ভূত নয় কিম্ভূত
ভূত_কথাটাতে সকলে অন্ধকারে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে। সে ভূত নানা রকমের। কখনও শ্মশান ঘাটে ভূত, কখনো বাড়িতে অপঘাতে মৃত্যু ভূত, আবার কখনো স্টেশন কিংবা ব্রিজে কিম্ভূত। সে যাই হোক, ভূত মানে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, গা ছমছম করা। আর কেউ যদি শোনে সেখানে ভূত বেশ কয়েক মাস ,বা বছর সেদিকে হয় না তারা। আমাদের সময় লাইটের আলো সেভাবে ছিল না। হ্যারিকেন লম্ফে বড় হয়েছি। গঙ্গার ধারে বাড়ি। বাড়ির সামনে বেশ কয়েকটা পুকুর। ঘন গাছপালায় ঘেরা জায়গা। সে সময় ডাকাতদের খুব উপদ্রব ছিল। ছিঁচকে চোর তো খুবই আসতো। তাদের থেকেও বেশি ভয় পেত মানুষ ভূতকে। খুব কম মানুষে সাহসী। ঘরের জানালায় টোকা দেওয়া, খটখট শব্দ করা, হঠাৎ করে ইঁটবৃষ্টি এগুলো এক একটা ভূতের কাজ। আমি তখন পাইক পাড়ায় থাকি। একবার খুব রব উঠেছিল নাগেরবাজারের ফুটব্রিজে ভূত। ভয়ে আমি অতটা দূরেও একা থাকতে পারতাম না। মনে হতো আমার পিছন পিছন কে হাঁটছে। সারাক্ষণ ঘরে লাইট জ্বেলে রাখতাম। একটা কিছু শব্দ হলে ভাবতাম ভূতেরা করছে। দিনের বেলা নয় রাত বারোটার পর ভূতেরা নাগেরবাজার ব্রিজের উপর লাফালাফি করতে আসত। কয়েকবার গাড়িতে গেছি ব্রিজের উপর দিয়ে। ভূত দেখবো বলে। কিন্তু সবাই জানাল রাত বারোটার পর আসতে। রাত হলে বেশ কয়েকটা গাড়ি ধরে। গাড়ির চালক গাড়ি থামাতে বাধ্য হত। সামনে-পিছনে উপরে দাঁড়িয়ে থাকতো। পুলিশ সজাগ হোলো। কিন্তু পুলিশ গাড়ি নিয়ে যায় নিচে নেমে দাঁড়াতে ভয় পায়। যদি সত্যি ভূত আসে। তাহলে তো রক্ষে নেই। একবার এরকম রব উঠেছিল নানা ধরনের ভূতের কথা। বহুদিন ধরে চলেছিল এই ভূত কিম্ভূত, গলাকাটা ভূত _নানা গল্প। ভূতেরা তো মনের সুখে নাচানাচি করছে রাতে, আর গণমাধ্যমের দৌলতে দূর-দূরান্তে পৌঁছে যাওয়া খবরে বাড়ির ছোট বড় সকলে ভূতের ভয়ে কাঁপছে। আমিও বাদ যাইনি। একদিন খবর শুনলাম, বিরাটি এর কাছে একটা লোকাল চ্যানেল ঠিক করেছে রাত একটার সময় থেকে ওরা সারাটা রাত ওখানে থাকবে। রাতে টিভি চালিয়ে দেখছি কী হয়। ভয়ানক উৎকন্ঠা। এক সময় দেখি রিপোর্টার আর ক্যামেরাম্যান আপডেট দিচ্ছে। কিন্তু বেশ উত্তেজিত হয়ে। ভাবলাম এইবার ভূত ওদের চোখে পড়বে ই। নানাভাবে ওরা ক্যামেরা ঘোরাতে লাগলো। এত অন্ধকারের মধ্যে ভূতগুলো লুকিয়ে ছিল। কিছুতেই বের হয় না। ওরাও ছাড়ার পাত্র নয়। আমি সারারাত টিভি চালিয়ে যেন ঘরে তে ভূত দেখছি। টিভির দিকে চোখ। নাঃ কোথাও কিছু নেই। ভোর হয়ে গেল। তবে কি ভূতেরা মানুষ দেখলে পালায়? না এটা কিম্ভূত? ঠিকই ধরেছো তোমরা। এরা সব কিম্ভূতকিমাকার। আসলে রাতের গাড়িতে কিছু টাকা তোলার চেষ্টা। অন্ধকারে তাদের খুব ভালো পার্টি হয়। সে কাজগুলো কিছু মানুষ বাধা দেওয়ায় এই কিম্ভূতকিমাকার ভূতের সৃষ্টি। মানুষ বুঝলো তারা এতদিন বোকা বনে গেছে। নানা অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত ব্যক্তিরা এই ধরনের প্রচার চালিয়েছে। আসলে ভূত কিছু নেই। আমাদের ভয় ভূতের সৃষ্টি করে। আর কিম্ভূতকিমাকার রা এই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।