কল্পদ্রুমাবদান
দুর্ভিক্ষ শ্রাবস্তীপুরে যবে
জাগিয়া উঠিল হাহারবে ,
বুদ্ধ নিজভক্তগণে শুধালেন জনে জনে ,
‘ ক্ষুধিতের অন্নদানসেবা
তোমরা লইবে বল কেবা ? ‘
শুনি তাহা রত্নাকর শেঠ
করিয়া রহিল মাথা হেঁট ।
কহিল সে কর জুড়ি , ‘ ক্ষুধার্ত বিশাল পুরী ,
এর ক্ষুধা মিটাইব আমি
এমন ক্ষমতা নাই স্বামী ! ‘
কহিল সামন্ত জয়সেন ,
‘ যে আদেশ প্রভু করিছেন
তাহা লইতাম শিরে যদি মোর বুক চিরে
রক্ত দিলে হ ‘ ত কোনো কাজ —
মোর ঘরে অন্ন কোথা আজ ! ‘
নিশ্বাসিয়া কহে ধর্মপাল ,
‘ কী কব , এমন দগ্ধ ভাল ,
আমার সোনার খেত শুষিছে অজন্মা – প্রেত ,
রাজকর জোগানো কঠিন —
হয়েছে অক্ষম দীনহীন ।’
রহে সবে মুখে মুখে চাহি ,
কাহারো উত্তর কিছু নাহি ।
নির্বাক্ সে সভাঘরে ব্যথিত নগরী – ‘ পরে
বুদ্ধের করুণ আঁখি দুটি
সন্ধ্যাতারাসম রহে ফুটি ।
তখন উঠিল ধীরে ধীরে
রক্তভাল লাজনম্রশিরে
অনাথপিণ্ডদসুতা বেদনায় অশ্রুপ্লুতা ,
বুদ্ধের চরণরেণু লয়ে
মধু কণ্ঠে কহিল বিনয়ে —
‘ ভিক্ষুণীর অধম সুপ্রিয়া
তব আজ্ঞা লইল বহিয়া ।
কাঁদে যারা খাদ্যহারা আমার সন্তান তারা ,
নগরীরে অন্ন বিলাবার
আমি আজি লইলাম ভার ।’
বিস্ময় মানিল সবে শুনি —
‘ ভিক্ষুকন্যা তুমি যে ভিক্ষুণী !
কোন্ অহংকারে মাতি লইলে মস্তকে পাতি
এ – হেন কঠিন গুরু কাজ !
কী আছে তোমার কহো আজ ।’
কহিল সে নমি সবা – কাছে ,
‘ শুধু এই ভিক্ষাপাত্র আছে ।
আমি দীনহীন মেয়ে অক্ষম সবার চেয়ে ,
তাই তোমাদের পাব দয়া —
প্রভু – আজ্ঞা হইবে বিজয়া ।
‘ আমার ভাণ্ডার আছে ভরে
তোমা – সবাকার ঘরে ঘরে ।
তোমরা চাহিলে সবে এ পাত্র অক্ষয় হবে ।
ভিক্ষা – অন্নে বাঁচাব বসুধা —
মিটাইব দুর্ভিক্ষের ক্ষুধা ।’