হে সম্রাট বসে আছি তব সমাধির পাশে,
একান্ত বিজন।
দূর হতে অর্ণ্যের অন্ধকার ভেদি’ ভেসে আসে
বিহগ কূজন।
নীরব মধ্যাহ্ন-বেলা, শব্দহীন নিঃসাড় ভূবন,
কেহ কোথা নাই ;
অকস্মাৎ মর্মরিল তরুশাখে মন্থর পবন—
চমকিয়া চাই।
জীবনের গতি হেথা আসিয়াছে মন্দ হ’য়ে ধীরে,
নাহিক স্পন্দন ;
বন্দী হয়ে কেঁদে ফিরে সমাধির পাষাণ প্রাচীরে
স্মৃতির ক্রন্দন।
কত দিবসের ব্যথা, জীবনে আবেগ উত্তাল
গিয়াছে নিভিয়া ;
স্মৃতির কন্দরে-মম শতাব্দীর অন্ধকার জাল
উঠে শিহরিয়া!
তোমার হৃদয় ভরি’ জেগেছিল কি মহা স্পন্দন!—
এ ভারত-ভূমি,
এক ধর্ম, এক রাজ্য, এক জাতি, একনিষ্ঠ মন,—
বেঁধে দিবে তুমি!
সমাজ আচার ভেদ, ধর্মভেদ ভুলে যাবে সবে ;
রহিবে স্মরণ—
এক মহাদেশে বাস, চিরদিন একসাথে হবে
জীবন-মরণ!
হায়! স্বপ্ন টুটে যায় কঠিন ধরার ধূলা লাগি’,
দেখি আঁখি মেলি’—
ক্রূর সর্পসম হিংসা হিয়া-তলে রহিয়াছে জাগি’,
উঠিছে উদ্বেলি’।
বিদ্বেষ সমুদ্রসম আস্ফালিয়া করিছে গর্জন
ছাইয়া হৃদয় ;
নীরব আকাশ-তলে প্রতি পলে বাজিছে ক্রন্দন,
রক্তধারা বয়!
ধরণীর শ্যাম শোভা ক্লিষ্ট আজি রক্তের ধারায়,
ভায়ের শোণিতে ;
আকাশের শান্ত সৌম্য নীরবতা শুধু ভেঙে যায়
সংগ্রাম ধ্বনিতে।
স্বার্থে স্বার্থে দ্বন্দ্ব লাগে, রক্ত ঝরি’ পড়ে অহর্নিশ,
উঠে শূণ্য-পানে
ক্রন্দন গর্জন রোল, অভিশাপ হাহাকার মিশি’,
কাহার সন্ধানে ?
তোমার সমাধি-পাশে বসি’ আজি পড়ে মোর মনে
তোমার কীরিতি ;
নিখিল ভারত ভরি’ উঠেছিল ধ্বনিয়া গগনে
মিলনের গীতি!
তোমার মহৎ হিয়া পুনর্বার আসুক ফিরিয়া
আমাদের মাঝে ;
আত্মদ্বন্দ্ব-সর্বনাশ আমাদের রেখেছে ঘিরিয়া
অপমানে লাজে!
হে মহৎ তব বাণী নিখিল ভারত ভরি’ আজি
জাগুক আবার ;
উঠুক মিলনমন্ত্র সম্যবাদ কম্বুকণ্ঠে বাজি’
টুটিয়া আঁধার!
হিংসা-দ্বেষ-মন্ত্রশান্ত ভুজঙ্গের মতো-শঙ্কাভরে
হোক্ শান্ত হোক্,
আঁধারের প্রাণী যত ফিরে যাক্ আঁধার বিবরে,
নামুক আলোক।