Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অপেক্ষা || Humayun Ahmed » Page 19

অপেক্ষা || Humayun Ahmed

ফাঁসি, যাবজীবন, সশ্রম কারাদন্ড কিছুই হল না। শোভনকে জাজ সাহেব বেকসুর খালাস করে দিলেন। চারজন সাক্ষীর মধ্যে দুজন আসেই নি। বাকি দুজন উল্টা পাল্টা কথা বলে সব এলোমেলো করে দিয়েছে। পুলিশের মামলা সাজানোও দেখা গেল অত্যন্ত দুর্বল। যথাসময়ে আলামতও হাজির হল না। জাজ সাহেব বিরক্ত মুখে রায় লিখলেন, তারচেয়েও বিরক্ত মুখে পড়লেন।

শোভনও জাজ সাহেবের মতই বিরক্ত মুখে বের হয়ে এল। ইমন তাকে নিতে এসেছে। আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। শোভন হাই তুলতে তুলতে বলল, আর কেউ আসে নি?

ইমন বলল, না।

আজ যে রায় হবে ওরা জানে?

জানে।

ফুলের মালা এনেছিস?

ইমন কিছু বলল না। শোভন সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, ফুলের মালা গলায় দিয়ে বের হতে পারলে ভাল হত। নেতা নেতা ভাব চলে আসতো। তোর কাছে টাকা আছে?

সামান্য আছে।

সামান্যটা কত? রেস্টুরেন্টে বসে চা সিঙাড়া খাওয়া যাবে?

হুঁ।

চল চা-সিঙ্গাড়া খাই। ফ্রী ম্যান হয়ে চা-সিঙ্গাড়া খাওয়ার আনন্দ মারাত্মক হবার কথা।

চল যাই।

তুই এমন মুখ শুকনা করে রেখেছিস কেন? আমাকে ছেড়ে দিয়েছে বলে কি মন খারাপ? ফাঁসি হলে ভাল লাগতো?

ইমন হাসল। শোভন বলল, খুব ভাল করে গোসল করতে হবে। গরম পানি ঢেলে হেভী গোসল। কিছু জামা কাপড় দরকার। চা খেয়ে নাপিতের দোকানে চল চুল কাটাব। মাথা কামিয়ে কোজাক হয়ে যাব।

আচ্ছা।

দিনের বেলা কি কোন ডেন্টিস্টের দোকান খোলা থাকে? প্রচন্ড দাতে ব্যথা। একবার যখন শুরু হয় কাটা মুরগীর মত ছটফট করি।

এখন ব্যথা আছে?

না। তবে শুরু হবে। শুরু হবার আগে দাঁতের গোড়া শিরশির করে। এখন করছে।

ছাড়া পেয়ে তোমার খুব ভাল লাগছে?

হুঁ লাগছে। আমিতো ভেবেছিলাম ফাঁসি টাসি না-কি হয়ে যায়। বাহ বাইরেতো বেশ ঠান্ডা-এখন কি শীতকাল নাকি? বাংলা মাসের নাম কি?

কার্তিক মাস। তোমার কি দিন তারিখের হিসেব নেই?

না।

কিতদিন হাজত খাটলে সেটা মনে আছে?

হ্যাঁ তা মনে আছে। আঠারো মাস। আঠারো মাসে জান কালি করে দিয়েছে। এর শোধ নেব। আব্দুল কুদ্দুস সাহেব যখন শুনবেন আমি ছাড়া পেয়েছি তখন তার খবর হয়ে যাবে।

শোভন হাসছে। অসুস্থ মানুষের মত হাসছে। চায়ের দোকানে ঢোকার আগেই একটা পানের দোকান। শোভন পানের দোকানের সামনে থমকে দাঁড়িয়ে দুটা মিষ্টি এবং জর্দা দেয়া ডবল পান কিনে মুখে দিল। ইমন বলতে যাচ্ছিল এক্ষুণি তো চা খাবে পান মুখে দিচ্ছ কেন? শেষ পর্যন্ত বলল না। মুক্তির আনন্দে মানুষ অনেক উদ্ভট কান্ডকারখানা করে। শোভন তেমন কিছু করছে না, শুধু জর্দা এবং মিষ্টি দেয়া দুখিলি ডবল পান মুখে দিয়েছে।

চা এবং আলুর চপের অর্ডার দেয়া হয়েছে। দোকানে প্রচুর ভীড়। এই ভীড়টা শোভনের ভাল লাগছে। ফাঁকা চায়ের দোকান আর শশান এক জিনিস। গ্রামের হাট যেমন ভর ভরন্ত থাকলে ভাল লাগে, চায়ের দোকানেও গাদাগাদি ভীড় ভাল লাগে। পান মুখে থাকা অবস্থাতেই শোভন চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, ভাল চা বানিয়েছে। ইমন আরেক কাপ দিতে বল। তেহারীর গন্ধ পাচ্ছি। দুটা প্লেটে দুপ্লেট গরম তেহারী দিতে বল, খেয়ে দেখি কেমন। তবে খেতে ভাল হবে না। যে দোকানে চা ভাল হয়, সে দোকানে অন্য কিছুই ভাল হয় না।

ইমন বলল, তুমি বাড়ি যাবে না?

না। আমি যেমন ওদের কেউ না, ওরাও আমার কেউ না। টোকন, টোকন কোথায় আছে?

জানি না।

লাস্ট তোর সঙ্গে কবে দেখা হয়েছে?

জুন-জুলাই এ।

তারপর থেকে কোন খবর নেই?

না।

শোভন চিন্তিত মুখে বলল, আব্দুল কুদ্দুস বেপারী কিছু করেছে কি-না। খোঁজ নিতে হবে। সন্ধ্যার মধ্যে পাত্তা লাগিয়ে ফেলব। তোর কাছে জিনিসটা

আছে তো?

হুঁ।

যত্ন করে রাখিস। আমি কোন একদিন এসে নিয়ে যাব।

বাসায় না গেলে উঠবে কোথায়?

আমার উঠার জায়গা আছে। তোর বাসার ঠিকানা বল। রাতে ঘুমানোর জন্যে তোর কাছেও চলে আসতে পারি। কিছু বলা যায় না।

শোভনের এই দোকানের তেহারীও খুব পছন্দ হল। এক প্লেটের জায়গায় তিন প্লেট খেয়ে ফেলল। তৃপ্ত মুখে বলল, এই দোকানের বাবুর্চিতো মারাত্মক। এর হাত সোনা দিয়ে বঁধিয়ে রাখা দরকার। বাড়ি নিশ্চয়ই ফরিদপুর। ভাল বাবুর্চি মানেই ফরিদপুর।

ইমন বলল, শোভন ভাইয়া, তুমি বরং এক কাজ কর। আমার সঙ্গে চল তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাই। সেখানে ভালমত গোসল টোসল করে বিশ্রাম কর। বড় মামার শরীরও ভাল না।

বাবার কি হয়েছে?

গোলাপ গাছে আষুধ দেন, সেই অষুধ নাকে মুখে ঢুকে গিয়ে শ্বাস কষ্ট হয়েছিল। মুখ-টুখ ফুলে ভয়াবহ অবস্থা। হাসপাতালে নিয়ে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। এখন ভাল। বাসাতেই আছেন।

তাহলে তো বাসায় যাওয়াই যাবে না। আমাকে দেখলে আবার শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে যাবে। দৌড়াদৌড়ি করে অক্সিজেনের বোতল আনতে হবে। কি দরকার।

মামীমা তোমার জন্যে খুব কান্না-কাটি করেন। তোমাকে দেখলে খুশি হবেন।

খামাখা ভ্যানভ্যান করিসনাতো। মানুষকে খুশি করার দায় আমার না। আমি জোকার না যে রঙ ঢং করে মানুষকে খুশি করব। আমাকে দেখলে যাদের কলিজা শুকিয়ে পানি হয়ে যায়। আমি তাদেরকেই দেখা দেব। যেমন ধর কুদ্দুস। তুই এখন একটা কাজ করতো। রেক্টরেন্টের মালিককে জিজ্ঞেস করে আয়-তেহারীর বাবুর্চির দেশ কোথায়?

ইমন বাবুর্চির দেশ কোথায় জানার জন্যে উঠে দাঁড়াল। শোভনকে পেয়ে তার ভাল লাগছে। সে মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে—আজি সারাদিনই সে শোভনের সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। তার বাসায় ফিরতে ইচ্ছা করছে না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *