Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নারীর সেকাল একাল || Dona Sarkar Samadder

নারীর সেকাল একাল || Dona Sarkar Samadder

বিশ্বের যা কিছু মহান,
যা চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক
তার নর
…….কাজী নজরুল ইসলাম।

পুরুষশাসিত সমাজে বার বার নারীর অস্তিত্ব সংকটে এসেছে। পুরুষ তার অধিকার কায়েম করতে বিভিন্নভাবে নারীকে সংস্কারে আবদ্ধ করে শক্তিহীনা করতে চেয়েছেন।

বৈদিক যুগ থেকে বর্তমান সমাজ পর্যালোচনা কালে নারীদের অবস্থান সর্বৈব ভাবে জ্ঞাত হয়।

বৈদিক যুগ বলতে আমরা ঋগ্বেদ ও বেদাঙ্গসূত্রের মধ্যবর্তী সময়কালকে বুঝি। বৈদিক বা ঋগ্বেদ যুগে কিন্তু নারীর অবস্থা মোটেই করুণ ছিলনা। নারীরা সকল বিষয়ে যথেষ্ট সাবলীল ছিলেন:
১) এইসময়ে নারীদের যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করার সাক্ষ্য পাই। যেমন – মুদগালিনী যুদ্ধ জয় বৃত্তান্ত,বিশপলা যুদ্ধে একটি পা এবং বভ্রিমতী একটি হাত হারান।
২) এই সময়ে নারীরা স্বয়ম্বর সভার মাধ্যমে নিজেদের পাত্র নিজেরাই নির্বাচিত করতে পারতেন।
৩) দেবগণ ও পিতৃগণকে প্রতিদিন জল দেওয়ার প্রসঙ্গে এমন নারীদের নাম পাওয়া যায়, যাদের উদ্দেশ্যেও জল দেওয়া হত-এরা হলেন গার্গী,বড়বা, আত্রেয়ী, মৈত্রেয়ী।
৪) বেদের ছয় অধ্যয়নের শেষে উৎসর্গ দিবসে একটা অনুষ্ঠান হত‌। সেখানে অন্যান্য শ্রদ্ধার্হদের মধ্যে বশিষ্ঠ পত্নী অরুন্ধতীকে আসন দেওয়া হতো।
৫) ঋগ্বেদের বিবাহসূক্তের রচয়ত্রী ছিলেন সাবিত্রী সূর্যা(২০/৪৫)
ঋষি কক্ষিবানের কন্যা ঘোষা বার্ধক্য পর্যন্ত অবিবাহিত কন্যাদের সমস্যা তুলে ধরেন {১০/(৩৯-৪০)}।
ইন্দ্রের পত্নী ইন্দ্রানীর সপত্নীক বিষয়ক শ্লোকে সপত্নীর কারণে অন্তর্জ্বালা প্রকাশিত হয়েছে (১০/১১৫)।
পানিণির ব্যাকরণ গ্রন্থে “আচার্যা”,”উপাধ্যায়া” শব্দের ব্যুৎপত্তি গত অর্থে সেই সময় অধ্যাপনরত নারীর উল্লেখ পাই।

কালচক্র নিজের নিয়মে যত এগিয়েছে,নারীকে ততোই আঁটোসাঁটো করে রাখা হয়েছে, নারীর অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করা হয়েছে। আনুমানিক খ্রী:পূ: ৫০০শতক থেকে নারীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরবর্তী কালে
১) নারীর মন্ত্রোচ্চারণে বাধা
২) নারীদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত (২/৬৬)
৩) নারীর স্বামী ভিন্ন পৃথক যজ্ঞ নেই, কেবলমাত্র স্বামীর সেবা করেই স্ত্রীলোক স্বর্গে যেতে পারেন (৫/১৫৫)।
৪) ইহলোকে পুরুষদের দূষিত করা স্ত্রীলোকেদের স্বভাব। এইজন্য পন্ডিতেরা স্ত্রীলোকেদের সম্পর্কে অসাবধান হন না(২/২১৩)
৫) নারীর অন্তঃকরণ নির্মল হয় না (৯/১৮)
৬) শাস্ত্রমতে স্ত্রী জাতি মিথ্যা অর্থাৎ অপদার্থ (৯/১৮)
৭) ঋতুমতী নারী অশুচি
৮) মনুর মতে, “বাল্যকালে স্ত্রী লোক পিতার বশে,যৌবনে স্বামীর এবং স্বামীর মৃত্যুর পর পুত্রের বশে, অর্থাৎ নারী কখনোই স্বাধীনভাবে থাকতে পারবেন না (৫/১৪৮)
৯) “……. স্ত্রী যদি অপ্রিয়ভাষিণী হন, তাহলে কালক্ষয় না করে তৎক্ষণাৎ স্বামী বিবাহ করবে (৯/৮১)
১০) সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় শাস্ত্রের এই নিয়মে-
ক) স্বামী মারা গেলে স্ত্রী পবিত্র ফলমূল আহার করে জীবনযাপন করবেন। কিন্তু কখনোই ব্যাভিচারের ইচ্ছায় পরপুরুষের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করতে পারবেন না (৫/১৫৭)
অন্যদিকে
খ) সতীসাধ্বী স্ত্রী আগে মারা গেলে তার দাহকার্য ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সমাপ্ত করে পুরুষ পুণরায় বিবাহ করবেন এবং পুণরায় দার পরিগ্রহ করে পরমায়ুর দ্বিতীয় ভাগ গৃহস্থাশ্রমেই বাস করবেন {৫/(১৬৮-১৬৯)}। পুরুষের সমৃদ্ধির দুটি লক্ষণ -বহুপত্নী ও পশুপালন।
১১) নারীর গর্ভাবস্থায় পুংসেবন অনুষ্ঠান করা হত,যাতে নবজাতক পুত্র সন্তানই হয়, কন্যাসন্তান না।
১২) তৈক্তরীয় সংহিতায় বলা হয়েছে,”শিশু কন্যাদের জন্মের পর মাটিতে রাখা হয়, শিশু পুত্রদের তুলে ধরা হয়।
১৩) ঐতরেয় ব্রাহ্মণে বলা হয়, “নারী অমঙ্গল”,”কন্যা অভিশাপ”
১৪) মহাভারতেও বলা হয়েছে,”শোকের কারণ হল কন্যা”
১৫) এখানে শ্রীকৃষ্ণের মুখে বলা হয়েছে,”পূর্ব জন্মের পাপের ফলে নারী হয়ে জন্মাতে হয়”।
কালের চাকা এগিয়ে চললো, এগোলো না নারীর ভাগ্য। পরবর্তীকালে নারীরা আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলে। এখানে কয়েকটি প্রথার মাধ্যমে তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি:
সতীদাহ প্রথা: স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পত্তির অধিকার লোপের জন্য তার পত্নীকে সহমরণে যেতে হতো,যা সতীদাহ।বহু নারী এই অন্যায় প্রথার বলি হয়েছেন। রামমোহন যথেষ্ট লড়াই করেন এই প্রথার বিরুদ্ধে।১৮২৯ সালে বৃটিশ সরকার আইন করে এই প্রথার বিলোপ করেন।
জওহর প্রথা: কোনো যুদ্ধে পরাজিত বাহিনীর স্ত্রী ও কন্যারা শত্রুপক্ষের হাতে বন্দী হওয়া বা যৌন নিপীড়ন এড়াতে স্বেচ্ছায় অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপ দিতেন।
পর্দাপ্রথা: মুসলিম সমাজে এই প্রথা এখনও প্রচলিত।
দেবদাসী প্রথা: মূলত এটি দক্ষিণ ভারতের প্রথা।এই প্রথা অনুযায়ী মহিলারা কোনো দেবতা বা মন্দিরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতেন। এরপর তাদের সামাজিক বিবাহ থেকে বিরত থাকতে হতো।এরা পুরোহিত ও পান্ডাদের লালসার শিকার হতেন।১৯৮৮ সালে এই প্রথাটি নিষিদ্ধ হয়।

কালচক্র এগিয়ে চলেছে। নারীদের সুরক্ষায় বহু মনীষী এগিয়ে এসেছেন। এনাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর,জ্যোতিবাফুলে প্রমুখ। সময়ের সঙ্গে নারীরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন।১৯১৭ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস সমর্থিত প্রথম নারী প্রতিনিধি দল নারীর রাজনৈতিক অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবি নিয়ে রাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।১৯২৭ সালে পুনেতে নিখিল ভারত নারী শিক্ষা বিষয়ক আলোচনা চক্রে (অল ইন্ডিয়া উইমেন্স এডুকেশন কনফারেন্স)অনুষ্ঠিত হয়।এটি সামাজিক উন্নয়ন মূলক আন্দোলনের একটি প্রধান সংগঠন হয়ে ওঠে।১৯২৯ সালে বাল্যবিবাহ আইন নিবর্তন হয়।

বর্তমানে নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতা
জাতীয় মহিলা কমিশন
রাষ্ট্রীয় মহিলা কোষ
দি জুভেনাইল জাষ্টিস এক্ট
কিশোর অপরাধীদের উপযুক্ত তত্ত্বাবধান
দত্তক গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয় (সেন্ট্রাল এডপশন রিসোর্স তৈরি,চাইল্ড হেল্পলাইন)
দি চিলড্রেনস এক্ট
দি চাইল্ড ম্যারেজ রেস্ট্রিক্ট এক্ট ১৯২৯(সূত্র – পোর্টাল কনটেন্ট টিম)দ্বারা নারী অবস্থানের কিয়দাংশের উন্নয়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *