ভুতোর মাথায় যখন পরি ভর করে
সবাই জানে, ভুতোর মাথায় যখন পরি ভর করে তখন একটা কিছু হবেই।
ভূতো এ-বাড়ির ছেলে নয়। এমনকী আত্মীয় পর্যন্ত নয়। তবু ভুতো এ বাড়ির একজন হয়ে গেছে। আগে তাকে দিয়ে বাড়িতে চাকর বাকরের কাজ করানো হত। তারপর তার খোলতাই মাথা আর নানা বাহাদুরি দেখে তাকে ইস্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। বাড়ির ছেলেদের সঙ্গে সেও পড়ে। বলতে গেলে সে-ই হল সদার পোড়ো।
তবে মুশকিল হল মাঝে-মাঝে তার মাথায় পরি ভর করে। কিন্তু পরি ভর করাটা কী?
তা ভুতো জানে না। তবে ভুতোর ভাষায়, সেই যে-বার দেশে খুব আকাল হল, তখন আমার বাবা একদিন আমাকে কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। সংসারে শুধু আমি আর বাবা-ই তো ছিলাম। মা কোকালে মরে গিয়েছে। তা বাবার কাঁধে করে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই। চারদিকে পোড়া মাঠ, ঘাস নেই, পাতা নেই, গাঁ-গঞ্জ সব খরায় জ্বলে পুড়ে খাক। নদী, নালা, পুকুর, কুয়ো, টিপকল সব শুকনো। তেষ্টায় বাপ-ব্যাটার গলা কাঠ। তা সন্ধেবেলা আমরা একটা ভুতুড়ে বাড়িতে পৌঁছে গেলুম। বাবা বলল, “ওখানেই বাপ-ব্যাটায় রাত কাটাব।” বাবা গামছা পেতে আমাকে শুইয়ে দিয়ে বলল, “তুই একটু জিরো, আমি চিড়ে-মুড়ি কিছু একটু জোগাড় করে আনছি।” তা বাবা গেল, আর আমিও শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ধকল তো বড় কম যায়নি। তারপর হল কি, হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। দেখি কি, কোথায় সেই ভাঙা পুরনো বাড়ি, আর কোথায় বা বাবা। আমি দেখলুম, দিব্যি একটা ঘরের মধ্যে নরম বিছানায় আমি শুয়ে আছি। চারদিকে সব আমার বয়সী ছেলেমেয়ে। তবে সকলের পিঠেই একজোড়া করে ফিনফিনে পাখনা লাগানো। তারা বেশ উড়ছে, হাঁটছে, বসছে। কী সুন্দর সব চেহারা। আমি চোখ মেলতেই সবাই এসে আমাকে ঘিরে দাঁড়াল। আমি তো ভয় পেয়ে কেঁদে কেটে একশা। তারা আমার চোখের জল মুছিয়ে দিল, অনেক খাবার দিল, শরবত দিল, খেলনা দিল। আমি যতবার বাবার কাছে যাওয়ার বায়না করি ততবারই তারা কেবল মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে, আর তাদের মুখগুলো ভারি করুণ হয়ে যায়। তারা তাড়াতাড়ি আমাকে আরও খেলনা দিল, মজার মজার সব গল্প বলল, গান গাইল, নাচল। আমি বাবার দুঃখ ভুলেই গেলুম। তাদের ভারি সুন্দর বাগান ছিল। সেখানে বারোমাস রামধনু ফুটে থাকে আকাশে। সেখানে কখনও অন্ধকার হয় না। কারও কখনও অসুখ করে না, কেউ কখনও মরে না। সে ভারি মজার জায়গা।
“তারপর কী হল?”
“একদিন একটা কালোমতো রাগি পরি এসে বলল, ‘এসব কী হচ্ছে? পৃথিবীর একটা ছেলেকে তোমরা কেন রেখেছ! যাও, ওকে রেখে এসো।’ ব্যস, সেইদিন পরিরা আমার চোখে পলক বুলিয়ে ঘুম পাড়াল। ঘুম যখন ভাঙল তখন দেখি, একটা গাছতলায় শুয়ে আছি। সেখান থেকেই তো রামলাল-জ্যাঠামশাই আমাকে নিয়ে এলেন এ বাড়িতে। কিন্তু আমার মনে হয়, পরিরা এখনও আমাকে ভালবাসে। মাঝে-মাঝে আমি হঠাৎ শুনতে পাই, কারা যেন চুপিচুপি আড়াল থেকে আমাকে ডাকে, ভুতো! এই ভুতো! তোমার কি খিদে পেয়েছে? তোমার কি অসুখ করেছে? আমিও তখন তাদের কথার জবাব দিই। মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমার বালিশের পাশে একটা খেলনা পড়ে আছে হয়তো। কখনও হয়তো একবাক্স সন্দেশ। অসুখ করলে কে যেন আমাকে এসে হাওয়া করে, মাথায় জলপট্টি দেয়।”
ভুতোর পরির গল্প সবাই জানে। কিন্তু সবাই বিশ্বাস করে না।
ভুতোকে মোটেই পছন্দ করে না ছোট দাদু। ছোট দাদু হলেন ভুবন রায়ের সেজো ভাই ত্রিভুবন রায়। তিনি বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, অনেক মরা মানুষ বাঁচিয়েছেন বলে শোনা যায়।
সেবার ফটিকবাবুর মায়ের সন্ন্যাস-রোগ হল। ত্রিভুবনবাবু গিয়ে নাড়ী ধরে বললেন, “রাত কাটবে না। চারটে বেজে তেরো মিনিট উনিশ সেকেন্ডে মারা যাবেন।”
ভুতো কাছেই ছিল। ফশ করে বলে বসল, “বললেই হল? অ্যাকেসিস ওয়ান এম দাও না। বুড়ি একশো বছর বাঁচবে।”
ত্রিভুবন ভুলোকে ছাতাপেটা করতে উঠেছিলেন।
কিন্তু ফটিকবাবু ভুতোর পরির গল্প বিশ্বাস করতেন। তিনি অ্যাকেসিস ওয়ান এম এনে খাওয়ালেন। আর ফটিকবাবুর মা সকালবেলায় গা ঝাড়া দিয়ে উঠে চান-টান করে ঠাকুরপুজোয় বসে গেলেন। কে বলবে যে, তাঁর শক্ত অসুখ হয়েছিল।
এই ঘটনায় ত্রিভুবনবাবুর কিছু অখ্যাতি হল।
এরপর নরেনবাবুর বাবার হল কলেরা। ত্রিভুবন ডাক পেয়ে দেখতে গেছেন, সঙ্গে ওষুধের বাক্স নিয়ে ভুতো। ত্রিভুবন যে ওষুধটা দিতে গেলেন সেটা দেখে ভুতো চোখ কপালে তুলে বলল, “ও কী দিচ্ছ? ও খেলেই রুগির চোখ উলটে যাবে।”
ভুতকে পেল্লায় একটা ধমক দিয়ে ত্রিভুবন সেই ওষুধই দিলেন, আর সঙ্গে সঙ্গে নরেনবাবুর বাবা চোখ উলটে গোঁ-গোঁ করতে লাগলেন। যায়যায় অবস্থা।
ভুতো তাড়াতাড়ি বাক্স থেকে আর একটা শিশি বের করে দু’ফোঁটা খাইয়ে দিল। আর রুগি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এল। পরদিন থেকে একেবারে চাঙ্গা।
সেই থেকে ভূতোর ওপর ত্রিভুবন হাড়ে হাড়ে চটা।
শুধু ত্রিভুবনই নন, ভুতোর ওপর চটা আরও অনেকেই, কিন্তু সে কথা পরে হবে।
এ বাড়ির ছেলেপুলেরা ভুতোকে পেয়ে দারুণ খুশি। ভুতো চমৎকার ঘুড়ি লাটাই বানাতে পারে, পাখির খাঁচা বানাতে পারে, গাছের মগডালে উঠে ফলপাকুড় পাড়তে পারে। চমৎকার গল্প বলতে পারে, বাঁশি বাজাতে পারে, আরও অনেক কিছু পারে। কিন্তু তার যেটা সবচেয়ে বড় গুণ তা হল, পরিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ।
মাঝে-মাঝে যখন তার মাথায় পরি ভর করে, তখন সে অদ্ভুত-অদ্ভুত কথা বলে। তার চাউনিটা অন্যরকম হয়ে যায়। চেহারাটাও যেন পালটে যায় তখন।
রায়বাড়ির একতলায় কোণের দিকে পড়ার ঘর। সন্ধেবেলা সেখানে ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে পড়তে বসে। অনাদি-মাস্টার পড়াতে আসেন। দুর্দান্ত রাগি আর রাশভারী অনাদিবাবুকে শুধু ছাত্ররাই নয়, ছাত্রদের বাবারাও ভয় পান।
আজ অনাদিবাবু কোথায় শ্রাদ্ধের নেমন্তন্ন খেতে গেছেন। সুতরাং আজ ছুটি। পড়ার ঘরে বসে মন্টু, গদাই, লালু, হৈমন্তী, কাজু, টিকলি, নিমাই, সব কিছুক্ষণ গলা ছেড়ে পড়ার পরই ভুতোকে চেপে ধরল, “ভুতোদা, একটা গল্প বলো।”
ভুতো বই-খাতা সরিয়ে রেখে একগাল হেসে বলল, “গল্প শুনবে? কিন্তু দাঁড়াও, আমার মাথার মধ্যে কেমন একটা রিমঝিম হচ্ছে।”
সবাই চেঁচিয়ে উঠল, “পরি! পরি!”
ভুতো হাত তুলে সবাইকে চুপ করতে ইঙ্গিত করল, তারপর চোখ বুজে বসে রইল।
হঠাৎ দেখা গেল ভুতোর মুখটা কেমন যেন স্বপ্ন-স্বপ্ন হয়ে যেতে লাগল। এমনিতে ভুতো দেখতে কালো আর রোগা! মুখোনা শুকনো আর লম্বামতো। কিন্তু এখন তার মুখ দিয়ে যেন একটা আলোর আভা বেরোতে লাগল।
সে বিড়বিড় করে বলল, “দাদামশাই ভূতের যন্তরটা তৈরি করে ভাল কাজ করেননি। অনেক ভোগাবে।”
লালু বলে উঠল, “ভূতের যন্ত্র? আরে, সেটা তো আমি নিজে চোখ রেখে দেখেছি, কিছু দেখা যায় না।”
ভুতো মাথা নেড়ে বলল, “এখনও দেখা যায় না বটে, কিন্তু একদিন দেখা যাবে, তখন বিপদ হবে। আর দুলাল সেনকে নিয়েও বিপদ হবে।”
লালু ফের বলল, “কিন্তু দুলাল সেন-স্যার তত ভাল লোক।”
ভুতো মাথা নেড়ে বলল, “ভাল বলেই তো বিপদ।”
সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল।
গদাই বলল, “কিন্তু দুলাল সেন স্যার তো সেই কামারপাড়ায় থাকেন। তাঁকে নিয়ে আমাদের বিপদ কিসের?”
ভুত ফের মাথা নেড়ে বলল, “মোটেই কামারপাড়ায় থাকেন না। তিনি দাদামশাইয়ের ল্যাবরেটরিতে থানা গেড়েছেন।”
ল্যাবরেটরিটা বাচ্চাদের কাছে একটা দারুণ কৌতূহলের জায়গা। যেখানে নানারকম মজার কাণ্ডকারখানা হয় বলে তারা শুনেছে। কিন্তু তালা দেওয়া থাকে বলে তারা ঢুকতে পারে না। ভুবন রায়ের কঠিন নিষেধাজ্ঞা আছে, বাচ্চারা যেন খবার কেউ ওখানে না ঢোকে। সেখানে দুলাল সেন আছে শুনে বাচ্চারা ফের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল।
হঠাৎ লালু লাফিয়ে উঠে বলল, “চল তো দেখে আসি। দুলাল স্যার ভীষণ ভালমানুষ। আমরা বললেই ঢুকতে দেবেন।”
একথায় সবাই হইহই করে উঠে পড়ল।
ধ্যান ভেঙে গেলে ভুতোও বাচ্চাদের মতোই হয়ে যায়। তখন আর সে অদ্ভুত অদ্ভুত কথা ভাবেও না, বলেও না। বাচ্চাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে ভুতো চোখ চাইল। তার ধ্যানটা কেটে গেছে।
“ভুতোদা, তুমিও চলো।”
“চলো।”
টিকলি সাবধান করে দিয়ে বলল, “কিন্তু পা টিপেটিপে, দাদু টের পেলে আস্ত রাখবে না।”
সামনে ভুতো, পিছনে সারবন্দী ছেলেমেয়েরা খুব সাবধানে চুপিচুপি ঘর থেকে বেরিয়ে অন্ধকার বাগানে নেমে পড়ল। সামনে ঝোঁপঝাড়, ঘাসজমি, খানাখন্দ। ল্যাবরেটরিটা বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা তফাতে।
ল্যাবরেটরির কাছে এসে ভুতো বলল, “দাঁড়াও, আগে জানলা দিয়ে ভিতরে কী হচ্ছে দেখে নিই।”
বাচ্চারা ছড়িয়ে পড়ে এক-একটা জানলা দিয়ে ভিতরটা দেখার চেষ্টা করল।
কাজু টিকলিকে একটা ঠেলা দিয়ে বলল, “ওই দ্যাখ, দুলাল স্যার বেলুন ফোলাচ্ছেন।
“বেলুন?” বলে টিকলি বড় বড় চোখে চেয়ে দেখল।
বাস্তবিকই দেখা গেল, দুলাল সেন নিবিষ্ট মনে একটা সিলিন্ডারের মুখে একটার-পর-একটা বেলুন লাগিয়ে ফুলিয়ে তুলছেন। তারপর সেগুলোর মুখে সুতো বেঁধে ছেড়ে দিচ্ছেন। বেলুনগুলো গিয়ে সিলিং-এ ঠেকে জমা হচ্ছে।
.
এই ল্যাবরেটরিতে কেন তাঁকে আনা হয়েছে এবং এখানে তাঁকে কী কাজ করতে হবে তা দুলাল সেন খুব ভাল বুঝতে পারেননি। ভুবন রায় তাঁকে অনেকক্ষণ ধরে বিজ্ঞান-বিষয়ক গবেষণার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এক দীর্ঘ বক্তৃতা শুনিয়েছেন। কিন্তু শোনালে কী হবে, কানের গুণে দুলাল সেন তাঁর বিন্দুবিসর্গও বুঝতে পারেননি।
ভুবন রায় বললেন, “নিত্যনতুন আবিষ্কার করতে হবে।”
দুলাল সেন শুনলেন, “নিত্যানন্দকে ঘর পরিষ্কার করতে হবে।”
ভুবন রায় বললেন, “বিজ্ঞান নিয়েই পড়ে থাকুন, বিজ্ঞানের বান ডাকিয়ে দিন। দুলাল সেন শুনলেন, “শিকনি ঝেড়ে মরে থাকুন, শিকদারকে চাঁদে পাঠিয়ে দিন।”
কথাগুলোর অর্থ হয় না। তবে দুলাল সেন এটা টের পান যে, কানে তিনি কিছু খাটো। তাই যা শোনেন তাই তিনি বিশ্বাস করেন না। ভেবে ভেবে অর্থ বার করার চেষ্টা করেন। এই যেমন ঘর পরিষ্কার করতে হবে’ কথাটা, এটাকে নিয়ে অনেক ভেবে বুঝলেন, এখানে নিশ্চয়ই ল্যাবরেটরি ঝটপাট দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। বিশেষ করে নিত্যানন্দ নামে কাউকে তিনি চেনেনও না। শিকনি ঝেড়ে মরে থাকুন, শিকদারকে চাঁদে পাঠিয়ে দিন’- এ কথাটারও তেমন কোনও অর্থ দাঁড়াচ্ছে না। কিন্তু ভাবতে ভাবতে একটা অর্থ তিনি ঠিকই বের করে ফেলবেন।
তবে ভুবন রায়ের লোকজন গিয়ে যখন তাঁকে তাঁর বাসা থেকে একরকম তুলে আনল, তখনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তবে তিনি এতে খুশিই হয়েছিলেন। বাড়িওয়ালা কিছুদিন যাবৎ তাঁর ওপর খুব হামলা করছিল।
কিন্তু যেখানে এনে তাঁকে ফেলা হল, সে জায়গাটা দেখে তিনি খুব অবাক। এ যে এক ল্যাবরেটরি! বিশাল ঘর। নানা যন্ত্রপাতি। তারই এক কোণে একটা চৌকি পাতা। একধারে উনুন আছে। দিব্যি থাকার জায়গা। দুলালবাবু খুশিই হলেন ব্যবস্থা দেখে। রাঁধেন বাড়েন খান ঘুমোন। কোনও চিন্তা নেই। তবে মাঝে মাঝে তাঁর মনে হয়, নিত্যানন্দকে দিয়ে কি ঘর পরিষ্কার করানো দরকার? শিকনি ঝেড়ে মরে থাকা কি তাঁর পক্ষে সম্ভব? আর শিকদারকে চাঁদে পাঠানোর বন্দোবস্তও তো কিছু করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
সেদিন সকালে ভুবন রায় ল্যাবরেটরিতে এসে অনেকক্ষণ ধরে একটা কিছু আবিষ্কার করার চেষ্টা করলেন। দুলাল সেন মিটমিট করে চেয়ে দেখলেন। তারপর ভুবন রায় তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা, বেগুনের মধ্যে হরমোন ইনজেকশন করলে কী হয়?”
দুলালবাবু শুনলেন, “বেলুনের মধ্যে গণ্ডগোল পাকিয়ে দিলে ঘি হয়?”
কথাটা দুলাল সেন স্বীকার করে নেবেন কি না তা মাথা চুলকে অনেকক্ষণ ভাবলেন। ভুবন রায় তাঁর আশ্রয়দাতা, কাজেই উনি কিছু জিজ্ঞেস করলে আন্দাজে একটা জবাব দিতেই হয়।
দুলাল সেন মিনমিন করে বললেন, “হতেও পারে।”
কিন্তু তারপর থেকে আকাশ-পাতাল ভেবেও তিনি বুঝতে পারছেন না বেলুন থেকে কী করে ঘি হবে, আর বেলুনের মধ্যে গণ্ডগোলই বা পাকানো যায় কী ভাবে?
দুলালবাবু তবু বাজার থেকে একগাদা বেলুন কিনে আনলেন এবং তাদের মধ্যে নানারকম গণ্ডগোল পাকানোর কথা ভেবে দেখলেন। অবশেষে তাঁর মনে পড়ল, ছেলেবেলায় তাঁর খুব গ্যাস-বেলুন ওড়ানোর শখ ছিল। কিন্তু বড্ড গরিব ছিলেন বলে তাঁর বাবা গ্যাস-বেলুন কিনে দিতে পারেননি। এতকাল পরে এতগুলো বেলুন একসঙ্গে পেয়ে তাঁর খুব ইচ্ছে হল, গ্যাস-বেলুন ওড়াতে।
গ্যাসের অভাব নেই। মস্ত একটা সিলিন্ডার মজুত রয়েছে।
দুলালবাবু রাত্রিবেলা মহানন্দে বেলুনে গ্যাস ভরে-ভরে মুখ বেঁধে ছেড়ে দিচ্ছিলেন আর সেগুলো গিয়ে সিলিঙে ঠেকে জমা হচ্ছিল।
“বাঃ, বাঃ, চমৎকার। বেলুনের মধ্যে দিব্যি গণ্ডগোল পাকিয়ে উঠছে। এবার ঘি নিয়েই যা একটু মুশকিল…!”
হঠাৎ দুলালবাবুর চোখে পড়ল, কাঁচের শার্শির বাইরে সারি সারি মুখ। সবাই তাঁর দিকেই চেয়ে আছে।
আচমকা এই দৃশ্য দেখে ভিতু মানুষ দুলাল সেন ভয় খেয়ে “বাপ রে” বলে এমন একটা লাফ মারলেন যে, তিনিও প্রায় গ্যাস-বেলুনের মতোই সিলিঙে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছিলেন। অল্পের জন্য মাথাটা বেঁচে গেল।
এই দৃশ্য দেখে বাইরে সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। শুধু মন্টুই ভীষণ বেজার হয়ে পড়ল। কারণ স্কুলে সে হল হাই জাম্পের চ্যাম্পিয়ান। এই তো মোটে দু’দিন আগে স্কুলের অ্যানুয়াল স্পোর্টসে সাড়ে পাঁচ ফুটের ওপর লাফিয়ে ফাস্ট প্রাইজ পেয়েছে। কিন্তু দুলালবাবুর মতো বৃদ্ধ মানুষকে দাঁড়ানো অবস্থায় যতটা লাফিয়ে উঠতে দেখল, তাতে তার চোখ ট্যারা। তার হিসেবমতো দুলাল-স্যার কম করেও পৌনে ছ’ফুট লাফিয়েছেন। দুলাল স্যার যদি চেষ্টা করেন
তা হলে তো অনায়াসে সাড়ে ছয় থেকে সাত ফুট লাফাতে পারবেন।
লালু মন্টুকে কনুইয়ের গুঁতো দিয়ে বলল, “মন্টু দুলাল স্যারের কাছে তোর এখনও অনেক কিছু শেখার আছে।”
মন্টু গম্ভীর হয়ে বলল, “হুঁ।”
দুলালবাবুও একটা লাফ দিয়েই বুঝতে পারলেন যে, তিনি বেশ ভালই লাফাতে পারেন। তাঁর হাঁটু ঝনঝন করল না, কোমর কনকন করল না, মাথা বনবন করল না। নিজের এই লাফ দেখে তিনি নিজেই বেশ খুশি হলেন। এবং আর একবার লাফাবেন কি না ভাবতে লাগলেন। আসলে লাফ দিতে গিয়ে তিনি কেন লাফিয়েছেন সেটাই বেবাক ভুলে গেছেন। তিনি যে ভয় পেয়েছেন সেটাও তাঁর মনে পড়ল না। তিনি মালকোঁচা মেরে দুটো বৈঠকি দিয়ে ফের লাফানোর তোড়জোড় করতে লাগলেন।
মন্টু মুখ চুন করে বলল, “এবার যদি স্যার লাফান তা হলে খুব খারাপ হবে।”
লালু পালটা প্রশ্ন করল, “কী খারাপ হবে?”
মন্টু বলল, “বুড়ো বয়তে এত লাফঝাঁপ কি ভাল? কোমরে চোট লাগতে পারে। আমাদের উচিত স্যারের লাফ বন্ধ করা।”
লালু মাথা নেড়ে বলল, “মোটেই সেটা উচিত হবে না। দুলাল স্যারের যা এলেম দেখছি, তাতে ওঁকেই এখন এ-জেলার চ্যাম্পিয়ান বলতে হয়। তুই তো ওঁর কাছে নস্যি।”
ল্যাবরেটরির ভিতরে দুলাল স্যার শেষ অবধি দ্বিতীয় লাফটা দিতে পারলেন না। সিলিন্ডারের মুখে একটা বেলুন পরানো ছিল। সেটা বেড়ে বেড়ে বিশাল আকৃতি ধারণ করে অবশেষে দুম করে ফাটল। আর ছেঁড়া রবার ছিটকে এসে লাগল দুলাল-স্যারের নাকে।
ঘটনাটা কী ঘটেছে তা দুলাল স্যার বুঝতে পারলেন না। কিন্তু নাকে ভুতুড়ে ঘুসির মতো একটা ঘা খেয়েই তিনি ফের “বাবা গো” বলে চিৎকার করে মাটিতে বসে পড়লেন।
এই দৃশ্য দেখে ভুতো আর থাকতে পারল না। জানলার পাল্লা একটানে খুলে সে ভিতরে ঢুকল। তারপর দুলাল-স্যারকে তুলে একটা চেয়ারে বসিয়ে একটু তুলো ভিজিয়ে নাকে ধরল।
দুলাল-স্যার মিটমিট করে চেয়ে দেখলেন, একগাদা বাচ্চা তাঁকে ঘিরে ফেলেছে। মুখগুলো এবার তাঁর খুবই চেনা-চেনা ঠেকল।
মণ্ট খুবই গম্ভীর হয়ে বলল, “স্যার, আপনার কিন্তু লাফালাফি করা উচিত নয়।”
দুলাল স্যার শুনলেন, ‘হারাকিরি করা উচিত হয়।’
তিনি সবেগে মাথা নেড়ে বললেন, “খুব খারাপ। হারাকিরি করা খুব খারাপ।”
এতগুলো বাচ্চাকে পেয়ে দুলাল স্যার খুবই খুশি হয়ে উঠে পড়লেন। সবাই চেঁচাতে লাগল, “স্যার আমরা বেলুন নেব।”
“বেগুন খাবে? তা এই অসময়ে বেগুন কোথায় পাব? তার চেয়ে বরং একটা করে বেলুন নাও সবাই।”
বেলুন পেয়ে বাচ্চারা দারুণ খুশি হয়ে চেঁচামেচি করতে লাগল, এই, আমারটা সবচেয়ে বড়। ইঃ, আমারটা বলে কত সুন্দর। উঃ, তোরটা তো কেলেমার্কা, আমারটা কেমন লাল টুকটুকে। তোরটা তো লাউয়ের মতো, আমারটা কী সুন্দর একটা বলের মতো!
বাচ্চাদের মধ্যে যারা একটু বড় তারা বেলুন নিয়ে মাতামাতি না করে ল্যাবরেটরির বিভিন্ন জিনিস ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। কেউ বকযন্ত্র নাড়াচাড়া করতে লাগল, কেউ বা বুনসেন বানার জ্বালানোর চেষ্টা করতে লাগল, কেউ বিভিন্ন শিশি থেকে নানারকম কেমিক্যাল একটা টেস্ট-টিউবে ঢেলে মেশাতে লাগল।
গদাই আর নিমাই বিজ্ঞানের ভাল ছাত্র। তারা নানারকম-এক্সপেরিমেন্ট করতে লেগে গেল।
মন্টু তার টেস্ট-টিউবে রাজ্যের কেমিক্যাল ঢেলে বুনসেন বানারে চাপিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলল, “এইবার আমি এমন একটা জিনিস আবিষ্কার করব না যে, পৃথিবীতে হই-চই পড়ে যাবে।”
জিনিসটা বুনসেন বানারে চাপানোর পরই একটা কটু গন্ধ ছাড়তে শুরু করল। বাচ্চার সবাই নাকে চাপা দিয়ে ‘ইঃ, এঃ” করতে লাগল।
কিছুক্ষণ বাদে একটা নীলাভ ধোঁয়া গলগল করে বেরোতে লাগল টেস্ট-টিউব থেকে। সারা ঘর নীল ধোঁয়ায় ভরে যেতে লাগল।
ভুতো চেঁচিয়ে বলল, “পালাও! পালাও!” বাচ্চারা দুদ্দাড় করে দৌড়ে পালাতে লাগল।
হঠাৎ দুম শব্দ করে টেস্ট টিউবটা ফেটে চারদিকে একটা নীল আলো চমকে উঠল।
দুলাল স্যার অনেকদিন হল পৃথিবীর কোনও শব্দই ভাল শুনতে পান না। কিন্তু টেস্ট টিউব ফাটবার আওয়াজটা তিনি আজ পরিষ্কার শুনতে পেলেন। শব্দটা এত তীক্ষ্ণ যে, তাঁর কান তো খুলে গেলই, ফের শব্দের চোটে তালাও লেগে গেল।
চারদিকে নীল ধোঁয়া আর কটু গন্ধটা টের পেয়ে দুলাল স্যার সচকিত হলেন। তাঁর আর একবার লাফ দেওয়ার ইচ্ছে হল। এবারও অবশ্য ভয়ে। কিন্তু দিতে পারলেন না!
