ছিন্নবীণা
বিয়ের আর মাসখানেক বাকি ।তাই দক্ষিণেশ্বরে মায়ের কাছে পূজো দিতে এসেছে ঋক আর অহনা । আজ অহনার জন্মদিন । দুজনে পূজো দিয়ে লঞ্চ ঘাটে এসে পৌঁছায় । লঞ্চে উঠে দুজনে রেলিং ধরে দাড়ায় । লঞ্চ ছেড়ে দেয় । দুবছরের প্রেম ওদের । ঋক একটা মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির সি .ও. । আর অহনা এম.বি .এ. কমপ্লিট করলো ।বছর দুয়েক আগে অহনার এক বান্ধবীর বিয়েতে আলাপ হয় ঋকের সাথে ।সেখান থেকেই ভালোলাগা তারপরই ভালোবাসা । দুজনেরই বাড়ি থেকে কোনো আপত্তি ছিল না । দুই পরিবারই স্ব – ইচ্ছায় সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে । শুধু অহনার কোর্সটা কমপ্লিট হবার অপেক্ষা ছিল ব্যাস।
এগিয়ে চলেছে লঞ্চ । গঙ্গার শীতল স্নিগ্ধ হাওয়া আবেশিত করছিল ওদের । লঞ্চ ঘাটে ভিড়ল । অদ্ভুত মন ভালো করা পরিবেশ । দুজনে হাত ধরে ফিরছিল । এমন সময় দশ বারোটা ছেলে অহনাকে বিরক্ত করতে শুরু করে । উল্টোপাল্টা কথা বলা , গা ঘেঁষে যাওয়া , পিছনে ধাক্কা মারা । ঋকের সাথে ছেলেগুলোর বচসা বাঁধে ও হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় ।এরপর লোক জমে যায় ও ভয় পেয়ে ছেলেগুলো পালিয়ে যায় । ঋক অহনাকে নিয়ে তৎক্ষণাৎ ওখান থেকে বেরিয়ে আসে ।এই ঘটনার পর অহনা মন মরা হয়ে যায় । ঋক ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অহনার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে কিচ্ছু হয়নি । just chill and cheer up . আরে তোর birthday gift টাই তো এখনো বাকি । চল তোর জন্য একটা gift কিনবো । আমার কিচ্ছু লাগবে না । আমার শুধু তোকে চাই ব্যাস । দুর পাগলি আমি তো তোরই । please চল ।কোথায় ? আরে আয় না । একটা সোনার দোকানে নিয়ে যায় ঋক । একটা ডায়মন্ড রিং পছন্দ করে সে অহনার জন্য। আমি এটা নিতে পারবো না । Its very costly . please সোনাই নিয়ে নে । তোর থেকে বেশী মূল্যবান আমার কাছে আর কিছুই নেই । তবে পরিয়ে দে । ঋক অহনার হাতে আংটিটা পরিয়ে দেয় ।
আকাশে বেশ মেঘ করেছে ।এক্ষুনি মনে হয় বৃষ্টি নামবে । অনেকটা রাত হয়ে গেল । নিজের স্করপিও তে ড্রাইভ করে ফিরছিল ঋক । বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে মুষলধারে , অহনা ঋকের বুকে জড়িয়ে আছে। হঠাৎ ঋক লক্ষ্য করে সামনে চার পাঁচটা বাইক দাঁড়িয়ে আছে আর গাড়িগুলোর হেডলাইট জ্বলছে । ঋক গাড়িটা দাঁড় করাতেই কয়েকটি ছেলে গাড়িটার ওপর এলোপাথারি লাঠি চালাতে শুরু করে । দুজনকেই গাড়ির ভিতর থেকে টেনে বের করে আনা হয় । ওদের বুঝতে বাকি থাকে না বিকেলে যে ছেলেগুলোর সঙ্গে বচসা লেগেছিলো এরাই তারা । একটা ছেলে বলে ওঠে তখন তো খুব হিরোগিরি দেখাচ্ছিলি এখন কোথায় গেল ,, সব ফুর । ঋক – আমরা তোমাদের কি ক্ষতি করেছি বলো ? আমাদের ছেড়ে দাও । অতো তাড়া কিসের ? দাঁড়া তোর মালটাকে পরখ করে দেখি একটু । মুখ সামলে কথা বল শয়তান । সেই থেকেfollow করে তোদের বাগে পেয়েছি ।এক্ষুণি ছেড়ে দেবো । দুটো ছেলে অহনার ওড়নাটা টেনে খুলে দেয় । ওর সাথে নোংরামো করতে শুরু করে ।ঋকের রক্ত গরম হয়ে যায় । নিজেকে মুক্ত করে দৌড়ে যায় অহনাকে বাঁচাতে । ছেলেগুলোর সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয় । একটা ছেলে ছোরা বের করে ভয় দেখানোর জন্য অহনার গলায় চেপে ধরে ।ঋক ভয় পেয়ে যায় ।আর একটা ছেলে বলে ওঠে আগে মজনুটাকে খতম কর তবে ওর লায়লাকে আমরা পাবো । বলতে না বলতেই আর একজন ছোরা বের করে ঋকের পেটে গুঁজে দেয় । অহনা চিৎকার করে ওঠে । ওকে মেরো না তোমরা আমায় মেরে ফেলো । রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঋক । তবুও লড়াই করে যাচ্ছে ।ধস্তাধস্তিতে ছুরি লেগে অহনার গলার নলিটা কেটে যায় ।ছেলেগুলো ভয় পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় । অহনা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে । ঋক কোনোরকমে অহনার কাছে আসতে গিয়ে মুখ থুবরে পড়ে । অহনা শরীরটাকে ঘষরাতে ঘষরাতে ঋকের কাছে আসে । অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে । হাত বাড়িয়ে ঋককে শেষবারের মতো ছুঁতে চেষ্টা করে অহনা । আঙুলে সেই ডায়মন্ড রিং । ঋক হাত বাড়িয়ে অহনার সিঁথিতে রক্ত চিহ্ন এঁকে দেয় । তুই আমাকে চেয়েছিলি না পাগলি । এই আমি তোর হলাম । দুজনেই অশ্রুসজল চোখে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে চিরতরে না ফেরার দেশে যাত্রা করে ।