Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

বাবিন

“মা আমি যদি ওই আকাশের তারা হয়ে যাই তুমি আমাকে চিনতে পারবে” মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আদরের সুরে বাবিন মা’কে জিজ্ঞেস করে।
“বাবিন! কি হচ্ছে টা কি! কত বার তোকে বলেছি না এই ধরণের কথা তুই কক্ষনো বলবি না।”
“মা!আমি কি সত্যিই আকাশের তারা হয়ে যাচ্ছি! আমি তো এমনিই বললাম”
সুতপা আর শ্যামলের বিয়ের দশ বছর পর তাদের কোলে একমাত্র সন্তান বাবিন এলো। বাবিন ওদের চোখের তারা।ওরা সব সময় বাবিন কে চোখে হারায়। কিন্তু ভগবানের কি বিচার! মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবিনের থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ে। স্বামী স্ত্রী বুকে পাথর চেপে রেখে বাবিনের চিকিৎসা করায়।ওরা জানে বাবিনের জীবন প্রদীপ যে কোনো দিন নিভে যেতে পারে। তবু ভাবে এই পৃথিবীতে কত কিছুই তো মিরাকেল হয়,সে রকম কোনো মিরাকেল যদি বাবিনের সাথেও হয়।
বাবিন যদিও ওর রোগ সম্পর্কে কিছু জানে না।ও মা কে জিজ্ঞেস করে ওর কি হয়েছে? ওকে কেনো বার বার হসপিটালে যেতে হয়। মা কি বা বলবে! কোনো কিছু বুঝিয়ে বাবিন কে শান্ত করে।
আজ হসপিটালের বেডে শুয়ে বাবিন যখন আবার কথাটা বলে উঠল মা’র বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠে।
কদিন ধরে বাবিনের একটু জ্বর আসছিল। ডাক্তার যদিও বলেছে ভাইরাল ফিভার ভয়ের কিছু নেই। তবু মায়ের মন কিছুতেই মানতে চায় না। কিছুদিন জ্বরে ভোগার পর আস্তে আস্তে জ্বর কমে যায়। তার পর একদিন ও বাবার কাছে বায়না ধরে তাকে একটু “ইকো পার্ক”এ নিয়ে যেতে হবে। ওর বাবা ওকে অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করেন এই সময় না আর কিছুদিন পর নিয়ে যাবে। বাবিন তবু নাছোড়। সুতপা বাধ্য হয় শ্যামল কে রাজি করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।অবশেষে তিনজন “ইকো পার্ক” বেড়াতে আসে। ওই দিন টা বাবিন খুব আনন্দে কাটায়। বাড়ি ফেরার পর ওর আবার জ্বর আসে।পরদিন ডাক্তার ডাকা হলে ডাক্তার সঙ্গে সঙ্গে হসপিটালে ভর্তি করাতে বলে।
শ্যামল আর সুতপা বাবিন কে নিয়ে হসপিটালে আসে। বাবিন মা’র গলা জড়িয়ে বলে ” মা আমি আকাশের তারা হয়ে গেলে তুমি আমায় চিনতে পারবে” সুতপা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে “তুই আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবি না।তুই তো আমাদের চোখের তারা তোকে ওই দূর আকাশে খুঁজব কেন!”
বাবিন খুব ক্লান্ত ভাবে বলে “না এমনি বলছি।তুমি বলো না দাদু ওই আকাশের তারা হয়ে গেছে।তুমি তো আমাকে বলতেই পারোনা কোন তারাটা দাদু। তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম।”
“বাবিন! তুই চুপ কর! আর এই অলক্ষনে কথা বলিস না।”
ডাক্তার বললেন এখুনি রক্ত দিতে হবে। বাবিনের রক্তের গ্রুপ “ও পজিটিভ ” ওই গ্রুপের রক্ত তখন হসপিটালে নেই। শ্যামল ছুটল রক্তের খোঁজে। সারা শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওই গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে পারলো না। এদিকে ডাক্তার সোমানেই তাড়া দিচ্ছে ব্লাড এর জন্য। সুতপার বড় অসহায় লাগছে ও কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এদিকে বাবিন ও আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ছে।সুতপার কানে বাবিনের কথা গুলো হাতুড়ির মতো পিটছে “মা আমি তারা হয়ে গেলে…”
শ্যামল এসে বলল রক্ত পাওয়া গেলো না।
“ডাক্তার বাবু আমাদের রক্তে হবে না? ও তো আমাদের ছেলে আমরা রক্ত দিতে পারি না?”
“না। আপনাদের ব্লাড গ্রুপ বাবিনের সাথে মেলে না। আপনাদের রক্ত দেওয়া যাবে না।”
“হা ঈশ্বর! তুমি আমাদের এতো বড় শাস্তি দিচ্ছ!
দশ বছর বাদে সন্তান দিলে, কিন্তু তাকে বুকে রাখতে দিলে না। কেন ঠাকুর আমরা কি দোষ করেছি!কেন এতো বড় শাস্তি দিচ্ছ!আমাদের সন্তান কে আমাদের কোলে ফিরিয়ে দাও ঠাকুর আমি বুক চিরে রক্ত দিয়ে তোমায় পুজো দেবো।”
কিন্তু ঠাকুর মায়ের চোখের জল দেখতে পেলো না। ডাক্তার এসে বলে গেল “আপনারা ভিতরে আসুন। ছেলের সাথে দেখা করে যান।ওর হাতে আর সময় নেই।”
সুতপা ছুটে ছেলের বেডের কাছে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
“মা কেঁদোনা, আমি যখন ওই আকাশের তারা হয়ে যাবো তুমি দেখবে আমায় ঠিক খুঁজে পাবে।আমি তোমাকে ঠিক দেখতে পাবো।তুমি আমাকে চিনে নিও।”
“বাবিন! আমায় ছেড়ে যাস না! আমি কি নিয়ে বাঁচবো?”
শ্যামল সুতপার কাঁধে হাত রেখে বলল ” সুতপা কেঁদোনা।ওকে যেতে দাও। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করো ও যেখানেই থাক ভালো থাক। আমরা ওর জন্য প্রতীক্ষা করব।”
বাবিন চলে যাওয়ার পর সুতপার রাতে ঘুম আসে না। প্রতিদিন মাঝরাতে ও একা উঠে আসে ছাদে। দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। সুতপা বাবিন বলে ডুকরে কেঁদে ওঠে। শ্যামল সব লক্ষ্য করে কিন্তু কিছু বলে না। ওর ও তো বুকের ভেতরটা ভেঙে যায়। ববিনের অভাব ওদের জীবনে মরুভূমির শুন্যতা তৈরি করে ছিলো।
কয়েক দিন পর সুতপা সেদিনও মাঝরাতে ছাদে উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, শ্যামলও সুতপার পাশে এসে দাঁড়ায়। সুতপা দেখে একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সুতপা স্বামীকে ডেকে বলে “দেখো ওই নক্ষত্র টা! আগে তো কখনো দেখিনি।কি উজ্জ্বল না?”
“হ্যাঁ ওটা আমাদের বাবিন”
হ্যাঁ ওই আমাদের হারিয়ে যাওয়া ছেলে। আমরা ওকে চিনতে পেরেছি। তুমি ঠিক বলেছ, ওই আমাদের বাবিন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress