Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অপেক্ষা || Humayun Ahmed » Page 11

অপেক্ষা || Humayun Ahmed

সুরাইয়া তাঁর পুত্র এবং কন্যাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। দুজনকে এক সঙ্গে তিনি সচরাচর ডাকেন না। যখন ডাকেন তখন বুঝতে হবে গুরুতর কিছু বলবেন। গুরুতর ধরণের কথা বলার মত নতুন কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কমলাপুর রেল ষ্টেশন থেকে তিনি শান্ত ভঙ্গিতেই ফিরেছেন। রাতে ভাত খেয়েছেন। ফাতেমা এসে তার কথাবাতাঁর জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন। ক্ষমা প্রার্থনা আন্তরিকই ছিল। ফাতেমা বলেছেন, সুরাইয়া, দেখ আমি বোকা একটা মেয়ে। বোকার কথা ধরতে নাই। তোমার যেমন স্বামীর সন্ধান নাই। আমার তেমন ছেলে মেয়ের সন্ধান নাই। ছেলে দুটা কোথায় আছে জানি না। তারা কি খায় কোথায় ঘুমায়–কিছুই জানি না। আমার মেয়ে মিতু আমার সঙ্গে কথা বলে না। বোকা মা তার সঙ্গে আবার কি কথা? তোমার ভাই সাত দিনে, দশ দিনে একটা কথা বলে। আমি কোন গল্প করতে শুরু করলে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। এখন সুরাইয়া তুমি যদি আমার কথা ধর, আমি কি করব?

বলেই ফাতেমা কাঁদতে শুরু করলেন। কোন মেকি কান্না না। হাউ মাউ করে। কান্না। সুরাইয়া বললেন, তিনি কিছুই মনে করেন নি। ভাবীর উপর তাঁর কোন রাগ নেই। রাগ থাকলে তিনি ফিরে আসতেন না। তিনি ছেলেমেয়েদের উপর রাগ করে চলে গিয়েছিলেন।

কাজেই বাড়ির পরিস্থিতি এখন খুবই স্বাভাবিক বলা চলে। এই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পুত্ৰ-কন্যাকে ডেকে পাঠানোর অর্থ সুপ্ৰভা এবং ইমন কেউই বুঝতে পারছে না। দুজনই এক সঙ্গে ঘরে ঢুকল। সুপ্রভার চোখে ভয়। ইমনকে দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।

সুরাইয়া চুল আচড়াচ্ছিলেন। এক সময় তার মাথা ভর্তি চুল ছিল। এখন চুল খুবই পাতলা হয়ে গেছে। চিরুনী ধরতেই ভয় লাগে। মাথায় চিরুনী ছোয়ালেই গাদা গাদা চুল উঠে আসে। তিনি সুপ্রভার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা বোস।

ইমন খাটে এসে বসল। সুপ্ৰভা দরজা ধরে আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইল।

কেমন আছ তোমরা?

ইমন বলল, ভাল।

সুপ্ৰভা মনে মনে বলল, আসল কথা বলে ফেল মা। টেনশান লাগছে। বেশীক্ষণ এরকম টেনশানে থাকলে আমারো তোমার মত চুল পেকে যাবে।

সুরাইয়া সুপ্রভার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাকে না বসতে বললাম, তুমি দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছ কেন?

সুপ্ৰভা ভাইয়ের পাশে বসল এবং মনে মনে বলল, তোমার ভয়ে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছি মা। যাতে বিপদ দেখলেই দৌড়ে পালাতে পারি।

সুরাইয়া বললেন, তোমাদের দুই ভাই-বোনকে ডেকেছি একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্যে। তোমরা সত্যি জবাব দেবে। তোমাদের কি ধারণা আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? গাদাখানিক কথা বলার দরকার নেই। হ্যাঁ কিংবা না।

ইমন বলল, না।

আমাকে ভয় পেয়ে কিছু বলার দরকার নেই। তোমাদের কি ধারণা সেটা খোলাখুলি বল।

সুপ্ৰভা মনে মনে বলল, খোলাখুলি বললে তুমি আমাকে মোরব্বা বানিয়ে ফেলবে। সত্যি কথা তোমাকে বলা সম্ভব না।

সুরাইয়া বললেন, কিছুদিন ধরে আমার মনে হচ্ছে আমার মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তোমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছি। করছি না? সুপ্ৰভা তুমি বল, আমি কি তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি?

সুপ্ৰভা বলল, হ্যাঁ মা কর। তবে খারাপ ব্যবহারটা এখন গা সহা হয়ে গেছে। খারাপ ব্যবহার তুমি যখন কর তখন মনে হয় সব ঠিক আছে। যখন ভাল ব্যবহার কর তখন মনে হয় কোন একটা গন্ডগোল হয়েছে। এই যে এখন সুন্দর করে কথা বলছি এখন খুব ভয় লাগছে। ভয়ে আমার পানির পিপাসা পেয়ে গেছে।

সুপ্ৰভাকে বিষ্মিত করে সুরাইয়া হেসে ফেললেন। শব্দ করে হাসলেন। সুপ্ৰভা এবং ইমন অবাক হয়ে মার খিলখিল হাসি শুনল।

সুরাইয়া ছেলের দিকে ফিরে হাসিমুখে বললেন, তোর বোনটাতো ভাল রসিক হয়েছে। মজা করে কথা বলা শিখেছে। বিয়ের আগে আমিও খুব রসিক ছিলাম। ক্লাসে আমি যা বলতাম তাই শুনে আমার বন্ধুরা হেসে গড়াগড়ি খেত। বিয়ের পর সব মেয়ে কিছুটা বদলায়। আমিও বদলালাম। তোদের বাবাতো খুব গম্ভীর ধরণের মানুষ ছিলেন তাঁর সঙ্গে থেকে থেকে তার স্বভাবের খানিকটা আমার মধ্যে ঢুকে গেল। আমিও গম্ভীর ধরণের হয়ে গেলাম।

সুপ্ৰভা বলল, বাবা কি ইমন ভূইয়ার মত ছিল?

সুরাইয়া বলল, না ইমন বেশী গম্ভীর।

মা ঠিক বলেছ। ইমন ভাইয়াকে মজার কিছু বল দেখবে সে হাসার বদলে ভুরু কুঁচকে ফেলছে।

ভুরু কুঁচকানোর অভ্যাস তোদের বাবারও ছিল। তবে মজার কথা বললে সে খুব হাসতো। একবার রাতে ভাত খেতে বসে তোদের বাবাকে কি যেন বলেছি সে এমন হাসতে শুরু করল যে শেষে শ্বাসনালীতে ভাত ঢুকে গেল। প্রায় মারা যাবার জোগাড়।

সুপ্ৰভা বলল, কি সর্বনাশ! তুমি বাবাকে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করেছিলে? বলেছিলে কি?

কি বলেছিলাম মনে নেই। মনে করার চেষ্টা করতো মা। আমার খুব শুনতে ইচ্ছে করছে। বাবার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি খুঁটি নাটি জিনিসইতো তোমার মনে থাকে। এটাও নিশ্চয় মনে আছে।

সুরাইয়া হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন। মার এই পরিবর্তন পুত্র এবং কন্যা কারোই চোখ এড়াল না। সুপ্ৰভা চুপ করে গেল। তিন নম্বর দূরবতী বিপদ সংকেত। নৌযানগুলিকে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে বলা হচ্ছে।

ইমন বলল, মা তুমি আমাদের কি জন্যে ডেকেছ? গল্প করার জন্যে ডেকেছি। গল্প করার জন্যে ডাকলে কি কোন সমস্যা আছে।

না, সমস্যা নেই।

সুরাইয়া এতক্ষণ ছেলেমেয়েদের তুই তুই করে বলছিলেন, এখন তুমিতে চলে গেলেন। অর্থাৎ অবস্থা সুবিধার না। সুরাইয়া বললেন, তোমরা থাকো তোমাদের মত। আমি থাকি আমার মত। মাঝে মাঝে গল্প করার ইচ্ছাতো হতে পারে। না-কি পারে না। না-কি ইচ্ছা হওয়াটা অপরাধ?

ইমন বিব্রত গলায় বলল, অপরাধ হবে কেন?

তুমি ভুরু কুঁচকে এমন–মূর্তির মত বসে আছ—দেখে মনে হচ্ছে আমার কথাবার্তা তোমার অসহ্য লাগছে।

তোমার যদি এমন মনে হয়ে থাকে তাহলে খুব ভুল মনে হয়েছে। অনেক দিন পর তোমার কথা শুনে ভাল লাগছিল।

এখন আর ভাল লাগছে না?

হঠাৎ কেন রেগে যাচ্ছ মা?

হঠাৎ রাগ উঠছে বলে রাগছি।

ইমন বলল, মা তোমার কথা যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে আমি যাই। আমার ক্লাসের একটা ছেলে এসেছে। ও একা বসে আছে।

থাকুক একা বসে। আমার কথা শেষ হয় নি। আমি তোমাদের ডেকেছি একটা জরুরী কথা বলার জন্যে। জরুরী কথাটা হচ্ছে, আমি এই বাড়িতে থাকিব না।

ইমন বলল, কোথায় যাবে?

আলাদা বাসা ভাড়া করে তোমাদের নিয়ে থাকব।

ইমন মায়ের দিকে তাকাল। কিছু বলল না। সুরাইয়া বললেন, ইত্তেফাক পত্রিকায় অনেক বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। আমি বিজ্ঞাপনগুলি পড়েছি। ঢাকার আশে-পাশে তিন হাজার টাকার মধ্যে দুই রুমের বাসা পাওয়া যায়। তিন হাজার টাকায় বাসা ভাড়া করলাম, আর বাসার খরচ যদি পাঁচ হাজার টাকা ধরি–তাহলে মাসে আট হাজার টাকা হলেই আমাদের হয়ে যায়।

সুপ্ৰভা বলল, মাসে আট হাজার টাকা পাবে কোথায়?

সুরাইয়া বললেন, আমি যেখান থেকে পারি জোগাড় করব। সেই দায়িত্ব তোমাদের না। সেই দায়িত্ব আমার।

ইমন বলল, তবু শুনি টাকাটা তুমি পাবে কোথায়?

আমি এখনো চিন্তা করিনি।

সুপ্ৰভা বলল, মা ভাইয়া আগে পাশ করুক। ভাইয়া যা ভাল ছাত্র সে পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে ইউনিভার্সিটির টিচার হয়ে যাবে। কোয়াটার পাবে। তখন আমরা কোয়াটারে উঠব। আর বাসা ভাড়া করতে হবে না।

এতদিন আমি অপেক্ষা করতে পারব না। তোমাদের নিয়ে আমি আলাদা থাকব। নিজে রান্না করব। ঘর পরিষ্কার করব। গোছাব। ফুলের টবে গাছ লাগাব। সংসারটা হবে। আমার নিজের। কলমি শাকের মত ভেসে ভেসে বেড়ানো সংসার না।

ইমন বলল, নিজের আলাদা সংসার চাচ্ছ খুব ভাল কথা–এখনতো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি মাসে আট হাজার টাকা তুমি নিশ্চয়ই ভিক্ষা করে জোগাড় করতে পারবে না?

যদি জোগাড় করতে পারি তুই কি আলাদা বাসা করবি?

হ্যাঁ করব।

বেশ আমি কম পক্ষে তিন বছর আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকার মত টাকা তোকে জোগাড় করে দেব, তুই বাসা ভাড়া করবি। তোর বাবার অফিস থেকে একটা পয়সা আমি আজ পর্যন্ত নেইনি—এখন নেব।

টাকা পেতে হলে বাবা মারা গেছেন এই জাতীয় কাগজপত্র দিতে হয়। তুমিতো সেটা কখনো করতে চাও নি–এখন করতে চোচ্ছ কেন?

এখনও করতে হবে না। পনেরো বছরের বেশী নিখোঁজ থাকলে–ডেথ সাটিফিকেট লাগে না। ভাইজান অফিস থেকে খোঁজ এনেছেন।

ও আচ্ছা।

সব মিলিয়ে পাঁচ লাখের মত টাকা পাওয়া যাবে। এই টাকায় তোর চাকরি না হওয়া পর্যন্ত আমরা বাসা ভাড়া করে থাকতে পারব। পত্রিকায় একটা বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপন উঠেছে। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। দাগ দিয়ে রেখেছি। মন দিয়ে শোন, পড়ে শুনাচ্ছি।

সুরাইয়া পত্রিকা হাতে নিলেন। সুপ্ৰভা মনে মনে বলল, কি সর্বনাশ, মা আবার আমাদের কি যন্ত্রণায় ফেলার ব্যবস্থা করছে!

তোরা মন দিয়ে শোন –দুই রুম, দুই বাথ রুম। ড্রয়িং, ডাইনিং। উত্তরে বারান্দা। খোলামেলা, প্রচুর আলো হাওয়া। ভাড়া গ্যাস ও পানি সহ ৩৫০০ টাকা। ৬ মাসের অগ্ৰীম আবশ্যক। কি, ভাল না?

সুপ্ৰভা বলল, হ্যাঁ ভাল।

চল দেখে আসি।

ইমন বলল, এখন দেখে আসবে?

হ্যাঁ এখন দেখে আসব। একটা বেবীটেক্সি ডাক দে। তিনজন মিলে চলে যাই। দুটা রুমতো। একটাতে আমি আর সুপ্ৰভা থাকিব, একটাতে ইমন থাকবে। উত্তরের বারান্দায় আমি ফুল গাছের টব রাখব। অবশ্যি শীতকালে খুব ঠাণ্ডা লাগবে। উত্তুরে হাওয়া।

ইমন বলল, এখন দেখেতো মা লাভ নেই। বাসা পছন্দ হলেও তুমি নিতে পারবে না। তোমার সঙ্গে টাকা নেই। টাকাটা আসুক তারপর আমরা বাড়ি দেখে বেড়াব।

সুরাইয়া ক্লান্ত ভঙ্গিতে বললেন, আচ্ছা তোরা যা।

ইমন সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে নেমে চলে গেল।

মার মুখের দিকে তাকিয়ে সুপ্রভার খুব মায়া লাগছে। কি রকম হতাশ মুখ করে বসে আছেন। মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে ফেলবেন। সুপ্ৰভা বলল, মা চল তুমি আর আমি—আমরা দুজনে মিলে দেখে আসি।

সুরাইয়া আনন্দিত গলায় বললেন, তুই যাবি?

হ্যাঁ যাব।

বাড়ি পছন্দ হলেতো কোন লাভ হবে না। বাড়ি ভাড়া নিতে পারব না।

নিতে পারবে না কেন? পছন্দ হলে বড় মামার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ছয় মাসের অ্যাডভান্স দিয়ে দেবে। বাবার টাকাটা পেলে মামার টাকা ফেরত দিলেই হবে।

সুরাইয়া বললেন, চল যাই।

মিতু আপাকে সঙ্গে নেব। মা?

কাউকে সঙ্গে নিতে হবে না। তুই আর আমি যাই। তোর বুদ্ধিটা আমার পছন্দ হয়েছে। ঠিকই বলেছিস, ভাইজানের কাছ থেকে ধার নিলেই হবে।

সুপ্রভার ইচ্ছে করছে জিজ্ঞেস করে।–এতদিন পর তোমার হঠাৎ আলাদা বাড়ি নেবার ইচ্ছা হল কেন?

জিজ্ঞেস করল না। মার মেজাজ এখন ভাল। সেই ভালটা বজায় থাকুক। প্রশ্ন শুনে মা যদি আবারো উল্টে যান তাহলে সমস্যা হবে। সুপ্রভার ধারণা তার মার মগজের ভেতরে মাকড়শার মত দেখতে কিছু পোকা বাস করে। পোকাগুলি হল মেজাজ খারাপের পোকা। এরা মাঝে মধ্যে গর্তের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে। তখন মা অন্য মানুষ হয়ে যান। পোকাগুলি এখন গর্তের ভেতর লুকিয়ে আছে। থাকুক। খুঁচিয়ে এদের গর্ত থেকে বের করার কোন দরকার নেই।

বাসা দেখে সুরাইয়ার খুবই মন খারাপ হল। এক তলায় অন্ধকার ছাতা পড়া স্যাতস্যাতে ঘর। এক চিলতে বারান্দা। সেই বারান্দার সামনে পাহাড় সমান বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। দিনের বেলাতেও বারান্দা অন্ধকার।

সুপ্ৰভা বলল, বাদুরদের থাকার জন্যে এই বাড়িটা খুব ভাল মা। চব্বিশঘন্টা অন্ধকার। এই বাড়ির নাম হওয়া উচিত বাদুর-ভিলা।

সুরাইয়া বিরক্ত গলায় বললেন; তাহলে আলো হাওয়া এইসব মিথ্যা কথা কেন লিখলো?

সুপ্ৰভা বলল, মিথ্যা কথা বললে দোষ হয় মা। লিখলে দোষ হয় না। ঔপন্যাসিকরা যে ক্রমাগত মিথ্যা কথা লিখেন তাদেরতো দোষ হয় না।

সুরাইয়া বললেন, চল ফিরে যাই।

সুপ্ৰভা বলল, বের হয়েছি। যখন চট করে ফিরব কেন? চল রিকশা নিয়ে ঘুরতে থাকি। টুলেট দেখলেই রিকশা থেকে নেমে পড়ব।

এটা মন্দ না। ভাড়া বাড়ি সম্পর্কে একটা ধারণা হবে।

পিপাসা পেয়েছে মা। ঠান্ডা এক ক্যান কোক কিনে দেবে?

রাতে ঘুমুতে যাবার সময় ইমন দেখে বিদেশী টিকিট লাগানো একটি খাম বালিশের উপর পড়ে আছে। ইমনের বুক ধ্বক করে উঠল। কার চিঠি—ছোট চাচার? নিশ্চয়ই দুপুর বেলা এসেছে। কেউ একজন লুকিয়ে রেখেছে। এক সময় রেখে দিয়েছে তার বালিশের উপর যেন ঠিক ঘুমুতে যাবার সময় তার চোখে পড়ে এবং সে আনন্দে অভিভূত হয়। সেই একজনটা কে? মিতু? অবশ্যই মিতু। মিতু ছাড়া এই কান্ড আর কে করবে!

কতদিন পরে ছোট চাচার চিঠি এসেছে! ইমনের খাম খুলতেও মায়া লাগছে। খাম খুললেইতো চিঠি শেষ। এরচে যতক্ষণ পারা যায় খাম হাতে নিয়ে বসে থাকা যাক। ছোট চাচাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। কেমন হয়েছেন। ছোট চাচা কে জানে? হুট করে কোন একজন মেম সাহেবকে বিয়ে করে ফেলেননিতো? ইমনের ধারণা ছোট চাচার কোনদিন বিয়ে হবে না। কারণ ছোট চাচাকে স্বামী হিসেবে পাবার জন্যে যে পূণ্যবল দরকার সেই পূণ্যবল খুব কম মেয়ের আছে।

চিঠির সম্বোধন ইংরেজীতে হলেও চিঠিটা বাংলায় লেখা। এমন ভাবে লেখা যেন বাচ্চা ছেলেকে লেখা হচ্ছে। যেন ইমন আগের মতই আছে তার বয়স বাড়ে নি।

My dear hard nut

কেমন আছিসরে ব্যাটা—ভুলভুলি, গুলগুলি। অনেক দিন তোদের খোঁজ খবর নিতে পারিনি কারণ আমার হয়েছে মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা। ভুল বললাম। শুধু মাথার ঘা না, সর্বাঙ্গে ঘা। জেল টেল খেটে একাকার। দুটা ব্ৰাজিলিয়ান ছেলের সঙ্গে রুম শেয়ার করে থাকতাম। ওরা ড্রাগ ডেলিভারীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। ওদের পুলিশ ধরল সঙ্গে আমাকেও ধরল। ওদের সাজা হল দশ বছর করে। আমার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই তারপরেও ঝাড়া তিন বছরের জেলা। তবে ওদের জেলখানাগুলি ভাল। যতটা কষ্ট হবে ভেবেছিলাম ততটা হয়। নি। তোদের কিছু জানাই নি তোরা শুনে কষ্ট পাবি তাই। এমিতেই তোদের কষ্টের সীমা নেই। গোদের উপর বিষ ফোড়া, সরি, গোদের উপর ক্যানসার করে লাভ কি।

জেলে থাকার সময় প্রায়ই তোকে স্বপ্ন দেখতাম। একটা স্বপ্নে দেখি তুই রিকশা থেকে পড়ে পা ভেঙ্গে ফেলেছিস। আমি ছোটাছুটি করে তোকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। তুই কান্নাকাটি কিছুই করছিস না। মুখ ভোতা করে আমার গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছিস। স্বপ্ন দেখে খুবই মনটা খারাপ হয়েছিল।

জেল থেকে বের হয়েছি। সঙ্গে বেশ কিছু টাকা নিয়ে। এ দেশের জেলে কয়েদীরা নানান ধরণের কাজ কর্ম করে, তার জন্যে পারিশ্রমিকও পায়। সেই পারিশ্রমিক জমা থাকে। কয়েদবাস শেষ হলে টাকাটা দিয়ে দেয়া হয়। জেল খাটা মানুষতো আর চট করে চাকরি জোগাড় করতে পারে না। এই টাকাটা তখন কাজে লাগে।

যাই হোক, আমার জেল রোজগার থেকে তোকে কিছু পাঠালাম। তুই সুপ্ৰভাকে দামী একটা কোন উপহার কিনে দিবি। ভাবীকে অবশ্যই একটা ভাল শাড়ি কিনে দিবি। তোর যত বন্ধুবান্ধব আছে সবাইকে কিছু না কিছু গিফট দিবি। শুধু তুই নিজে কিছু নিবি না। টাকাটা

কি রে ব্যাটা, তোকে কেমন প্যাচে ফেলে দিয়েছি। তোর উপহার আমি নিজে নিয়ে আসব।

ব্যাটারে তুই ভাল থাকিস। তোকে একটা কথা বলি, আমি যখন খুব বড় রকমের ঝামেলায় পড়ি — চোখে অন্ধকার দেখি তখন তোর ছোটবেলার ছবিটা মনে করার চেষ্টা করি। গম্ভীর ধরণের একটা শিশু—অসম্ভব বুদ্ধি। যে বুদ্ধির সবটাই সে গোপন করে রাখে। বুদ্ধির চেয়েও বেশী যার মায়া। যে মায়াও সে কাউকে দেখতে দেয় না। গোপন করে রাখে। যখন সেই সুন্দর ছবিটা মনে ভেসে উঠে তখন দুঃখ কষ্ট আর গায়ে লাগে না।

ব্যাটা আজ যাই। পরে তোকে আরো লম্বা চিঠি দেব।

ইতি
ছোট চাচা

চিঠির সঙ্গে একশ ডলারের দুটা নোট। ইমন বাতি নিভিয়ে মশারির ভেতর ঢুকে গেল। ছোট চাচার চিঠিটা সে গালে চেপে ধরে রাখল। তার কেন জানি মনে হচ্ছে–ছোট চাচা অনেক দূর থেকে হাত বাড়িয়ে তার গাল ছুঁয়ে রেখেছেন–এবং মুখে বলছেন — লক্ষ্মী সোনা, চাঁদের কণা, ভুনভুন, খুনখুন, সুনসুন। ভুলভুলি, গুলগুলি, পুলপুলি।

রাত প্ৰায় একটা বাজে। জামিলুর রহমান সাহেব বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করছেন। তাঁর ঘুম আসছে না, মাথা দপদপ করছে। মাথায় পানি ঢাললে ভাল হত। একা একা মাথায় পানি ঢালা যায় না। এত রাতে কাউকে ডেকে তুলতেও ইচ্ছা করছে না।

ঘুম না এলে মানুষ কি করে? তার জানা নেই। ঘুমের সমস্যা তার কখনো হয়নি। সারাদিন পরিশ্রমের পর, রাতে ঘুমুতে যেতেন—সঙ্গে সঙ্গে ঘুম আসতো। বয়স বাড়লে মানুষের ঘুম কমে যায়। তাঁর বয়স বাড়ছে। ঘুম কমার এটাও একটা কারণ হতে পারে। শোভন এবং টোকনের কান্ডকারখানাও তার মনে হয়তবা চাপ দিচ্ছে। শোভন, টোকনের ব্যাপারটা অবশ্যি তুচ্ছ করার মত নয়। তিনি তুচ্ছ করে যাচ্ছেন। যে কোন ঘটনাই বড় করে দেখলে বড়, ছোট করে দেখলে ছোট। পুরো জিনিসটাই নির্ভর করছে কিভাবে দেখা হচ্ছে তার উপর। সুরাইয়ার স্বামী হারিয়ে গেছে। এই ঘটনাটাকে অনেক বড় করে দেখছে বলে আজ সুরাইয়ার এই অবস্থা। মানুষ হারিয়ে যাওয়া তেমন কোন বড় ব্যাপার না। যুবক ছেলে বিগড়ে যাওয়াও কোন বড় ব্যাপার না।

সুত্রপুর থানার ওসি সাহেবকেও তিনি তাই বললেন। ওসি সাহেব তার অফিসে এসেছিলেন। মাই ডিয়ার ধরণের অমায়িক ভদ্রলোক। পায়জামা পাঞ্জাবী পরে এসেছিলেন বলে মনে হচ্ছিল, কোন কলেজের বাংলার শিক্ষক। পান খাচ্ছিলেন বলে, ঠোঁটও লাল হয়ে আছে। চোখে মোগলী ফ্রেমের চশমা। কে বলবে পুলিশের লোক? কথা বার্তাও অত্যন্ত ভদ্র। শান্ত স্বরে বললেন, আপনার দুই ছেলে সম্পর্কে কিছু কথা বলার জন্যে এসেছিলাম।

জামিলুর রহমান বললেন, বলুন।

ওসি সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, সোসাইটি কোন দিকে যাচ্ছে দেখুন–ইয়াং সব ছেলে। ব্ৰাইট, এনার্জেটিক ইয়াং ম্যান। সব বিগড়ে যাচ্ছে। বাবা মা কিছু করতে পারছে না। আমরা পুলিশের লোক। আমাদের হাত পা বাধা। আমরা হচ্ছি হুকুমের চাকর। যে রকম হুকুম সে রকম কাজ।

জামিলুর রহমান বললেন, আপনার কথাবার্তা ঠিক বুঝতে পারছি না। আপনার উপর হুকুমটা কি?