কেমন যেন অবসন্ন ঘুম-ঘুম একটা ভাব ভর করল শরীরে। তিনি ধীরে ধীরে মেঝের ওপর বসে পড়লেন। তারপর হাই তুলতে লাগলেন। তারপর ধীরে ধীরে শুয়ে পড়লেন মেঝের ওপর।
বাচ্চারা সবাই ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে পালাল।
শুধু ভুতো, মন্টু আর গদাই একটু দুরে দাঁড়িয়ে কাণ্ডটা দেখতে লাগল।
মন্টু বলল, “কী হবে ভুতোদা?”
ভুতো মাথা নেড়ে বলল, “কিছু বুঝতে পারছি না। তুমি কিসের সঙ্গে কী মিশিয়েছিলে মনে আছে?”
“না তো! শিশির গায়ে লেখাগুলোও পড়িনি। আন্দাজে উলটোপালটা মিশিয়ে দিয়েছি।”
গদাই বলল, “দুলাল-স্যার যদি মরে যান, তা হলে কী হবে?”
মন্টু ভয়ে-ভয়ে বলল, “যাঃ, মরবেন কেন?”
গদাই গম্ভীর হয়ে বলল, “দেখছিস না, এখনও কেমন গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে!”
মন্টু খুব ভয় পেয়ে গম্ভীর হয়ে গেল। তারপর ফিসফিস করে বলল, “আমাদের উচিত এখন পালিয়ে যাওয়া।
গাদাই মাথা নেড়ে বলল, “পালিয়ে লাভ নেই। দাদু ঠিক ধরে ফেলবে। এই কুকীর্তি কার যখন জানতে চাইবে, তখন তোর নাম বলা ছাড়া উপায় নেই।”
মন্টু কাঁচুমাচু হয়ে বলল, “দাদু মেরে ফেলবে তা হলে।”
গদাই গম্ভীর হয়ে বলল, “তা হলে তোর টপ মার্বেলটা দিবি? আর তিনফলা ছুরিটা। আর লাটাইটা। আর….।”
মন্টু ঘাড় নেড়ে বলল, “দেব।”
রামলালের ভারি রাগ হচ্ছিল। একে তো বাবা ভুবন রায়ের কাছে বকুনি খেয়েছেন, তার ওপর ল্যাবরেটরিতে ভূত দেখে দৌড়, পা মচকানো এবং অবশেষে জানতে পারা যে, ভূত নয়, নোকটা নিতান্তই দুলাল সেন। নিজের বাবার ওপর রাগ করার সাহস তাঁর নেই। কিন্তু রাগটা ভিতরে বেশ পাকিয়ে উঠছে। কারও ওপর যদি এখনই ঝাল না ঝাড়া যায় তাহলে এই রাগটাই রাত্তিরে পেটে অম্বলে পরিণত হয়ে কষ্ট দেবে। রামলালের ওই এক রোগ, রাগ হলেই অম্বল হয়ে পেটে ভীষণ ব্যথা হয়। অবশ্য রাগটা প্রকাশ করতে পারলে আর কোনও ভাবনা নেই।
ঠাকুমা চুন-হলুদ দিয়ে যখন তাঁর পায়ে পট্টি বেঁধে দিচ্ছিলেন, তখন রামলাল কটমট করে তাঁর ভাই নন্দলালের দিকে তাকালেন। নন্দলাল সাধু মানুষ, একাবোকা থাকেন, সাত চড়ে রা কাড়েন না। সুতরাং রাগ দেখানোর উপযুক্ত লোক।
রামলাল তাই হঠাৎ ধমক দিয়ে বললেন, “অ্যাই নন্দ, খুব তো সায়েন্স পড়েছিলি। বল তো এইচ-টু-এস-ও-ফোর কিসের ফর্মুলা?”
