অন্য স্বাধীনতার অনুভব মমতা ময়ী
পর্ব -১
মা তো মা’ই হয় ,দুনিয়ার কোনো কিছুর সাথে কি তার তুলনা চলে! আজ স্বাধীনতা দিবসে দিকে দিকে ভারত জননীকে খানিকটা সম্মান দেওয়ার প্রয়াস যেটা সত্যিই আমাদের মন ভরিয়ে দেয়।সমাজ সংসারে মায়েরা ভারত মাতার মতোই।সন্তানদের ভালোর জন্য তাদের উৎসর্গ কৃত প্রাণ।
পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে হতে পারে বাড়ির অভিভাবক হিসাবে মায়েদের অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়।পাশের জীবন সঙ্গী স্বামী যুৎসই বা দায়িত্ব সম্পন্ন না হলে, এগিয়ে আসতে হয় মা কেই। নিজের সন্তানের ভালোর জন্য অনেক মায়েদের অন্যদের চোখে নানান তকমা জোটে তবু সব কিছু ছাপিয়ে মা তো মা’ই হয়।সন্তান,পরিবারের কাছে মায়ের ভূমিকা সত্যিই অপরিসীম,এর কোনো বিকল্প নেই।
প্রতিদিনের মতো দৌড় ঝাঁপ করে অফিস যাবার ট্রেন ধরতে স্টেশনে আসা।ট্রেন লেট হলে প্যাসেঞ্জার দের ভিড়ে একটু বসলেই এক দৃশ্য, মন কে বেশ নাড়া দেয় সেইসঙ্গে আসে অদ্ভুত এক ভালো লাগা। এক শীর্ণকায়, দুঃস্থ ,জন্ম থেকেই এভাবে স্টেশন চত্বরে কাটানো অভাবী এক মা ,দেখি একদম ছোট ওই বছর দেড়েকের বাচ্চা মেয়েটা কে হাঁক দিয়ে ডাকে! কড়া চোখে একটু শাসন করে ধুলো বালি মেখে মেঝেতে গড়াগড়ি খাওয়া অন্য বাচ্চাটিকেও! প্যান্ট না পড়া দেখলে রেগে যায়,অন্য একটি বাচ্চা সেও হাজির হয়ে তৎক্ষণাৎ খুঁজে এনে দিলো প্যান্ট টা।এরপর বাধ্য হয়ে ওই মহিলাকে ঘিরে ধরে ওরা একটা ভরসার পরিমণ্ডল।
আমি বসে দেখি সে সব দৃশ্য।তারপর নিয়ম করে ওই মহিলা টিফিন বক্স বার করে পরম যত্নে মেয়েকে খাইয়ে দেন।সেই ঘড়ি ধরা এক সময়,আট টা কুড়ি। কোথা থেকে সে খাবার জোগাড় করে,ঠিক সময়ে বেরিয়ে গিয়ে আবার এনে খাইয়ে দেয়,আর ততক্ষণ বাচ্চাটি ওই আর একটু বড় দাদাটির কাছে খেলে।খাবার বার করার সময় বুভুক্ষু ওই বাচ্চাটির চোখ মুখের আনন্দ,উদগ্রীবতা আমায় উদাস করে কোন অচিনপুরে নিয়ে চলে যায়!
হয়তো বাচ্চাটি কোনোদিন চোখেও দেখেনি কে তার বাবা,বাবার কি দায়িত্ব ! সেসব বড়ো জটিল প্রশ্ন ওই খিদেতে অপেক্ষারত ছেলেটির,কিন্তু সে জানে খিদে পেলে মা ঠিক এসে তাকে দু মুঠো খাইয়ে যাবে।আর এই খানেই নাড়ির টান, মায়ের হৃদয়।এক অদ্ভুত ভালো লাগা আর অন্য স্বাধীনতার গন্ধ গায়ে মেখে আড়াল ছবি তুলে আমার গন্তব্যের ট্রেন ধরতে পা বাড়ালাম।
পর্ব -২
সেদিন ছিল ১৬ই আগস্ট,স্বাধীনতা দিবস পালনের পরের দিন।সাঁইথিয়া স্টেশন এ নেমে মেন রোডে যানজট এড়িয়ে মাঝে মধ্যেই শর্ট কাট গলি তস্য গলি ,বসতি এলাকার এঁদো গলি পেরিয়েই অফিস চলে যাই কখনো কেমন ,নজর এড়ায় না …কর্ম চাঞ্চল্য বসতি জীবন ,ছোটো ছোটো তাদের ঘর দোর ,দরজায় বাঁধা ছাগল এর পাশে বসে স্কুল যাবার প্রস্তুতিতে কোনো ছাত্রীর খেতে বসা ,খালি গায়ে এক নাগাড়ে কেঁদে চলা বাচ্চাটিকে ফেলে রেখে উনুনের আগুন জ্বালিয়ে রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা কোনো মায়ের ।আপাত সস্তা মালে ঠাসা মুদির দোকানে দু পাঁচ টাকার তেল নুন কেনার ভিড় ঠেলে আমার পথ চলার মাঝে গত কাল এক অদ্ভুত দৃশ্যে খানিক থমকে গেলাম।দেখলাম ,ভিজে যাওয়া জ্বালানি কাঠ ,কঞ্চিতে উনানে আগুন ধরাতে ব্যর্থ হয়ে লাইট পোস্ট সহ এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আগের দিনের ব্যবহৃত ছোটো ছোটো কাগজের পতাকা গুলোকে সংগ্রহ করে মাটির উনানে ভরে ফুঁ দিয়ে ভাত ফোটানোর স্বস্তিতে মমতাময়ী মা। ল্যাংটো কোলের শিশুটি একনাগাড়ে খিদের জ্বালায় কেঁদেই চলছিল সেও যেন খানিক গরম ভাতের অপেক্ষায় মায়ের প্রয়াসে হঠাৎ চুপ।সন্তানের মুখে এক মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার এই যে আপ্রাণ প্রয়াসে এক অনন্য স্বাধীনতার ঘ্রাণ নিয়ে পায়ের গতি বাড়ালাম ।