সোম থেকে শনি প্রত্যেকদিন সকালবেলা পাটুলীর কাজ গুলো সেরে ঘড়িতে সাড়ে নটা বাজতেই মোটরসাইকেল স্টার্ট করে রওনা দিই সারাদিনের কর্মস্থল ঢাকুরিয়ার উদ্দেশ্যে। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ঘড়িতে নটা বেজে ৪০ মিনিট। ইতিমধ্যেই মস্তিষ্কে ব্যস্ততা প্রবেশ করেছে। শরীরী ব্যস্ততা তুঙ্গে। তড়িঘড়ি অবস্থায় ই-এম বাইপাস দিয়ে বাঘাযতীন ফ্লাইওভারে উঠতে উঠতেই হঠাৎ করে চোখ পরল সুবিশাল এক নীল ছাতার তলায় ভাসতে থাকা কত স্বপ্ন সম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীকীর প্রতি। আমি অভিভূত। আমি আশ্চর্য। আমি তখনো দ্রুতগামী। আমি তখনো বিপথগামী। আমার দুই হাতে দ্রুত বেগে ছুটে চলা মোটরসাইকেলের দুটি হাতল। আমার বুকে ধাক্কা মারছে সোনালী আলোয় জন্ম নেওয়া নীল আকাশের তলায় রুপালি মেঘের সাথে দেখা করে আসা বাতাসের স্রোত। কর্মস্থলে যাওয়ার তাড়া তখনো শরীরের ভাষায়। একদিকে বিশ্বের চির চমৎকৃত রূপময় দৃশ্য। অন্যদিকে রুটির খোঁজে দ্রুত বেগে ছুটে চলা।
কি যে করি..!
এমন দোটানার মাঝেও ফ্লাইওভারের মাঝামাঝি স্থানে মোটরসাইকেলটা শেষমেশ দাঁড় করয়েই দিলাম।ফ্লাইওভারের ধার ঘেঁষে রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে মাথার হেলমেটটা খুলে ফেললাম। খুলে ফেললাম চোখের চশমাটাও। এই পৃথিবীর এই সুন্দর আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম খালি চোখে বেশ কিছুক্ষণ।
সামনে।
পিছনে।
ডানদিকে।
বাঁদিকে।
সব দিকেই যেন নীল ছাতার তলায় ভাসমান রুপোলি পাহাড়ের আশ্রয়। সে যে কি অপরূপ দৃশ্য…!
আমার যে কিরকম মনে হচ্ছিল সেই আনন্দের কথা বলে বোঝাতে পারছি না। এক কথায় যদি বলি….. ……… …..
আমার কি মনে হচ্ছিল জানেন?
আমার মনে হচ্ছিল……..
ঐ আকাশ হতে মা দুর্গা আমাকে দেখছেন।
আমার মনে হচ্ছিল……………
সাদা দাড়ি আর এলো চুলে রবী ঠাকুর আমার কাছে আসছেন।
আমার মনে হচ্ছিল……………
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর বিদ্রোহের বাণী আর শান্তির বার্তা নিয়ে আমায় ডাকছেন।
কখনো আবার কি মনে হচ্ছিল জানেন?
মনে হচ্ছিল………..
মনে হচ্ছিল সারিবদ্ধ ভাবে
মা দুর্গা;
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর;
কাজী নজরুল ইসলাম;
সবশেষে ঐ পাহাড়ের আড়াল হতে সান্তা ক্লজও আসছেন।
আমার দুর্গা,
আমার রবীন্দ্রনাথ,
আমার নজরুল,
আমার সান্তা ক্লজ,
একে একে সব্বাই আকাশ পানে ভেসে আছে।
আমি চেয়ে চেয়ে আছি আকাশ পানে।
কেন চেয়ে আছি তা আমার অনুভূতি আর আকাশ জানে।
আমি দাঁড়িয়ে প্রহরের পর প্রহর।
বয়ে চলে ঘড়ির কাঁটা।
বয়ে যায় আমার কর্মব্যস্ত সময়।
হারিয়ে যায় রুজি রুটির ভাবনা।
থেমে যায় শত ব্যস্ততা।
শুধু আকাশের প্রতি উজ্জ্বল অতর্কিত দৃশ্যায়মান এনে দিল মুগ্ধতা।