এক ডজন একজন : যখন গ্রামে হাজির
যখন বাচ্চারা একটা গ্রামে হাজির হয়েছে এবং অবাক হয়ে সেটা দেখছে।
দুই দিন পর সকাল বেলা পাঁচ ভাই বোনকে সেই উত্তর বঙ্গের এক প্রত্যন্ত এলাকার মেথিকান্দা গ্রামের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে যেতে দেখা গেল, তাদের পিছনে পিছনে মাঝবয়সী একজন মানুষ। মানুষটির নাম মোহম্মদ ইব্রাহীম, সবাই তাকে ইব্রাহীম চাচা ডাকে। রাহেলা খাতুনের বড় ছেলে মাসুদ ইব্রাহীম নামের মানুষটাকে এই পাঁচজনের দায়িত্ব দিয়েছে। মাসুদ সার্টিফিকেট দিয়েছে মানুষটি খুবই কাজের মানুষ এবং দেখা গিয়েছে সে আসলেই খুবই কাজের মানুষ। সে মেথিকান্দা গ্রামের কাছে একটা এনজিও অফিস খুঁজে তাদের গেস্ট হাউজটা বের করেছে। সেই গেস্টহাউজ এক সপ্তাহের জন্য ভাড়া নিয়েছে, শুধু তাই নয় গ্রামের একজন মহিলাকে খুঁজে বের করে তাকে প্রত্যেক দিন তিনবেলা রান্না করার দায়িত্ব দিয়েছে।
তারা গত রাত্রে এখানে পৌচেছে, রাত্রে ঘুমিয়ে সকালে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে নাস্তা করেছে। তারপর মেথিকান্দা গ্রামটা দেখতে বের হয়েছে। ইব্রাহীম চাচা মানুষটা খুবই কাজের সেটা সবাই বুঝতে পেরেছে তার সাথে সাথে তারা তার সবচেয়ে বড় সমস্যাটাও টের পেয়েছে। সেটা হচ্ছে মানুষটা কোনো কথা বলে না। একেবারেই কথা বলে না-তার ফলে অবশ্য একটা লাভ হয়েছে যখন সে কোনো কথা বলে সেটা হয় লক্ষ টাকা দামের কথা।
যে রকম পাঁচজন গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে একটা গরু দেখতে পেল। টিটন যখন নাদুস নুদুস গরুটা একটু কাছ থেকে দেখতে যাচ্ছে তখন ইব্রাহীম চাচা বলল, এরকম লাল শার্টটা পরে এত কাছে যাওয়া ঠিক না।
টিটনের টি-শার্টটা আসলেই টকটকে লাল এবং গরুরা লাল রং দেখে এরকম উত্তেজিত হয়ে যায় কে জানতো? ইব্রাহীম চাচা তার কথাটা শেষ করার আগেই নাদুস নুদুস গরুটা মাথা নিচু করে শিং উঁচিয়ে টিটনকে ধাওয়া করে এল- টিটন জান নিয়ে কোনো মতে পালিয়ে এসেছে, ভাগ্যিস গরুটা দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল তা না হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেত।
ইব্রাহীম চাচা একটু পরে আবার একটা লক্ষ টাকা দামের কথা তিতুকে লক্ষ্য করে বলল, তোমার পায়ের গোছাতে কালো মতন জিনিসটা একটা জোক।
তিতু না হয়ে এটা রিতু হলে সে তখনই হার্টফেল করে ফেলত, কিন্তু তিতু বেশি ব্যস্ত হলো না। সবাই মিলে তখন জোকটাকে টেনে আলাদা করল। জোঁককে ধরে টানলে সেটা যে রাবার ব্যান্ডের মতো লম্বা হয় সেটাও তারা আজকে প্রথম আবিষ্কার করল।
পাঁচজন মিলে হাঁটতে হাঁটতে যখন বড় একটা বটগাছ পেয়েছে এবং এই বিশাল বটগাছের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে আহা উঁহু করছে তখন ইব্রাহীম চাচা ঠাণ্ডা গলায় বলল, এই গাছের নিচে থেকো না। অনেক পাখি। মাথায় ইয়ে করে দেবে।
কথা শেষ করার আগেই কোনো একটা ফাজিল পাখি রিতুর মাথায় ইয়ে করে দিল! কী কেলেঙ্কারি! ঘেন্নায় তিতু প্রায় বমি করে দেয় সেই অবস্থা! তবে ইব্রাহীম চাচা তার সবচেয়ে মূল্যবান কথাটা বলল মিঠুনকে লক্ষ্য করে। গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তারা একটা পুকুর পাড়ে পৌঁছালো এবং সেই পুকুর পাড়ে বেশ কিছু রাজহাঁস দাঁড়িয়ে নিজেদের ভেতর আড্ডা মারছিল। মিঠুন বলল, দেখেছ কী সুন্দর রাজহাঁস?
আসলেই রাজহাঁস দেখতে খুব সুন্দর তাদের বিশাল লম্বা গলা নাড়িয়ে নাড়িয়ে তারা এদিক সেদিক দেখে। মিঠুন যখন রাজহাঁস গুলোকে একটু আদর করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল তখন ইব্রাহীম চাচা বলল, রাজহাঁস খুব ডেঞ্জারাস।
এত সুন্দর লক্ষ্মী রাজহাঁস কেমন করে ডেঞ্জারাস হতে পারে মিঠুন বুঝতেই পারল না এবং সে ইব্রাহীমের কথা বিশ্বাস না করে এগিয়ে গেল। তখন হঠাৎ করে রাজহাঁসগুলো তাদের লম্বা লম্বা গলাকে সাপের ফণার মতো নাড়িয়ে ফোঁস ফোঁস করে মিঠুনকে আক্রমণ করল। এত যে দুষ্ট মিঠুন সে কোনো মতে জান নিয়ে পালানোর চেষ্টা করল এবং দৌড়ে একটা খালের মাঝে লাফিয়ে পড়ে জান বাঁচালো। রাজহাঁসগুলো খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে মিঠুনের উদ্দেশ্যে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল।
এরপর থেকে পাঁচজনের এই ছোট দলটা ইব্রাহীমের কথাগুলোকে খুব গুরুত্ব দিয়ে শুনতে থাকল।
বাচ্চাগুলো সারা জীবন মোটামুটি শহরেই বড় হয়েছে। তাই তাদের জন্য গ্রামটি খুবই বিচিত্র একটা অভিজ্ঞতা। তারা মাটির রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। এবং একবারও পিছন থেকে একটা বড় ট্রাক বিকট হর্ন দিয়ে ছুটে আসছে না। গ্রামের মানুষেরা আস্তে আস্তে হেঁটে কাজে যাচ্ছে এবং প্রায় সবাই তাদের থামিয়ে তাদের সাথে কথা বলছে। কথাবার্তাগুলো হচ্ছে এরকম: একজন হয়তো বড় বড় কয়েকটা গরু নিয়ে যাচ্ছে সে তার গরুগুলোকে আপন মনে হেঁটে যেতে দিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তুমরা কোনখান থেকে আইছ?
যেহেতু রিতু কিংবা টিয়া গুছিয়ে কথা বলতে পারে তাই সাধারণত তারাই প্রশ্নের উত্তর দেয় বলেন, জী আমরা ঢাকা থেকে এসেছি।
কুন বাড়িতে আইছ?
জী আমরা এখানে কারো বাড়িতে আসি নাই।
তাইলে কী বেড়াতে?
আসলে আমরা একজনকে খুঁজতে আসছি। উনার নাম ইদরিস মিয়া।
ইদরিস? ইদরিস মিয়া?
জী, উনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
সাধারণত তখন মানুষগুলো বিভ্রান্ত হয়ে যায়। তারা শুধু একজন ইদরিসকে চিনে। পুরো নাম ইদরিস আলী, বয়স কম, দোকানে চাকরি করে। সে মুক্তিযোদ্ধা নয়। তারা যখন জিজ্ঞেস করে, ইদরিস মিয়াকে কেন খুঁজো?
আমরা উনার ইন্টারভিউ নিব।
ও। বলে মানুষগুলো এই কম বয়সী ছেলেমেয়েগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। রিতু তখন জিজ্ঞেস করে, আপনি কী জানেন মুক্তিযোদ্ধা ইদরিস মিয়াকে কোথায় পাওয়া যাবে?
মানুষগুলো তখন ঠিক করে উত্তর দিতে পারে না। ইদরিস মিয়া নামে কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে তারা চেনে না। এই গ্রামে একজন মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান ছিলেন, ইলেকশানের পরপর তাকে খুন করে ফেলেছে। তার নাম ছিল ফজলু। সবাই ডাকতো ফজলু চেয়ারম্যান। এছাড়া তার কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে চিনে না।
বাচ্চারা গ্রামের এক মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত হেঁটে গেল। অনেকের সাথে তাদের কথা হলো, সবাইকেই তারা ইদরিস মিয়ার কথা জিজ্ঞেস করল কিন্তু কেউই তার খোঁজ দিতে পারল না। এক জায়গায় একটা গাছের নিচে তারা একটা ছোট দোকান পেয়ে গেল। দোকানের সামনে বাঁশ দিয়ে মাচার মতো করে বসার জায়গা করা হয়েছে এবং দোকানের সামনে একটা চুলার মাঝে তোবড়ানো একটা কেতলিতে পানি গরম হচ্ছে। কেউ চা খেতে চাইলে কেতলির গরম পানি দিয়ে চা তৈরি করে দেওয়া হয়। চায়ের এই আয়োজন দেখে সবার চা খাওয়ার ইচ্ছা হলো। তখন বাঁশের মাচার মাঝে বসে তারা চায়ের অর্ডার দিলো। দোকানি তাদের নানা খোঁজ খবর দিতে দিতে তাদের জন্য চা বানিয়ে দিল। পায়েশের মতো বেশি করে দুধ এবং চিনি দিয়ে তৈরি চা, খেয়ে তারা মুগ্ধ হয়ে গেল।
এই দোকানির কাছে তারা কিছু মূল্যবান খবর পেল। সংগ্রামের সময় এইখানে নদীর তীরে পাকিস্তান মিলিটারির ক্যাম্প ছিল এবং তখন অনেক যুদ্ধ হয়েছে। অনেকদিন আগের ঘটনা তাই কেউ বিশেষ কিছু জানে না। দোকানি কিছু বয়স্ক মানুষের নাম বলল, যারা সংগ্রামের সময় ছিল এবং তারা হয়তো খবর দিতে পারবে। টিয়া তার নোট বইটা বের করে তাদের নাম লিখে নিল।
বাচ্চাদের সাথে আরো কয়েকজন বাঁশের মাচায় বসে চা খাচ্ছিল তারা উঠে যাবার পর দোকানি এদিক সেদিক তাকিয়ে গলা নামিয়ে তাদেরকে আরো একটা খবর দিল। মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বেশি খবর দিতে পারবে যে মানুষটা তার নাম আজহার আলী। সে সংগ্রামের সময় রাজাকার কমান্ডার ছিল। এতদিন চুপচাপ ছিল, ২০০০ সালের ইলেকশানের পর তার তেজ বেড়েছে, কয়েকদিন থেকে সে হম্বি তম্বি করে বেড়ায়। তবে তাকে না ঘাটানোই ভালো।
