অভিশপ্ত নীল নৌকোর প্রেম
রমা আর অমল হল গল্পের নায়ক নায়িকা।কলেজ জীবন থেকেই ওদের প্রেম।পড়াশুনা ,প্রেম সব ঠিকমত চলতে থাকে।একদিন তারা নৌকাবিহারে যাবে বলে স্হির করল।ব্যারাকপুরের গঙ্গা র ধোবিঘাট থেকে শ্রীরামপুরের ঘাট যাবে বলে স্হির করল।তখন আকাশ কালো.সন্ধ্যা ৬টা বাজে,ওরা অনেক রঙের নৌকার মধ্যে একটা নীল রঙেরনৌকা একা ভাড়া করে বসল।যখন ওরা নৌকাবিহার করে,সাধারনত নীল নৌকার খোঁজ করে,কিন্তু কোনদিন মেলে না।
রমার জল পিপাসা পাওয়াতে অমল নৌকা থেকে নেমে ঘাটের দিকে জল আনতে যায়।এদিক ওদিক ঘুরে যখন জল কিনে ফেরে,দেখে নৌকাটা একটু এগিয়ে গেছে,ঝড় ও উঠেছে,ভাড়া করা নৌকা চিনতেও পারছিল না।অমলদেখে একটা নীল নৌকা খুব দুলছে।ঐ নৌকা তে গিয়ে দেখে রমা আর মাঝি মিলে খুব ধস্তাধস্তি চলছে।অমল পরিস্থিতি বুঝতে পেরে মাঝিকে এমন একটা ঘুষি মারে য়ে মাঝি নদীতে পড়ে যায়। ওরা ওখান থেকে পালিয়ে যে যার বাড়ি চলেযায়। পরদিন পেপারে বার হয় ধোবিঘাটের নীল নৌকার মাঝি মৃগীরোগে আক্রান্ত হয়ে নদীতে আচমকা পড়ে গিয়ে মারা গেছে।
শনি আর রবিবারের ছুটি কাটিয়ে ওরা কলেজ যায়।অল্প কথা ও হয়।মেয়েটিকে অমল জানায় আমি কি ওই নীল নৌকোর মাঝিকে মেরে ফেললাম। রমা তখন বলে এই নিয়ে আর কথা বাড়াস না। সামনেই পরীক্ষা।আমরা আর দেখা করব না।
ওদের কলেজের পরীক্ষা শেষ হয়। রমা খুব ভাল রেজাল্ট করে।অমল ভাবে ঐ ঘটনার পর রমা অমলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছে।একদিনঅমল একটা বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রমাদের পাড়ায় যায়।দেখে রমাদের বাড়িতে প্যান্ডেল আলো।আর দেখে মোড়ের মাথায় রমা খুব সেজেগুজে বন্ধুদের সাথে ফুচকা খাচ্ছে।
রমা অমলকে দেখে এগিয়ে আসে,তখন তো ফোনের ব্যবহার ছিল না,দেখা সাক্ষাৎ কম হত,কলেজ ও ছুটি।দুজনের ভাব ভালবাসার চেয়ে ঝগড়াই বেশী হল।
রমা হঠাৎ করে বলে বসে ওরকম নীল নৌকোর মাঝি খুনীর সাথে না মেশাই ভাল।
আর বলে কাল আমার বিয়ে।দেখছিস না বাড়িতে প্যান্ডেল হয়েছে।ঝগড়ার শেষে হেসে বলে কাল আসিস কিন্তু।মার কাছে তোর কথা বলেছি।আসলে রমার বাড়িতে চৈএমাস উপলক্ষে কি একটা পূজো ছিল।তাই প্যান্ডেল.. আলো..প্রচুর লোক ও নিমন্ত্রিত।
রমা ফুচকা খাচ্ছিল যে সব বন্ধদের সাথে,তাদের বলে অমলকে কাল ডেকেছি ,এপ্রিল ফুল করব বলে।
পরদিন সকালে রমা ভাবল গতকাল এত ঝগড়া করেছি তাই অমলদের বাড়িতে যাই।রমার মা,ওদের বিয়ে নিয়ে ,ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে চান সেটা অমলকে জানিয়ে আসি।
অমলদের বাড়ির সামনে এত ভীড় কেন,?
অমলের মা চিৎকার করে বলছে ..ওরে ঐমেয়েটার আজ বিয়ে তাই বলে তুই চলে যাবি।একবার তুই মেয়েটার নাম বল রে খোকা।রমা ভাবে কিন্তু কোন্ মেয়ের আজ বিয়ে..আজ তো পয়লা এপ্রিল..চৈএ মাসে কারর বিয়ে হয়।
রমা তখন ভাবে হায় রে ভগবান কাল ঝগড়া সময় ওই তো বাড়ির প্যান্ডেল দেখিয়ে বলেছিল…….
তখন দেখে সুন্দর ভাবে সেজে চন্দন পড়ে তার বন্ধু অমল কাচের গাড়িতে চলে যাচ্ছে..রমার মনে হচ্ছে অমল যেন ধিক্কার জানিয়ে বলছে এই রমা, তোকে আমি এপ্রিল ফুল করলাম।জানিস নীল নৌকার মাঝি আমার ধাক্কায় মরে নি রে,তখন তো সন্ধে ছটা বাজে।তারপর ও নৌকা চালিয়েছে,ওর মৃগী রোগ ছিল,ও রাত দশটায় মারা গেছিল।
ওই রমা আজ বিয়ে করিস।এপ্রিল ফুল…হাহাহা এপ্রিল ফুল।
অমলের শববাহী গাড়িটা হুস করে চলে যায়।এই…এই..এই রমা এ..প্রি…ল…ফু…ল…..অভিশপ্ত নীল নৌকায় আর কারর সাথে নৌবিহারে যাস না।
রমা ,অমলকে খুব ভালবাসত,এখন নীল মার্বেল পেপার দিয়ে কেবল নীল কাগজের নৌকা বানায়,আর বিড়বিড় করে বলে আমার অমল আসবে,এই নীল নৌকায় করে কলকাতা,গোবিন্দপুর, সুতানটি যাবে।কেউ যাবে না,আমার নীল কাগজের নৌকায় রমা আর অমল যাবে। আজ মানসিক হাসপাতালে রমা চিকিৎসাধীন ,তবে তার কেবিনে পরপর সাজানো আছে নীল রঙের কাগজের নৌকাগুলি।