আমাদের আর্ত বর্তমান পাঁড় মাতালের মতো বক-বক
করছে, উঠেছে মেতে বে-ধড়ক মারপিটে, খুনখারাবিতে
প্রায়শই। কী-যে হয়, ফুটন্ত গোলাপ দেখলেও
আনন্দের তরঙ্গ জাগে না মনে, চোখ
চকিতে বিদ্রোহ করে; সাত তাড়াতাড়ি প্রায় দৌড়ে
অন্তরালে চলে যাই। নক্ষত্র কি ভাসমান মেঘ
কনওটাই জাগায় না অন্তরে আবেগ; মনে হয়,
দেখিনি কিছুই বেলা-অবেলায়, গাছের পাতার
কম্পন বেজায় ব্যর্থ হৃদয় দোলাতে, এমন কি
সুন্দরীতমার মুখ নিমেষেই পারে না ফোটাতে ফুল শোণিতে ফুল শোণিতে আমার!
আজকাল যখন ঘুমোতে চেষ্টা করি মধ্যরাতে
বাতিটা নিবিয়ে, ঘরময় কবন্ধেরা নেচে ওঠে, কেউ কেউ
টলতে টলতে আসে বিছানার অতি কাছে। কী করব ভেবে
পাই না, কেবল চোখ দু’টো বন্ধ করা রাখি ভীষণ নির্ঘুম
রাতে, ভোর আসে খুব দেরিতে, নিষ্প্রভ চারদিক।
কারা যেন ডাকছে আমাকে দূর দূরান্তের কুয়াশায় মিশে,
ডাকছে ব্যথিত কণ্ঠস্বরে; কথাগুলো
অস্পষ্ট বেজায়, শুধু পাথরের স্তূপে
চাপা দীর্ঘশ্বাস আর কম্পিত ফোঁপানি
আমাকে জড়িয়ে ধরে, যেন আমি প্রবাসী আপনজন। কী-যে
করি, ভেবে পাই না কিছুতে। কানে আসে, ‘বলতো কবি দা’, কেন
প্রলয়ের স্বেচ্ছাচারে বারবার আমাদের বাস্তুভিটা পুড়ে
ছাই হবে? কেন বীথি আর মেনকাকে ধর্ষিতার
টিকলি কপালে বয়ে বেড়াতেই হবে? কেন দেবনাথ আর
গৌতমের তাজা রক্তে ভেসে যাবে নিকানো উঠোন? হায়, শত
বর্ষাতেও মুছবে না এই রক্তধারা, মুছবে না
কস্মিনকালেও। বল কবি দা’ কী হবে আমাদের?’ পাথরের
মতোই নিশ্চুপ থাকব কী? হৃদয়ের ছোঁড়া তন্ত্রী
নিয়ে বলি, ‘শোনো বীথি, তোমাদেরই এই মাটি এই গাছপালা।