বাংলোর ঘরে আলো জ্বলে নি
বাংলোর ঘরে আলো জ্বলে নি, বারান্দাও অন্ধকার। সেই অন্ধকারেই রবি আর সঞ্জয় চুপ করে বসে আছে ইজিচেয়ারে। অসীম চেঁচিয়ে উঠলো, কি রে, তোরা অন্ধকারে ভূতের মতন বসে আছিস কেন?
রবির গলা তখনো থমথমে সে গভীরভাবে জানালো, বারান্দার আলো জ্বালিস না।
শেখর ঘরের ভেতর থেকে টাকা এনে চাটওয়ালাকে বিদায় করলো। তারপর আবার বারান্দায় এসে, চোখে পড়লো টেবিলের ওপর প্লেটে চিবানো মাংসের হাড়। শেখর জিজ্ঞেস করলো, এ কি, মাংস–
–তোমার বান্ধবী দরওয়ানের হাত দিয়ে কাটলেট পাঠিয়েছিলেন বিকেলবেলা। তোমাদের দুজনেরটা ঘরে ঢাকা আছে।
—এদিকে আমরাও যে মাংস নিয়ে এলুম। আরে, এ কি, রবি–
এতক্ষণ লক্ষ করি নি, এবার আবছা আলোয় শেখর দেখলো, রবি সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে বসে আছে। তার জামা-প্যান্ট, গেঞ্জি-জাঙ্গিয়া সব, চেয়ারের হাতলে জড়ো করা। শেখর এবার হাসতে হাসতে বললো, এ কি বো, তুই রাগ করে শেষ পর্যন্ত–
–রাগেব কি আছে। গরম লাগছিল।
–গরম লাগছে বলে একেবারে ত্রৈলঙ্গস্বামী?
ব্যাপারটাতে অসীম খুব মজা পেয়ে গেল। সে উল্লাসের সঙ্গে বললো, ঠিকই তো, জঙ্গলের মধ্যে রাত্তির বেলা এসব ঝামেলা-আয় আমরাও খুলে ফেলি–অসীম অবিলম্বে নিরাবরণ হয়ে গিয়ে শেখরের জামা ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো। শেখর বললো, আরে, আরে, টানিস না, খুলছি। খুলছি–।
অসীম ডাকলো, সঞ্জয়, এই সঞ্জয়!
সঞ্জয় চোখ বুজে ছিল, এবার বিরুস, গলায় বললো, আমাকে বিরক্ত করিস না, আমার ভালো লাগছে না।
–কেন রে, তোর কি হলো!
–আমার এখানে আর ভালো লাগছে না। আমি কাল চলে যাবো। এসব আমার পছন্দ হয় না–রবি আজ সেই লোকটাকে মেরেছে।
শেখর অক্সার ভ্ৰাসী ম। প্রায় একসঙ্গেহ জিজ্ঞেস করলো, কাকে মেরেছে?
সঞ্জয় বললে, ঐ যে আমাদের সঙ্গে এসেছিল, কি নাম যেন—লখা! লোকটা এসে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই…
–কেন, তাকে মেরেছে কেন?
রবি হংকার দিয়ে উঠলো, মারবো না? লোকটা চিট, আমাকে ঠকাতে এসেছিল। তোদের নাম করে আমার কাছে টাকা চাইতে এসেছিল।
শেখর চমকে উঠে বললো, সে কি রে, আমরা যে সত্যিই ওকে পাঠিয়েছিলাম।
–মোটেই না! আমি ওকে দেখেই বুঝেছিলাম আমাকে ঠকাতে চাইছে।
পোশাক না পরা পুরুষের শরীর কি রকম যেন দুর্বল আর অসহায় দেখায়! বিশেষত ঐ অবস্থায় ইজিচেয়ারে বসে থাকার মধ্যে একটা হাস্যকরতা আছে। রবি খানিকটা বেঁকে বসে আছে—তার ছিপছিপে কঠিন দেহ–কোথাও একছিটে চর্বি নেই, ক্রিকেট খেলোয়াড়ের সাদা পোশাকে তাকে অপরূপ লাবণ্যময় দেখায়–মনে হয়, সেইটাই তার আসল চেহারা, নিরাবরণ শরীরে রবিকে এখন অচেনা মনে হচ্ছে। কোনো একটা ব্যাপারে রবি অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে আছে। রবি মানুষকে ধমকাতে ভালোবাসে, হঠাৎ তো কারুকে মারতে চায় না! শেখর জিজ্ঞেস করলো, লখা এসে আমাদের নাম করে বলে নি?
রবি সে কথার উত্তর না দিয়ে বলো, আমি জানি লোকটা জোচ্চোর!
–না রে, আমরা মাংস কিনবো, টাকা ছিল না, তাই ওকে পাঠালাম। ওর হাত দিয়ে এক বোতল মহুয়াও পাঠিয়েছিলাম দেয় নি?
সঞ্জয় বললো, হাঁ, সেটা রবি একাই শেষ করেছে।
রবি আবার তেড়ে উঠলো, এক বোতল ছিল না, আধ বোতল ঐ হারামজাদা নিজে খেতে খেতে এসেছে–
পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরা সঞ্জয় চেয়ার ছেড়ে উঠে এগিয়ে এসে বললে, আমি রতিলালের সঙ্গে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম–লোকটা খুব বিপদে পড়েছে, বৌয়ের কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিল। আমি ওর সঙ্গে গেলাম, ওর বৌটা বাঁচবে না, কি হয়েছে কে জানে-পেটটা বিষম ফুলে গেছে, নিঃশ্বাস ফেলছে হাঁপরের মতন, পাশে তিনটে বাচ্চা। বাড়িতে এরকম অসুখ, অথচ রতিলালকে দিয়ে আমরা জল তোলাচ্ছি, উনুন ধরাচ্ছি-বিচ্ছিরি লাগছিল ভেবে-তার ওপর, আমরা বে-আইনিভাবে বাংলোটা দখল করে আছি। আমাদের জন্য লোকটার যদি চাকরি যায়–
অসীম অধৈৰ্য হয়ে বললো, আচ্ছা, আচ্ছা, রাতিলালের কথা পরে শুনবো। লেখার সঙ্গে কি হলো বল না!
সঞ্জয় একটু জ্বালা মিশ্ৰিত দুঃখের সঙ্গে কথা বলছিল, অসীমের অধৈৰ্য উক্তি শুনে এক পলক আহতভাবে তার দিকে তাকালো। ফের বললো, ফিরে এসে দেখি রবি লখাকে ধরে পেটাচ্ছে। আমি বাধা না দিলে হয়তো রক্তারক্তি করতো। তারপর এক বোতল মদ গিলে, অসত্যের মতন জামা কাপড় সব খুলে-আই ডিটে্স্ট অল দিজ-একটা সভ্যতা ভদ্রতা বলে ব্যাপার আছে।
রবি বললো, জঙ্গলে এসে আবার সভ্যতা কি রে?
—আমরা জঙ্গলে বেড়াতে এসেছি, জংলী হতে আসি নি। আমরা যেখানেই যাই, আমরা সভ্য মানুষ।
শেখর বাধা দিয়ে বললো, সত্যি তোরা এমন এক একটা কাণ্ড করছিস, শেষ–পর্যন্ত একটা বিপদ-আপদ না-হয়ে যাবে না দেখছি। লখা যদি দলবল নিয়ে আমাদের মারতে আসে?
ববি বললো, যা যা, কজন আসবে, আসুক না!
অসীম বললো, অত ভাববার কি আছে! ও রকম মার খাওয়ায় ওদের অভ্যোস আছে। লেখা আমার কাছে কলকাতায় চাকরি চেয়েছে, আমি দেবো বলেছি, সেই লোভেই সব সহ্য করবে।। কলকাতায় চাকরি নিলে কত লাঠিঝ্যাঁটা খেতে হবে–এখান থেকেই সেটা বুঝে নিক!
সঞ্জয়ের গলায় যুগপৎ দুঃখ ও অভিমান, সে অনেকটা আপন মনেই উচ্চারণ করলো, গ্রাহ্য করি না, কোনো মনে হয় না, আমরা মানুষকে মানুষ বলেই গ্রাহ্য করি না, শুধু নিজেদের আনন্দ ফূর্তি, কোনো মানে হয় না, ভাল্গার–
—এমন কিছু করা হয় নি, তুই আবার বাড়াবাড়ি করছিস!
–অসীম জানালো, জানিস রবি, সেই মেয়োগুলোকে সন্ধ্যাবেলাও দেখলাম—
–কোন মেয়োগুলো? কোথায়?
সেই দুপুরে যে-তিনজন এসেছিল, তাদের দেখলাম। সেই ভাঙা মিলিটারি ব্যারাকে বসে ধুঁধুল দিয়ে ভাত খাচ্ছে।
রবি চেয়ার ছেড়ে সোজা উঠে দাঁড়ালো, আবেগের সঙ্গে বললো, সেই তিনজন? মিলিটারি ব্যারাকে? ওরা নিজের থেকে এসেছিল, আমরা তখন তাড়িয়ে দিয়েছিলাম–
রবি এবার তাড়াক করে বরান্দা থেকে লাফিয়ে নেমে আর একটি কথাও না বলে অন্ধকারে ছুটলো! শেখর চোঁচিয়ে উঠলো, এই রবি, কোথায় যাচ্ছিস?
রবি কোনো সাড়া দিলো না। দূরে শুকনো পাতা ভাঙার শব্দ! শেখর বললে, আরে, ছেলেটা পাগল হয়ে গেল নাকি? অসীম, আয় তো।
ওরা দুজনেও বারান্দা থেকে নেমে ছুটলো; অরণ্যের স্তব্ধতা বড় কঠোর ভাবে ভেঙে যেতে গলো। অন্ধকারে কেউ কাউকে দেখতে পায় না, শুধু পায়ের শব্দ, রাক্তিরাবেল এ রকম পদশব্দ জঙ্গলে সপরিচিত। শেখর চোঁচাল, রবি রবি-। কোনো সাড়া নেই। অসীম, তুই কোন দিকে? রবি কোথায় গেল?
বুঝতে পারছি না।
–রবি, ফিরে আয়, এখন ওরা ওখানে নেই।–লতার ঝোঁপে পা আটকে পড়ে গেল শেখর। হাতের তালুতে কাঁটা ফুটেছে। দুএক মুহূর্ত চুপ করে কান পেতে শুনলো। কোথাও কোনো শব্দ নেই! একটু বাদে পাশেই খর্খর করে শব্দ হলো, সেদিকে দ্রুত হাত বাড়িয়ে মনুষ্য শরীর পেয়ে শেখর চেপে ধরলো।
সঙ্গে সঙ্গে হা-হা করে হেসে উঠে অসীম বললো, আমি, আমি–। রবিকে ধরতে পারবি না, ও ক্রিকেটে সর্ট রান নেয়।
–ওকে ছেড়ে দেওয়া যায়? কত রকম বিপদ হতে পারে, কিছু একটা হলে ওর মাকে কী বলবো?
–ঐ যে ডান দিকে শব্দ হচ্ছে।
শেখর আবার উঠে। ছুটলো। আবার পাতা ভাঙার শব্দ, চিৎকার, রবি, রবি, এখানে আয় বলছি–
অসীমের বদমায়েশী হাসি, রবি, থামিস না, চলে যা—
এই অসীম, দাঁড়া, তোকে একবার হাতের কাছে পাই—
–শেখর, এত সিরিয়াস হচ্ছিস কেন? বেশ মজা লাগছে মাইরি, ইয়া-হু, আমি টার্জন, আব-আব—আব, রবি, তাড়াতাড়ি পালা!
–অসীম, আমাকে ধর, আমার পা মুচকে গেছে।
—ধ্যাৎ তেরি। মচকে গেছে তো পড়ে থাক, আমার—
তেমন বেশি আঘাত লাগে নি শেখরের। তবুও আর উঠলো না। চিৎ হয়ে শুয়ে থেকে তাকিয়ে রইলো আকাশের দিকে। পিঠের তলায় ভিজে ভিজে মাটি আর শুকনো পাতা ভারী আরাম লাগছে; যেন কত কাল এ রকমভাবে শোওয়া হয় নি, শরীর যেন এর প্রতীক্ষায় ছিল। কোনো আলাদা গন্ধ নেই, সব মিলিয়ে একটা জংলী গন্ধ ভেসে আসছে। ভুকু ভুক-ভুক করে একটা রাতপাখি হঠাৎ ডেকে উঠলো। মাঝে মাঝে অসীম আর রবির দুএক টুকরো কথা শোনা যাচ্ছে। শেখরের আর ইচ্ছে হলো না ওদের ডাকতে। তার বদলে এই অন্ধকার জঙ্গলে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে থাকায় একটা মাদকতা বোধ করলো।
পোশাক খুলে ফেলার পর শরীরের সঙ্গে সঙ্গে আত্মাও যেন আর কিছু গোপন রাখতে চায় না। রবি কেন অত ছটফট করছে শেখর জানে। ওর আঘাত আর দুঃখ, শহরে যা গোপন রাখা যায়, এই অরণ্যে এসে তা আরও বিশাল হয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। দূর-ছাই, যা হবার হোক!
হঠাৎ অসীমের ত্রস্ত ডাক ভেসে এলো দূৰ্ব থেকে, এই রবি, ওদিকে যাসনে, গাড়ি আসছে! শেখর ধড়মড় করে উঠে বসলো।
এক ঝলক প্রবল আলো ও একটানা একটা গোঁ গোঁ শব্দ শোনা গেল। ওরা বড় রাস্তার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে, দূরে দুটো ট্রাক আসছে। হেড লাইটের আলোয় মাঝরাস্তায় রবির দীর্ঘ, ফরাসা, উলঙ্গ দেহটা একবার দেখা গেল! কে জানে, ট্রাক ড্রাইভাররা ভূতের ভয় পেয়েছিল কিনা, তারা গাড়ির স্পিড় আরও বাড়িয়ে দিলে। শেখর চিৎকার করে উঠলো, রবি, সাবধান—।
ট্রাক দুটো চলে যাবার পর আরও বেশি অন্ধকার। একটু বাদে অন্ধকারে চোখ সইয়ে নেবার পত্নী শেখর আর অসীম ক্লাস্তার। এ-পারে এলো। রবি এক ধারে লম্বা হয়ে পড়ে আছে। না, কোনো দুৰ্ঘটনা হতে পারে না, রবি মাঝরাস্তা থেকে অনেক দূরে। শেখর ঝুঁকে পড়ে জননীর মত স্নেহে রবির কপালে হাত রেখে ডাকলে, রবি, রবি–
রবি পোশ ফিরে বললো, উঁ। আমার হাঁটুতে খুব লেগেছে।
–কেটে গেছে? চল, আমার কাছে পেনিসিলিন আয়ন্টমেন্ট আছে, দাঁড়াতে পারবি তো?
–ঘষড়ে গেছে, জ্বালা করছে খুব। হ্যাঁ, দাঁড়াতে পারবো।
অসীম বললো, রবি, তোকে মাঝরাস্তায় আলোতে এমন সুন্দর দেখাচ্ছিল, গ্ৰীক দেবতার মতন–।
ক্লিষ্ট হেসে বুধি বললো, আয় না একটু বসি-কী সুন্দর জায়গাটা!
–আব্বার কোনো ট্রাক গেলে যদি আমাদের গায়ে আলো পড়ে–শেখর এতক্ষণে হাসলো।
–না, আলো দেখলে আমরা সরে যাবো। আজ সারাদিন আমার বড় মন খারাপ ছিল রে।
ঘাসের ওপর বসলো তিনজনে। শেখর রবির ডান পা-টা টেনে নিয়ে ক্ষতস্থানটা দেখলো। হাঁটুর কাছে অনেকখানি ছাল-চামড়া উঠে গিয়ে রূক্ত বেরুচ্ছে। ঘোরের মাথায় ছুটছিল রবি, হঠাৎ ট্রাকের হেড় লাইটের আলো চোখে পড়ায় দিশাহারা হয়ে পাশের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। খানিকটা ঘাস ছিঁড়ে রগড়ে রবির পায়ে লাগিয়ে দিলো শেখর।
এতক্ষণ বাদে অনেকটা চাঁদের আলো উঠেছে। চওড়া পীচের রাস্তাটা দুদিকে যতদূর দেখা যায়, সোজামিলিয়ে গেছে ধূসরতায়! জঙ্গলের চূড়ার দিকটা দৃশ্যমান হলেও মাঝখানে অন্ধকার। মাঝে মাঝে এক ধরনের লুকোচুরি খেলার বাতাস কোনো কোনো গাছকে দুলিয়ে যাচ্ছে–বাকি বৃক্ষগুলো নিথর। দূরে, অনেক দূরে দুটো শেয়াল একসঙ্গে ডেকে উঠলো। সেই ডাক শূনে অসীম সচকিত হয়ে বললো, এদিকে আসবে নাকি?
রবি ভ্রূক্ষেপ করলো না, বললো, ওগুলো তো শেয়াল!
শেখর চোখ তীক্ষ্ণ করে জঙ্গলের অন্ধকারের মধ্যে তাকালো; আলো জ্বলা হয় নি, ডাকবাংলোটা এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না। বললো, সঞ্জয়টা ওখানে একলা রইলো!
অসীম ঝাঁঝালো গলায় বললো, ও এলো না কেন আমাদের সঙ্গে? ওর আসা উচিত ছিল! জঙ্গলে বেড়াতে এসে ও ভারি সভ্যতা ফালাচ্ছেঃ একসঙ্গে বেড়াতে এসেও এ রকম একা একা থাকার কোনো মানে হয় না!
অপ্রত্যাশিতভাবে রবিই উত্তর দিল, সঞ্জয়ের দোষ নেই। ওর ব্যাপার। আমি জানি। মাসখানেক ধরে ওর মেজাজটা খুবই খারাপ হয়ে আছে–কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছে না। সঞ্জয়টা খুব ভালো ছেলে তো—
কনুইতে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে শেখর বললো, তোদের তিনজনেরই দেখছি মেজাজের ঠিক নেই! আমার কিন্তু বেশ লাগছে এ জায়গাটা। কি চমৎকার হাওয়া দিচ্ছে।
অসীম বললো, ইস্, সিগারেট নেই, সিগারেট থাকলে আরও ভালো লাগতো!
শেখর অসীমের নগ্ন নিতম্বে একটা লাথি কষিয়ে বললো, তোর জন্যেই তো! তুই-ই তো জোর করে জামা-প্যান্ট খোলালি! এখন যা, বাংলো থেকে সিগারেট নিয়ে আয়!
-–এই অন্ধকারের মধ্যে আমি এক যাবো? আমার বয়ে গেছে—
–রবি, তুই দৌড়োতে দৌড়োতে কোথায় যাচ্ছিলি? তোর কি ধারণা, সেই ভাঙা ব্যারাকে মেয়েগুলো এখনো তোর জন্যে বসে আছে?
–আমি যাবো জানলে ওরা ঠিকই বসে থাকতো! তোর জন্যেই তো দুপুরবেলা ওদের তাড়িয়ে দিতে হলো–
—থাকলেও, তুই এই অবস্থায় তিনটে মেয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারতিস? তোর কি মাথা-টাথা খারাপ হয়ে গেছে?
–তাতে কি হয়েছে? জঙ্গলের মধ্যে, রাত্তিবেলা-এখানে কোনো ভণিতার দরকার হয় না। ওরা তো আর তোদের সেই ন্যাক শহুরে মেয়ে নয়। এখানে ওরা যা চায়, আমি যা চাই–সবই সোজাসুজি–
–বুঝলুম! তার মানে, আজ আবার তপতী তোকে খুব জ্বালাচ্ছে!
–তপতী?
রবির চোখ দুটো রাগে জ্বলে উঠলো, শক্ত হয়ে গেল চোয়াল, হাত দিয়ে মাথার চুল মুঠো করে ধরে শেখরের দিকে একদৃষ্টি তাকালো! তারপর বললো, তপতী? খবরদার, আমার সামনে আর তপতীর নাম উচ্চারণ করবি না!
–চার বছর হয়ে গেল, এখনো এত রাগ?
–তুই জানিস না! তুই কিছু জিনিস না! তপতী আমাকে–