রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন
প্রিয় পৃথ্বীশ,
মনে আছে তো পড়শু দিন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী। ভোর পাঁচটায় কিন্তু বেড়িয়ে পড়বো। এবার রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠান শান্তিনিকেতনের বৈতালিকে পালন করবো। প্রচন্ড গরম তাই যত ভোরে পারা যায় বেড়িয়ে পড়া ভালো। তুমি আমার এখানে চলে আসবে, গাড়ির ব্যাবস্থা করা হয়ে গেছে।
যখন বিশ্বভারতীতে পড়তাম, মনে আছে গুরুদেবের জন্মদিন পালনের আয়োজন প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হয়ে যেত। আম পাতা, ছাতিম পাতা, সাদা ফুল দিয়ে সাজানো হতো বৈতালিক। শ্রীনিকেতন ভরে যেত প্রাক্তণ ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে। আনন্দের হাট বসতো। কত শিল্পীর সঙ্গে পরিচয় হতো। গানে নাচে,গীতিনাট্যে,শ্রুতিনাট্যে এক নৈস্বর্গিক পরিবেশ সৃষ্টি হতো। কী আনন্দই না করেছি। অনুষ্ঠান শেষে মিষ্টি খাওয়া পর্ব। সত্যি ভোলা যায় না।
এবারও সেই আনন্দের টানে যাওয়া। তুমি কিন্তু সাদা পাঞ্জাবি পরবে। আর তুমি বলেছিলে আমার জন্য তোমাদের পাশের বাজার থেকে জুঁই আর রজনীগন্ধার মালা কিনে আনবে। মনে আছে তো? খোঁপায় সাজাবো। এবছর কী চড়া রোদ? মনে পড়ে, এরকম এক সুতীব্র গরমে গুরুদেবের জন্মজয়ন্তী পালন হচ্ছে, আমরা চিত্রাঙ্গদা গীতিনাট্য পরিবেশন করবার সময় সকলে ঘেমে নেয়ে, সাজ ঘেঁটে একসা। সেবার বাংলাদেশ থেকে অনেক কবি এসেছিলো। চীন, জাপান থেকেও এসেছিলো কিছু। ওরা প্রাক্তণ ছাত্র। জাপানিজ সু- আকি – তোশি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজ সংস্কৃতি ও জীবনবোধ নিয়ে কি সুন্দর ঝরঝরে বাংলায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছিলেন। কী সুন্দর গলা। গেয়েছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ” আমারে পাড়ায় পাড়ায় ক্ষেপিয়ে বেড়ায় কোন ক্ষ্যাপা সে” আর ” ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে”। দারুণ শুনতে লেগেছিল।
চাইনিজ চুং- সি-গীতা গেয়েছিল ” যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে”। গানগুলো সত্যিই খুব ভালো লেগেছিল ওদের গলায়। এবারে আমরা কয়জন গুরুদেবের গান ও কবিতা নিয়ে ‘কবিতা কোলাজ’ করছি । অনলাইনে রিহার্সাল হয়েছে। সেইজন্যই আগে আগে পৌঁছাতে হবে। প্রচুর বাইরে থেকে সুডেন্ট আসবে। আন্তর্জাতিক মানের আয়োজন।
গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বিশ্বের কবি। শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি ছিল তাঁর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেই মাটির পরশ পেয়ে ধন্য হয়ে গেছি আমরা। তিনি ছিলেন সূর্যের মত দীপ্তিময়, আলোকিত করেছেন বিশ্বলোককে।
সেই কোন্ ছোটোবেলা থেকে সহজপাঠের মধ্যে দিয়ে তাঁর সঙ্গে আমাদের পরিচয়। জীবন নিত্যদিন বাঁধা তাঁর গানের সঙ্গে। সুর ছন্দে বাঙালির অন্তরে পাতা তাঁর আসন। তাঁর রচিত গীতবিতানের প্রেম ,বিরহ ,পূজার গান করে, সঞ্চয়িতার বিভিন্ন কবিতা পাঠ করে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনে আমাদের প্রাণ উজ্জীবিত হয়। যখন বড় একা লাগে তাঁর গান সঙ্গী হয়। প্রেমকে সুন্দর অমিয় করে তোলে, পূজায় আনে নিভৃত মগ্নতা। তিনি তাইতো প্রাণের কবি। তাই তাঁর জন্মদিনে আয়োজন এতো।
যাহোক, পড়শু ভোরবেলা রওনা দিচ্ছি। তুমি নির্দিষ্ট সময়ে চলে এসো। দেরী করো না।
ইতি,
রমা।
কলকাতা)