অমানবিক মুখ
নববর্ষের ভোরে অপর্ণা বেরিয়েছে কিছু ফুল তুলে ঈশ্বরকে দেবে। স্নান সেরে কাচা লাল তাঁত শাড়ি টা পরে যখন ফুল তুলছিল উঠানের পাশে ফুল বাগানে ,অপূর্ব লাগছে অপর্ণাকে।। হঠাৎ করেই পাশের বাড়ির পিসিমা বলল_ শ্বশুরকে না দেখে ফুল তোলা হচ্ছে ঈশ্বর সেবা! অপর্ণা মাথায় ঘোমটা টা ঠিক করে নিয়ে পিসি মার দিকে ফিরে বলল কিছু বললেন ? তখনও তার এক কথা। না, অপর্ণা কোনো প্রতিবাদ করেনি। কারণ ও জানে প্রতিবাদ করলেও এদেরকে বলা থেকে বিরত করতে পারবে না। নিঃশব্দে অপর্ণা ঘরে গিয়ে মন খারাপ করে বসে রইল। অনেকদিন হলো বিয়ে হয়েছে। স্বামী পাঞ্জাবে থাকে চাকরি সূত্রে। একমাত্র মেয়ে ব্যাঙ্গালোরে পড়াশোনা করছে। শাশুড়ি মা মারা যাওয়ার পর থেকে শ্বশুরমশাই একা হয়ে পড়েছেন। তাই অপর্ণা এদেরকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না। ঘরে ঢুকে ও কিছুক্ষণ শ্বশুরমশাই এর বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে দেখল নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্চ্ছে।ওর ইচ্ছে হল -চিৎকার করে বলি বাবা আপনাকে আমি কষ্ট দিই? কিন্তু না !অসুস্থ মানুষটাকে জোর করা উচিত নয় ।আবার সে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মাঝেমধ্যে মনের মধ্যে খচখচ করতে লাগলো। সারারাত ঘুমাতে পারেন না, রোগে কষ্টে জেগে থাকলে অপর্ণা কেও জেগে থাকতে হয়। যদি কোন অসুবিধার মুখোমুখি হয়। তাই অপর্ণা ঘরে এলে শ্বশুরএর মুখে হাসি ফোটে। নইলে সেন্টারের উপর নির্ভর করতে হয়। অপর্ণা অবশ্য অনেকটা সময় দেয় শ্বশুর মহাশয়কে। ওষুধ খাওয়ানো, স্নান করানো, একা প্রতিটা কাজ নিজের হাতে করে নেয়। কিছুদিন বাদে মেয়েকে ফোন করেও জানালো পিসীমার কথাটা কারণ ওই কথাটা তাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। একা মনে মনে বলতে লাগল আচ্ছা আমি কি বৃদ্ধ মানুষকে কষ্ট দিই? আমি কি খুব খারাপ ?আমি যে সারারাত জেগে থাকি সে খবর তো কেউ নেয় না। ওর দুচোখ জলে ভরে গেল। ঈশ্বরের কাছে জোড়হাত করে জানতে চাইলো, মানুষ কেন এমন দোষারোপ করে আমাদের। কেন এত কষ্ট দেয় ।_তুমি তো জানো প্রভু। আমি সারা দিন রাত এক বৃদ্ধ মানুষকে কিভাবে যত্ন করে তুলি, । নিজের মত করে তার জীবন নির্বাহ করে অপর্ণা। বুঝতে পেরেছেএটা সামাজিক ব্যাধি। চিৎকার করে লোক জানিয়ে কিছু না করলে এরা ভাবে হয়তো আমরা কিছু কাজ করি না। আমরা কত অমানবিক। আমাদের মধ্যে কোন চেতনাবোধ নেই। কিন্তু হায় এই মানুষগুলোকে বোঝাবার লোকের অভাব