শীর্ণ নদী দেখলেই আমি চোখ ফিরিয়ে নিই
কিন্তু কোন্ দিকে চোখ ফেরাব, ভাঙা ঘাটে বসে আছে
দু’তিন জন জীর্ণ মানুষ
পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি গেছে তার সর্বাঙ্গে দগদগে ক্ষত
গোরুর গাড়িটি যেমন নড়বড়ে, তার গাড়োয়ানটিও তেমনি ভাঙাচোরা
আর গোরুদুটি শুধু কঙ্কালের ওপর চামড়া দিয়ে মোড়া
একটু দূরে চেতন মিস্তিরির বাড়িটি পড়ো পড়ো
যেন আবোল তাবোলের বুড়ির বাড়ির মতন
আঠা আর থুতু দিয়ে জোড়া
তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি পা-ব্যাঁকা ছেলে
আর তার মায়ের বুকে স্তনের বদলে
দুটো খালি ঠোঙা
একটা যুদ্ধে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেলে তবু
একটা কিছু মানে বোঝা যেত
যুদ্ধ নেই। এখন নাকি শান্তি, তবু চতুর্দিকে
এত মুমূর্ষু দৃশ্য আমার সহ্য হয় না…
অবশ্য এসব না দেখলেও তো চলে
মরা নদীর ওপরে তৈরি হয়েছে নতুন, ঝকঝকে ব্রিজ
কত রকম আকার-প্রকারের স্বাস্থ্যবান যানবাহন ছুটছে
ওপর দিয়ে
সুকুমার, সরল, সুন্দর ছেলে মেয়েরা চাটছে আইসক্রিম
ডানা কাটা অপ্সরীরা হাসছে ঝর্নার জল ছিটিয়ে
চওড়া কবজিতে বাঁধা ঘড়ি দেখছে গাড়িচালক বাবা
ব্রিজের ওপরে ও নীচে একই দেশ, একই দেশের মানুষ
একই বাতাসে নিশ্বাস, তবু কেউ কম, কেউ কেউ অতিরিক্ত বেশি
আমিও তো অনেকখানি বাতাস নিয়ে নিচ্ছি ওদের বুক থেকে টেনে।