দুটি চট্টগ্রাম (বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে পাঠ্যক্রমভুক্ত।)
তাঁর রচনা দেশে বিদেশে অনেক খ্যাতি এবং সম্মাননা লাভ করেছে।

(গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধঃ-)

সাহিত্যিক বাংলা গবেষণা সংসদ, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকাশিত প্রবন্ধঃ কবি শ্রীমতী রহিমুন্নিসার সময়কাল বিচার।

ইতিহাস- ইতিহাস পরিষদ পত্রিকা- ঢাকা।
প্রকাশিত প্রবন্ধঃ বারভূঁইয়া ঈশা খান সম্পর্কে নতুন তথ্য। ডঃ আহম্মদ শরীফকে লিখিত পত্রাবলী প্রকাশিত।

তাঁর জীবন, কর্ম ও গবেষণা সংক্রান্ত প্রকাশিত গ্রন্থাবলীঃ

গবেষক আবদুল হক চৌধুরীর কর্মকৃতি মূল্যায়ন।
সম্পাদনায়ঃ অমিত চৌধুরী, চট্টগ্রাম। প্রকাশকালঃ ৩০/০৯/১৯৯৫ সাল।

আবদুল হক চৌধুরী স্মারক গ্রন্থ।
সম্পাদকঃ ডঃ মুহম্মদ মজির উদ্দিন মিয়া। ডঃ তশিকুল ইসলাম। প্রকাশকঃ বাংলা একাডেমী, ঢাকা। প্রকাশকালঃ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ সাল।

আবদুল হক চৌধুরী ও তাঁর গবেষণা কর্ম।
ডাঃ আবদুল করিম। প্রকাশকঃ বাংলা একাডেমী, ঢাকা। প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮ সাল।

আবদুল হক চৌধুরী রচনাবলীঃ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও প্রফেসর ইমেরিটাস ডঃ আবদুল করিমের সম্পাদনায় “আবদুল হক চৌধুরী রচনাবলী” এর প্রথম খণ্ড ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড প্রকাশের অপেক্ষায়।

( তাঁর প্রাপ্তপদক ও সংবর্ধনা )

১). নতুন চন্দ্র সিংহ পদক -১৯৮৪ সাল।
২). চট্টগ্রাম গ্রুপ থিয়েটার সমন্বয় পরিষদ প্রদত্ত পদক ও সংবর্ধনা – ১৯৮৬ সাল।
৩(. এক্স-ক্যাডেট এ্যাসোসিয়েশন – চট্টগ্রাম ইউনিট প্রদত্ত পদক ও সংবর্ধনা -১৯৮৭ সাল।
৪). চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটি প্রদত্ত আজীবন সদস্য পদ, পদক ও সংবর্ধনা -১৯৮৭ সাল।
৫). চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘ প্রদত্ত সংবর্ধনা – ১৯৮৭ সাল।
৬). খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী শাখা প্রদত্ত সংবর্ধনা -১৯৮৮ সাল।
৭). নোয়াজিশপুর অদুদ সংঘ প্রদত্ত গুণীজন সংবর্ধনা -১৯৮৯ সাল।
৮). চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রদত্ত সংবর্ধনা -১৯৯১ সাল।
৯). চট্টগ্রাম রোটারি ক্লাব প্রদত্ত সংবর্ধনা -১৯৯২ সাল।
১০). রোটারি ক্লাব অব ইসলামাবাদ , চট্টগ্রাম প্রদত্ত সংবর্ধনা -১৯৯৩ সাল।
১১). আইনজীবী সহকারী সমিতি , চট্টগ্রাম প্রদত্ত সংবর্ধনা –১৯৯৩ সাল।
১২). বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র প্রদত্ত গুণীজন সংবর্ধনা -১৯৯৩ সাল।
১৩). চট্টগ্রাম সম্মিলিত ১লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদ প্রদত্ত ১৪০১ বাংলা বিদায়,১৫০০ শতাব্দীর বরণ উপলক্ষে ১৪০০ শতাব্দীর বরণীয় মানুষদের সংবর্ধনা ও পদক ১৫ই এপ্রিল ,১৯৯৪ সাল।
১৪). অনোমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পদক-১৯৯৮, মরণোত্তর (৯/৫/১৯৯৮ সাল) প্রয়াত বরেণ্য গুণীজন ।
১৫). মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ-১৯৯৮ সাল, চট্টগ্রাম বিজয় মঞ্চ ১৪/১২/১৯৯৮ (মরণোত্তর) সাহিত্য পদক ও সম্মাননা।
১৬). গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর সম্মাননা রাউজান আর.আর.এ.সি. হাইস্কুল শতবর্ষ উদ্‌যাপন পরিষদ,১লা এপ্রিল ২০০০ সাল,রাউজান, চট্টগ্রাম।
১৭). চট্টগ্রাম লোক সংস্কৃতির গবেষণায় অনন্য অবদানের জন্য মরণোত্তর “মহান একুশে সম্মাননা পদক প্রদান” চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন,২০ শে ফেব্রুয়ারি ২০০১ সাল।
১৮). ঘাসফুল গুণীজন সংবর্ধনা ও সম্মাননা- ৫ই সেপ্টেম্বর ২০০২ সাল সরকারি বাণিজ্য কলেজ মিলনায়তন। চট্টগ্রাম।
১৯). হিলালি স্মৃতি স্বর্ণপদক –ডঃ সৈয়দ গোলাম মকসুদ হিলালি স্মৃতি সংসদ, রাজশাহী, ২রা এপ্রিল ২০০৬ সাল।
২০). লোকসংস্কৃতি কৃতি সম্মাননা ২০০৭(মরনোত্তর) লোক উৎসব ও পুরাতনী মেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম।
২১). উদয়ন সংঘ , নোয়াপাড়া, রাউজান ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইতিহাসবিদ ( মরণোত্তর) সম্মাননা প্রদান। ২২ জানুয়ারি ২০১০ সাল,রাউজান, চট্টগ্রাম।
২২). বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত মরণোত্তর একুশে পদক (২০১১ সাল), গবেষণায়, পদক প্রদান করেন গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।২০শে ফেব্রুয়ারি ২০১১, ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন, ঢাকা।

—————————————————————
[ সংগৃহীত ও সম্পাদিত। তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া
তথ্য নির্দেশনা –

Md. Majiruddin Miah। “Choudhury, Abdul Haq”। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ – ৯ই জুলাই, ২০১৫ সাল।

মুহম্মদ মজিরউদ্দীন মিয়া (২০১২ সাল)। “চৌধুরী, আবদুল হক”। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর।

বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ, চট্টগ্রাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *