একটা ক্ষত
ফেসবুকে চোখ বোলাতে বোলাতে হঠাৎ একটা প্রোফাইল দেখে বিদিশার চোখের কোণে জল চলে এলো।
‘ প্রদীপ্ত নতুন একটা প্রোফাইল খুলেছে।’
প্রদীপ্তর সঙ্গে বিদিশার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে অনেকদিন। অনেকদিন প্রদীপ্তকে ফেসবুকে দেখা যায়নি। হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছিল । বিদিশা ইচ্ছা করেই আর তেমন আগ্রহ দেখায়নি।
ওদের কখনও সামনাসামনি কথা হয়নি,যা কথা হয়েছে সবটাই এই ফোনের মাধ্যমে। প্রথম প্রথম ভালোলাগা থেকে কখন যে ভালোবেসে ফেলেছে বিদিশা নিজেও জানেনা।
প্রদীপ্ত বুঝতে পেরেছিল বিদিশার মন। তাই বিদিশাকে বারবার বলছে পুরানো সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে। প্রদীপ্ত চেয়েছিল বিদিশার চোখের জল মুছতে, চেয়েছিল বিদিশাকে একটা সুখী জীবন দিতে।
কিন্তু বিদিশা কিছুতেই ওর পুরানো সম্পর্ক থেকে বেরোতে পারেনি কারণ ওর দুটি সন্তান আছে পায়েল আর প্রসূন। ওদের কথা ভেবেই তো ও এতদিন এত যন্রনা সহ্য করে আছে।ও যে মা! ও যে পারবেনা ছেলেমেয়েদের কষ্ট দিতে। তাই ও চেয়েছিল প্রদীপ্ত শুধু ওর বন্ধু হয়ে থাক। কিন্তু প্রদীপ্তর তা চায়নি। সেই কারণেই প্রদীপ্তর সঙ্গে দূরত্বটা মেনে নিয়েছে বিদিশা।
বিদিশার সঙ্গে সৌম্যর অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। প্রথম প্রথম তো সব ঠিকই ছিল,যত দিন যায় ও বুঝতে পারে সৌম্যর কাছে ওর মূল্য ঠিক কতটা!
সৌম্য আধুনিক যুগের ছেলে হয়েও চিন্তাধারায় প্রাচীনপন্থী। কথায় কথায় অপমান করা ছিল নিত্য দিনের ব্যাপার। এমনকি বাপের বাড়ি যেতে চাইলে জবাবদিহি করতে হত”বাড়ির বাকি সদস্যরা কোথায় খাওয়া দাওয়া করবে!”
এত অপমান,এত যন্ত্রনা সহ্য করেছে শুধুমাত্র ছেলেমেয়ের কথা ভেবে।
জীবনের মধ্যাহ্ন লগ্নে এসে বিদিশা নিজেকে নতুন করে চিনতে শিখেছে। মেয়ে একপ্রকার জোর করেই ফেসবুক খুলে দিয়েছে বিদিশাকে। প্রথম প্রথম ফেসবুক খুলে কত বন্ধু হয়ে গেছে বিদিশার। না চাইতে কিছু অচেনা মানুষও ওর ফেসবুক ফ্রেন্ড হয়েছে।তাদেরই মধ্যে একজন প্রদীপ্ত। বন্ধু থেকে ভালোলাগা, আর ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা ।
প্রদীপ্ত অনেকবার বলার পরেও বিদিশা পারেনি সবকিছু ভুলে প্রদীপ্তর কাছে চলে যেতে। এমনকি ওরা একে অপরকে দেখেনি পর্যন্ত। ওদের দেখা অনলাইনে আর কথাও হয় অনলাইনে।
বিদিশা যে খুব ভয় পেয়েছে হয়তো ছেলেমেয়ে মেনে নেবেনা। তাহলে ওদের কাছে ছোট হয়ে যাবে ও। ওর বেঁচে থাকার ইন্ধন ঐ দুই ছেলেমেয়ে, তাই ওদের কোনো কষ্ট বা ক্ষতি বিদিশা ভাবতেই পারেনা।
তাই প্রদীপ্তর ডাকে সাড়া দিতে পারেনি। সেই অভিমানেই প্রদীপ্ত বিদিশার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
নিজের মনকে অনেক বুঝিয়েছে বিদিশা তবু কোথায় যেন একটা ক্ষত থেকে যায়।