কা-কা-কা-কা
কা-কা-কা-কা। আসলেই কাক ডাকছে।
কাকের চিৎকারে অনিলের ঘুম ভাঙল। জানালা খোলা। গত রাতের ঝড়ে এক সময় ছিটিকিনি খুলে গেছে। বৃষ্টির ছাটে বিছানার এক অংশ ভেজা। অনিলের পাও ভিজে আছে। তার ঘুম ভাঙে নি। এখন ঘুম ভাঙল কাকের ডাকে। নিঃসঙ্গ কাকটা জানালায় বসে অনিলের দিকে তাকিয়েই ডাকছে। অনিল বিছানা ছেড়ে নামল। ঘরের ভেতরটা অন্ধকার। জানালার পাশে চলে গেল। সামান্য আলো হয়েছে। ভোর হচ্ছে। ভোর, নতুন আরেকটি দিনের শুরু।
রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। এখানে-ওখানে পানি জমে আছে। পানির উপর দিয়ে ছপ ছপা করতে করতে একটা কুকুর এগিয়ে গেল। শুকনো জায়গাও আছে। কুকুরটা সেদিকে গেল না। পানির উপর দিয়ে হাঁটতেই তার বোধহয় ভালো লাগছে। লাইটপোস্ট-এর ইলেকট্রিক তারে এক ঝাক শালিক বসে আছে। কয়টা শালিক সে কি গুনে দেখবে? সুরেশ বাগচী এই ভাবেই তাকে গুনতে শিখিয়েছেন। ট্রেনে করে যাচ্ছে, জানোলা দিয়ে মুখ বের করে দেখা গেল টেলিগ্রাফের তারে কয়েকটা ফিঙ্গে বসে আছে। সুরেশ বাবু বললেন, ও বাবু, ও অনিল গুনে ফেল তো বাবা কটা পাখি।
অনিল বলল, না। আমি গুনব না।
অতসী বলল, আমি গুনব বাবা?
সুরেশ বললেন, উহু উহু, অনিল শুনবে। কটা অনিল? কটা?
গোনার আগেই ট্রেন পাখি ছাড়িয়ে অনেক দূর চলে গেল। সুরেশ বাগচীর মুখ দেখে তখন মনে হতে পারে— তাঁর খুব ইচ্ছা চেন টেনে ট্রেনটাকে তিনি থামান। পুত্রকে নিয়ে চলে যান হাঁটতে হাঁটতে যাতে সে ফিঙ্গে গুনে আসতে পারে।
শৈশবের অভ্যাসেই অনিল এখন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে শালিক পাখি গুনছে। পাখিগুলি স্থির হয়ে বসে আছে। পুরোপুরি ভোর না হওয়া পর্যন্ত এরা বোধহয় নড়বে না। কিংবা কে জানে এরা বোধহয় বুঝতে পারছে অনিল নামের ছাব্বিশ বছরের এক যুবক তাদের গুনছে। নড়াচড়া করলে যুবকের গুনতে অসুবিধা হবে।
রাস্তা এখনো ফাঁকা, রিকশা নেই, গাড়ি নেই, একটা মানুষ নেই। কাফুর্ঘ্য সকাল ছটা পর্যন্ত। কাজেই ছাঁটার আগে কাউকে দেখা যাবে না। এই সময় রাস্তার ঠিক মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে বললে কেমন হয়— আমি কাফুর্ঘ্য মানি না।
একটা জীপ চলে গেল।
মিলিটারী জীপ। ড্রাইভারের পাশে যে অফিসারটি বসে আছে তার চোখে সানগ্লাস। এই ভোর বেলা, যখন দিনের আলো পর্যন্ত স্পষ্ট হয় নি। তখন অফিসারটি চোখে সানগ্রাস পরে বের হল কেন? সে কি চারদিক অন্ধকার করে রাখতে চায়? আশেপাশের কিছু দেখতে চায় না? জানালাটা বন্ধ করে দেয়া উচিত। সব বাড়ির জানালা বন্ধ। তারটা খোলা। সহজেই চোখে পড়ে যাবে। কারো মনে হয়ে যেতে পারে– এই বাড়িতে কোন রহস্য আছে। অনিল জানালা বন্ধ করে ভেতরের বারান্দায় এসে দাঁড়াল। ভেতরের দিকে মেস ঘরের উঠানে বিশাল এক কাঁঠাল গাছ। মেসের মালিক কামাল মিয়া প্ৰতিবারই বলেন, গাছ কাটিয়ে ফেলবেন- কোনবারই কাটা হয় না।
সব গাছেরই কিছু নিজস্ব রহস্য আছে। এই গাছেরও আছে। এই গাছে কখনো পাখি বসে না, পাখি বাসা বাধে না। অনিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে। গাছের মাথায় রোদ এসে পড়েছে। কাল রাতে বৃষ্টিতে পাতাগুলি ভেজা। সেই ভেজা পাতা রোদে চিকমিক করছে। মনে হচ্ছে গাছটা মাথায় সোনার টােপর পরেছে। কি আশ্চর্য সুন্দর! কি অদ্ভুত সুন্দর! বাবা তার সঙ্গে থাকলে মুগ্ধ হয়ে দেখতেন। বিস্মিত হয়ে বলতেন- আহা রে, আহা রে, কি সুন্দর! কি সুন্দর! এই জিনিসের ছবি আঁকা যাবে না। বুঝলি অনিল, এই জিনিসের ছবি আঁকা খুব সমস্যা।
যে কোন সুন্দর জিনিস দেখলেই সুরেশ বাগচীর প্রথম চিন্তা এটার ছবি আঁকা যাবে কি-না। ভাবটা এ-রকম যেন ছবি আঁকা গেলে তিনি তৎক্ষণাৎ রং তুলি দিয়ে ছবি এঁকে ফেলতেন।
নিয়ে গেলেন। সেটা না-কি একটা দেখার মতো ব্যাপার। যার ছবি আঁকা অসম্ভব। অনিলের বয়স তখন ছয় কি সাত। হাঁটতে হাঁটতে পায়ে ব্যথা। সুরেশ বাগচী বললেন, কষ্ট হচ্ছে না-কি রে বাবু?
অনিল বলল, বাবু বলবে না।
আচ্ছা যা বলব না। কষ্ট হচ্ছে না-কি রে অনিল?
অনিল বলল, হুঁ।
যে কোন ভালো জিনিস দেখার জন্যে কষ্ট করতে হয়। আয় কাঁধে উঠে পড়া।
পাঁচ মাইল দূরে বিরামপুর দিঘি। মহারাজ কৃষ্ণকান্তর কাটা দিঘি। বীধানো ঘাট। সুরেশ তাঁর ছেলেকে নিয়ে ঘাটে উপস্থিত হলেন। লোকজন কাপড় কাচছে, গোসল করছে। তিনি বললেন, আপনাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, ঘণ্টা খানেকের জন্য দিঘির জল কেউ নাড়াবেন না। নিস্তরঙ্গ জলে আকাশের ছায়া দেখাবার জন্যে আমি আমার পুত্রকে নিয়ে এসেছি। অনেক দূর থেকে এসেছি।
আধাবুড়ো এক লোক বিরক্ত হয়ে বলল, আপনে কেডা?
আমার নাম সুরেশ বাগচী। আমি একজন শিক্ষক। দিঘির জল ঘণ্টা খানেকের জন্যে না নাড়ালে বড় ভালো হয়।
কাজকামের সময় চুপচাপ কে বসে থাকবে বলেন? বিকালে আসবেন।
আচ্ছা, আমরা বরং অপেক্ষা করি। অপেক্ষারও আনন্দ আছে। ক্ষিধে পেয়েছে না-কি রে অনিল?
না।
অতসীকে নিয়ে আসলে ভালো হত। বেচারীর এত শখ ছিল দেখার। ভাবলাম, মেয়ে মানুষ এত দূর হাঁটবে। মেয়ে হলে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হতে হয়। তোর ঘুম পাচ্ছে না-কি? ঝিামাচ্ছিস কেন?
দিঘির ঘাট আর জনশূন্য হয় না। লোকজন আসছেই। দুঘণ্টা বসে থাকার পরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বুম বৃষ্টি। সুরেশ বাগচী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আর হবে না, চল ফিরে যাই।
ছাতা নেই। ভিজতে ভিজতে ফেরা। রাস্তা হয়েছে। পিছল। সুরেশ বাগচীকে ছেলে কাঁধে নিয়ে এগুতে হচ্ছে। তিনি বিড় বিড় করে বলছেন, এ তো বড়ই যন্ত্রণা হয়ে গেল। নিৰ্ঘাৎ জ্বর-জুরি হবে।
তারা বাড়ি পৌঁছল সন্ধ্যা মিলিয়ে যাবার পর। সুরেশ বাগচী বাড়ি পৌঁছে শুনলেন তাঁর মেয়ে সারাদিন কিছু খায় নি। দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছে। সুরেশ বাগচী উদাস গলায় বললেন, ভুল হয়ে গেছে রে মা। তোকে সঙ্গে নেয়া উচিত ছিল। আমরাও কিছু দেখতে পারি নি। আবার যেতে হবে। তখন নিয়ে যাব। গায়ে হাত দিয়ে বলছি রে মা।
অতসী ফুপাতে ফুপাতে বলল, ভেজা হাত সরাও তো বাবা। নিজেরা সব ভালো ভালো জিনিস দেখবে।
ভুল হয়ে গেছে রে মা। বিরাট ভুল হয়ে গেছে। তবে আমরা ভালো জিনিস কিছু দেখতেও পাই নি। বিশ্বাস করা। এবার থেকে ভালো জিনিস যা দেখব, তোকে নিয়ে দেখব।
অনিল কাঁঠাল গাছের মাথার মুকুটের দিকে তাকিয়ে মন ঠিক করে ফেলল। দেশটা ঠিকঠাক হলে এই দেশে যা কিছু সুন্দর জিনিস আছে সে তার বাবাকে আর অতসীদিকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখবে। প্রথম ছয়মাস শুধু ঘুরে বেড়াবে। কোন একটু সুন্দর জিনিসের সামনে বাবাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সে বলবে— বাবা দেখ তো, এর ছবি আঁকা যাবে কি-না। বাবা মাথা নাড়তে নাড়তে বলবেন, অসম্ভব। অতসীদি খিলখিল করে হাসবে। বাবা বিরক্ত হয়ে বলবেন, হাসছিস কেন মা? সৌন্দর্যের একটা অংশ থাকে, কখনো যার ছবি আঁকা যায় না। এই জিনিসটা বুঝতে হবে…
গফুর সাহেবের ঘর থেকে কোরান তেলাওয়াতের সুর ভেসে আসছে। তিনি উঠেন। অন্ধকার থাকতে থাকতে। নামায পড়েন। নামায্যের পরে অনেকক্ষণ কোরান তেলাওয়াত করেন। তার গলার স্বর মিষ্টি। পড়েনও খুব সুন্দর করে। প্রায়ই ভোরে অনিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুনে। তার ভালো লাগে। শুধু ভালো লাগে বললে কম হয়, বেশ ভালো লাগে।
গফুর সাহেব দরজা খুলে অনিলকে দেখলেন। ক্লান্ত গলায় বললেন, রাতে ঘুম হয়েছিল অনিল?
জ্বি।
আমার এক ফোটা ঘুম হয় নি। সারারাত জেগে কাটালাম। খুব খারাপ লাগছে। গত রাতেও ঘুমাতে পারি নি। এভাবে দিন কাটালে তো বাঁচব না। কিছু একটা করা উচিত?
কি করবেন?
তাই তো জানি না। করব কি?
