Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ইন্দ্রজাল রহস্য (ফেলুদা) || Satyajit Ray

ইন্দ্রজাল রহস্য (ফেলুদা) || Satyajit Ray

অন্য অনেক জিনিসের মতো ম্যাজিক সম্বন্ধেও ফেলুদার যথেষ্ট জ্ঞান আছে। এখনও ফাঁক পেলে তাসের প্যাকেট হাতে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতসাফাই অভ্যাস করতে দেখেছি। সেইজন্যেই কলকাতায় সূৰ্যকুমারের ম্যাজিক হচ্ছে দেখে, আমরা তিনজনে ঠিক করলাম এক’দিন গিয়ে দেখে আসব। তৃতীয় ব্যক্তিটি অবশ্য আমাদের বন্ধু রহস্য-রোমাঞ্চ ঔপন্যাসিক লালমোহন গাঙ্গুলী ওরফে জটায়ু যারা ম্যাজিকের আয়োজন করেছে তারা ফেলুদার খুব চেনা, তাই চাইতেই তিনখানা প্রথম সারির টিকিট পাওয়া গেল।

গিয়ে দেখি হল প্রায় ছআনা ফাঁকা। ম্যাজিক যা দেখলাম নেহাত খারাপ নয়, কিন্তু ম্যাজিশিয়ানের ব্যক্তিত্বে কোথায় যেন ঘাটতি আছে। ফ্রেঞ্চ-কাট দাড়ির সঙ্গে একটা চুমকি বসানো সিল্কের পাগড়ি, কিন্তু গলার আওয়াজটা পাতলা। গোলমালটা সেখানেই। অথচ ম্যাজিশিয়ানকে অনর্গল কথা বলে যেতে হয়।

সামনের সারিতে বসার ফলে হল কী, হিপিনেটিজম দেখাতে ভদ্রলোক লালমোহনবাবুকে স্টেজে ডেকে নিলেন। এ-জিনিসটা ভদ্রলোক ভালই জানেন। লালমোহনবাবুর হাতে পেনসিল দিয়ে, সেটাকে কামড়াতে বলে জিজ্ঞেস করলেন, চকোলেট কেমন লাগছে? লালমোহনবাবু সম্মোহিত অবস্থায় বললেন, খাসা চমৎকার চকোলেট।

লোকেও উপভোগ করল খুব। লালমোহনবাবু জ্ঞান ফিরে পাবার পরে হাততালি আর থামে না।

পরদিন ছিল রবিবার। লালমোহনবাবু তাঁর সবুজ অ্যামবাসাডারে ঠিক ন’টার সময় চলে এসেছিলেন তাঁর গড়পারের বাড়ি থেকে আড়া মারতে। তখনও ম্যাজিকের কথা হচ্ছে।

ফেলুদা বলল, ঠিক জমাতে পারছে না লোকটা। কালকেও সিটি খালি ছিল দেখেছিলি?

লালমোহনবাবু বললেন, কিন্তু যাই বলুন মশাই, আমাকে যেভাবে বোকা বানানো, তাতে বলতেই হবে কৃতিত্ব আছে। পেনসিল চিবিয়ে চকোলেট, পাথর কামড়ে কড়াপাকের সন্দেশের স্বাদ-এ ভাবা যায় না।

শ্ৰীনাথ সবে চা এনেছে, এমন সময় বাইরে গাড়ি থামার শব্দ আর সঙ্গে সঙ্গেই দরজায় টোকা পড়ল। অথচ কারুর আসার কথা নেই। খুলে দেখি, বছর ত্ৰিশোকের ভদ্রলোক।

এটাই প্রদোষ মিত্তিরের বাড়ি?

ফেলুদা বলল, আজ্ঞে হ্যাঁ। আপনি ভেতরে আসুন।

ভদ্রলোক এসে ঢুকলেন। ফরসা, রোগা, চোখে চশমা। বেশ সপ্রতিভা চেহারা।

সোফার একপাশে বসে বললেন, টেলিফোনে অনেক চেষ্টা করেও আপনার লাইনটা পেলাম না। তাই এমনিই চলে এলাম।

ঠিক আছে। বলল ফেলুদা, আপনার প্রয়োজনটা যদি বলেন।

আমার নাম নিখিল বৰ্মন। আমার বাবার নাম হুয়াতে আপনি শুনে থাকবেন।–সোমেশ্বর বৰ্মন।

যিনি ভারতীয় জাদু দেখাতেন?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

আজকাল তো আর নাম শুনি না। রিটায়ার করেছেন বোধহয়?

হ্যাঁ, বছর সাতেক হল আর ম্যাজিক দেখান না।

উনি তো স্টেজে ম্যাজিক দেখাতেন না বোধহয়?

না। এমনি ফরাসে দেখাতেন। ওঁর চারদিকে লোক ঘিরে বসত। সাধারণত নেটিভ স্টেটগুলোতে ওঁর খুব নাম ছিল। বহু রাজাদের ম্যাজিক দেখিয়েছেন। তা ছাড়া বাবা নানান দেশ ঘুরে ভারতীয় ম্যাজিক সম্বন্ধে নানান তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। সেগুলো একটা বড় খাতায় লেখা আছে। বাবা ইংরিজিতে লিখেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান ম্যাজিক। ওটা একজন কিনতে চেয়েছেন। বাবার কাছে। কুড়ি হাজার টাকা পর্যন্ত আফার করেছেন। বাবা চাচ্ছিলেন। আপনাকে একবার লেখাটি দেখাতে। কারণ বাবা ঠিক মনস্থির করতে পারছেন না।

কুড়ি হাজার টাকা দিতে চেয়েছে কে জানতে পারি?

জাদুকর সূৰ্যকুমার নদী।

আশ্চর্য! কালই আমরা সূৰ্যকুমারের ম্যাজিক দেখে এসেছি! একেই ফেলুদা বলে টেলিপ্যাথি। ফেলুদা বলল, বেশ, আমি লেখাটা নিশ্চয়ই দেখব। তা ছাড়া আপনার বাবার সঙ্গে আমার আলাপ করারও যথেষ্ট ইচ্ছে আছে।

বাবাও আপনার খুব গুণগ্রাহী। বলেন, অমন শার্প বুদ্ধি বাঙালিদের বড়-একটা দেখা যায় না। আমার মনে হয়, এর মধ্যেই এক’দিন এসে পড়ুন না। বাবা সন্ধ্যায় রোজই বাড়ি থাকেন।

ঠিক আছে। আমরা আজ সন্ধাতেই তা হলে আসি।

বেশ তো। এই সাড়ে ছটা নাগাত?

তাই কথা রইল।

Pages: 1 2 3 4 5 6
Pages ( 1 of 6 ): 1 23 ... 6পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress