গোধূলি-স্নাত বারান্দায় খয়েরি পাখিটাকে দেখে
ভালো লাগল না কি মনের
গহনে ভয়ানক হিম হাওয়া বয়ে গেল, বুঝতে
পারিনি। মনে হলো, কারা যেন অত্যন্ত
তাড়াহুড়ো করে আমাকে মলিন স্ট্রেচারে শুইয়ে ঠেলে
নিয়ে চলেছে ঢিমে তালে। ডুবু-ডুবু সূর্য হিংস্র জন্তুর মুখ!
আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে জোড়া-তালি-দেওয়া
আনাড়ি ব্যান্ডেজ ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে দেখছে চারপাশের
রুক্ষ গাছগুলোকে। কী একটা করুণ সুর
ভেসে আসে কে জানে কোত্থেকে। আমার শরীর থেকে টুকরো
টুকরো কি খসে পড়ছে স্টেচারে? মাটিতে? এ আমি
কোথায় চলেছি? স্ট্রেচার-চালকদের প্রশ্ন করতে গিয়ে
ব্যর্থ হচ্ছি বারবার। তবে কি আমার গলা থেকে কোনও
আওয়াজ বেরুচ্ছে না? না কি ওরা কানে তুলো গুঁজে
রেখেছে ঢের আগে থেকে! এক রত্তি শক্তি নেই শরীরে,
অথচ লাফ দিয়ে মাটিতে দাঁড়াতে ভারি ইচ্ছে করছে।
একপাল পশু ধেয়ে আসছে স্ট্রেচারের দিকে, স্ট্রেচার
চালকরা নির্বিকার, মূক, চৈতন্যরহিত। ভেসে
চলেছি মেঘে, অনেকগুলো নখর আর দাঁত ছিঁড়ে খাচ্ছে
আমাকে। আমি এক লহমায় মেঘ হয়ে, পাখি হয়ে
স্পর্শ করতে চাইছি পূর্ণিমা-চাঁদকে। আমার হাতে ভয়ানক
গরম, পোড়া রুটি, মুখে এক টুকরো পুরতেই বালির মতো
ঝুরঝুরিয়ে পড়া যায়। দূরের মেঘ থেকে নষ্ট ফলের মতো
পড়ছি, পড়ছি, পড়ছি। কে যেন আমার পতন
রুখতে চাইছে তার সোনালি হাত বাড়িয়ে, সেই হাত
ছুঁতে পারছি না কিছুতেই। পড়ছি, পড়ছি, পড়ে চলেছি।