তাসের ঘর
হঠাৎ ই ফেসবুকে আলাপ হওয়া বিপাশার সঙ্গে বিভাসের বন্ধুত্ব এই ক মাসেই বেশ জমে উঠেছে। বিপাশা উত্তর বঙ্গের মেয়ে, কলকাতায় একটা বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরতা। বিভাস একটা এম এন সি তে কাজ করে। ভালো মাইনে পায়, একটা ফ্লাট ও কিনেছে। ওর ইচ্ছে নতুন ফ্ল্যাটে গৃহপ্রবেশের দিনই বিপাশার সাথে ওর বিয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা টা করবে। কিন্তু যেদিন গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান সেদিন সবাই এলেও বিপাশা এলোনা। সব অতিথি চলে গেছে, ঘড়ি’তে রাত তখন সাড়েআটটা। সেই সময় দরজায় কলিং বেল বাজলো। বিভাস আইহোল দিয়ে দেখলো বাইরে বিপাশা দাঁড়িয়ে আছে। দরজা না খুলে ও ঘর অন্ধকার করে দিলো। বিপাশা অনেক্ষন বাইরে অপেক্ষা করে দরজার নীচ দিয়ে একটা খাম ঢুকিয়ে দিয়ে ফেরার পথ ধরলো। রাত বাড়ছে, বিভাস ঘরের আলো জ্বালল না, উঠলোও না। সোফায় বসে বসে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই।ঘুম ভাঙলো অনেক রাতে। ঘরের আলো জ্বেলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তখন বারোটা। হঠাৎ বিভাসের নজর যায় দরজার নীচের খামটার দিকে। খামটা তুলে দেখে একটা মেডিকেল রিপোর্ট। নাম লেখা বিপাশা রায়। তাড়াতাড়ি রিপোর্টটা পড়ে দেখে, লিভার ক্যানসার। সঙ্গে একটা ছোট কাগজে বিপাশার হাতে লেখা চিঠি-
” প্রিয় বিভাস,
জানি আজ তুমি খুব রেগে আছ আমার উপর, কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ঠকাতে পারবো না বলেই আমি ঠিক সময়ে তোমার গৃহপ্রবেশের পার্টিতে যাই নি। আমি জানতাম আজ তুমি সবার সামনে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে,কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। তুমি আমাকে ক্ষমা কোরো। পারলে আমাকে ভুলে যেও। আমাকে নিয়ে তোমার তাসের ঘর সাজানো খুব উপভোগ করতাম, কিন্তু কোনোদিন ভাবিনি তুমি এটাকে এতোটা সিরিয়াসলি নিয়ে নেবে। হয়তো আমিও নিজের অসুখের কথা ভুলে মনে মনে স্বপ্ন সাজাতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু আজ রিপোর্টটা হাতে আসাতে আবার আমি বাস্তবের মাটিতে ফিরে এসেছি। আমি যে ঘর বাঁধতে পারি না! আমার হাতে যে সময় বড়ো অল্প । আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ। ভেবেছিলাম যাওয়ার আগে একটা বার তোমার মুখটা দেখে যাবো, সেই লোভেই এসেছিলাম, কিন্তু…
ভালো থেকো।
বিপাশা।”
চিঠিটা পড়ে বিভাস উদভ্রান্তের মতো পায়চারি করতে লাগলো। নিজের ফোনে দেখলো ফেসবুকে বিপাশার সবুজ আলোটা বন্ধ। অনেকবার বিপাশাকে ফোন করলো, ফোন সুইচড অফ। ওকে এখন আত্মগ্লানি কুরে কুরে খাচ্ছে। না জেনে না বুঝে ও বিপাশাকে বড় আঘাত করে ফেলেছে। সকাল সকাল বিভাস বেরিয়ে পড়ল বিপাশারর গার্লস হস্টেলের দিকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে শোনে আজ ভোরেই হস্টেল ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। ওরা ওর বাড়ির ঠিকানাও দিতে চাইল না। যে কম্পানিতে ও চাকরি করত সেখানে গিয়েও শোনে চাকরি ছেড়ে চলে গেছে। ভাঙা মন নিয়ে বিভাস তার নতুন বাড়িতে ফিরে এলো। আজ এ ঘর ভাঙা তাসের ঘরের মতো মনে হচ্ছে তার কাছে। একবার শুধু একবার যদি বিপাশা ফেসবুকে অন হয় সেই আশায় বিভাস প্রতিদিন মোবাইলের দিকে লক্ষ্য রাখে, যদি কোনোদিন ফেসবুকের সবুজ আলোটা জ্বলে ওঠে..।