Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অন্ধকারের গান (১৯৯৭) || Humayun Ahmed » Page 15

অন্ধকারের গান (১৯৯৭) || Humayun Ahmed

অন্ধকারের গান (১৯৯৭) – Ondhokarer Gaan – 15

গনি সাহেবকে আজ খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। অফিসে এসেই তিনি নিয়মের বাইরে একটা কাজ করেছেন। তাঁর সেক্রেটারিকে ধমক দিয়েছেন। অবশ্য ধমক দেয়ার পরপরই নিজেকে সামলে নিয়ে হাসি মুখে বলেছেন, কাজ কর্ম কেমন চলছে?

সেক্রেটারি শুকনো গলায় বলল, জ্বি স্যার ভালো।

তিন অক্ষরের সুন্দর একটা নাম বের কর তো।

কিসের নাম স্যার?

জাহাজের নাম। একটা জাহাজ শেষ পর্যন্ত কিনেই ফেললাম। নাম দরকার। রেজিষ্ট্রেশন হবে। অনেক যন্ত্রণা আছে। মিজান সাহেব এসেছেন নাকি?

জ্বি স্যার।

যাও তাঁকে পাঠিয়ে দাও।

মিজান সাহেব জাহাজ কেনার খবর চুপ করেই শুনলেন। কোনো রকম আবেগ বা উত্তেজনা দেখালেন না। গনি সাহেব বললেন, নাম দরকার মিজান সাহেব। জাহাজের নাম। সাধারণত জাহাজের নাম বেশ বড় হয় যেমন প্রাইড অব বেঙ্গল, দি সাইলেন্ট ভয়েজার……আমি চাই তিন অক্ষরের নাম।

মিজান সাহেব এবারো কিছু বললেন না।

তিন অক্ষরের নাম কেন চাই জানেন?

জ্বি না।

তিন সংখ্যাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই জন্যেই তিন অক্ষরের নাম দরকার। তিন সংখ্যাটা কী রকম গুরুত্বপূর্ণ দেখুন। আমাদের স্থান হচ্ছে তিন—স্বৰ্গ মৰ্ত্ত্য পাতাল। কালও তিন—অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। আমরা খাই তিন বেলাসকাল, দুপুর, রাত। শিয়াল ডাকে তিনবার তিন প্রহরে। ঠিক না?

জ্বি স্যার ঠিক।

জাহাজ কত দিয়ে কিনলাম কি—এইসব তো জিজ্ঞেস করছেন না।

জিজ্ঞেস করে কী হবে স্যার?

জাহাজ তো আমার একার না। প্রতিষ্ঠানের জাহাজ। এতে আপনাদের সবার অংশ আছে। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে আছে।

মিজান সাহেব চুপ করে রইলেন। তাঁর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।

গনি সাহেব বললেন, আপনার ছেলের অবস্থা কি?

এখন একটু ভালো। আরেকটা অপারেশন হয়েছে। ডাক্তার বলেছে হয়ত পা বাঁচানো যাবে।

গুড। ভেরি গুড। এটা অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। তা এরকম আনন্দের সংবাদেমুখ এমন কালো করে রেখেছেন কেন? অবশ্যি এ রকম হয়-খুব আনন্দের সময় মনটা কেন জানি খারাপ লাগে। চা খান চা দিতে বলি।

চা খাব না স্যার।

মিজান সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, আপনি কি স্যার পুলিশ খবর দিয়েছেন?

গনি সাহেবের ভ্রূ কুঞ্চিত হল। যেন তিনি প্রশ্নটা ঠিক বুঝতে পারছেন না। মিজান সাহেব বললেন, রহমানের স্ত্রী আজ ভোরে আমার বাসায় এসেছিল। সে বলল, পুলিশ এসে রহমানকে ধরে নিয়ে গেছে।

গনি সাহেব বললেন, তাই নাকি? কখন ধরল?

রাত সাড়ে এগারটার সময়।

এখনো ছাড়ে নি?

জ্বি না।

অন্যায়। খুবই অন্যায়। রাতেই আমাকে খবর দেয়া দরকার ছিল। তৎক্ষণাৎ ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতাম।

স্যার আপনি কি পুলিশ খবর দিয়েছেন?

হ্যাঁ ইনফর্ম করে রেখেছিলাম। একেবারে তো ছেড়ে দেয়া যায় না। ছোট সমস্যা থেকে বড় সমস্যা হয়। আপনার ছেলের ব্যাপারটা দেখুন না। সামান্য কাঁটা ফুটল। সেখান থেকে এখন পা নিয়ে টানাটানি। আমি পুলিশকে বলেছি ওরা যাবে, নিজেদের মতো করে একটা ইনভেসটিগেশন করবে। কিছু হবে না জানি। তবু পুলিশে ইনফর্ম করা নাগরিক কর্তব্য। আপনি ভাববেন না এক্ষুনি আমি রহমানকে ছাড়িয়ে আনার। ব্যবস্থা করছি। আমি একটি চিঠি লিখে দিচ্ছি আপনি চিঠি নিয়ে নিজেই চলে যান। অফিসের গাড়ি নিয়ে যান।

গনি সাহেব অতি দ্রুত চিঠি লিখতে শুরু করলেন। মিজান সাহেব বললেন, আমার কাছেও তো পুলিশ আসবে। আসবে না স্যার? গনি সাহেব নরম গলায় বললেন, পুলিশ কি করবে না করবে বলা তো মুশকিল। এরা তো কখনো ঠিক কাজটা করে না। যেটা করার না সেটা করে। যেটা করা প্রয়োজন সেটা করে না। নিন এই চিঠি নিয়ে চলে যান।

মিজান সাহেব বেরিয়ে যাওয়া মাত্র গনি সাহেব বেল টিপে তাঁর সেক্রেটারি মজনুকে ডাকলেন। মধুর গলায় বললেন, নাম পাওয়া গেছে?

মজনু শুকনো গলায় বলল, জি স্যার। একটা পেয়েছি।

বল নাম বল।

নাম হল-বদর।

কি বললে?

বদর।

নয় কোটি টাকা দিয়ে জাহাজ কিনেছি—তার নাম বদর। তুমি আমার সঙ্গে ফাজলামি কর? যাও নাম বের কর। আজ বিকেলে পাঁচটার মধ্যে এক হাজার নাম তুমি আমাকে দিবে।

জ্বি আচ্ছা স্যার।

নামগুলি সব এ্যালফাবেটিকেলি সাজাবে। অ তে কিছু, আ তে কিছু এই ভাবে।

জ্বি আচ্ছা স্যার।

লাঞ্চ টাইমের ঠিক আগে সবার কাছে একটা নোট গেল। যার বিষয়বস্তু হচ্ছেকোম্পানি গ্রিক শিলিং মেরিনারের কাছ থেকে একটি সমুদ্রগামী জাহাজ কিনেছে। এই ঘটনা কোম্পানির উত্তরোত্তর উন্নতির পরিচায়ক। ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যে কোম্পানির সকল কর্মচারীকে একটি করে ইনক্রিমেণ্ট দেয়া হল। কোম্পানির উন্নতি মানেই কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের উন্নতি।

মিজান সাহেব রহমানকে নিয়ে ফিরেছেন। রহমানের সমস্ত গা ফুলে উঠেছে। ডান চোখের নিচে রক্ত জমে কালচে হয়ে আছে। মিজান সাহেব বললেন, তোমাকে মারল কেন?

রহমান নিচু স্বরে বলল, জানি না স্যার।

খুব বেশি মেরেছে?

রহমান তার জবাব না দিয়ে বলল, স্যার আমি এখন বাসায় যাব না। আমার এই অবস্থা দেখলে চিনু খুব মন খারাপ করবে। আমার নিজেরো স্যার লজ্জা লাগছে।

কোথায় যেতে চাও?

কল্যাণপুরে আমার মামার বাসা আছে। ঐখানে নিয়ে যান স্যার দুই একদিন থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় যাব।

তুমি কি এর পরেও গনি সাহেবের এখানে কাজ করবে?

যাব কোথায় স্যার? যাওয়ার তো কোন জায়গা নেই।

মিজান সাহেব শীতল গলায় বললেন, আমি চাকরি করব না বলে ঠিক করেছি।

কী বলছেন স্যার?

রেজিগনেশন লেটার লিখে অফিসে দিয়ে এসেছি। ওরা গনি সাহেবকে দেবে।

আপনার সংসার চলবে কী ভাবে স্যার?

না চললে চলবে না। তুমি কি একটা সিগারেট খাবে রহমান?

জ্বি না স্যার। আপনার সামনে খাব না।

নাও। কোন অসুবিধা নেই।

মিজান সাহেব রহমানের পিঠে হাত রাখলেন। রহমান শব্দ করে কাঁদতে লাগল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress