রাত বারোটা কি দেড়টায় কবিতার খাতা খুলতেই বাইরে
কে আমার নাম ধরে তিনবার ডাকল?
গলা চিনতে ভুল হবার কথা নয়, তবু একবার কেঁপে উঠি
এই তো তার আসবার সময়, বরাবরই তো সে রাত্রির রুটিনে
পদাঘাত করে এসেছে
দুনিয়ার সমস্ত পুলিশ তাকে কুর্নিশ করে, রিকশাওয়ালারা ঠুং ঠুং
শব্দে হুল্লোড় তোলে
গ্যারাজমুখী ফাঁকা দোতলা বাসের ড্রাইভার তার সঙ্গে
এক বোতল থেকে
চুমুক দেয়
উঠে গিয়ে বারান্দায় উঁকি মেরে বলি, শক্তি, চলে এসো,
দরজা খোলা আছে
খাকি প্যান্ট ও কালো জামা, মাথার চুল সাদা, মুঠোয়
সিগারেট ধরা
শক্তি একটু একটু দুলছে, জ্যোৎস্না ছিন্নভিন্ন করে হেসে
উঠল
ঠিক যেমন রূপনারান নদীর তীরে দুরন্ত ছোটাছুটির সময়
হেসেছিল
ঠিক যেমন হেসাডির বাংলোয় সর্বনাশ তুচ্ছ করে হেসেছিল
মুখ তুলে বলল, কবিতা লিখছিলে, সুনীল? না, লিখো না,
লিখো না, আমি লিখছি না, তুমিও লিখবে না।
এমন কিছু পান করিনি যে আমার দৃষ্টি বিভ্রম হবে,
হলোগ্রাম দেখব
কোথায় শক্তি? মাঝরাতের রাস্তা শুনশান, অতি নিঃসঙ্গতার
মতন মোহময়
শক্তি আর কখনও আসবে না, যখন তখন এসে রাম চাইবে না,
তা কি আমি জানি না?
আবার ফিরে আসি কবিতার খাতার কাছে, কলম তুলে নিই
আঙুলে
পরক্ষণেই সিগারেট ধরাতে গিয়ে দপ দপ করে আগুন, মুখের
মধ্যেও টের পাই আগুন
সমস্ত শব্দের মাত্রা ও ছন্দ হারিয়ে যায়, সাদা পৃষ্ঠা জ্বলজ্বল
করে
শক্তি নেই, কবেকার সেই দু’জনে মিলে লেখা লেখার খেলা
হঠাৎ শেষ হয়ে গেল
আমি চুপ করে বসে থাকি, রাত্রি ঝরে পড়ে, যেন উড়ছে
আমাদের লেখাগুলির ছিন্ন পাতা
আমি চুপ করে বসে থাকি, সাদা দেওয়াল, কানে তালা
লাগিয়ে দিচ্ছে স্তব্ধতার বাজনা
খাকি প্যান্ট ও কালো জামা, সাদা চুল, মুঠোয় সিগারেট ধরা
শক্তি একটু একটু দুলছে…