সেইসব দিন – ১
আমাকে কোনও একদিন
কোনও বরফের দেশে, নির্বাসনে পাঠাবে ভারতবর্ষ।
জমে যেতে যেতে একটু তাপ চাইবো, সামান্য উত্তাপ,
দূর পরবাসে কে আছে যে দেবে কিছু!
স্মতিই যদি একমাত্র বাঁচায় আমাকে।
সেইসব দিনই যদি উত্তাপ দেয়, দেবে।
আমার মধ্য কলকাতার আকাশ ছাওয়া
বেড়াল-বেড়াল–বাড়িটাতে,
বিকেল বেলা সুস্মিতা আসতেন কিছু না কিছু নিয়ে,
কোনওদিন রাবড়ি, কোনওদিন ধনে পাতার আচার।
গল্প বলতেন জীবনের, পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে কী করে তিনি তিনি হলেন।
স্বাতী স্বপ্নার তুমুল তারুণ্য, উরি উচ্ছাস,
ঢোলের মতো বাজতো ঘরদোরে।
শর্মিষ্ঠা নামের মেয়ে কত কত কবিতা আওড়ে
সন্ধ্যেগুলো উজ্জ্বল করেছে।
বড় ভালোবেসেছিল শর্মিলা, বড় স্বজন ছিল শর্মিলা।
বর্ধমান থেকে জয়প্রকাশ চলে আসতেন,
হাতে সীতাভোগ, হাতে মিহিদানা, মুখে সলজ্জ সম্ভাষণ।
হঠাৎ উদয় হয়ে সকৌতুকে জীবন বলতো রঞ্জন।
সুমিতাভে মগ্ন হওয়া সেই তীব্র বর্ষাগুলো।
আর সেইসব সুব্রতময় দিন।
বরফে জমতে থাকা আমার শীতার্ত নির্বাসনে
সেইসব দিনই যদি উত্তাপ দেয় দেবে।
জঙ্গিপুর থেকে গিয়াসউদ্দিন আসতেন,
চব্বিশ পরগনা থেকে মোজাফফর,
আমাদের চোখের সরোবরে স্বপ্ন সাঁতার কাটতো,
অবিশ্বাস্য সব সুন্দরের স্বপ্ন।
দেশ থেকে দাদা আসতো একতাল শৈশব নিয়ে,
কাঁধে করে উঠিয়ে আনতে দেশের বাড়ি,
দাদার গা থেকে গন্ধ বেরোতো হাসনুহানার।
হাসনুহানার ওই গন্ধই যদি উত্তাপ দেয়, দেবে।
দূর পরবাসে জমে জমে বরফ হতে থাকা
আমাকে কে বাঁচাবে আর,
যদি স্মৃতিই না বাঁচায়।