Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অশোকতরু || Hemchandra Bandyopadhyay

অশোকতরু || Hemchandra Bandyopadhyay

কে তোমারে তরুবর, করে এত মনোহর,
রাখিল এ ধরাতলে, ধরা ধন্য কর‍্যে?
এত শোভা আছে কি এ পৃথিবী ভিতরে!
দেখ দেখ কি সুন্দর, পুষ্পগুচ্ছ থরেথর,
বিরাজে শাখীর পর সদা হাস্যভরে—
সিন্দূরের ঝারা যেন বিটপী উপরে!
মরি কিবা মনোলোভা, ছড়ায়ে রয়েছে শোভা,
আভা যেন উথলিয়া পড়িছে অম্বরে।—
কে আনিল হেন তরু পৃথিবী ভিতরে?

বল বল তরুবর, তুমি যে এত সুন্দর
অন্তরও তোমার, কি হে, ইহারি মতন?
কিম্বা সুধু নেত্রশোভা মানব যেমন?
আমি দুঃখী তরুবর, তাপিত মম অন্তর,
না জানি মনের সুখ, সন্তোষ কেমন;
তরুবর তুমি বুঝি না হবে তেমন?

অরে তরু খুলে বল, শুনে হই সুশীতল,
ধরণীতে সদানন্দ আছে এক জন,—
না হয় সন্তাপে যারে করিতে ক্রন্দন।

জানিতাম, তরুবর, যদি হে তব অন্তর,
দেখাতাম একবার পৃথিবী তোমায়—
মানবের মনচিত্রে কি আছে কোথায়।
কত মরু, বালুস্তূপ, কত কাঁটা, শুষ্ক কূপ,
ধূ ধু করে নিরবধি অন্ধ ঝটিকায়—
সরসী নির্ঝর, নদী, কিছু নাহি তায়।
তা হ’লে বুঝিতে তুমি, কেন ত্যজি বাসভূমি,
নিত্য আসি কাঁদি বসি তোমার তলায়;
ত্যজে নর, ধরি কেন তোমার গলায়।

তুমি তরু নিরন্তর, আনন্দে অবনী পর,
বিরাজ বন্ধুর মাঝে, স্বজন সোহাগে;
তরুবর, কেহ নাহি তোমারে বিরাগে।
ধরণী করান পান, সুরস সুধা সমান,
দিবানিশি বার মাস সম অনুরাগে,—
পবন তোমার তরে যামিনীতে জাগে।

স্রোতোধারা ধরি পায়, কুলু কুলু করি ধায়,
আপনি বরষা নীর ডালে শিরোভাগে;—
তরু রে বসন্ত তোর স্নেহ করে আগে।

কলকণ্ঠ মধুমাসে, তোমারি নিকটে আসে,
শুনাতে আনন্দে বসে কুহু কুহু রব;
তরুবর, তোমার কি সুখের বিভব।
তলদেশে মখমল, তৃণ করে ঢল ঢল,
পতঙ্গ তাহাতে সুখে কেলি করে সব,
কতই সুখেতে তরু, শুন ঝিল্লীরব!
আসি সুখেপাঁতি পাঁতি, ছড়ায়ে বিমল ভাতি,
খদ্যোত যখন তব সাজায় পল্লব—
কি আনন্দ তরু তোর হয় অনুভব!

তরু রে আমার মন, তাপদগ্ধ অনুক্ষণ,
কেহ নাই শোকানলে ঢালে বারিধারা;
আমি, তরু, জগতের স্নেহ, সুখ হারা!
জায়া, বন্ধু, পরিবার, সকলি আছে আমার,
তবু এ সংসার যেন বিষতুল্য কারা;—
মনে ভাল, কেহ মোরে, বাসে না তাহারা!

এ দোষ কাহারো নয়, আমিই কলঙ্কময়,
আমারি অন্তর হয়, কঙ্কালেতে ভরা—
আমি, তরু, বড় পাপী, তাই ঠেলে তারা।

বড় দুঃখী তরু আমি, জানেন অন্তরষামী,
তোমার তলায় আসি ভাসি অশ্রুনীরে,
দেখিয়া জীবের সুখ ভবের মন্দিরে।
এই ভিন্ন সুখ নাই, তরু তাই ভিক্ষা চাই,
পাই যেন এই রূপে কাঁদিতে গম্ভীরে,
যত দিন নাহি যাই বৈতরণী তীরে।
এক ভিক্ষা আছে আর, অন্য যদি কেহ আর,
আমার মতন দুঃখী আসে এই স্থানে,
তরু, তারে দয়া করে তুষিও পরাণে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *