Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অন্ধকারের গান (১৯৯৭) || Humayun Ahmed » Page 18

অন্ধকারের গান (১৯৯৭) || Humayun Ahmed

অন্ধকারের গান (১৯৯৭) – Ondhokarer Gaan – 18

অলিক আমেরিকা থেকে সুন্দর একটা চিঠি লিখেছে। চিঠিতে জীবনের চমৎকার সব ঘটনা এত সুন্দর করে লেখা। বার-বার পড়তে ইচ্ছা করে।

চিঠি শেষ করবার আগে বুলুর কথা লিখল। বীণার কথা লিখল। কি সুন্দর করেই না লিখল—

বীণা, তোর ভাইটা খুব ভালমানুষ ধরনের ছিল। ভাগ্যিস তার সঙ্গে আমার বেশি দেখা টেখা হয় নি। হলে নির্ধাৎ প্রেমে পড়ে যেতাম। আর ওইরকম কিছু ঘটলে কি হত বল তো! দুদিন মাত্র তার সঙ্গে দেখা। অল্প কিছু কথা হল তাতেই আজ আমার এমন কষ্ট হচ্ছে। জানি না তোরা কী করে সহ্য করছিস! কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা মানুষের অসাধারণ তবুও তার একটা সীমা আছে। তুই লিখেছিস জ্ঞান ফিরবার পর নানান কথার এক ফাঁকে তোর ভাই আমার চিঠিটা পড়তে চেয়েছিল।

জানতে চেয়েছিল আমি কেমন আছি। আমার বড় আনন্দ হল যে এক জন মৃত্যুপথযাত্রী অন্য এক জনের কুশল জানতে চায়। সেই এক জন হচ্ছে আমার মতো এক জন। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। পরকাল আছে কিনা কে জানে। যদি থাকে তাহলে তোর আদরের ভাই সেখানে পরম সুখে থাকবে। এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

তোর বিয়ের কথা হচ্ছিল সেই বিয়ে ভেঙে গেল জেনে ভালো লাগছে। তুই বিয়ে করলে ওদের এখন কে দেখবে? তোকে এখন হাল ধরতে হবে না? আমি জানি সেই হাল তুই শক্ত করে ধরবি। মেয়েদের নরম হাত মাঝে-মাঝে বজের মত কঠিন হয়ে যায়। সময়ই তা করে দেয়। ভোর বেলায়ও করবে।

আমি ভালো আছি। সত্যি ভালো। ডাক্তাররা অসুখ ধরতে পেরেছেন। দাগ মুছে যাচ্ছে। চাঁদে এখন আর কোন কলঙ্ক নেই।

চিঠি শেষ করে বীণা চুপচাপ বসে রইল।

শ্রাবণ মাসের দুপুর।

আকাশ মেঘলা। মেঘলা দুপুরে সব কেমন অন্যরকম লাগে। কুয়ার কাছের চাঁপা গাছে কর্কশ স্বরে একটা কাক ডাকছে-কা-কা-কা-কা।

বীণার দাদী বললেন, মর হামজাদা মর।

কাক তাতে উৎসাহ পেয়ে আরো শব্দ করে ডাকতে লাগল-কা-কা-কা। মিজান সাহেব বারান্দায় বসে বিড়বিড় করে হিসাব করছেন। তাঁর খানিকটা মাথার দোষ হয়েছে। এমন ভয়াবহ কিছু না। বাইরের কেউ ধরতে পারে না। সবই ঠিকমতোই করেন। শুধু যখন বাসায় থাকেন তখন হিসাব করতে থাকেন। অফিসের না-মেলা হিসাব মিলাতে চেষ্টা করেন। হিসাব মেলে না।

এখন তিনি বারান্দায় জলচৌকিতে বসে অতি দ্রুত হিসাব করছেন।

বাবলু তাঁকে দেখছে। এখন বাবাকে তার আর মোটেই ভয় করে না। বরং বড় ভালো লাগে। বাবার সঙ্গে সে নানান গল্প করে।

বাবলু বলল, বাবা কি করছ?

মিজান সাহেব বললেন, হিসাব।

মিলছে বাবা?

প্রায়। একটু বাকি।

মিজান সাহেব হাসেন। এই হাসি বাবলুর বড় ভালো লাগে।

সেও হাসে।

ক্লান্ত দুপুরগুলোত বীণা বসে থাকে কুয়ার পাশে। মাঝেমাঝে কুয়ার কাছে মুখ নিয়ে বলে, লুবু, লুবু। কুয়া সেই শব্দ উল্টো করে ফেরত পাঠায়। কি সুন্দর প্রতিধ্বনি–বুলু, বুলু।

বীণার কাছে গানের মতো মনে হয়। অন্ধকারের গান।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
Pages ( 18 of 18 ): « পূর্ববর্তী1 ... 1617 18

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *