অগ্নিমূল্য
এই যে ঘোতনের বাবা চটপট বাজারে যাও দিখি নি , আজকে তোমার শালীর ছেলে আসবে।
শোনো টুঙ্কা নিরামিষ খেতে ভালোবাসে। অনেক সবজি আনবে।কিপটর মতো এনো না।আগে কত সবজি আনতে এখন দুশো ,তিনশো গ্রাম কিনে আনছ। ভালো তো পেনশন পাও।
শোনো গিন্নি আমার কোনো শালী নেই, তোমার বোনপো আসবে থলে নিয়ে বাজার করে এসো।দেখো কেমন ছ্যাঁকা খাও।
ষাঁড়ের মতো গিন্নীর চিৎকার!হাড় জ্বালানি কিপটে বুড়ো!
কর্তা কবিতা লিখছিলেন সেটা সুর করে পড়তে থাকেন।
সবজি খাওয়া খুবই ভালো
সুস্থ থাকে তন,
সারা সনে কত সবজি
ফুরফুরে দেখ্ মন।।
খাদ্যপ্রাণে(ভিটামিনে) ভর্তি থাকে
হয়না কোনো রোগ,
লিভার পিত্তথলি সুস্থ বলে
পারছি করতে ভোগ।
সস্তা বলে কিছুইতো নেই
সর্ষে পোস্ত পাক,
নটে,লেটুস, ধনে,কলমি
সবই দামী শাক।
প্রোটিন খাবার সেটা’ও আছে
রাজমা ,তড়কা পাই,
সয়াবিনের তরকারিটা
চেটেপুটে খাই।
মাটির তলার সবজি গুলো
মধুমেহতে বাদ
সবজি সিদ্ধ বিটলবনে
লাগে ভালোই স্বাদ।
আকাশ ছোঁয়া সব জিনিসের
বর্তমানে দাম,
শরীর সুস্থ রাখে বলে
নিরামিষের নাম।
পকেট খালি সব সময়ে
বেশি কিম্বা কম,
সবজি খেলে রোগটা অল্প
বলেছে আমার মম্।
গিন্নির চিৎকার থামবে তুমি!
কর্তা ফোঁস করে বলে,এই দুমুল্যের বাজারে লোককে ডেকে ডেকে খাওয়াচ্ছে।
জানো লংকা তিনশো টাকা,
টমেটো দুশো, শশা ষাট ,গাজর তিনশো, বেগুন আশি টাকা করে কিলো। বাঁধাকপি ফুলকপি চল্লিশ করে।কি কিনব!যা ধরছি সব ছ্যাঁকা দিচ্ছে।
শোনো বর এই যে কবিতাটা পড়লে , শুনলাম তো,কত গুণ বলছিলে সব শুনেছি।
শুনেছ !,মিথ্যে বলছ গিন্নি!
তুমি তো আমার পিণ্ডি চটকাতে ব্যস্ত ছিলে।
গিন্নি বলে,যাবার সময় বার্নলটি নিয়ে যেও।হাতে ছ্যাঁকা লাগলে লাগিয়ে নিও।
মশকরা করছ!এই পেনশনের টাকায় এই সংসার চালাচ্ছি।কম পরিমাণে আনি প্রশ্ন করছিলে না!কারণ অগ্নিমূল্য দাম ।টাকার সমতা রক্ষা করতে সব খরচ বুঝে করতে হয়! কেন্দ্রীয় সরকারের কবে যে টনক নড়বে।
গিন্নি বলে সঙ্গে করে কিছু নিয়ে যাব না।খেয়েই মরি।
বুঝবে গিন্নি যখন থাকবে না , বুঝবে কত ধানে কত চাল!
অগত্যা কর্তা বাজারে গিয়ে কটা সবজি নিয়ে বাড়ি ফেরে।জানে বাড়িতে ঢুকলে চিৎকার করবে কুকুরের ল্যাজের মতো লাউশাক,ঘাটের মড়ার মতো শশা ।
বাজার নিয়ে বাড়িতে ঢোকবার আগে মাসতুতো ভাইকে দেখতে পেয়ে বলে একটু ধরে বাড়িতে দিয়ে আয়।আর বলবি দাদার খুব শরীর খারাপ।ধরে নিয়ে চল। এই সব বাজার দেখলে মাথায় ঘোল ঢালবে।
গিন্নি এবার বাজারে চলে!
গিয়ে কি কিনবে!অগ্নিমূল্য দাম।
বোনপো সেই পুরুলিয়া থেকে এত বাড়ির চাষের সব সবজি এনে বলে–মাস্যী কুই গেল্যি,ইদিক পানে আয় ক্যানে।কে আসছেক দ্যাখ।
মেস্যো কাইলতো ফুন কইরে বুললক সব্জির খুব দাম বটেক।দেখ ক্যানে কুত তাজ্জা সবজি আনছিক।
মাসী ,মেশো খুব খুশি।
মেশো বলে কয়েকটি দিন থেকে যা।বলো গিন্নিএত সব্জি কে খাবে।
বৌ তো কড়মড় করে।কি লোক রে বাবা, কাল কত কথা বলল ।আজ দেখো কি বলছে।
গিন্নি ও ভাবে সত্যি আজ বাজারে গিয়ে বুঝলাম সব কিছুর কি দাম রে বাবা!
ঘরে থাকি তো বাইরে বার হলে বাইরের জগৎ এ কি চলছে টের পাওয়া পেতাম।
বুড়ো বুড়ির দিন এইভাবে খুনসুটি করে কাটছে।
দুজনে মিলে ওই শুনুন গান ধরেছেন
“ওরে ভাই লেগেছে লেগেছে আগুন”