Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আধুনিক কবিতা এবং দুর্বোধ্যতা || Sanjit Mandal

আধুনিক কবিতা এবং দুর্বোধ্যতা || Sanjit Mandal

আমাদের আধুনিক কবিতা দুর্বোধ্য এমন একটি অভিযোগ আছে পাঠক মহল থেকে। কবিতা লিখি সেই হিসাবে আমারও কিছু বক্তব্য রাখার প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে আজ আমার প্রবন্ধে আধুনিক কবিতা এবং দুর্বোধ্যতার সামগ্রিক প্রেক্ষিতটা দু রকম দৃষ্টি কোণ থেকে দেখার চেষ্টা করবো, প্রথমত, নিজে পাঠক হিসাবে। দ্বিতীয়ত, নিজে কবিতা লেখার চেষ্টা করি সেই হিসাবে।
মূল আলোচনায় ঢোকার আগে যেটা আমাদের জানতে হবে তা হচ্ছে, কবিতার সংজ্ঞা কী। কবিতা কাকে বলে?
কবিতা হচ্ছে কাব্য, যা ছন্দোবদ্ধ রচনা বা শ্লোক, কবিতা হচ্ছে পদ্য বা ছন্দিত মাধুর্য। তাহলে একটা ব্যাপার পরিস্কার হল যে,কবিতায় ছন্দ থাকতে হবে, আর কবিতাকে মাধুর্য মন্ডিত হতে হবে। আধুনিক পাঠক যদি আধুনিক কবিতায় এই ছন্দ ও মাধুর্যের অভাব দেখে সে তো দুর্বোধ্যতার দোহাই দিয়ে কবিতাকে পাশ কাটিয়ে যাবে। তাকে দোষ দেওয়া যায় না। রসকষহীন শুষ্কং কাষ্ঠং তিষ্ঠতি অগ্রে, যেমন কবিতা হতে পারেনা, তেমনই কুবাক্য, কুকথা, বিভৎস, ভয়ংকর, আর দুর্বোধ্য শব্দও কবিতার অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনা। শুধু তাই নয়, অর্থহীন ছান্দিক বাক্যসমষ্টি ও একই কারণে কবিতা পদবাচ্য নয়। পাঠকের অপছন্দের কারণ দুর্বোধ্য শব্দের সমাহারে দুর্বোধ্য বিষয়ে ঘোলাটে ভাবের কবিতা, অজস্র মাথা ঘামানোর পরেও যে কবিতার অর্থ সম্যক ভাবে উপলব্ধি করা যায় না, বা কবির বক্তব্যের সঠিক অর্থ উপলব্ধি করা সম্ভবপর হয় না। আমি নিজে পাঠক হিসাবে স্বচ্ছ মাধুর্য মন্ডিত সুললিত ছন্দোবদ্ধতা পছন্দ করবো। সেখানে শুষ্কং কাষ্ঠং তিষ্ঠত্যগ্রে, নয়, বরং নীরস তরুবরঃ পূরত ভাতি, চাইবো। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য কবিগণ যে সমস্ত পদ্য বা ছন্দমণ্ডিত কবিতা লিখেছেন, বাল্যকালে পড়া সেই সব কবিতা অনেক বয়স পর্যন্ত অনেকে গড়গড় করে মুখস্থ বলে যেতে পারেন। ছন্দের এমনই গুণ, এমনই মাধুর্য। আবার রবীন্দ্রনাথ সমেত আর যে সমস্ত কবি গদ্য কবিতা লিখেছেন সেই গদ্য কবিতারও একটা অন্তর্নিহিত ছন্দ রক্ষা করেছেন, যতিচিহ্নর সঠিক ব্যবহার করে পাঠ করলে সে ছন্দের মর্মবাণী মর্মে মর্মে বর্ণে বর্ণে উপলব্ধি করা যায়।

কবিতার কালকে যদি চর্যাচর্যবিনিশ্চয় যুগ, রবীন্দ্র যুগ, কল্লোল যুগ আর বর্তমান যুগের প্রেক্ষিতে বিচার করি তাহলে একটা জিনিস আমাদের কাছে পরিস্ফুট হয় যে ছন্দিত বাণীর লালিত্য সমৃদ্ধ মাধুর্য মন্ডিত কবিতাই পাঠকের মনে দোলা দিয়েছে সব থেকে বেশী। বর্তমান যুগে আধুনিক কবিতা লিখিয়েরা কত জন সত্যিকারের কবি এবং কতজন ছন্দিত মাধুর্য মন্ডিত সুললিত কবিতা লেখেন সে সম্বন্ধে কোনো সমীক্ষা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।কাজে কাজেই পাঠক হিসাবে আমার অত্যাধুনিক দুর্বোধ্য কবিতা পছন্দ না ও হতে পারে, আর যথারীতি ঠিক এইভাবেই কবিতার দুর্বোধ্যতা নিয়ে কবির সাথে পাঠকের একটা দূরত্ব তৈরি হয়।

এবার আসি সামান্য একটু আধটু কবিতা লেখা লেখি করি বলে সোসাল মিডিয়ার পাঠকের কাছে পৌঁছাতেই হয়। কারণ তারাই কবিতার মানদণ্ড বিচার করে। পছন্দ করে বা করে না, ভালো মন্দ মতামত দেয়, বা কোনো মন্তব্য করে না। এখানেই আমার প্রশ্ন ঠিক কতজন কবিতা পড়েন সেই সঙ্গে ভালো মন্দ লাগার মন্তব্য ও করেন, আর কতজন না পড়েই মন্তব্য করেন। বহুসংখ্যক গ্রুপের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে বেশ কিছু বিষয় না পড়া মন্তব্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছি। সামান্য কিছু নমুনা পেশ করতে চাই, যেমন, বেশ, ভালো, সুন্দর, খুব ভালো, চমৎকার, ইত্যাদি। এই মন্তব্য গুলো কবিতা না পড়েই করা যায়, এগুলো আসে প্রধানত এডমিন আর মডারেটর দের কাছ থেকে, চাপে পড়ে এগুলো করতে হয়, কেননা এতো গুলো মন্তব্য করতে ই হবে, ছাড়া যাবে না, গ্রুপ কর্তার অধ্যাদেশ। কেউ কেউ আবার রঞ্জিত আর অতিরঞ্জিত একই মন্তব্য বহু কবির কবিতার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন, সে কবিতার বিষয় বস্তু যতই ভিন্নতর হোকনা কেন, অথবা লেখার মান উৎকৃষ্ট বা নিকৃষ্ট সে বিচার না করেই।
কেউ কেউ আবার ভালো মানের কবিতা, গল্প বা প্রবন্ধ পড়ে মন্তব্য করেন গুড মর্নিং বা ভেরি গুড মর্নিং তার সঙ্গে শুভ সকাল, শুভ দুপুর ইত্যাদি তো আছেই। কবিতা পড়ে এই ধরনের মন্তব্য কবির বিড়ম্বনাই শুধু বাড়ায়।
আর এক ধরনের পাঠক আছেন যারা পাশ কাটিয়ে যান। বিভিন্ন আলোচনা সভায় তাদের বক্তব্য শুনেছি, কেন তারা মন্তব্য না করে পাশ কাটিয়ে যান। তাদের উত্তর শুনে অবাক হয়েছি। তাদের একদলের বক্তব্য, কেউ বলেছেন, কবি যদি কিছু মনে করেন, আর একদলের বক্তব্য, কি বলতে হবে বুঝতে পারি না বলে মন্তব্য করি না।
দেখা গেছে, কোনো লেখা Seen বা দেখেছেন ১৫০ জন বা তারও বেশী, কিন্তু মন্তব্য করেছেন মাত্র তিনজন! ফলে এই যে ১৪৭ জনের মতামত কিন্তু অজানাই থেকে গেলো।
আমি নিজে লিখি তাই আমাকে তাদের বলতেই হয়েছে যে, আপনি কষ্ট করে পড়েছেন, যদি কি পড়েছেন তা বুঝতে না পারেন, সেটাই কবিকে সরাসরি বলুন, যে আপনার কবিতা দুর্বোধ্য তাই কিছু মন্তব্য করলাম না। তাহলে কবি অন্ততঃ পক্ষে সম্বিত ফিরে পাবে যে লেখা আরও সরল ও হৃদয়গ্রাহী করতে হবে। আর সব থেকে কষ্ট হয় যখন দেখা যায় কোনো ভাল লেখার কমেন্ট এসেছে গুড মর্ণিং, শুভ দুপুর বা গুড ইভিনিং ইত্যাদি বলে। হে পাঠক, দয়া করে কোনো লেখার উত্তরে গুড মর্নিং ইত্যাদি বলে দেওয়াটা কতো খানি যুক্তিসঙ্গত ভেবে দেখতে অনুরোধ করি। আমি মনে করি আপনি শুধু ই পাঠকই নন আপনি কবির শিক্ষক ও বটে। আপনার ও কবির সুন্দর মেল বন্ধনের ফলে কবির মনোবল বাড়বে, কবিতার উৎকর্ষ বৃদ্ধি পাবে, কবিতার উন্নতি হবে, আর সামগ্রিক ভাবে সাহিত্যের উন্নতি ঘটবে।
উপসংহারে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে দুর্বোধ্যতার দায় শুধু মাত্র কবির ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে চলবেনা, কবিতা বোঝার জন্য পাঠককে ও যথেষ্ট দায়িত্ব নিতে হবে। কবিতা না পড়েই কবিতার বোধ্যতা দুর্বোধ্যতা যেমন বিচার করা যায় না তেমনই বিনা মন্তব্যে পাশ কাটিয়ে যাওয়া বা লেখার মন্তব্যে গুড মর্নিং, শুভ দুপুর ইত্যাদি বলে কবির মনোবল ভেঙে দেওয়া ঠিক হয় না।
কবির যেমন দায়িত্ব আছে তার কবিতা সাধারণ্যে যাতে সমাদৃত হয় এমন লেখনী লেখার তেমনি পাঠকের ও দায়িত্ব থেকে যায় কবিতা পাঠ করার পরে তার গুণাগুণ সম্বন্ধে কবিকে সম্যক ভাবে অবহিত করার।
আগেকার মতো এখন কবিতার বই কিনে কবিতা পড়তে হয় না, এখন কবিই কবিতার সম্ভার নিয়ে সরাসরি পৌঁছে যান পাঠকের দরবারে, সোস্যাল মিডিয়ার হাত ধরে। কবিতা যদি সুখপাঠ্য হয় কবি নিশ্চিত ভাবেই সুমন্তব্য তো পানই বিভিন্ন ধরণের সম্মাননা ও পান। পাঠকের করা মন্তব্য ও এডমিন দের সুবিবেচনার সৌহার্দ্যে কবিরা সম্মানিত হন। এতে একদিকে যেমন কবি আরও ভালো লেখার জন্য উৎসাহ পান তেমনি বাংলা সাহিত্যের ও কিছুটা সেবা করা হয়। কবিতার ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়।
বাঙালী অত্যন্ত আবেগ প্রবণ জাতি, আবেগ আছে বলেই কবিতাও আসে বাঙালির ই বেশী। সারা পৃথিবীতে নাকি প্রতিদিন যত কবিতা লেখা হয় তার অর্ধেকই লেখে বাঙালিরা। এ তথ্যটি পাওয়া গেছে শান্তনিকেতনে আয়োজিত বিশ্ব সভায়, ( ৩১ শে মার্চ থেকে ২রা এপ্রিল ২০১৯)যেখানে সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে কয়েক হাজার বাঙালি গুণীজন এসেছিলেন তাদের বক্তৃতায় আর স্মৃতি মন্থনে তথ্যটি উঠে আসে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাঙালি কবিরা যে সমস্ত কবিতা লেখেন, সেই সমস্ত লেখা সোস্যাল মিডিয়ার দৌলতে পৌঁছে যায় পাঠকের ঘরে ঘরে। এখানে দরকার শুধু একটু সময় করে সহানুভূতির সাথে সেই লেখা পড়ে একটি সঠিক মন্তব্য করে ফেলা। তাই লেখক লিখবেন আর পাঠক তা পড়ে তার মতামত জানাবেন এটাই হবে কবি ও পাঠকের সঠিক মেলবন্ধন। কবির দায়িত্ব যেমন পাঠককে কাছে টেনে নেওয়া, তেমনি পাঠকের ও দায়িত্ব কবিকে উৎসাহিত করা। উভয় কেই আন্তরিক হতে হবে। আধুনিক কবিতার দুর্বোধ্যতা এভাবেই সহজবোধ্যতা লাভ করবে বলেই আমার বিশ্বাস।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress