অন্ধকারের গান (১৯৯৭) – Ondhokarer Gaan – 17
ডাক্তাররা মৃত রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে সাধারণত কোনো কথা বলতে চান না। কিন্তু এই ডাক্তার বললেন। অপারেশন থিয়েটারের বাইরের কাঠের বেঞ্চিতে বসে থাকা মিজান সাহেবের সামনে এসে স্পষ্ট গলায় বললেন, আমি খুবই লজ্জিত।
মিজান সাহেব বিড়বিড় করে বললেন, লজ্জিত হবার কী আছে। চেষ্টার ত্রুটি যদি হত তাহলে লজ্জার ব্যাপার ছিল। চেষ্টার কোন ত্ৰুটি করেন নি।
ডাক্তার সাহেব চলে গেলেন না দাঁড়িয়ে রইলেন। মিজান সাহেব বললেন, মৃত্যুর সময় বুলু কি কিছু বলেছিল?
জ্বি না। ওর জ্ঞান ফেরে নি।
এই প্রথম মিজান সাহেবের চোখে পানি দেখা গেল। তিনি রুমাল বের করে চোখ মুছে সহজ স্বাভাবিক গলায় বললেন, আমার এই ছেলেটা বড় ভালো ছিল ডাক্তার সাহেব। আমার মনে একটা ক্ষুদ্র আফসোস রয়ে গেল—আমি যে তাকে কতটা ভালবাসতাম এটা সে জানতে পারল না।
ডাক্তার সাহেব স্থির চোখে তাকিয়ে রইলেন। মিজান সাহেব বললেন, বুলু আপনাকে একটা উপহার দিতে চেয়েছিল। ওর ইচ্ছা ছিল অপারেশনের পর জ্ঞান যখন ফিরবে তখন সে নিজের হাতে আপনাকে দেবে। আমি উপহারটা নিয়ে এসেছি। আপনি যদি উপহারটা নেন আমি খুব খুশী হব। তেমন কিছু না। সামান্য একটা কলম। অল্প দাম।
মিজান সাহেব পাঞ্জাবির পকেটে কলম খুঁজতে লাগলেন। ডাক্তার সাহেব বললেন, আপনি আপনার বাচ্চাদের কাছে যান। ওরা খুব কান্নাকাটি করছে। আসুন। আমার হাত ধরুন।