Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিক্রমপুর || Humayun Azad

বিক্রমপুর || Humayun Azad

জলকন্যার মতো জলের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছিলে তুমি
ধূসর অতীতে। জল তোমাকে লালন আর পালন করেছে;
জলই তোমার রুপ, শোভা, সৌন্দর্য, তোমার স্বাস্থ্য,
তোমার রুপোলি রক্তপ্রবাহ! রক্তনালির মতো
তোমার শ্যামল মাংসের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে নদী,
শাখানদী। পলির প্রসাধনে তুমি অদ্বিতীয় রূপসী হয়েছো।
চিরন্তন জল তোমাকে জন্ম দিয়েছে; আবার গ্রহণ করেছে
নিজের গর্ভে। তোমার অন্তরে হাজার বছরের জলের কল্লোল।
উত্তরে শাঁইশাঁই ধলেশ্বরী, পূর্বে মেঘনাদ মেঘনা; আর প্রচণ্ড হৃৎপিণ্ডের মতো
তোমার বুকের ভেতরে কল্লোলিত রত্নাকর প্রবল পদ্মা।

পদ্মা আজ পশ্চিমবাহিনী। এই নদী, এই মহানদী,
তোমাকে সৃষ্টি ও ধ্বংস করেছে বারবার। মহান এ-নদী তোমাকে কীর্তিময়
করেছে, এবং বিনাশ করেছে তোমার লোকশরুত অজস্র কীর্তি।
কতো নদী তুমি লালন করেছো, কতো জলস্রোতকে তুমি
শোষণ করেছো, বিক্রমপুর। প্রবল খালের পর খাল হয়ে বয়েছে
তোমার আত্মার বর্ষার আবেগ। তালতলা, মীরকাদিম, চুড়াইন,
কামারগাঁও, শ্রীনগর, হলদিয়ার খাল বয়ে গেছে ম’রে গেছে
তোমার শরীরে। নদীর অশান্ত স্রোতকে দমন ক’রে সৃষ্টি করেছো তুমি
শালুক শাপলা কাঞ্চনময় বিল। তোমার শ্যামল সবুজ বক্ষস্থলে
আড়িয়ল বিল ফুটে আছে শ্বেতপদ্মের মতো।

এই জল, আর জল, আর জলের ভেতরে মৌচাকের মতো
মধুর তোমার গ্রামগুলো। সবুজ এই গ্রাম, শ্যামল ওই গ্রাম, হলদে ওই গ্রাম,
মধুর ওই গ্রাম, সোনালি ওই গ্রাম, রুপোলি ওই গ্রাম
মায়ের মুখের মতো ওই গ্রাম, মায়ের চোখের মতো ওই গ্রাম,
বোনের তাঁতের শাড়ির পাড়ের মতো, বউয়ের খোপার মতো ওই গ্রাম।
রাড়িখাল, কামারগাঁও, ভাগ্যকূল, কেদারপুর, মাইজপাড়া, দামলা,
কবুতরখোলা, কয়কীর্তন, শ্যামসিদ্ধি, গাদিঘাট, বালিগাঁও, মাওয়া, শিমুলিয়া,
শ্রীনগর, শেখরনগর, হলদিয়া, দিঘলি, কণকসার, হাতারপাড়া, বাঘড়ার
মতো ধানের গুচ্ছ আর পাটের আঁশ আর সরষের হলদে ফুল আর
রক্তিম শিমুল ফুলের মতো তোমার গ্রামগুলো।

তোমার মাটিতে বেড়ে উঠে দু-হাতে তোমাকে জড়িয়ে
ধ’রে অবিরাম চুমো খেয়েছে যে, সে তোমার শ্রেষ্ঠ ও একনিষ্ঠ
মোহন প্রেমিক, সে তোমার চাষী। তুমি তার আদরে শরীর
ভ’রে ফলিয়েছো ধান, পাট, সরষে, কুমড়ো, কলার বিস্ময়কর রূপে।
তোমার কম্পমান বুকের ওপর নৌকো ভাসিয়েছে
তোমার আরেক নির্ভীক প্রেমিক, সে তোমার জেলে। তার জাল
ভ’রে দিয়েছো তুমি বিশ্বসুন্দরীর থেকে সুন্দর ইলিশ, রুই,
বোয়াল, শরপুঁটি, পাঙ্গাশ, রুপোলি চিতলে।
দুই প্রেমিকের গানে মুখর তোমার নদী আর ধানখেত।

তোমার উর্বর মাটি বুকে মেখে তিব্বতের দিকে হেঁটে
গেছেন শ্রীজ্ঞান, তোমার মনন বিখ্যাত মগজে ধারণ ক’রে বিশ্বের দিকে
এগিয়ে গেছেন জগদীশ। যে-শিশু এখন তোমার মাটির
ওপর খেলছে, শরীরে মাখছে তোমার সুগন্ধ, তার সুগন্ধে হয়তো
একদিন ভ’রে উঠবে বিশ্ব। তুমি প্রসব ক’রে যাবে কীর্তি, মানবিকতা,
জ্ঞান, মেধা, কবিতা, সঙ্গীত, নৃত্য, শিল্পকলা; অশ্লীল ব্যবসা
আর কুটিল রাজনীতিও প্রসব করবে তুমি দশকে দশকে।

তোমাকে আমার খুব মনে পড়ে, প্রিয়তম, আমার বিক্রমপুর–
মনে পড়লেই চোখের সামনে দুলে ওঠে কুমড়োর
হলদে ফুল, নিরাক ধানের খেত, আড়িয়ল বিলের উত্তর পাড়ে
আশ্বিনের আকাশপ্রদীপ, আর একটি কিশোর–
তার দুই চোখে শিশির, কুয়াশা, আশ্বিনের চাঁদ, ঘাসফুল,
নদী, মেঘ, বৃষ্টি, আর অমরতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *