বয়ঃসন্ধির সমস্যা
(১)
বয়ঃসন্ধির ছেলে মেয়েরা বাড়িতে কথায় কথায় বাধা নিষেধ,বকাবকির ফলে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে ।অথচ যেটা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য জরুরী । শিশু কে যখন সব কিছুর মূল বলে ধরা হচ্ছে,তখন শিশু শিক্ষার ব্যাপারে একটু আলোকপাত করা দরকার । পাশ্চাত্য সভ্যতার থেকে এসেছে ‘শিশু কেন্দ্রীক শিক্ষা’। ভারতে কিন্তু এই শিক্ষা নানা কারণে অসফল থেকে যায় । কারণ তারা বিজ্ঞান সম্মত শিক্ষা ধারায় তুষ্ট হন না। তাদের দাবি থাকে পুরনো পদ্ধতিতে লেখা ও পড়ার শিক্ষা । ফলে,”খেলার মাধ্যমে শিক্ষা “বাধা প্রাপ্ত হয়ে হোমওয়ার্ক,ক্লাসওয়ার্কএর বোঝা শিশুর কাঁধে । এই জোর করে শিক্ষাটা,শিশুর হামাগুড়ি দেওয়ার আগেই জোর করে হাঁটাবার মতো ক্ষতিকর হয়। খেলার মাধ্যমে শিক্ষা তাই হাস্যকর ভাবে পুরোনো পদ্ধতিতে পর্যবসিত হয় । দার্শনিকদের মতে,”child centered” শিক্ষার মূল লক্ষ্য অতি গভীর এবং কার্যকর । কুঁড়ি থেকে যেমন ফুল ফোটে,তেমনি খেলার মধ্য দিয়ে আনন্দে শিশু নিজেকে বিকশিত করে। কারণ আনন্দই হচ্ছে ওই বয়সের সকল কাজের মূল কথা । শিশুর বোধশক্তি তিন বছর থেকে ই শুরু হয় । এই সময় তার ইন্দ্রিয় পরিচালনা ও বাস্তব সম্বন্ধে জ্ঞান লাভের জন্য খেলার মাধ্যমে শিক্ষা ই দরকার । এই সময় শিশু পরিবার ও পরিবেশ থেকে অনুকরণ করতে শুরু করে । পরিবেশের খারাপ দিকগুলো মনে গভীর রেখাপাত করে । স্কুলে শিশুর চরিত্র গঠন,ব্যক্তিত্বের বিকাশ হয়। শিশুর স্বাস্থ্য ও মেধা শক্তির বিকাশের সময় এটা । পরিলিক্ষত হয়েছে যে প্রাক-শিক্ষা পাওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষায় এরা সফল হয় । এতে প্রাথমিক শিক্ষার সবচেয়ে ভয়াবহতা ,”ওয়েস্টেজ ও স্ট্যগনেশন”এর হার কম হয় । সুতরাং শিশুকে সমাজিকরণ ও জাতীয় করণের জন্য,”pre-playway”শিক্ষা জরুরী । স্বাভাবিকভাবে যা হয় সেটাই সাফল্য আনে,জোর করে নয়। এভাবেই শিশুকে একজন সুনাগরিকে পরিণত করা সম্ভব । পরিবারের মধ্যে ই যে হেতু শিশু বেড়ে ওঠে,তাই পরিবারের গুরুত্ব অসীম । শিশু নিজের অজান্তেই তার আচার আচরণ ও স্বভাব গঠনের দীক্ষা নিতে থাকে মা বাবার কাছ থেকে । পারিবারিক সম্পর্কের সুস্থতা তার চরিত্র গঠনে সাহায্য করে । বুদ্ধি বিবেচনা তার ভিতরে সঞ্চারিত হয়। সামাজিক জীবনে উচ্ছৃঙ্খলতা , দুর্নীতি পরায়নতা ও স্নায়ু বিকৃতি ঘটছে । তার হাত থেকে বাঁচতে শিশুকে বাঁচাতে হলে সুস্থ পারিবারিক আশ্রয় ছাড়া অন্য কোন পথ নেই । কবির ভাষায়—–সব শিশুর মধ্যে শিশুর পিতা ঘুমিয়ে আছে । তাই শিশুর চরিত্র সুগঠিত করলেই যখন সে পিতা হবে তখন সমাজের প্রতিপালন করতে সমর্থ হবে।। পরিবার হলো সমাজ জীবনের প্রথম স্তর। সংস্কৃতি সম্বন্ধে ধারণা লাভ করে শিশু,এই পরিবার থেকে ।মানুষের চরিত্র,আদর্শ,ধারণা,আচার আচরণ,দৃষ্টি ভঙ্গি ভালো মন্দের মূল্যায়ন বোধ ও সমাজের প্রতি কর্তব্য বোধ, সব কিছু সে পরিবারের থেকে শেখে। জীবন নিরন্তর নব নব রূপে বিকশিত হচ্ছে । নিরবচ্ছিন্ন বিকাশই জীবন । বেঁচে থাকার প্রতিটি মূহুর্তেই তাকে শিক্ষা লাভ করতে হবে । প্রতিটি মূহুর্তের সঙ্গেই নিজে –কে মানিয়ে নেওয়াই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ।পরিবারের সদস্যদের সব সময় মনে রাখতে হবে শিশুর জন্য ভালো পরিবেশ তৈরী করার কথা । যাতে শিশুর মানসিক ও দৈহিক স্বাস্থ্য সুগঠিত হয় । জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আমারা শিখি। যদি শিক্ষা লাভে আমরা উপকৃত হই,তবে সে শিক্ষা লাভ করতে পিছপা হব কেন ? বিশেষ করে যেখানে আমাদের সন্তানেরা উপকৃত হবে?
