গোঁড়ায় গলদ
একদিন এক অধ্যপক বন্ধুর বাড়িতে গেছি, তার সঙ্গে ‘বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা’ নিয়ে আলোচনা করার জন্য। সামনের সপ্তাহে আমাদের ‘মহাজন’ সংগঠনের একটি সেমিনার আছে,বাংলা আকাদেমি-তে। সেখানে এই নিয়ে অনেক বাঘা বাঘা বক্তারা তাদের জ্ঞনগর্ভ বক্তব্য রাখবেন, সেই সংগঠনের সভাপতি হিসাবে, আমার শিক্ষা প্রসঙ্গে কিছু না বললে কেমন বেমানান হবে ভেবে, তাই নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে একটু আলোচনা করার ইচ্ছে জাগে মনে, সে কারণেই তার বাড়ি যাওয়া।
শুনলাম গিয়ে কবি এখনও ফেরেনি, বন্ধু স্ত্রী আমাকে বসতে বলে,পাশের রান্নাঘরে চা করতে গেল। শুনলাম,বন্ধু স্ত্রী তার শিশু সন্তানটিকে জিজ্ঞাসা করছে, বাছা তুমি আজ স্কুলে গেলে না কেন? শিশুটি বলল,আমি আর কোনদিনই ওই স্কুলে যাব না মা।
– কিন্তু কেন ? তার মা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে তার কাছে জানতে চাইল।
– স্যার সব সময় উল্টোপাল্টা বলেন।
– কেন, কি বলেছেন আবার তোমায়?
-পরশু আমাদেন বললেন, তিন আর তিনে ছয় হয়। আবার গতকাল বললেন, চার আর দুয়ে ছয় হয়। আজ গেলে হয়তো বলতেন পাঁচ আর এক – য়ে ছয় হয়। তারপর ধরো, সেদিন অংকের শিক্ষক বললেন সেল মানে বিক্রয়। আবার বিজ্ঞানের শিক্ষক এসে বললেন, সেল মানে কোষ, আবার বাংলার শিক্ষক সেদিন বললেন, সেল মানে শূল,পুরোনো কালের অস্ত্রসস্ত্র আবার বাবা সেদিন বললেন,সেল ফোন। তবে কোনটা ঠিক বলো তো মা? এবার বলো তো মা ,ওই স্কুলে গিয়ে আমি কি ঘোড়ার ডিম শিখব?
তিনি তো তার শিশু সন্তানের কথা শুনে স্তম্ভিত, আমিও হতভম্ব। এরপর বন্ধুর সঙ্গে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আর কোন আলোচনা করার ইচ্ছে রইল না আমার মনে।
বন্ধু স্ত্রীর হাতের এক কাপ চা খেয়ে ধীরেসুস্থে বাড়ি ফিরে এলাম। বুঝলাম, শিক্ষা ব্যবস্থার, গোঁড়ায় গলদ। পাত্র বুঝে জ্ঞান বিতরণ হয় না। শিক্ষকরা বিদ্যা ঢেলে যান, ছাত্র তার কত গ্রহণ করতে পারবে, তা বিচার না করে। শিক্ষার নামে পরিহাস।