গফুর সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিচু গলায় বললেন, তোমার একটা খবর আছে অনিল। কাল বিকেলে একটা ছেলে তোমার খোজে এসেছিল। অনেকক্ষণ তোমার জন্যে অপেক্ষা করে আমাকে চিঠি দিয়ে গেছে। খুবই দুঃসংবাদ। তোমাকে দুঃসংবাদটা কীভাবে দেব বুঝতে পারছিলাম না। রাতে এই জন্যেই ঘুম হয় নি। সারারাত চিন্তা করেছি। এখন মনে হচ্ছে দুঃসংবাদটা দেয়া উচিত। সব মানুষেরই দুঃসংবাদ জানার অধিকার আছে। মন শক্ত কর অনিল।
অনিল তাকিয়ে আছে। গফুর সাহেব তার কাঁধে হাত রেখে প্ৰায় অস্পষ্ট গলায় বললেন, তোমার বাবা মারা গেছেন। অনিল। এটা সহজভাবে নেয়ার চেষ্টা কর। আরো অসংখ্য মৃত্যু ঘটবে। এগুলো নিয়ে আমরা এখন কোন কান্নাকাটি করব না। দেশ স্বাধীন হোক। দেশ স্বাধীন হবার পর আমরা চিৎকার করে কাঁদব। নাও চিঠিটা পড়া।
অনিল চিঠি পড়ল। তার চোখ শুকনো। মুখ ভাবলেশহীন। অনিলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে গফুর সাহেবের চোখে পানি এসে গেছে। তিনি পাঞ্জাবির প্রান্ত দিয়ে চোখ মুছছেন। অনিল ছেলেটিকে তিনি খুবই পছন্দ করেন। ভদ্র, লাজুক এবং অতি বিনয়ী ছেলে। কোরান পাঠের পর বারান্দায় এলে রোজই এই ছেলেকে দেখেন। একদিন সে লাজুক গলায় বলল, আমি চিঠি পেয়েছি আমার বাবা খুব অসুস্থ। নতুন চাকরি, এরা ছুটি দিচ্ছে না। যেতে পারছি না। আপনি কি আমার বাবা জন্যে একটু প্রার্থনা করবেন?
গফুর সাহেব বললেন, অবশ্যই করব, অবশ্যই। আমি খাস দিলে উনার জন্য দোয়া করব। আলাদা নফল নামায পড়ব। তুমি মোটেও চিন্তা করবে না। দেখি আসি, আসা আমার ঘরে, চা খাও। অনিল তার ঘরে এসে কেঁদে ফেলল।
সেই ছেলে বাবার মৃত্যুসংবাদের চিঠি হাতে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। চিঠিটা সে দ্বিতীয়বার পড়ে নি। তার চোখ শুকনো। সে তাকিয়ে আছে কাঁঠাল গাছটার দিকে। কে জানে ছেলেটার মনের ভেতর এখন কি হচ্ছে।
গফুর সাহেব নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন। আজকের মতো কোরান পাঠ তিনি শেষ করেছিলেন। এখন আরো খানিকটা পড়তে ইচ্ছা করছে।
আলিফ লাম মীম। জালিকাল কিতাবু লা রাইবা ফীহা, হুদাল্লিল মুত্তাকীন।
ইহা সেই গ্ৰন্থ যাহাতে কোনই সন্দেহ নাই। যাহা বিশ্বাসীদের পথ প্ৰদৰ্শক।
অনিল ঘরে ঢুকল। জানালা খুলে দিল। অন্ধকার ঘর ক্রমে আলো হয়ে উঠছে। আকাশ পরিষ্কার। ঝকঝকে নীল। বাতাস মধুর। শ্রাবণ মাসের অপূর্ব সুন্দর একটা সকাল।
অনিল কাপড় পরছে। সে রূপেশ্বর রওনা হবে। তার এখন কেন জানি মোটেই ভয় লাগছে না। চুল আঁচড়াবার জন্য চিরুণি খুঁজতে ড্রয়ারে টান দিতেই একগাদা চিঠি বেরিয়ে পড়ল। দুএকটা পড়েছে মেঝেতে। অনিলের কাছে লেখা তার বাবা এবং অতসীদির চিঠি। তার কাছে লেখা তার বাবার শেষ চিঠিটিই সে শুধু সঙ্গে নিয়ে যাবে। বাকিগুলো থাকুক। যেমন আছে শেষ চিঠিতে সুরেশ বাগচী লিখেছেন–
বাবা অনিল,
অত্যন্ত বিষণ্ণ মনে তোমাকে পত্র দিতেছি। চারিদিকের আবহাওয়া আমার ভালো বোধ হইতেছে না। শংকিত বোধ করিতেছি। মন বলিতেছে এই দেশ বড় ধনের কোন বিপর্যয়ের ভিতর দিয়া যাইবে। নিজের জন্যে এবং অতসীর জন্যে আমার কোন চিন্তা নাই। তোমাকে নিয়াই যত ভয়। রাজধানীতে আছ। বিপর্যয়ের প্রথম ধাক্কাটা তোমাদের উপর দিয়াই যাইবে। তুমি ভীতু ধরনের ছেলে, কি করিতে কি করিবে তাহাই আমার চিন্তা। বিপদে মাথা ঠাণ্ডা। রাখিও এবং ঈশ্বরকে স্মরণ রাখিও। তুলিও না- মঙ্গলময় ঈশ্বর তাহার বিরাট জগতের প্রতিটি জীবের কথা ভাবেন। আমাদেরও উচিত তাহার কথা ভাবা।
অতসী ভালো আছে তাহাকে সুপাত্রে সম্প্রদান করা আমার বড় দায়িত্বের একটি। তেমন সন্ধান পাইতেছি না। তাহার বড় মামা কলিকাতা হইতে পত্ৰ দিয়াছেন যেন আমি অতসীকে কলিকাতা নিয়া যাই। সেইখানে পাত্রের সন্ধান করিয়া বিবাহ দিবেন। আমি তাহাতে সম্মত হই নাই। অতসী এই দেশের মেয়ে। এই দেশে তাহার বিবাহ হইবে। এই বিষয়ে তোমার ভিন্ন মত থাকিলে আমাকে জানাইবে।
মোক্তার পাগলি মাঝে মধ্যে তোমার সন্ধানে আসে। কিছু দিন পূর্বে কয়েকটা পাকা কামরাঙ্গা নিয়া আসিয়াছিল। তোমাকে দিতে চায়। একজন পাগল মানুষের ভালবাসার এই প্ৰকাশ দেখিয়া আমার চোখে জল আসিয়া পড়িল। আমি অতসীকে বলিলাম যত্ন করিয়া সে যেন মোক্তার পাগলিকে চারটা ভাত খাওয়াইয়া দেয়। তাহাকে বারান্দায় পাটি বিছাইয়া খাইতে দেওয়া হইল। সে অনেকক্ষণ ভাত মাখাইয়া কিছু মুখে না দিয়া উঠিয়া চলিয়া গেল।
এই পাগল মানুষটি তোমার প্রতি যে ভালবাসা দেখাইল তাহা তুমি স্মরণ রাখিও। আরেকজন মানুষের কথা স্মরণ রাখিও যিনি তোমার প্রতি কোন ভালবাসা দেখাইবার সুযোগ পান নাই। তিনি তোমার মা। তোমার জন্মমুহূর্তেই তাহার মৃত্যু হইয়াছে। মায়েরা সন্তানের জন্যে অসীম ভালবাসা নিয়া আসেন। এই মা সেই অসীম ভালবাসার কিছুই ব্যবহার করিতে পারেন নাই। তাই বলিয়া মনে করিও না সেই ভালবাসা নষ্ট হইয়াছে। এই পৃথিবীতে সবই নশ্বর, কিছুই টিকিয়া থাকে না, কেবল ভালবাসা টিকিয়া থাকে।
যদি কখনো বড় বিপদে পড় ঈশ্বরকে স্মরণ করবে। সেই সঙ্গে তোমার মাকেও স্মরণ করবে। ইহাই আমার উপদেশ। পরম করুণাময় তোমার মঙ্গল করুন।