মৃত্যু রহস্য উদঘাটন
পৃথ্বীশ মাহাতো সরল সাদাসিধে ছেলে। সদ্য মা মারা যাওয়ায় হতাশ। বাবা অসীম মাহাতো অ্যাক্সিডেন্টে একটা পা জখম হওয়ায় ভালোভাবে হাঁটতে পারেনা। রেলের পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ভলান্টিয়ারি রিটায়ারমেন্ট নেয়। ভাই কলেজে পড়ছে। এমতাবস্থায় সংসারে কাজের দায়িত্ব সে নিজেই নেয়। রান্নাবান্না করা, ভোরে উঠে ভাই অভিককে কলেজ যাবে বলে টিফিন করে দেওয়া ইত্যাদি সব করে। বছর ঘুরলে বাবা বলে তুই একটা বিয়ে কর আমার তো পয়সার অভাব নেই, ঘরে বৌ আসলে ভালো লাগবে।
ইতিমধ্যে পৃথ্বীশও মুম্বাইয়ে চাকরি পায় তাই বাড়ির কথা ভেবে বিয়ে করে। কিছুকাল পর সে কর্মস্থলে চলে যায়। বৌ রমলা দেওর , শ্বশুরের যথাযথ সেবা যত্ন করে। দিন ভালোই কাটে।
এরপর একসময় কলেজ এক্সকারসনে তিন দিনের জন্য অভিকে ভাইজাগ যেতে হয়।
রমলা দেখতে খুব সুন্দর। সংসারে আপন মনে কাজ করে।
সারাদিন ঘরে থাকা শ্বশুরের রমলার সুন্দর, সুঠাম চেহারার প্রতি কুনজর পড়ে। রমলার স্পর্শ এবং তাকে সবসময় কাছে পাওয়ার জন্য বাথরুমে যাওয়ার সময় ভান করে পড়ে যায়। রমলা শ্বশুরকে কোনোরকমে তুলে বিছানায় পৌঁছে দেয়। এমন সময় শ্বশুর রমলার হাতটা জোরে টেনে ধরে বুকে জড়িয়ে ধরে। রমলা একি করছেন বাবা ব’লে ছাড়াতে চাইলে আরও কাছে টেনে বলে, কতদিন পৃথ্বীশের জন্য অপেক্ষায় থাকবে? – এই বিশাল বাড়ি আমার, টাকাপয়সার অভাব নেই।আমার সব সম্পত্তি তোমার নামে লিখে দেবো। আমি তোমাকে প্রথম দিন দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি, আমায় ফিরিয়ে দিওনা প্লিজ , কেউ জানতে পারবে না তোমার আমার সম্পর্ক ; ব’লে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়। রমলা অভিভূত হয়ে সেই আদরকে প্রশ্রয় দেয়।
অভিক ঘরে না থাকায় চলে তাদের চুটিয়ে প্রেম।
অভিক বাড়ি ফিরলে ,সে হয় তাদের চক্ষুশূল। নানা অছিলায় অভিককে অপদস্থ করেতে থাকে রমলা।
একদিন অভিক কাজে বেড়িয়ে কিছুপথ গিয়ে মনে পড়ে মোবাইল আনতে ভুলে গেছে। তাড়াতাড়ি ঘরে আসে। দরজা আলগা ছিল, ঘরে ঢুকতেই বাবা আর বৌদিকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে যায়।
বৌদিকে বলে এখন থেকে বাবার দেখাশোনা আমি করবো। বৌদির বুঝতে অসুবিধা হয়না, অভিক যে তাদের বিষয়টা আন্দাজ করেছে। তাই
অভিক এখন ওদের পথের কাঁটা।
একদিন অভিক বৌদির ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছে, অমনি রমলা চীৎকার করে বলে তুমি লুকিয়ে আমার ড্রেস চেঞ্জ করা দেখছো? এক্ষুনি তোমার দাদাকে জানাচ্ছি, যাতে এসে তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এই বলে,দাদাকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলে দাদাও একই কথা বলে। ভাইকে ফোনে বলে, কালকেই আমি আসছি , তোর এতো সাহস? তোকে তাড়িয়ে ছাড়বো। ভাইয়ের কোনো কথা শুনতেই চাইলো না। বাবাও চুপ।
অভিক ঘর থেকে বেরিয়ে পাড়ার মোড়ে একটা গাছের তলায় বসে গলায় পরা চেন-এর লকেটে মায়ের ছবি দেখে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ; দূর থেকে তা দেখে পাড়ারই বন্ধু ঝন্টু এসে বলল কি হয়েছে রে? অভিক কিছুটা বলতেই ঝন্টু বলে তোর বৌদি একটা বাজে মহিলা। আমি একদিন তোকে ডাকতে তোদের বাড়ি গিয়েছিলাম। জানলার ফাঁক দিয়ে দেখলাম তোর বৌদি তোর বাবার সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠভাবে বসে। চীৎকার করে বললো, অভিক বাড়ি নেই। তোকে কথাটা বলার সাহস হয়নি।
অভিক বলে, আমি যে কি করবো, কোথায় যাবো, জানিনা।
রাত্রে অভিক ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন পৃথ্বীশ আসছে, অভিক যদি দাদাকে সব বলে দেয় তাই দুজনে অভিক’কে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান কষলো। মুখে বালিশ চাপা দিয়ে অভিককে খুন করে মৃতদেহ বস্তায় ভরে দূরে একটা জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় ফেলে আসে। পৃথ্বীশ ঘরে এসে ভাইয়ের খোঁজ করলে রমলা বলে তুমি আসবে শুনে রাতেই কোথায় পালিয়েছে। ভোরে উঠে দেখতে পাচ্ছি না। দ্যাখো মোবাইল পর্যন্ত ফেলে গেছে।
পৃথ্বীশ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে। এদিকে বাবা লাশটার কি হলো জানতে প্রতিদিন ঐ চত্বরে ঘুরে আসে। কয়দিন পরে দুর্গন্ধ বেরোলে স্থানীয় লোক পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ লাশ দেখতে বাড়ির লোককে ডেকে পাঠায়। পৃথ্বীশ গলার চেন দেখে ভাইকে চিনতে পারে। শুরু হয় মৃত্যু রহস্য উদঘাটন পর্ব।
পুলিশ সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, আশেপাশের বাড়িতেও যায়, কেউ কিছু দেখেছে কিনা জানতে।
একদিন হঠাৎ এক বৃদ্ধ তাঁর নাতিকে নিয়ে থানায় হাজির। বৃদ্ধ ছিলেন বোবা-কালা। লিখে সব জানাতে পারেন। তিনি জানালেন, কিছুদিন আগে ঘুম আসছে না দেখে বেশি রাতে ব্যালকনিতে বসে আছি , দেখি একজন পুরুষ ও একজন মহিলা ভারি কিছু ধরাধরি করে জঙ্গলে ফেলে গেলো। পরদিন সকাল বেলায় দেখি একজন লোক জঙ্গলের দিকে তাকাতে তাকাতে চলে গেল। তারপরদিনও লোকটাকে দেখলাম! লোকটা একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে। হতে পারে সে-ই খুনি।
পুলিশ বললো, লোকটাকে দেখলে চিনতে পারবেন? বৃদ্ধ উত্তর দেয় নিশ্চয়ই।
পুলিশের প্রথমেই সন্দেহ হলো অভিকের বাবার প্রতি, কারণ তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটেন। ডেকে পাঠানো হলো বাবা অসীমবাবুকে। জিজ্ঞাসাবাদের উত্তরে অসংলগ্নতা দেখে পুলিশ বৌদিকেও তলব করলো। পুলিশের প্রশ্নের মুখে একসময় সত্যিটা স্বীকার করতে বাধ্য হলো তারা । এরই মধ্যে ঝন্টুও পৃথ্বীশকে অভিকের কথাগুলো জানিয়েছে।পৃথ্বীশ সব শুনে হতবাক।