বাচ্চারা যখন ফিরে আসছিল তখন নিজেদের ভেতর কথা বলে নিজেরাই ঠিক করে নিল যে তারা রাজাকার আজহার আলীকে ঘাটাবে না। এই দেশে যেহেতু আলবদর কমান্ডার মন্ত্রী হয়ে গেছে রাজাকার কমান্ডার একটু হম্বিতম্বি করতেই পারে।
তবে বাচ্চারা জানতো না তারা যে এই গ্রামে এসে ইদরিস মিয়া নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই খবরটা এর মাঝে আজহার আলীর কাছে পৌঁছে গেছে। রাজাকার কমান্ডার আজহার আলী খবরটা পেয়ে খুবই বিরক্ত হয়েছে এবং তাদের মোটামুটি নিরিবিলি গ্রামে পোলাপানদের এই উৎপাত কীভাবে বন্ধ করা যায় সেটা নিয়ে তার বিশ্বস্ত দুইজন মানুষের সাথে কথা বলতে শুরু করেছে।
বাচ্চারা যখন হেঁটে হেঁটে তাদের এনজিও গেস্ট হাউজে ফিরে আসছে, ঠিক তখন আজহার আলী তার বাড়ির উঠানে একটা জলচৌকিতে বসে তার দুইজন সাগরেদের সাথে কথা বলছে। সাগরেদ দুইজনের নাম মতি এবং খলিল। তাদের মাঝে যে কথাবার্তা হয়েছে সেগুলো এরকম :
আজহার আলী তার হুঁকোর নলে মুখ দিয়ে গুড়ুক গুড়ুক করে টান দিয়ে বলল, ঢাকা শহর থেকে পোলাপান এসে নাকী মুক্তিযোদ্ধা তালাশ করে? ব্যাপারটা কী সত্যি?
মতি বলল, জি হুজুর সত্যি?
কারণটা কী? এতদিন পর পোলাপানদের মুক্তিযোদ্ধা তালাশ করার দরকার কী?
হুজুর ইলেকশানে আমরা জেতার পর শুরু হইছে। যেইখানে যাই সেইখানেই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, মহা যন্ত্রণা! কেউ তো চিন্তা করে নাই। আমরা ইলেকশানে জিতে ক্ষমতায় আসমু সেইটা হচ্ছে তাদের জ্বালা। সবাই খালি তড়পায়।
হুঁকোয় আরো দুইটা টান দিয়ে আজহার আলী বলল, তড়পাইতে চায় তড়পাউক। তাদের না করছে কেডা? তয় আমাগো গেরামে কেন? তড়পানোর জায়গা ঢাকা শহর। এই গ্রামে ঝামেলা পাকায় কেন?
মতি বলে, যেখানেই সুযোগ পায় সেইখানেই একটা ফাল পাড়ে।
খলিল এতক্ষণ চুপ করে ছিল, এখন বলল, হুজুর এই পোলাপান ঢাকা থাকে, এই গাও গেরামে বেশিদিন থাকব না। কাইল হোক পরশু হোক চইলা যাইব। দুই চাইরদিন একটা বেহুদা মুক্তিযোদ্ধারে খুঁজলে সমস্যা কী? খুঁজুক।
আজহার আলী বলল, বুঝস না? সংগ্রামের কথা হইল নেশার মতন! একজন সংগ্রামের কথা কইলে হলের মনে পড়ে। তখন হপ্পলেই সংগ্রামের কথা কয়। তখন একাত্তর সালের কথা মনে পড়ে। পাকিস্তানি মিলিটারির কথা মনে পড়ে। আমাগো কথা মনে পড়ে।
আপনা গো কথা, মানে রাজাকারের কথা?
আজহার আলী কায় আরো দুইটা টান দিয়ে বলল, হু।
তাতে সমস্যা কী? এখন তো আমাগো সরকার।
আজহার আলী ধমক দিয়ে বলল, আরে ছাগলের বাচ্চা, সরকার আমাগো হইছে তো কী হইছে, পাবলিক কী আমাগো? পত্র পত্রিকা কী আমাগো? টেলিভিশন কী আমাগো? বেবাক মানুষ কে সুযোগ পাইলেই আমাগো গাইল পাড়ে, দেখস না?
মতি আর খলিল মাথা নাড়ল, বলল, তা ঠিক। কিছু একটা হইলেই গাইল পাড়ে, কয় রাজাকারের বাচ্চা রাজকার।
আজহার আলী গলা নিচু করে ষড়যন্ত্রীর মতো বলল, ফজলু চেয়ারম্যান খুন হইছে তাই ঠিক করছিলাম চেয়ারম্যান ইলেকশান করুম। এই হচ্ছে সুযোগ। কিন্তু হঠাৎ করে হলের যদি মনে পড়ে সংগ্রামের সময় আমি রাজাকার কমান্ডার ছিলাম পাবলিক আমারে ভোট দিব?
মতি বলল, সেইটা অবশ্য সঠিক কথা কইছেন।
এখন ঢাকার চার পাঁচটা পোলাপান যদি গেরামে ঘুরে আর একজন মুক্তিযোদ্ধারে খুঁজে তা হইলে আবার কী হবে কবে কেডা? এক মুক্তিযোদ্ধা থেকে আরেকজন, তার থেকে আরেকজন। হঠাৎ এক চ্যাংড়া সাংবাদিক আইসা পত্রিকায় নিউজ করব, কিছু বুঝার আগে দেখবি সবাই লাফায় আর কয় রাজাকারের বাচ্চার কল্লা চাই। তখন আমি যামু কই? আমার ইলেকশানের বারোটা বাজব।
মতি বলল, তার মানে হুজুর বইলছেন এই পোলাপানরে গেরাম থেকে বিদায় করন দরকার?
আজহার আলী হুঁকায় টান দিয়ে বলল, করতে পারলে ভালো। এই গেরামে ঘোঁট পাকানোর দরকার কী? অন্য গেরামে যাউক।
মতি কিছুক্ষণ চিন্তা করল। তারপর বলল, এইটা আর কঠিন কী। একটু ডর দেখাই, বাপ বাপ কইরা পালাইব।
খলিল বলল, ডর কেমনে দেখাইবি?
একটারে ধইরা এক রাইত আটকায়া রাখুম। বসে তা হইলেই পরের দিন বিদায়। আর জন্মে এই দেশে আসব না।
আজহার আলী জিজ্ঞেস করল, আটকায়া রাখবি কোনখানে?
মতি এক মুহূর্ত চিন্তা করল, তারপর বলল, বাড়িতে রাখা ঠিক হইব না। বড় গাঙে আপনার মহাজনী নৌকায়। কাকপক্ষীও টের পাইব না।
আজহার আলী কিছুক্ষণ হুঁকায় টান দিয়ে চিন্তা করল, তারপর বলল, বুদ্ধিটা খারাপ না। তয় কেউ যেন টের না পায় আমরা করাইছি। তাহলেই বিপদ।
কেউ টের পাইব না। খলিল জিজ্ঞেস করল, কিন্তু ধরবি কেমন করে? চিল্লাফাল্লা করব না?
মতি হে হে করে হাসল, বলল, হেইডা আমার উপর ছাইড়া দে। আল্লাহ আমারে বিশেষ কিছু দেয় নাই, খালি মগজে একটু বুদ্ধি দিচ্ছে।
খলিল বলল, তয় আল্লাহ তোরে কুনো ভালো বুদ্ধি দেয় নাই। খালি বদ বুদ্ধি দিছে।
মতি আবার হে হে করে হাসল। খলিলের কথাটা সে তার প্রশংসা হিসেবে ধরে নিয়েছে।
পাঁচজন ছেলে মেয়ে যখন হেঁটে হেঁটে এনজিও অফিসের গেস্টহাউজে হাজির হয়েছে তখন তারা কল্পনাও করতে পারে নাই এককালীন রাজাকার কমান্ডার তাদের একজনকে কিডন্যাপ করার পরিকল্পনা পাকা করে ফেলেছে।