নন্দবাবুর অবস্থাও বিশেষ ভাল নয়। ভুতুড়ে ক্লাবে হেলমেট ফেলে এসেছেন, পায়ে নতুন জুতোর ফোস্কা, খিদে পেয়েছে। তিনি দাদার দিকে চেয়ে উদাস গলায় বললেন, “সায়েন্স! আমি এখন সায়েন্সের অনেক ঊর্ধ্বে উঠে গেছি। সায়েন্স ফায়েন্স কিছু নয়! ওসব এলেবেলে জিনিস, বুজরুকি।”
রামলাল প্রকাণ্ড একটা ধমক দিয়ে উঠলেন, “যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা! সায়েন্স কিছু নয়। যত কিছু তোমার ওই সব ভণ্ডামিতে! আস্পদ্দাটা তো বেশ বেড়ে গেছে দেখছি।”
নন্দবাবু একটু থতমত খেয়ে গেলেন। এ বাড়ির নিয়ম হল, জ্যেষ্ঠকে সবসময়ে সম্মান দিতে হবে, তা তিনি কোনও অন্যায় কাজ করলেও। দুর্বিনীত ব্যবহার করা চলবে না। নন্দবাবু তাঁর দাদার সঙ্গে ছেলেবেলায় বিস্তর ঝগড়া কাজিয়া, মারপিট করেছেন বটে কিন্তু বড় হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা কননি। তার ওপর তিনি এখন হাফসন্ন্যাসী। শরীরে রাগ বলে বস্তুটিই নেই।
নন্দবাবু নিমীলিত নয়নে সামনের দেওয়ালটার দিকে চেয়ে বললেন, “সায়েন্স টায়েন্স আর আমার লাইন নয় দাদা। আমি তার চেয়ে ঢের মূল্যবান সম্পদ পেয়েছি।”
রামলাল তুবড়ির মতো জ্বলে উঠে বললেন, “কী! সায়েন্সের এত বড় অপমান! সায়েন্সের চেয়ে বড় সম্পদ পেয়েছিস! গবেট, গোমুখ কোথাকার। পয়সা খরচ করে ওকে লেখাপড়া শেখানো হলো, তা সব ভস্মে ঘি ঢালা!”
‘কিন্তু দাদা।”
“চোপ রও বেয়াদব! ফের মুখে মুখে কথা কওয়া হচ্ছে! যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা! সারাদিন তুই নীচের ঘরে বসে করিস কী? মারণ-উচাটন আর ভূক্ত নামানো? নাকি জ্যোতিষী? বিজ্ঞানের চর্চা করে দুনিয়ার মানুষ যখন তাজ্জব তাজ্জব জিনিস আবিষ্কার করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে তখন তুই ঘরের কোণে বসে ওসব আনসায়েন্টিফিক মারণ-উচাটন করছিস! তোর লজ্জা হয় না!”
বলতে বলতে রামলাল স্পষ্টই টের পাচ্ছিলেন, তাঁর পেটের অম্বল ভাবটা কেটে যাচ্ছে। বেশ চনমনে লাগছে তাঁর। আর দু-চার মিনিট চালাতে পারলেই কেল্লা ফতে।
নন্দবাবু কী একটা বলতে যাচ্ছিলেন, রামলাল গর্জন করে উঠলেন, “ফের মুখে-মুখে কথা বলা হচ্ছে! উনি ভৌত ক্লাবে ভর্তি হয়েছেন! এঃ, একেবারে গোল্লায় যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। তার ওপর আবার জ্যোতিষী! আহাম্মক কোথাকার!”
নন্দবাবু আর রা কাড়লেন না, মাথাটি নিচু করে নিজের ঘরে ফিরে এলেন। ওদিকে রামবাবুর রাগটা জল হয়ে গেছে ‘পেটটা হাল্কা লাগছে’ অম্বল হওয়ার ভয় আর নেই।
নন্দবাবু নিজের ঘরে চিতপাত হয়ে শুয়ে অনেকক্ষণ উদাস নয়নে চেয়ে রইলেন। একটু আগে দোতলা থেকে নামবার সময় রান্নাঘর থেকে নানা সুখাদ্য রান্নার গন্ধ আসছিল। এ বাড়ির পাঁচক ঠাকুরটি নতুন। লোকটা হরেকরকম রান্না জানে বলে শুনেছেন নন্দবাবু। কখনও খাননি। নিজের রান্না নন্দবাবু নিজেই বেঁধে নেন। ঘরের কোণে স্টোভ আছে। কিন্তু আজ একাদশী বলে নন্দবাবুর রান্নার ঝামেলাও নেই। এবেলা সাপ্ত ভেজানো খাবেন। মুশকিল হল, ভাল রান্নার গন্ধ পাওয়ার পর থেকেই তাঁর আর সাগু গেলার ইচ্ছে হচ্ছে না। বাড়ির পুরনো চাকর রাখাল এসে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল। পুরনো লোক বলে তার ভারি দাপট। কাউকে তেমন গ্রাহ্যটাহ্য করে না।