(২)
প্রাচীনকাল থেকেই কথাটা চলে আসছে যে, কৈশোর বড়ো বিষম কাল। বৃন্দাবনের সেই কিশোর কিশোরীদের লীনা চির রহস্যাবৃত বলে বৈষ্ণব গীতে উল্লিখিত । ‘স্ট্যানলি হল’এই সময়টাকে’স্ট্রেস এন্ড স্ট্রেইন’এর ও বিস্ফোরণের সময় বলে উল্লেখ করেছেন। স্ট্যানলি হল-এর মানব গোষ্ঠীর পুনরাবৃত্তির মতকে মেনে না নিলে ও কৈশোর যে শৈশবের উন্নত ধরনের পুনরাবৃত্তি তার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। মোটের ওপর এটা বলা যায় যে,এই সময়টা ধরে ছেলেমেয়েরা নারীও পুরুষে পরিণত ও বিকশিত হয় । কোন কোন বৈজ্ঞানিকের মতে কৈশোরের সমস্যা প্রকৃত পক্ষে সমাজের দ্বারা উদ্ভূত । কিশোর এতদিনের অভ্যস্ত ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত আবার বড়দের প্রাপ্য সম্মান ও দায়িত্ব ও তাদের দেওয়া হয় না । কিশোর এই বয়সে আত্ম প্রতিষ্ঠা চায় । কৈশোরের প্রধান ঘটনা যৌবনাগম । কৈশোরের স্থায়িত্ব কাল পাঁচ থেকে আটটি বছর । ভারতে যৌবনাগম হয় ছেলেদের বারো থেকে ষোলো বছরের মধ্যে যে কোনও একটা বয়সে । মেয়েদের সাধারণত এগারো বছর বয়স থেকে পনেরো বছরের মধ্যে যে কোনও একটা বয়সে । যৌবনাগমের কাজ চলে ক্রমশ । হঠাৎ একদিনেই হয়ে যায় না । সাধারণত দু,বছর ধরে ক্রমশ যৌবনাগম হয় । কিশোরের যৌন চেতনা তিনটি স্তরে আসে। প্রথম আত্মরতি অর্থাৎ নিজেকে ঘিরে মোহ সৃষ্টি হওয়া । দ্বিতীয় স্তরে সমকামীতা। অর্থাৎ সমলিংগের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে । তৃতীয় স্তরে বিপরীত লিংগের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে । এই সময় ই বয়সে বড়ো মেয়েদের প্রতি ছেলেদের আকর্ষণের সংগে সম্ভ্রম মিশে থাকে । মেয়েরা যদি এই অবস্থায় ছেলেদের প্রতি সদয় ও সহানুভূতি পূর্ণ ব্যবহার করে তবে কিশোরদের উপকার হয় । কিশোরীদের এ সময় বীরপূজার মনোভাব দেখা যায়। আত্মরতি ও সম লিংগের প্রতি আকর্ষণকে আমরা ব্যভিচার বলে ভুল করি । কিন্তু এটা জানা ভালো এই আচরণ এসময় বিকৃত মনোভাবাপন্ন নয়। এ সময় নিষ্ঠুর ব্যবহার ই ওদের অপরাধের দিকে নিয়ে যায় । কিন্তু বিদ্যালয়ে যৌন বিষয়ে শিক্ষা দিলে তাদের এই বিষয়ের প্রতি কেন্দ্রীভূত আকর্ষণ বিকেন্দ্রীকৃত হয়ে অন্যান্য বিষয়ের প্রতি নিবদ্ধ হয় । এই জন্য যৌন বিষয়কে বিজ্ঞান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার । নৈরাশ্য যত বেশি, অপসংগতি বা Maladjustment ততো বেশি দেখা যায় । এই অপসংগতির জন্য দায়ী কতগুলো বিশেষ কারণ ।যেমন—নিরাপত্তাহীনতা ,আক্রমণাত্মক মনোভাব, অপরাধ প্রবণতা,স্বীকৃতিহীনতা,ভালো-বাসা থেকে বঞ্চনা,ত্রুটিপূর্ণ পারিবারিক সম্পর্ক ও শাস্তি প্রশংসার অসংগতি ও নৈতিক মূল্য হীন তা। এই অপসংগতি দূর করার সোজা উপায় হল, কৌতুহলের তৃপ্তি,সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান,শিশুর পরিচিতি ও স্বীকৃতি । সবচেয়ে বড় হলো ভালো বাসা ও আত্মপ্রতিষ্ঠার চাহিদাগুলোর সার্থক রূপায়ন । ভালোবাসা আর নরম ব্যবহার কিশোরকে অনেক মানসিক বিকৃতি থেকে বাঁচিয়ে দেয় । এখানে ও সেই ব্যক্তিত্ব স্ফুরণের প্রসংগ আসে । আমাদের বিধি নিষেধের বেড়াজালে ওরা কলুষিত হয়ে নিজস্বতা হারিয়ে ফেলে । কাজের মূল্য বা স্বীকৃতি সব সময়ই ভালো । সন্তানের কৃতকার্যতায় অনেক বাবা,মা মনে করেন প্রশংসা করলে মাথায় উঠবে । আসলে হয় তার উল্টো । একটু ভালো বললে বিশেষ করে মা,বাবা সন্তানদের উৎসাহ প্রদান করলে ফলটা আরও ভালো হয় । সকলেই প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে। আর তাতেই যদি ভাল ফল পাওয়া যায়,তাহলে স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য কেন? এই প্রশংসার দ্বারা উপকার কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রেও দেখা যায় । প্রত্যেকটি মানুষের নিজস্ব সত্তা আছে। আত্মাভিমান আছে । সেই ক্ষেত্রে ছোট বড় সমান । তবে বড়োরা এই প্রশংসার মূল্যায়ন করতে পারেন ।ছোটরা সেই মূল্যায়ন করতে পারেনা বলেই তাদের কাছে ফলটা আরও বেশি পাওয়া যায় । মায়েরা অনেক সময় ছেলে মেয়ের নায্য আবদার ,যেটা চরিত্র গঠনে সাহায্য করে সেটাও মেটাতে চান না । পরিবর্তে ঝাঁঝের সঙ্গে বলেন,”তোমার জন্য এই খরচ—সেই খরচ,ইত্যাদি ।”তাতে উল্টো ফল হয়। Adolescence এর সময় ওর বিরোধী মনটা চাড়া দিয়ে উঠে। Appreciation থেকে ভালো ফল পাওয়া যায় । ধরা যাক ছেলে ক্রিকেটের কোচিং নিতে চায় । তার জন্য টাকা দরকার । মা যদি এ ক্ষেত্রে হেসে বলেন,”সে তো খুব ভালো কথা ।”ছেলের সঙ্গে পুরোপুরি খরচের ব্যাপার টা আলোচনা করেন যে কোনটা ছেঁটে কোনটা রাখা যায়। তাতে ছেলে মায়ের কাছে ও থাকবে,আবার মায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ জাগবে না মনে । মা ওকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এতে মায়ের কষ্ট বুঝবে । কথার মাধুর্য যদি উত্তরে না থাকে,তবে যাকে উত্তর দেওয়া হলো তার ও মনের মাধুর্যটা নষ্ট হয়ে যায় । বিশেষ করে এ বয়সে সংবেদনশীল মনোভাব থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে,”In the world of human affairs there is no worse nuisance than a boy at the age of fourteen. He is neither ornamental nor useful. It is impossible to shower affection on him as a little boy,and he is always getting in the way. “
( ৩)
মায়ের কম ভালোবাসার জন্য যে বৈরিতার সৃষ্টি হয়, তা বড়ো হলে চলে যায় । কারণ শিশু কালে মা যে ভাবে ছোট কে ,’প্রোটেক্ট” করে বড়দের অত্যাচার থেকে বাঁচাতে। বড়ো হলে আর সেরকম প্রোটেক্ট করার দরকার পড়েনা । ছোট নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারে । তাই ভালোবাসার তারতম্য তখন আর অনুভূত হয় না । কিন্তু গাত্রবর্ণের যে হীন মন্যতা হয়, তা থাকে অন্তরে । উজ্জ্বল গাত্রবর্ণ,শ্যাম বর্ণ কে ব্যথিত করে । দেখা যায় যাকে ঈর্ষা করছে সেও অপসংগতির শিকার হচ্ছে । কারণ শ্যাম বর্ণ ,অন্তর থেকে গৌর বর্ণের উন্নতির আনন্দে সামিল হতে পারে না । অবহেলিত করে রাখে গৌর বর্ণকে । তার ফলে গৌর বর্ণ অন্তর্মুখী হয়ে পড়ে । সব কষ্ট জমা করে রাখে । শ্যাম বর্ণের থেকে,”নন কো-অপারেশন ” পেতে পেতে এমন হয় যে,”ম্যাল এড্জাস্টেড”বা অপসংগতির শিকার হয় । যাতে অপসংগতির শিকার না হয় তার জন্য বিশেষ কোনো কলার সাহায্যে ,”পার্গেশন”হয়ে যায় । নিজ নিজ ক্ষেত্রেসংগীত,নৃত্য, অভিনয়,স্পোর্টস ইত্যাদিতে যোগ দিয়ে পারদর্শিতা লাভ করলে “এ প্রসেস অফ ক্যাথারসিস”-এ হীনমন্যতা চলে গিয়ে আত্মনির্ভরশীলতা বিকশিত হয় । এটা অবশ্য শ্যাম বর্ণের ক্ষেত্রে ও চেষ্টা করা যেতে পারে । তাকে ব্যক্তিত্বময়ী করে তুললে বর্ণ বিদ্বেষ টা চলে যেতে পারে । তবে এটা ও দেখা যায়,ছোট ও বড়ো বিশেষ বিশেষ কলায় পারদর্শী হয়ে ও ছোট বোনকে হিংসা করছে । জন্মগত ভাবে বড় আগে থেকে সুনামে অভ্যস্ত । তাই ছোটকে সুনাম পেতে দেখলে ছোট বোনের গর্বে গর্বিত হতে পারে না বড়ো । কারণ ঈর্ষা ।ঈর্ষা ও ভালোবাসা,এই দুটোকে লালন করলে বাড়ে ।সেই জন্য একই বাড়িতে লালিত সন্তানের মনোভাব কখনও একরকম হয় না । অবশ্য পিতা মাতার শিক্ষা,আদর্শ জন্মগত ভাবেই হোক বা ব্যবহারিক ভাবেই হোক, সব সন্তানের মনোভাব এ ব্যাপারে এক রকমই থাকে। তাই বড়দের গুনের গর্বে ছোট রা আনন্দ উপভোগ করলেও ছোটদের প্রশংসায় বড়ো বেশির ভাগই অংশীদার হয় না । গর্বিত হতে দেয় না বড়োদের অহমিকা । অবশ্য ক্ষেত্র বিশেষে হয় । আগে উল্লেখ করেছি শিশু কালের পক্ষপাতিত্ব, বর্ণ সমস্যা ,ঈর্ষার উদ্রেক করে । বড়োদের ছোটকে ভালোবাসতে শেখাতে হবে । জোর করে ছোটোর বোঝা বড়োদের ওপর চাপানো ঠিক নয় । এতে বড়ো র আনন্দময় জীবন ছোটর ভারে অবদমিত হয় না । সেখানে ঈর্ষার উদ্রেক হবে না । ভালোবাসার স্থান অনেক ওপরে । আমাদের মন কলুষিত হলে ভালোবাসা র জন্ম হবে কি করে? ভালোবাসা ও একরকম পূজাভ্যাস।ভালোবাসার দ্বারা আত্মাশুদ্ধি হয় । যারা নিজেকে ভালোবাসে না,হীন মনে করে,তারা অপরকে ও ভালোবাসতে পারে না । মায়ের কম ভালোবাসার জন্য যে বৈরিতার সৃষ্টি হয় তা বড়ো হলে চলে যায় ।কারণ শিশু কালে মা যে ভাবে ছোট কে ,’প্রোটেক্ট” করে বড়দের অত্যাচার থেকে বাঁচাতে।বড়ো হলে আর সেরকম প্রোটেক্ট করার দরকার পড়েনা।ছোট নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারে ।তাই ভালোবাসার তারতম্য তখন আর অনুভূত হয় না । কিন্তু গাত্রবর্ণের যে হীন মন্যতা হয় তা থাকে অন্তরে। ভালোবাসার স্থান অনেক ওপরে ।আমাদের মন কলুষিত হলে ভালোবাসা র জন্ম হবে কি করে? ভালোবাসা ও একরকম পূজাভ্যাস।ভালোবাসার দ্বারা আত্মাশুদ্ধি হয় ।যারা নিজেকে ভালোবাসে না,হীন মনে করে,তারা অপরকে ও ভালোবাসতে পারে না । আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে,আমরা আমাদের ‘হার’কে অদৃষ্ট বলে চালিয়ে দিই । এই হারের ক্ষেত্রটা আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের থেকে ই সংগ্রহ করেছি। কারণ আমরা আমাদের ছেলে মেয়েদের মানসিক দিকটা অবজ্ঞা করে যাই। মানসিক অবক্ষয়ের ফলটা রোধ করা যায়,যদি চাণক্যের আগের উল্লিখিত বানীটা মনে রাখি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাল হলো বয়ঃসন্ধি কাল। মনস্তাত্ত্বিকদের মতে এ সময়টা হলো একটা “স্ট্রেস অ্যান্ড স্ট্রেন”। কারো মতে এ সময়টায় অপরাধ প্রবণতা দেখা যায়। কেউ কেউ নিজের মধ্যে ডুবে থাকে ,কম কথা বলে । এই সময়টা জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় । এসময় কতগুলো বিশেষ দিকে যদি আমরা যত্ন নেই, তাহলে খুব ভালো হয় । এই সময় বাবা মা সন্তানের সংগে যতটা সম্ভব বাক্ বিতণ্ডায় না যান,ওদের একটু বোঝার চেষ্টা করেন। একটু সহানুভূতিতে ওদের এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। এই সময় ওদের কাজের দায়িত্ব দিলে ওরা অনেক বেশি আত্মনির্ভরশীল হয় । ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ হয় । প্রতিটি কাজে যদি ওদের তিরস্কার করা হয় তাহলে ওরা Introvert অর্থাৎ অন্তর্মুখী হয় । এদের নিয়ে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যা দেখা দেয় । এদেরকে কালচারাল অনুষ্ঠান,স্পোর্টস,ভ্রমণ,অভিনয় দ্বারা আত্মবিশ্বাসের পরিপূর্ণতা লাভ করানো যায় । দরকারে মা বাবার দ্বারা বা শিক্ষকের দ্বারা স্ত্রী পুরুষের পার্থক্য সম্পর্কে বোঝানো উচিত । বয়ঃসন্ধিকালে মনে অনেক কিছু ছাপ ফেলে । এই ছাপগুলো মানসিক স্বাস্থ্যটা নষ্ট করে দেয় । এই সময় যৌন চেতনা জেগে ওঠে । তবে শৈশবের যৌন চেতনা প্রকাশ পায় পিতা মাতা কে কেন্দ্র করে । পরে বয়সে বড়ো মেয়েদের প্রতি ঐবয়সের ছেলেরা আকর্ষিত হয়,ওদের অজান্তেই হয় । বড়োরা যদি সহানুভূতিশীল হয় তাহলে ভালো হয় । নিষ্ঠুর হলে ওদের মনে অপরাধ প্রবণতার উদয় হতে পারে । আমাদের মনে রাখতে হবে যে অভ্যাসই শিক্ষায় পরিপূর্ণতা আনে না । কিন্তু ইচ্ছে,অনিচ্ছে,আগ্রহ বিরক্তির দিকে দৃষ্টি দিতে হবে কারণ ঐ ইচ্ছা, অনিচ্ছা,আগ্রহ ও বিরক্তি ও অভ্যাসের ওপরে প্রভাব বিস্তার করে । Adolescent period এ ছেলে মেয়েরা সেক্স এর ব্যাপারে বিশেষ কৌতুহলী হয় । এই সময় সেক্সুয়াল আচরণ ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে । ভয়াবহ ফলের থেকে এদের রক্ষা করতে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে”সেক্স ” সম্পর্কে বোঝাতে হবে সহানুভূতি শীল শিক্ষিত কাউন্সেলর ,এর সাহায্যে বয়ঃসন্ধিক্ষনের সমস্যা দূর করা যায় । -এতে এডোলেসেন্টরা অনেক বেশি আত্মনির্ভরশীল -হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় । কেস স্টাডি মেথডের সাহায্যে “কাউন্সেলররা” এদের সমস্যার কারণ খুঁজে বার করেন ও ওদের অপসংগতির সমস্যা দূর করেন । প্রথম কাজ——-ভালোবাসা ও সহানুভূতির সঙ্গে ওদের বুঝতে চাওয়া । এদের কথা বলতে দেওয়া । এই সময় ওদের আবেগের সৃষ্টি হয় । বড়ো রা ওদের যৌবনাগমে বিরক্ত হন। এতে এদের মধ্যে অন্যায় বোধের সৃষ্টি হয় । অন্যায় বোধই অপরাধ প্রবণতার দিকে নিয়ে যায় । অনেক সময় বড়দের অন্যায়ভাবে রাগে শাস্তি বিধান,ধৈর্যের অভাব ও অতিরিক্ত কড়াকড়ি । তাতে ছেলে মেয়েরা ভয়জনিত অশান্তিতে ভোগে। এ গুলো অপসংগতির বিশেষ কারণ । ওদের পরিশ্রমের মূল্য যে পুরস্কার তা বুঝতে দিতে হবে । কালচারাল পারফর্মেন্স,এ উৎসাহ দিতে হবে। যৌবনাগম হলে “এক্সট্রা এনার্জি “হয়।সেটা পারগেশন হতে সাহায্য করে এই এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটি গুলো । সমাজ সেবামূলক কাজের দিকে নজর দেওয়ানো ভালো । তাতে আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ হয় । জন দরদি ও হয় । পুরানো কথায় ফেরা যাক যে ,ব্যক্তিত্বই জীবনে সাফল্য আনে। এই ব্যক্তিত্বই সফলতার সোপান। যখন ব্যক্তিত্ব বাঁধা পায় তখনই যখন বাবা মায়ের বিশেষ কোনো সন্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বৈরিতার সৃষ্টি হতে দেয়। এই বৈরিতার মনোভাবের কুফল সুদূরপ্রসারী । বিশেষ করে সবথেকে ছোট সন্তানের প্রতি মায়ের দুর্বলতা এই তিল তিল করে জমে ওঠা ঈর্ষাই বড় আকার নেয় ভবিষ্যতেও সেই ছোট র ব্যক্তিত্বকে,ঔদার্যকে ও তার উন্নতির আনন্দকে ধংস করতে উন্মত্ত হয় বড়ো । মেয়েদের মধ্যে আর একটা ব্যাপারে হীনমন্যতা বা ঈর্ষার সৃষ্টি করে । সেটা বর্ণ বিদ্বেষ । গৌর বর্ণের কন্যা সন্তান হলে তাকে শ্যাম বর্ণের কন্যা ঈর্ষার চোখে দেখে । এ ব্যাপারে কারোকেই দায়ি করা যায় না । কিন্তু এই হীনমন্যতা থেকে প্রতি হিংসা জন্মায় । মায়ের ভালোবাসার হেরফের থেকে এবং বর্ণ বৈষম্যের ঈর্ষা থেকে হীনমন্যতা সৃষ্টি হয় । তাই এদের প্রতিভা স্ফুরণের দিকে দৃষ্টি দিলে আত্মনির্ভরশীলতার সংগে ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ হয় ।
( ৪)
ভগবানের সৃষ্টি এই মানব দেহ। তাকে ভালোবেসে উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে । নিজেকে যত হীন ভাবা যায়,হীনমন্যতা তাকে ততই গ্রাস করে । নিজেকে উন্নত ভাবার অভ্যাস করতে হবে । মানুষ ঈশ্বর আরাধনা করার জন্য কত কিছু করে মানুষ দেব- মূর্তিকে দুধ,নারকেল,জল দিয়ে তাম্রপাত্রে স্নান করায়। তারপর শাড়ি,গহনা,ফুলের মালা,চন্দন-টীকা ,সিঁদূরের টীপ প্রভৃতির দ্বারা তার মনের কল্পনার এক দেবী মূর্তি কে গড়ে । ঈশ্বর কি সত্যি দেবীমূর্তি তে আছেন? এও একরকম ভালোবাসা । একটা শুদ্ধ নির্মল কাজে নিজে কে ব্যস্ত রাখা । যাতে অভ্যাসে মন নির্মল হয় ও ভালোবাসায় আপ্লুত হয় । মনের মাধুরী দিয়ে নিজেকে সুবেশে,সুগন্ধে ভরালে মন প্রফুল্ল হয় । অন্যের সৌন্দর্যে,সৌভাগ্যে ঈর্ষান্বিত হতে হয় না বরং মনো –মুগ্ধকর হয় । ঈর্ষাই মনের মালিন্য । তাকে দূর করতে হবে । সেই জন্য নিজ মনও দেহকে সুরূপে ভরাতে হবে । মন পবিত্র করতে হবে । অপরের সুখে খুশি হবার অভ্যাস করলেই মন পবিত্র হবে উদারতারও অভ্যাস করতে হয়,ঠিক পূজাভ্যাসের মতো । মন উদার হলেই মনের জ্যোতি শরীরে প্রতিফলিত হয়। যে নিজেকে সুন্দর রাখার চেষ্টা করে সে অন্যের সৌন্দর্যে ঈর্ষান্বিত না হয়ে নিজের অভ্যাসকে আরো পরিমার্জিত করতে পারে । আবারও বলছি সেই পুজোর অভ্যাসের কথা । ঠাকুর ঘরে গেলাম,আর পুজো করলাম,সে অনেক পরের কথা । কারণ আমাদের মতো যারা তাদের ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় । প্রথমে স্নান সেরে ঠাকুর ঘর নিকানো,ঠাকুরকে স্নান করানো। এরপর শিল্পীর মতো দেবদেবীকে মনের রংএ সাজানো । এতো গেলো দেবতাকে সাজানোর ব্যাপার।এরপর মংগল ঘটের আলিম্পনের মাধ্যমে শৈল্পিক সত্তাকে জাগ্রত করা । এরপর আসে নৈবেদ্য সাজানো । এর মধ্যে ও ভালবাসার ছাপ ফুটে ওঠে । ভালোবাসা না থাকলে সবকিছু করা হলেও তার মধ্যে অসামঞ্জস্য থেকে যায় । ভালোবাসা হলো মালার সুতোর মত ।অভ্যাসের দ্বারা ভালোবাসা গাঢ় হয় । যারা ভালোবাসতে জানেনা এবং সব কিছুতেই যাদের অনীহা,তাদের মনে হতে পারে পুজো করার জন্য এতো কিছুর কি দরকার? এতো একরকম আতিশয্য । কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের বাউন্ডুলে,রোজের ঝড়ঝাপ্টায় শ্রান্ত মনটাকে একটু থিতু করার জন্য, একটু আতিশয্যের দরকার । লোক দেখাবার যুগে, লোক দেখাতে গিয়ে আস্তে আস্তে এই পুজোর আতিশয্যটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হবে। অভ্যাসে পরিণত হলে আর আতিশয্যের দরকার হবে না । চিত্ত শুদ্ধি হলে আর কিছুর দরকার নেই । কেবল তাঁকে ডাকলেই হয় । আরও ওপরে উঠেছিলেন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। ধ্যানস্থ হলেই ঈশ্বর দর্শন হয়ে যেত । ধ্যানস্থ হলেই ‘ভর’হয়ে যেতেন,ঈশ্বর দর্শন হতো । তবে মানসিক স্থিরতাটা সকলের উপযোগী । আমাদের জীবনে ধৈর্যের অভাবই সব অঘটনের মূলে থেকে আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে । এর কুফলে বাবা মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে । এই বিচ্ছেদ,সমাজে একই সঙ্গে অনেক ক্ষতের সৃষ্টি করছে । সন্তানের ক্ষতির পাল্লাটা একটু বেশি হয় বাবা মায়ের বিচ্ছেদের দ্বারা । ঈশ্বরের দেওয়া এই মানব দেহ,এতে প্রাণ আছে ।অনুভূতি আছে । তাকে সুবেশে,সুগন্ধে ভরালে মন প্রফুল্ল হয় । অন্যের সৌন্দর্যে,সৌভাগ্যে ঈর্ষান্বিত হতে হয় না বরং মনোমুগ্ধকর হয় । ঈর্ষাই মনের মালিন্য । তাকে দূর করতে হবে । সেই জন্য নিজ মনও দেহকে সুরূপে ভরাতে হবে । মন পবিত্র করতে হবে । অপরের সুখে খুশি হবার অভ্যাস করলেই মন পবিত্র হবে । উদারতারও অভ্যাস করতে হয়,ঠিক পূজাভ্যাসের মতো । মন উদার হলেই মনের জ্যোতি শরীরে প্রতিফলিত হয়। যে নিজেকে সুন্দর রাখার চেষ্টা করে, সে অন্যের সৌন্দর্যে ঈর্ষান্বিত না হয়ে নিজের অভ্যাসকে আরো পরিমার্জিত করতে পারে । আবারও বলছি সেই পুজোর অভ্যাসের কথা । ঠাকুর ঘরে গেলাম,আর পুজো করলাম,সে অনেক পরের কথা । কারণ আমাদের মতো যারা তাদের ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় । প্রথমে স্নান সেরে ঠাকুর ঘর নিকানো,ঠাকুরকে স্নান করানো। এরপর শিল্পীর মতো দেবদেবীকে মনের রংএ সাজানো । এতো গেলো দেবতাকে সাজানোর ব্যাপার। এরপর মঙ্গল ঘটের আলিম্পনের মাধ্যমে শৈল্পিক সত্তাকে জাগ্রত করা । এরপর আসে নৈবেদ্য সাজানো । এর মধ্যে ও ভালবাসার ছাপ ফুটে ওঠে । ভালোবাসা না থাকলে সবকিছু করাহলেও তার মধ্যে অসামঞ্জস্য থেকে যায় ।ভালোবাসা হলো মালার সুতোর মত । অভ্যাসের দ্বারা ভালোবাসা গাঢ় হয় । যারা ভালোবাসতে জানেনা এবং সব কিছুতেই যাদের অনীহা,তাদের মনে হতে পারে পুজো করার জন্য এতো কিছুর কি দরকার? এতো একরকম আতিশয্য । ঈশ্বর আমারা মানি কিনা জানি না । সন্তানের ক্ষতির পাল্লাটা একটু বেশি হয় বাবা মায়ের বিচ্ছেদের দ্বারা । যে বিষয়ে ছবি ফেলতে চাইছি,সেটা হলো এই যে ধ্যান বা কনসেনেট্রশন,করা। যদি আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সব কাজে সময় দিতে পারি,তবে দিনে পনেরো মিনিট সময় ধ্যান বা কোনো নিদৃষ্ট বিন্দুতে মনস্থির করতে পারব না কেন? এতে মনে হয় ধৈর্য্য টা বাড়ে । একই সঙ্গে ঘরে একটা শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি হয় । সন্তানদের সাথে বসে ধ্যান করলে পারিবারিক একটা শৃংখলার আবরণ তৈরি হয় । ধ্যানের লক্ষ্য বিন্দুটা আড়ম্বর পূর্ণ করলে আরও ভালো হয় । এতে শিশুরা উৎসাহিত হয় । ঠিক যেমন গল্পের বইয়ের মলাট সুদৃশ্য হলে পড়তে মন চায় ঠিক সেই রকম । আগেকার দিনে লক্ষ্য বিন্দু হিসেবে দেবদেবীর মূর্তি রাখা হতো । আর আড়ম্বর করার জন্য ধূপের গন্ধ, ফুলের মালার গন্ধ,চন্দনের গন্ধ,সুদৃশ্য আলিম্পনের ব্যবস্থা ও সবথেকে বড় কথা বাচ্চা ও বড়দের যাদের ধ্যানের ব্যাপারে অনীহা,তাদের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এটাই ক্রমশ পুজোর নামে অভিহিত হয়েছে । এটা অবশ্য কোনো বইয়ের কথা নয়। সম্পূর্ণরূপে আমার মস্তিষ্ক প্রসূত । কথাটা ধ্যানই হোক । আর’কনসেনেট্রশন ‘ই হোক বা পুজোই হোক । এটার একটা সুফল আছে তা বুঝতে বাকি থাকে না । আগের দিনের মায়েদের অসীম ধৈর্য্যই তার প্রমাণ । কথায় কথায় ধৈর্য্য হারা হতে দেখা যায়নি,শুধু মাত্র ওইএক স্থায়ী বিশ্বাসে । যার কাছে দিনে একবার না বসলে তাদের কাজে মন বসতো না । সেটা হলো বংশপরম্পরায় অর্জিত অভ্যাস,ঈশ্বরের উপাসনা । মানসিক শান্তি ছিল মায়েদের । যুগের লড়াই বা ঈশ্বরের আরাধনার বিজ্ঞাপনের জন্য আমার লেখা নয়। আমার অতি সামান্য আকাঙক্ষা ।লেখনীর উদ্দেশ্য ভবিষ্যত সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের উজ্জ্বলতায়,জাতীয় স্বাস্থ্য বজায় রাখার চেষ্টা । ঘরে ঘরে শান্তিময় পরিবেশ শিশুদের মনে গড়ে উঠুক । ঘরে অশান্তি,সহনশীলতার অভাব ই ছেলে মেয়েদের মনে আগুন জ্বালিয়ে দেয় । আর সেই আগুনের লেলিহান শিখা লকলক্ করে গোটা সমাজকে গ্রাস করবে । সাপের বিষে মানুষের মৃত্যু,মানে জীবনের চরম পরিসমাপ্তি। কিন্তু যে বিষে মানুষ তাঁর নিজের অজান্তেই তার প্রিয় জনকে বিষাক্ত করে দেয়, তা তো একটা “লাইফ লং প্রসেসের”মতো চলতে থাকে “। জেনারেশন আফটার জেনারেশন “। তাই বোধ হয় ধ্যান হলো এই বিষের প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি লাভের উপায় । ধ্যানের দ্বারা বিশুদ্ধ বাতাবরণ মনকে নির্মল করে । মনের মলিনতা মুছে ফেলে। এর থেকে মুক্তি মুক্তি লাভের কি অন্য উপায় আছে? মনকে নির্মল করার,নির্বিষ করার আর কি অন্য উপায় আছে?কোথা থেকেশুরু করতে হবে এই নির্বিষকরন?যদি বলি শিশু কাল থেকেই । তবে প্রশ্ন আসে কার কাছে সেই ছেলে মেয়েরা প্রতিপালিত হবে পরবর্তী সোপানে?কারণ যাদের কাছে তাদের প্রতিপালনের দায়িত্ব তারাও তো বিষক্রিয়ায় সামিল হয়েছেন । মনে হয় আমাদের ইচ্ছা শক্তি যদি সন্তানের মঙ্গল কামনার্থে উদ্বুদ্ধ হয়,তাহলে অভ্যাসের দ্বারা আমরা মনকে নির্মল করার চেষ্টা চালাতে পারি। এটা একটা,”কনটিনুয়াল প্রসেস,”। একদিনের বা একার পক্ষে সম্ভব নয় । শুধু মাত্র বিশুদ্ধ পরিবেশেই তা সম্ভব। সপরিবারে ও এই প্রসেসে সামিল হতে পারেন। মনে পড়ে ,আসামে আমাদের বাগানে নানা রঙের পাখি আসত। হলুদ,লাল,খয়েরি রঙের কলাবতী ফুল ফুটতো। আর সেই খয়েরি রংয়ের কলাবতী ফুলে রেশমের মতো জেল্লা ধরা প্রায় দের দুই ইঞ্চি মাপের ছোট্ট ছোট্ট খয়েরি রংয়ের পাখি ঠিক ঐ কলাবতী ফুলের রঙের মতো , ফুলে এসে বসত।আর হলুদ রঙের ফুলের ওপর বসতো হলুদ রঙের প্রজাপতি। তার পাখায় নানান কারুকাজ । কদিন বৃষ্টির পর যখন রোদ উঠত,তখন বাগানে ছোট ছোট হলুদ কালোয় বেকিবেকি করা সাপ,কিলবিল করে ঘুরে বেড়াতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে,বিশেষ করে ঐ ফুল,পাখি, প্রজাপতি সব আমার মনটা ভরে দিত। দেবদারু গাছের পাতারও শব্দ শুনতাম । সবের মধ্যে যেন ঐশ্বরিক অনুভূতি উপলব্ধি হতো । সাপের ব্যাপারটা আমায় অন্য কথা বলতো । বিশ্ব চরাচরে ভালোর সঙ্গে যে মন্দ আছে সে কথা মনে করিয়ে দিত। তবে ওর রংয়ের ঔজ্জ্বল্যতা আর ফুলের সাথে ম্যাচিং হলুদ রঙের বাহারটা আমায় আকর্ষণ করতো। একটা কথা মনে হয়েছে যে,নির্জনে প্রাকৃতিক শোভা দর্শন আমাদের মনকে নির্মল,তাজা করে দেয়।আমাদের মধ্যে সঞ্জীবনী সুধার কাজ করে । আর খারাপ টা ওৎ পেতে বসে থাকে এবং আমাদের আকর্ষণ করে । ঈশ্বর কে?যদি বলি প্রকৃতি?বিশ্ব চরাচরই ঈশ্বর । “ওয়াওয়ার্ডসওয়ার্থ ” বিশ্বাস করতেন বিশ্ব প্রকৃতির প্রাণী,অপ্রাণী সব কিছুর মধ্যে ব্যাপ্ত হয়ে আছে ঈশ্বর । স্বর্গীয় শক্তির স্পন্দন তাই সব কিছুর মধ্যেই অনুভূত হয় । তাঁর ই জয় গাঁথার প্রকাশক আমাদের চোখের সামনে মেলে ধরেছে নানা রংয়ের নানা রূপ । আমাদের ক্লান্ত শ্রান্ত মন প্রকৃতির শান্ত নিবিড় কোলের আঁচলের ছায়ে মন কে করে শান্ত নির্মল । সেই প্রকৃতিকে ঈশ্বর বললে কি ভুল বলা হয়? ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর মতে শুধু ফুল,কলি,প্রজাপতি নয়,পাহাড়ের শ্যাওলা ধরা পাথরেও ঈশ্বরের প্রাণ স্পন্দন অনুভূত হয় । মাঝে মাঝে মনটাকে প্রকৃতিতে ডুবিয়ে নিতে হবে। যাতে নতুন করে চলার শক্তি অর্জন করা যায়। তঠিক যেমন করে মায়ের বুকের দুধে শিশু প্রাণবন্ত হয় তেমনি ভাবে প্রকৃতির অসীম করুণাধারা থেকে নিজেকে বঞ্চিত না করে,সেই সঞ্জীবনী সুধা পান করে,নিজেকে নির্মল করে একেবারে পবিত্রতায় অবগাহন করা।