আপনার দুই ছেলের নামেই ওয়ারেন্ট বের হয়েছে।

ওরা কি করেছে?

কয়েকটা মামলাই আছে। আর্মড রবারি। একটা খুনের মামলাও আছে।

ও আচ্ছা।

তবে চিন্তার কিছু নেই।

চিন্তার কিছু নেই কেন?

অ্যারেস্ট না হওয়া পর্যন্ত চিন্তা কি বলুন। অবশ্যি অ্যারেস্ট হলে চিন্তার ব্যাপার আছে। ননবেলেরল ওয়ারেন্ট। জামিন হবে না। দীর্ঘদিন মামলা চলবে। অবশ্যি মামলাতে শেষটায় কিছু হবে না। এইসব মামলায় সাক্ষি পাওয়া যায় না। কেউ সাক্ষি দিতে চায় না। সব বেকসুর খালাস। সেটাও দুতিন বছরের ধাক্কা। সবচে ভাল বুদ্ধি হচ্ছে অ্যারেস্ট না হওয়া। শুধু দেখতে হবে যেন অ্যারেস্ট না হয়।

আপনারা তাদের খুঁজে বের করবেন না?

ওসি সাহেব গলা নিচু করে বললেন, আপনার সঙ্গে একটা এ্যারেঞ্জমেন্টে আসা যাক। মাসে আপনি পঞ্চাশ হাজার করে টাকা দেবেন। বাকিটা আমরা দেখব।

প্ৰতি মাসে আপনাদের পঞ্চাশ হাজার করে টাকা দিতে হবে?

জ্বি।

এই টাকাটা দিলে আপনারা কি করবেন? তাদের দেখলেও না দেখার ভান করবেন?

আমাদের অনেক সিস্টেম আছে। সেসব আপনার না জানলেও চলবে। এই ধরণের ছেলেদের নিরাপত্তার ব্যাপারও আছে। দলে দলে রাইভ্যালরি আছে। আমরা এক ধরণের প্রটেকশানও দেব।

ব্যাপারটা কি এই দাড়াচ্ছে যে মাসে মাসে পঞ্চাশ হাজার করে টাকা দিলে আপনারা আমার দুই পুত্রকে অ্যারেস্ট করবেন না এবং প্রটেকশন দেবেন। পাহারা দিয়ে রাখবেন?

ওসি সাহেব হাসলেন। জামিলুর রহমান বললেন—আমি কোন টাকা পয়সা দেব না। আপনারা দয়া করে ছেলে দুজনকে গ্রেফতার করুন।

ওসি সাহেব। আবারো হাসলেন। আগের চেয়েও মধুর ভঙ্গিতে হোসে বললেন, এখন বলছেন অ্যারেস্ট করুন। তারপর যখন সত্যি সত্যি করব তখন ছুটে আসবেন। দীর্ঘদিন এই লাইনে আছি। পিতামাতার ঘটনাগুলো আমি জানি। যখন ছুটে আসবেন তখন আর পথ থাকবে না।

ওসি সাহেব, আমি ছুটে আসব না।

ওদের বিরুদ্ধে মামলা খুব শক্ত। খুন যদি প্রমাণ হয়—ফাঁসি টাসিও হয়ে যেতে পারে।

অপরাধ করলে শাস্তি হবে।

ঠিকই বলেছেন। ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট। দস্তয়োভস্কির লেখা অসাধারণ বই। ছাত্র জীবনে পড়েছিলাম। পুলিশে ঢোকার পর—পড়াশোনা বন্ধ। ভাই তাহলে উঠি? পরে আসব। আপনার সঙ্গে আরো আলাপ আছে।

জ্বি আচ্ছ।

জামিলুর রহমান বিরক্ত মুখে সারা দুপুর অফিসে বসে রইলেন। বিরক্ত এবং চিন্তিত। পুলিশ যখন বলে—আরো আলাপ আছে তখন শঙ্কিত হওয়া ছাড়া পথ থাকে না। কারণ পুলিশের আলাপ শেষ হতে চায় না। আলাপ চলতেই থাকে-আলাপের শাখা প্ৰশাখা বের হতে থাকে।

তিনি বাড়ি ফিরলেন সকাল সকাল। বলতে গেলে সারাটা সন্ধ্যা বারান্দায় কাঠের চেয়ারে ঝিম ধরে বসে রইলেন। তার মন ভাল নেই। তিনি চিন্তিত—তাকে দেখে এটা কেউ বুঝল না। ফাতেমা তাকে চা দিতে এসে নিত্যদিনের মত ঝগড়া বঁধিয়ে দিলেন। থমথমে গলায় বললেন—তোমার সঙ্গে আমার একটা ফাইন্যাল কথা আছে।

জামিলুর রহমান ক্লান্ত গলায় বললেন, বল।

আমি এই বাড়িতে থাকব না। তুমি আমাকে আলাদা ফ্ল্যাট করে দেবে। আমি সেই ফ্ল্যাটে আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকব।

এখানে থাকতে সমস্যা কি?

এখানে আমি কেন থাকব? এখানে আমার কে আছে? ছেলেরা আছে? না মেয়ে আছে? না-কি তুমি আছ? তাহলে থাকব। কেন? জীবনে তুমি কি একটা মিষ্টি কথা আমাকে বলেছ? একটা শাড়ি কিনে আমাকে বলেছি-ফাতেমা তোমার জন্যে এই শাড়িটা কিনলাম। বলেছ? কথা বলছি না। কেন?

খুব মাথা ধরেছে। কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।

মাথাতো ধরবেই। আমাকে দেখলেই সবার মাথা ধরে যায়। এক কাজ কর। আমাকে বাদ দিয়ে দাও। বাদ দিয়ে এমন কাউকে নিয়ে আস যাকে দেখলে মাথা ধরবে না। যাকে দেখলে গলা মিষ্টি হয়ে যাবে। মিষ্টি মিষ্টি গলায় বলবে-চান সোনা, ময়না সোনা।

ফাতেমা কথা বলে যাচ্ছেন জামিলুর রহমান চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে তিনি অদৃশ্য একটা গোলকের ভেতর বসে আছেন। গোলকের বাইরে যারা আছে তাদের কারো সঙ্গেই তার যোগ নেই।

এখন নিশুতি রাত। তিনি বারান্দার এ মাথা থেকে ও মাথায় যাচ্ছেন। মাথা দীপ দাপ করছে। কিছু ভাল লাগছে না। তাঁর ছেলেরা খুনের মামলায় জড়িয়ে গেছে। খুন? তিনি নিজে অর্থ-বিত্তের পাহাড় বানাতে বসেছেন। কার জন্যে? এবং কেন?

হঠাৎ তাঁর ইচ্ছা করল পা থেকে স্যাণ্ডেল জোড়া খুলে ফেলে হাঁটতে শুরু করেন। গেট খুলে বাইরে নামবেন। তারপর রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করবেন। কখনোই পেছন ফিরে তাকাবেন না। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় হয়ত সমুদ্রের কাছে পৌঁছে যাবেন।

জামিলুর রহমান তাঁর শরীরে এক ধরণের উত্তেজনা অনুভব করলেন। তাকালেন গেটের দিকে। সামান্য হাঁটলেই গেট। গেট খুললেই রাস্তা। তিনি ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললেন। তিনি বুঝতে পারছেন তাঁর এই উত্তেজনা সাময়িক। কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তেজনা কমে যাবে। তিনি হাত-মুখ ধুয়ে বিছানায় ঘুমুতে যাবেন। ফাতেমার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়বেন। ঘরে জুলবে জিরো পাওয়ারের আলো। সেই আলোয় সব কিছু ঘোলাটে এবং অস্পষ্ট দেখায়। তিনি এমনভাবে শুবেন যেন ফাতেমার মুখ দেখতে না হয়। ফাতেমার নাকে কি সমস্যা হয়েছে। নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারে না। হা করে ঘুমায়। হা করা মুখ দেখতে কদাকার লাগে। ফাতেমার বিশাল শরীর হয়েছে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রকান্ড ভুড়ি ওঠানামা করে। সেটা দেখতেও কদাকার লাগে।

অনেক অনেককাল আগে ফাতেমা নামের একটা কিশোরী মেয়েকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। মেয়েটা তাঁর বুকের কাছে মাথা এনে দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে না ধরে ঘুমুতে পারত না। কোথায় গিয়েছে সেই সব দিন? আজ তাঁর পাশে মৈনাক পর্বত হা করে ঘুমিয়ে থাকে। ঘুমের ঘোরে ফাতেমা যখন হাত বাড়ায় তিনি অতি সাবধানে সেই হাত সরিয়ে দেন। যেন ফাতেমার ঘুম না ভাঙে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress