পাঁঠাশালা
পঞ্চানন ঢালী দিন মজুর। তার বউ চাঁপার চাপাচাপিতে পাঁচ বছরের ছেলে নীতুকে একটা কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করতে বাধ্য হয়েছে। খরচ অনেক, তবুও ছেলে মানুষ হবে ভেবে, এই আর্থিক কষ্টটুকু মেনে নিয়েছে তারা। সেদিন পঞ্চানন ছেলেকে নিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল।যেতে যেতে রাস্তায় দেখে,একজন কসাই একটা পাঁঠাকে বলি
দেবার জন্য টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। আর পাঁঠাটা তারস্বরে চিৎকার করছে। নীতু তা দেখে, বাবার কাছে জানতে চাইল, আচ্ছা বাপী ওটা অমন চিৎকার করে কাদছে কেন? পঞ্চানন নীতুকে বলল, ওটাকে বলি দেওয়া হবে বলে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তা শুনে নীতু বলল,বলি কি বাপী?
– মানে ওকে কাটা হবে।
– ওহ্ তাই? আমি তো ভাবলাম,ওটাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পঞ্চানন, মৃদু হেসে বলল, তোমার তাই মনে হল? নীতু গম্ভীর স্বরে বলল, হ্যাঁ গো বাপী। এই বাপী ডাকটা শুনলে, পঞ্চাননের বুকের ভিতরটা ভরে ওঠে। নিজেকে বেশ বাবু শ্রেনীর লোক বলে মনে হয়। কিন্তু তা হলে কি হবে? আজ যেন অন্যরকম একটা অনভূতি তার মন জুড়ে আলোড়ণ তুললো, সত্যিই তো? এখানেও কি পাঁঠাটার মতো নীতুর ইচ্ছে অনিচ্ছের কোন গুরুত্ব না দিয়ে, তাকেও জোর করে স্কুলে টেনে নিয়ে গিয়ে ওর মনটাকে বলি দেওয়া হচ্ছে না ওর শৈশব চুরি করে নিয়ে?