Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » লহ প্রণাম || Saswati Das

লহ প্রণাম || Saswati Das

লহ প্রণাম

ঋষি কবি,কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে লেখার স্পর্ধা বা যোগ্যতা কোনোটাই আমার নেই। তবু তাঁকে নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছেটা কিছুতেই সম্বরণ করতে পারলাম না। তাই কলম ধরলাম।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিটি বাঙালির কাছে বিশেষ একটি নাম। বাংলা সাহিত্যের তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আজও প্রায় সমস্ত বাঙালির ধমনীতে তিনি মিশে আছেন রক্ত প্রবাহের মত। তিনি মিশে আছেন নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে। তাঁর প্রতিভার সামগ্রিক পরিচয় দেওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাঁর কর্মকুশলতা,চিন্তা-চেতনা, ও সৃষ্টিশীলতা বাংলা তথা বাঙালির সংষ্কৃতিকে দিয়েছে নানা বৈচিত্রমুখিতা। সংস্কৃতির এত বড় রূপকার প্রাচীন, মধ্য,ও বর্তমান আধুনিক কালেও বাঙালি সমাজে জন্মগ্রহণ করেনি।
তিনি ছিলেন একাধারে কবি,সঙ্গীতকার,ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক। এক কথায় বহুমুখী প্রতিভার সমন্বয় ঘটেছিল তাঁর বর্ণময় দীর্ঘ কর্মজীবনে।
তবু তাঁর কবি পরিচিতিই তাঁকে বিশ্ব বরেণ্য করে তুলেছিল। এবং তাকে ভূষিত করা হয়েছিল ‘বিশ্বকবি’ বা ‘কবিগুরু’ নামে। তাঁর কবিতাগুচ্ছের জন্য তিনি পেয়েছিলেন সাহিত্যে ‘নোবেল পুরস্কার’।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ছিল তার ভাবগভীরতায়। তাঁর সাহিত্যে বিশ্বপ্রেম ও মানবপ্রেমের পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেম, সৌন্দর্য চেতনা আর প্রগতিবোধ প্রকাশ পেয়েছে। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ,রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধেও তাঁর মতামত তুলে ধরেছেন। সমাজকল্যাণ, গ্রামোন্নয়ন ও দরিদ্র মানুষের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার পক্ষে তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন।
রবীন্দ্রপ্রতিভা সূর্যেরই মতো বিরাট বিস্ময়কর; অফুরন্ত উজ্জ্বল সূর্যরশ্মির যেমন পরিমাপ করা সম্ভব না তেমনই রবীন্দ্রপ্রতিভা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা করাও আমার পক্ষে অসম্ভব।
রবীন্দ্রনাথ বাংলার কবি, রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষের কবি, রবীন্দ্রনাথ সমগ্র বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কবিদের অন্যতম। রবীন্দ্রনাথের বিচিত্র বহুমুখী প্রতিভা সকল দেশ ও কালের গন্ডিকে অবলীলাক্রমে অতিক্রম করে গেছে। তাঁর বাণী ছিল বিশ্বজনীন, তাঁর প্রেম ছিল সর্বব্যাপী, তাঁর অন্তর্দৃষ্টি ছিল সুগভীর। অনন্তকে জানার জন্য মানুষের যে অর্তি, তাই ব্যক্ত হয়েছিল তাঁর লেখনীর মধ্যদিয়ে। তাঁর প্রতিটি লেখনীতে আমরা বিশ্বমানবতাকে খুঁজে পাই। তিনি ছিলেন প্রকৃত দার্শনিক। তাঁর মন বেদ উপনিষদের চেতনায় সমৃদ্ধ। তিনি কাব্যের ভাষা দিয়ে দর্শনকে আর দর্শনের কথা দিয়ে কাব্যকে সাজিয়েছেন। ক্ষুদ্রতম আমি কে বৃহত্তম আমিতে প্রকাশ করার সাধনাই তিনি করে গেছেন আমৃত্যু।

রবীন্দ্রনাথের কাব্য প্রতিভা শতমুখী। তিনি নিজের সৃষ্টিকে নিজেই অতিক্রম করে নব সৃষ্টির আনন্দে চিরচঞ্চল ছিলেন। তিনি নিত্য নতুন ভাবে তাঁর চিন্তা, আবেগ,কল্পনা,ছন্দে-অলংকারে প্রকাশ করেছেন যা জগতের কাছে পরম বিস্ময়ের।
রবীন্দ্রকাব্যে আমরা ভারতীয় সাহিত্যের নানা ঐতিহ্যের সন্ধান পাই। যেমন মধ্যযুগের বৈষ্ণব পদাবলীর রসমাধুর্যের আস্বাদ পাই; বাউল কবিদের মনের মানুষের সন্ধান পাই। তার সৃষ্টি দেশকাল নিরপেক্ষ। বিশ্ব-প্রানের বিচিত্র তরঙ্গমালা তাঁর ভাব কল্পনাকে আলোড়িত করেছে। এই আলোড়নের অভিব্যক্তি ঘটেছে সৃষ্টির নানা রূপে,রসে,ছন্দে ও মাধুর্যে। কোনো যুগের গন্ডিতে তাঁর সৃষ্টিকে বেঁধে রাখা যায় না,তাই তার সৃষ্টি যুগের হয়েও যুগাতীত।
রবীন্দ্রকাব্যের মূল সুর প্রকৃতির সাথে মানব মিলনের অতীন্দ্রিয় স্পর্শানুভূতি। কবির কাছে প্রকৃতি জড় নয় প্রাণময়ী। এই প্রাণময়ী প্রকৃতি তাঁর কাব্যের উৎস,তাঁর আবেগ সঞ্চারিণী। শুধু তাই নয় যেন তাঁর অন্তর সত্তার চিরসঙ্গিনী। এই সঙ্গিনীর সাথে কবি আত্মিক আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। বোধ হয় সেই কারণেই প্রকৃতির তুচ্ছাতিতুচ্ছ বস্তুটির প্রতিও কবির আদি জন্মের নাড়ির টান। তাই তিনি লিখতে পেরেছেন–
“যাহা কিছু হেরি চোখে কিছু তুচ্ছ নয়,
সকলি দুর্লভ বলে আজি মনে হয়।
দুর্লভ এ ধরণীর লেশতম স্থান,
দুর্লভ এ জগতের ব্যর্থতম প্রাণ।

রবীন্দ্রনাথের সুবিপুল, সর্বোতমুখী প্রতিভা ও বিরাট ব্যক্তিত্বের সামনে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। কত বিচিত্র দিকে,কত বিচিত্র ভাবে যে তাঁর প্রতিভার বিকাশ লাভ করেছে কোনটিকে ছাপিয়ে কোন দিকটি যে বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে তা সমগ্র রূপে ধারণা করাই দুঃসাধ্য। কবি নিজেই তাঁর ‘আত্মপরিচয়’-এ বলেছেন – ‘ নিজের সত্য পরিচয় পাওয়া সহজ নয়। জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভিতরকার মূল সূত্রটি ধরা পড়তে চায়না……
জীবনের এই দীর্ঘ চক্র পথ প্রদক্ষিণ করতে করতে বিদায় কালে আজ সেই চক্রকে সমগ্র রূপে দেখতে পেলাম। তখন এটা বুঝতে পেরেছি যে, একটি মাত্র পরিচয় আমার আছে, সে আর কিছুই নয়, আমি কবি মাত্র।’
রবীন্দ্রনাথের বিপুল সাহিত্য সম্ভারের যেসব হিসাব পাওয়া যায় সে অনুযায়ী তিনি লিখেছেন– ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ এবং অন্যান্য গদ্য, ৯৫টি ছোটগল্প, এবং ২হাজারের
উপর গান। তিনি প্রায় ৭০ বছর বয়সে অঙ্কনশিল্প শুরু করেন।লেখার কাটাকুটিকে একটা চেহারা দেবার চেষ্টা থেকে তাঁর ছবি আঁকা শুরু। তার পরেও তিনি প্রায় ২ হাজার ছবি এঁকেছিলেন।

আট বছর থেকে আশি বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর সৃষ্টি কখনো থেমে থাকেনি। মৃত্যুর সাতদিন আগে পর্যন্ত ও তিনি ছিলেন সৃষ্টিশীল।
এমন বিরল ব্যক্তিত্বের চরণে আমার শত কোটি প্রণাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *